চলারপথে রিপোর্ট :
পিতৃহীন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মেধাবী শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৭৩তম ব্যাচের (২০১৯-২০ সেশনে)।
তিনি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ভাগ্যের কুঠারাঘাতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় তার।
মুশফিকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। জন্মের দেড়মাসের মাথায় হারান বাবাকে। মায়ের আঁচল ধরেই তার বেড়ে ওঠা তার। মা ও দুই ভাই নিয়ে ছোট্ট সংসার তাদের।
গত মে মাসের ৩১ তারিখে তার কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ধীরে ধীরে শরীরও অকেজো হতে বসেছে। এ অবস্থায় তাকে বাঁচাতে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা খুবই জরুরি। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার। এতে ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে তার জীবন প্রদীপ।
বিগত একমাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি রোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে যাত্রাবাড়ীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস নিচ্ছে। ডায়ালাইসিসের জন্য প্রতিমাসে খরচ ৩৫ হাজার টাকা।
চিকিৎসকরা বলেছেন, মুশফিকের দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন ও চিকিৎসা বাবদ দরকার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এ ব্যয় বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাকে বাঁচাতে সমাজের হৃদয়বান ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন মুশফিকের পরিবার ও তার বন্ধুরা।
মুশফিকের বড় ভাই নাসাদুল ইসলাম তাফসির বলেন, আমার বাবা মারা গেছে ২০ বছর আগে। তখন ছোট ভাই মুশফিকের বয়স ছিল দেড় মাস। আমাদের মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে লালন পালন করে বড় করেছেন। মুশফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর টিউশনি করে সে নিজের খরচ চালাচ্ছিল। সম্প্রতি তার কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। তার চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেই অর্থ খরচ করার সামর্থ্য আমাদের নেই। আমি নিজেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে অনার্স বিভাগে পড়াশোনা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবারের আর্থিক উপার্জনেরও তেমন ব্যবস্থা নেই। এতে আমরা অনেকটা দিশাহারা হয়ে পড়েছি। মা ছোট ভাইয়ের এই করুণ পরিস্থিতি দেখে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ক্ষমতা আমাদের নেই। সমাজে অনেক বিত্তবান রয়েছেন। সবাই যদি আমার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে আমার ভাইটা নতুন জীবন ফিরে পাবে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাই তিনি যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুশফিকে বাঁচিয়ে আমার মায়ের কোলে আবার ফিরিয়ে দেন।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডাচ বাংলা ব্যাংক হিসাব: মুশফিকুর রহিম। হিসাব নাম্বার: ১২৬১৫৮০০১২২৫৬
রকেট: ০১৭৬৪৪১২৬৬৬৪ নগদ: ০১৭৩৫৪৩৬০৪৫ বিকাশ: ০১৭৬৪৪১২৬৬৬ প্রয়োজনে: ০১৭৩৫৪৩৬০৪৫ (মুশফিকের বড় ভাই)
চলারপথে রিপোর্ট :
কক্সবাজার থেকে টেকনাফে পাত্রী দেখতে গিয়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণের শিকার হন তিন বন্ধু। অভিযোগ উঠে, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় পাহাড়ি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করেছে। এরপর অপহরণকারীরা ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে তিন বন্ধুকে হত্যা করা হয়। আজ ২৪ মে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় তিন বন্ধুর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব ও পুলিশ।
নিহতরা হলেন- কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগর পাড়ার মোহাম্মদ ইউছুপ, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রুবেল ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান।
আজ বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব বিভিন্ন পাহাড়ে যৌথ অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে বাহারছড়ায় পাহাড় থেকে সন্ধ্যায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, টেকনাফ থেকে তিন বন্ধু নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বুধবার বিকেলে টেকনাফ দমদমিয়াসংলগ্ন গহীন পাহাড় থেকে তিন বন্ধুর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আমাদের অভিযান চলমান।
নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল তিন বন্ধু কক্সবাজার থেকে টেকনাফে পাত্রী দেখার উদ্দেশ্যে রওয়া দেন। তাদের টেকনাফে সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুর বিল এলাকার রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ শফির ছেলে হেলালের বাড়িতে যাওয়ার দেখার কথা ছিল। টেকনাফে পৌঁছানোর সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি থামিয়ে একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। এর দুদিন পর তাদের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করার একটি ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে তাদের হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
নিহত ইমরানের বাবা ইব্রাহিম বলেন, গত ২৫ দিন আগে আমার ছেলেসহ তিন বন্ধু টেকনাফে বেড়াতে এসে অপহরণের শিকার হয়। ঘটনাটি শুনে টেকনাফ থানায় জানাই। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, আজ পাহাড় থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এখনও ছেলের মুখ দেখিনি।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, আমি এখনও পাহাড়ে অবস্থান করছি। র্যাবসহ আমরা বাহারছড়া গহীন পাহাড় থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। কিন্তু উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো কঙ্কাল হয়ে গেছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
চলারপথে ডেস্ক :
ডিজিটাল বাংলাদেশ কল্যাণের জন্য করা হয়েছে, অকল্যাণের জন্য নয়- জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশবিরোধী একটি শক্তি আছে, যত কাজই হোক সেটা তাদের চোখে পড়ে না। আর একটা শ্রেণি আছে যারা বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বদনাম করে। এর বিনিময়ে আর্থিক সুবিধাও পায়। বাংলাদেশের উন্নতি তাদের চোখেই পড়ে না। এ সময় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কড়া সমালোচনা করেন।
পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী র্যাবের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিছু লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান জানিয়েছেন, র্যাবের ওপর যখন নিষেধাজ্ঞা আসে তখন অনেকেই ঘাবড়ে গিয়েছিল, তবে তিনি বলেছেন, ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
আজ ১৯ মার্চ রবিবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে র্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। তবে পবিত্র রমজান মাসের কারণে এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ১৯ মার্চ এগিয়ে আনা হয়েছে। সংস্থাটির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে আজ। র্যাবের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান হলো- ‘নিরাপত্তা রক্ষায় গণমানুষের আস্থায়’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দেশ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। অনেকে তখন ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। প্রথমে সবাই বোধহয় মন খারাপ করেছিল। তবে এখন আর চিন্তা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অপপ্রচার চালিয়ে একটি বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে। কোন উদ্দেশে তারা এটা করেছে সেটাও বের করতে হবে।’
র্যাবের কেউ অপরাধ করে পার পাবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি যেহেতু সরকারে আছি কে ভালো করছে, কে মন্দ করছে সেটা আমি দেখব। কেউ অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি পাবে। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।’
র্যাবকে শান্তি, নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস নির্মূলসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই র্যাবের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে।
বিএনপি দেশকে জঙ্গিবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে র্যাব বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হলি আর্টিজান ছাড়া জঙ্গিরা তেমন কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি। এক্ষেত্রে র্যাবের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন তিনি।
