বিশেষ প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি । নির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে টাকা ও শিক্ষায় আবদুস সাত্তার এবং মামলার দিক থেকে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ। চার বছরে সাত্তারের নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণের বেশি।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের মধ্যে আবদুস সাত্তার ছাড়া বাকি তিন প্রার্থী আগে কখনো সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচন উপলক্ষে জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চার বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় সাত্তার জেলা শহরের একতলা পাকা ভবনের মূল্য ১০ লাখ টাকা উল্লেখ করেছিলেন। তবে এবারের হলফনামায় তিনি একই ভবনের মূল্য উল্লেখ করেছেন পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া সরাইলে তাঁর ২৭ কানি (৩০ শতকে এক কানি) জমির অর্জনকালীন দাম ২৭ হাজার ও বিয়েতে উপহার পাওয়া ৪০ ভরি সোনার দাম ৪০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন তিনি।
হলফনামা অনুযায়ী, দু’জন প্রার্থী উচ্চশিক্ষিত। তাঁদের মধ্যে সাত্তার স্নাতকোত্তর ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল হামিদ এলএলবি পাস। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ উচ্চমাধ্যমিক ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম স্বশিক্ষিত।
প্রার্থীদের হলফনামায় দেখা গেছে, সাত্তারের পেশা আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৯ ও ২০১০ সালে মামলা হলেও ২০২১ সালে তা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে তাঁর কাছে নগদ ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৫২ টাকা আছে। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর কাছে নগদ ছিল ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪ টাকা। অর্থাৎ চার বছরে তাঁর নগদ টাকা বেড়েছে ৭০ লাখ ২০ হাজার ৪০৮ টাকা।
গত নির্বাচনের সময় সাত্তারের দুটি ব্যাংকে জমা ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪০৬ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকে জমা আছে ১৮ হাজার ৯২২ টাকা। অর্থাৎ চার বছরে ব্যাংকে জমার পরিমাণ কমেছে। এবারের হলফনামায় গাড়ির জায়গায় তিনি ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করলেও গতবারের হলফনামায় তিনি প্রায় ১৪ লাখ টাকার একটি ১৫০০ সিসির গাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় সংসদ সদস্য হিসেবে সাত্তার বাৎসরিক সম্মানী ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেতেন। এবার ব্যবসা থেকে কোনো আয় না দেখালেও গত নির্বাচনের সময় ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ৮০৬ টাকা।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী হামিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পেশায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। কৃষি খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ২৫ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যবসা থেকে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় পৌনে চার লাখ টাকা। আইন পেশা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা আছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। নিজের নামে সোনা আছে ৪০ ভরি ও স্ত্রীর নামে আছে ৩৭ ভরি। নিজের নামে মূলধন আছে ২ লাখ ১২ হাজার ৩৮৯ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে আছে ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ টাকা। তাঁর ৯০ হাজার টাকা দামের একটি মোটরগাড়ি এবং সরাইলে ১০ বিঘা কৃষিজমি আছে।
আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলমান। তাঁর পেশা ব্যবসায়। তাঁর বার্ষিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৮ লাখ ৪২ হাজার ২০০ এবং ব্যবসা থেকে ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার ১২০ টাকা। তাঁর কাছে নগদ আছে ১০ লাখ ৫২ হাজার টাকা। তাঁর ১৬ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেট কার, নিজের নামে ১১ লাখ টাকার সোনা এবং স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা ও ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার আসবাব আছে। আশুগঞ্জে তার ৫ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি আছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৭৬ কোটি ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫১ টাকার তাঁর দায়দেনা আছে।
জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুলের নামে মামলা নেই। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাঁর কাছে নগদ ২ লাখ ও ২ লাখ টাকার সোনা আছে। স্ত্রীর কাছে নগদ ২ লাখ ও ২ লাখ টাকার সোনার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর নামে পৈতৃক সম্পত্তি আছে ৩০ শতক। ব্যবসার পুঁজি হিসেবে প্রায় ১৮ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইল উপজেলায় আজ ৯ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ (অনূর্ধ্ব-১৭) ফুটবল প্রতিযোগিতার (অনূর্ধ্ব ১৭) উদ্বোধন করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্থানীয় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সরাইল উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইঁয়া।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন, সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, কালিকচ্ছ ইউপি চেয়ারম্যান মো.সায়েদ মিয়া, নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনসুর আহমেদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাকসুদুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির,সরাইল উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাধারণ সম্পাদক মো. তাসলিম উদ্দিন,উপজেলা নির্বাচন অফিস কর্মকর্তা মো.মাহবুবুল হক, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. পারভেজ আহমেদ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা, উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপার ভাইজার ইতি বেগম প্রমুখ।
উদ্বোধনী খেলায় অংশ নেয় সরাইল সদর ইউপি একাদশ বনাম কালিকচ্ছ ইউনিয়ন একাদশ।
খেলায় কালিকচ্ছ ইউনিয়ন একাদশ সরাইল সদর ইউনিয়ন একাদশ দলকে ট্রাইবেকারে ৩-২গোলে পরাজিত করে।
খেলার রেফারি ছিলেন, মো. শফিক মিয়া, সহকারী ছিলেন, আব্দুলাহ মতিন ও খন্দকার মাসুম বিল্লাহ। খেলার সার্বিক পরিচালনা করেন, সরাইল উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরিদ।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে জুয়া খেলার সময় ৬ জুয়ারিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৩ টায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম কুট্টাপাড়ার শরীফ মিয়ার বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুট্টাপাড়া গ্রামের হেলাল মিয়া (২৭), একই এলাকার মোঃ সাচ্চু মিয়া (৩৯), আনিস মিয়া (২৫), আব্বাস মিয়া (২৯), শান্ত মিয়া (৩২) মোঃ শরিফ (২৯)।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ৩ টার পশ্চিম কুট্টাপাড়ার শরীফ মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলা অবস্থায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে জুয়া খেলার ৬ হাজার ১১০ টাকা ও বিভিন্ন জাতের তাস উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০জন আহত হয়েছেন।
১৭ জুলাই বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা সদরের সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুল সংখ্যক রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপজেলা শহীদ মিনারে জড়ো হয়। সংখ্যা বেড়ে গেলে তারা অন্নদা স্কুল মোড় যায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। অপরদিকে উচালিয়াপাড়া মোড়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পির নেতৃত্বে অবস্থান করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ উভয় পক্ষের মাঝে অবস্থান করছিল। এরই এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। দুইপক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘন্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারগ্যাস এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এই ঘটনায় সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল ইসলাম সহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়াও উভয় পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম জানান, আমিসহ পুলিশের ১০জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারনামীয় এক আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। বাদীর অনাপত্তি ও উপজেলা বিএনপিসহ স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে গতকাল ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছেড়ে দেওয়া ওই আসামির নাম রোমান মিয়া। তিনি ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গত ২০ আগস্ট আশুগঞ্জ থানায় হওয়া একটি মামলার ৬ নম্বর আসামি। গত বুধবার দিবাগত রাতে তাঁকে আটক করে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল সেনাবাহিনী।
পুলিশ বলছে, বাদী ভুলক্রমে মামলায় ওই ব্যক্তিকে আসামি করেছে বলে আদালতে হলফনামা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে আসামি ছেড়ে দেওয়ার পর দুপুরে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেনসহ পুলিশের তিন সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া অন্য দুই সদস্য হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার ও প্রদ্যুত ঘোষ চৌধুরী। তাঁদের প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, ওসি ও দুই এসআইকে প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে। প্রত্যাহারের সাথে আসামি ছেড়ে দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশুগঞ্জ বাজারের ভাড়া বাসা থেকে রোমান মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন সেনাসদস্যরা। রাত থেকেই তাঁকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মী ও উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লোকজন থানায় চাপ দিতে থাকেন। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকালে থানার সামনে অনেকেই অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে থেকে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে আশুগঞ্জ গোলচত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। তখন রোমান মিয়াসহ অনেকেই ককটেল বিস্ফোরণ করে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা পিস্তল দিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়েন। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হন।
এ ঘটনায় ২০ আগস্ট রমজান মিয়া নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিনসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলার ৬ নম্বর আসামি রোমান। রোমানের ছোট ভাই ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মিয়া মামলার ৫ নম্বর আসামি।
মামলার বাদী রমজান মিয়া বলেন, ভুল করে রোমান মিয়াকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। রোমানের বিষয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপি দু’টি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ায় বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, বাদী বিএনপির সমর্থক এবং ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন। উপজেলার একটি স্বার্থান্বেষী মহল, যারা জীবনে কোনো দিন বিএনপি করেনি, তারা এখন নিজেদের বিএনপির নেতা-কর্মী দাবি করে ওই আসামিকে ছাড়িয়ে নেয়। এর সঙ্গে উপজেলা বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কারণ রোমান মিয়া সুবিধাবাদী ও আওয়ামী লীগের লোক। তিনি আওয়ামী লীগের একাধিক সভায় উপস্থিত ছিলেন। এক সভায় সারা জীবন আওয়ামী লীগ করবেন বলে বক্তব্য দেন, যেটি ভাইরালও হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, সেনাসদস্যরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে মামলার বাদী থানায় গিয়ে তাঁকে ভুলক্রমে মামলার আসামি করা হয়েছে বলে জানান। এ বিষয়ে তিনি আদালতে একটি অ্যাফিডেভিট (হলফনামা) দিয়েছেন এবং পুলিশকে সেটি কপি দেন। বাদীর অভিযোগ না থাকায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সূত্র : প্রথম আলো
বিশেষ প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদের (মোটর গাড়ী) প্রতিক প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মুছা মিয়া গ্রেফতারের পর এবার নিখোঁজ হয়েছেন প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে তিনি নিখোঁজ আছেন। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, আবু আসিফের বাড়ির সামনে দিন-রাত সাদা পোশাকধারী লোকজন অবস্থান করছেন। গত শুক্র ও শনিবার তার বাড়িতে তল্লাশী করা হয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
তিনি উপ-নির্বাচনে বিএনপির সাবেক নেতা এবং এই আসন থেকে নির্বাচিত পাঁচবারের সাবেক সংসদ ও বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়ার (কলারছড়ি প্রতীক) এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি।
এর আগে গত বুধবার আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে থাকা মুছা মিয়া (৮০) কে হামলা ও সংঘর্ষ মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আবু আসিফের নির্বাচন সমন্বয়কারি ও তার শ্যালক সাফায়েত সুমন ইতিমধ্যেই আত্মগোপনে আছেন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। এরা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া-(কলারছড়ি প্রতিক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী-(লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এই আসনের ২ বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (আপেল প্রতীক), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল-(গোলাপ ফুল), ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ-(মোটর গাড়ী প্রতীক)।
তবে, প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন।
উপ-নির্বাচনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করলেও উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া সমর্থক গোষ্ঠির ব্যানারে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা আজাদ ওরফে শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কলারছড়ির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতৃবৃন্দ ভোটের দিন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্থানীয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
আজ ২৯ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে প্রার্থী আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরন্নিছা মেহরীন জানান, আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমার বাড়ির সামনে সাদা পোশাকে লোকজন অবস্থান করছেন। আমার বাড়িতে একাধিকবার তল্লাশী হয়েছে। আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি।
তিনি বলেন, ‘তার (আবু আসিফ) শুভাকাক্সক্ষীরা তাকে দাঁড় করিয়েছেন। তারা এখন বলছেন সে যেখানেই থাকুকনা কেন প্রচারণায় তারা কাজ চালিয়ে যাবেন। তারা কেন্দ্রেও যাবেন। তবে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা সেটা এখন বড় বিষয়।
আবু আসিফের বাড়ির দারোয়ান মোঃ ইউসুফ বলেন, পরশু রাতে কয়েকজন এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে পুরো বাড়ি তল্লাশী করে। পরের দিন আবার আসে। বাসার সামনে সাদা পোশাকধারী লোকজন অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ কি-না সে বিষয়ে পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বাড়ির সামনে সাদা পোশাকধারী কারো অবস্থানের বিষয়টিও তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।