কিশোর গ্যাং দমনে র্যাবকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া মাদক নির্মূলে র্যাবের ভূমিকাও উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মাদকাসক্তি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ধনিক শ্রেণি থেকে শুরু করে দরিদ্র পর্যন্ত সবখানে এর প্রভাব। একটা পরিবারে একজন মাদকাসক্ত থাকলে অশান্তির কোনো সীমা থাকে না। র্যাব মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চালাচ্ছে তাকে সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিতে হবে। সবাইকে মাদক নির্মূলে আরও সক্রিয় হতে হবে।
এ সময় তিনি ভেজালবিরোধী অভিযানে র্যাবের সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। বলেন, রমজান মাস এলেই যেন কিছু মানুষের মুনাফার অভিলাস জাগে। অথচ এই মাস হলো কৃচ্ছ্বতার মাস। আরেকটি হলো খাদ্যে ভেজাল দেওয়া। এই বিষয়গুলো প্রতিরোধেও র্যাব ভূমিকা রাখছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ছেলেদের আসার অপেক্ষায় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মহাসড়কের পাশে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ।
মহাসড়কের ওপর দিনরাত হাজারও গাড়ি যাতায়াত করছে। অনেক গাড়ি স্টেশনে থামার পর যাত্রী নামছে। যাত্রীসহ সব পথচারীর মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দুই চোখের পানি ঝরাচ্ছেন। চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও আসছে না তার সন্তানরা।
তার পরও আশা ছাড়েননি এই রোগাক্রান্ত বৃদ্ধ। কেউ জানতে চাইলে বলছেন, আমার ছেলেরা এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমাকে এখানে বসে থাকতে বলেছে, তারা আসবে…।
গত ৬ অক্টোবর ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড়গোবিন্দপুর স্টেশন এলাকায় বসে আছেন সাদা চুল-দাঁড়ির এই বৃদ্ধ। পাশে এক ভাঙা হুইলচেয়ার। বেশ কয়েক দিন অযত্ন-অবহেলায় পাগলের মতো দেখা যাচ্ছে তাকে। প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বাম হাত ও পা তেমন নাড়াচাড়া করতে না পেরে একই স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন এই বৃদ্ধ। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও খোঁজ নিতে আসেননি তার সন্তানরা। স্থানীয়দের মধ্যে অধিকাংশই এক নজর দেখে বাড়তি ঝামেলা মনে করে এড়িয়ে যান। আবার কারও মন কাঁদলেও আইনি ঝামেলার ভয়ে দূরে থাকেন।
তবে সবার থেকে এক ব্যতিক্রম নারী দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাসিন্দা রাইহানা ইসলাম রুনা। তিনি জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমার বাবা মারা গেছেন। গত ৮ অক্টোবর সকালে আমি মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশনে নেমে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় উঠব, তখন দেখি এই বৃদ্ধ লোকটিকে ঘিরে রেখেছেন অনেক মানুষ। ওনাকে দেখার পর আমার বাবার কথা মনে পড়ে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। ওই বৃদ্ধ লোকটির সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারি ৫ অক্টোবর রাতে ওনার ছেলেরা নাকি হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেওয়ার কথা বলে হুইলচেয়ারে বসিয়ে এখানে ফেলে যান।
তাকে সেবা দিতে আমি চান্দিনা থানা পুলিশের কাছে, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করি। কিন্তু আমার কথা কেউ কানে নেয় না। এক সপ্তাহ যাবৎ বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে অবশেষে সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানাই।
গতকাল শনিবার বিকালে মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের ঠিক পাশেই বসে আছেন এই বৃদ্ধ। হুইলচেয়ার থেকে পড়ে চোট পেয়েছেন কপালের পাশে ও পায়ে। মলমূত্র ত্যাগ করে নিজেই ধুলো দিয়ে চাপা দিলেও দুর্গন্ধে একাকার। অসুস্থতার পাশাপাশি অনাহারে মুখ দিয়ে ঠিকমতো কথা আসছে না তার।
অস্পষ্ট কথায় তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ, আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাতে গাড়ি থেকে নামিয়ে এখানে রেখে যায় আমার ছেলে হারুনসহ আরও দুজন।
তিনি জানান, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ভবানী জীবনপুরের নয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে হারুন, মেঝ ছেলে মঈন, ছোট ছেলে জসিম উদ্দিন সবাই চাকরি করে।
চান্দিনা থানার ওসি মো. সাহাবুদ্দীন খান জানান, এ ঘটনায় আমাকে কেউ অবহিত করেনি। যেহেতু এখন জেনেছি নিশ্চয়ই ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নেব।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল জানান, আমি এখনই (শনিবার রাত সাড়ে ৯টা) গিয়ে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেব।