আখাউড়া প্রতিনিধি :
আখাউড়ায় ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ছুরিঘাতে আহত পাপন (২৭) নামে এক যুবককে উদ্ধার করেছে বিজিবি ও পুলিশ। আজ ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত যুবক হলো উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর গ্রামের নুরুল হকের পুত্র। তার বাম হাতে ও কপালে ছুরিকাঘাত এবং নাকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। খবর পেয়ে ২৫ বিজিবি (সরাইল) এর অধিনায়ক কর্ণেল সৈয়দ আরমান আরিফ এবং আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। আহত যুবককে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। তবে ওই যুবক অচেতন অবস্থায় থাকায় কারা তাকে মারধর করেছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। তার স্বজনরা এলাকায় না থাকায় তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসী ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সকালে আজমপুর বিজিবি ক্যাম্পের একটি টহল দল সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় এক যুবককে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে দেখে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। খবর পেয়ে ২৫ বিজিবি (সরাইল) এর অধিনায়ক কর্ণেল সৈয়দ আরমান আরিফ, আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুল ইসলাম এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ঘটনাস্থলে যান। পরে বিজিবি ও পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধার করে।
হাসপাতালে পাপনের প্রতিবেশি জুম্মান মিয়া বলেন, পাপন বিল্ডিংয়ের কারুকাজ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।
এ ব্যাপারে ২৫ বিজিবি (সরাইল) এর অধিনায়ক কর্ণেল সৈয়দ আরমান আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবি টহল ওই যুবককে দেখতে আমাকে অবগত করে। আমি ঘটনাস্থলে সকলের উপস্থিতিতে তাকে উদ্ধার করি। তবে সে কীভাবে সেখানে গেল এবং কারা তাকে মারধর করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় ভোট কেন্দ্রের নাম ও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত খসড়া তালিকাটি উপজেলা নির্বাচন অফিস, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার স্থানান্তর ও হালনাগাদ কার্যক্রম চলবে।
প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী আখাউড়ায় ১ টি পৌরসভা ও ৫ টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৪ টি এবং ভোট কক্ষ ২৬৫ টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার ১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৩ হাজার ৮৭১ এবং মহিলা ভোটার ৬১ হাজার ১৪৫ জন। পূর্বের ৫টি কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, খসড়া ভোট কেন্দ্রের উপর যদি কারো কোন দাবি, আপত্তি বা সুপারিশ থাকে তাহলে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন করতে হবে। এরপর আর কোন আপত্তি গ্রহন করা হবে না। ১১ সেপ্টেম্বর আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ।
আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত হবে। স্থান পরিবর্তিত ৫ টি কেন্দ্র হলো জাহানারা বেগম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আখাউড়া টেকনিক্যাল আলীম মাদরাসা, রহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর রুটি আব্দুল হক ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঘোলখার রানিখার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে টানপাড়া হাফেজিয়া মাদরাসা, পীর শাহ সুলতান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবগ্রাম, নুরপুর ক্যাপ্টেন মাহবুব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ঘোলখার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার সুফিয়া সুলতানা বলেন, গত নির্বাচনে ৪৪ টি কেন্দ্র ছিল। এবছরও তাই আছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ৫টি কেন্দ্র স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে কারো কোন আপত্তি থাকলে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ লিখিত আবেদন করতে হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া উপজেলাকে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রতিনিধি ও উপজেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন করার লক্ষ্যে ৬৬৩টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চরচনারায়নপুর, চাঁনপুর, দেবগ্রাম, রুটি, সাতপাড়া, ঘাগুটিয়াসহ ২৬টি স্থানে ২ শতক ভূমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। উপকারভোগীকে দলিলসহ এসব ঘর দেওয়া হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আখাউড়া উপজেলাসহ সারাদেশের ২২টি উপজেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করবেন।
এসময় সাংবাাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আখাউড়া উপজেলায় এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যেসকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাওয়া গেছে। তাদের ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ নতুন করে গৃহহীন হয় তাহলে পর্যায়ক্রতে তাদেরকেও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব পরিবারের সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী, মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুল আলম চৌধুরী, মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ. মতিন, দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জালাল হোসেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হান্নান খাদেম, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন, জুটন বনিক, এম.এ. জলিল, জালাল হোসেন মামুন, রুবেল আহমেদ, ফজলে রাব্বি প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত আরো একজনের পরিচয় মিলেছে। নিহত ব্যক্তি হলেন নোয়াখালি জেলার দক্ষিণ হাতিয়ার পূর্ব সোনাদিয়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে কামাল উদ্দিন হৃদয় (৪০)। তার ৩ বছর বয়সের ১টি ছেলে এবং ৬ বছরের ১টি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
তিনি ফলের ব্যবসা করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ভিডিও কল করে স্ত্রী সন্তানের সাথে কথা বলেছিলেন এবং মাজারের দৃশ্য দেখান। সন্ধ্যা এক মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এই মাজার ভক্ত। নিহতের শশুর জাবের হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ নিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ৪ জনেরই পরিচয় পাওয়া গেলো। ১০ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আখাউড়া খড়মপুর কল্লা শহীদ (র.) মাজার শরীফের ওরসে মাজারের পশ্চিমে রেলপথে আন্ত:নগর পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনের থাক্কায় নদীতে পড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়। ৪টি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কমীর্রা।
আখাউড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর আবীর আহমেদ বলেন, নিহত ব্যক্তির মোবাইলের নম্বর থেকে কল দিয়ে নিহতের পরিবারের লোকজনকে ছবি পাঠালে তারা পরিচয় নিশ্চিত করে। পরে পিবিআই নিহতের ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে এনআইডির তথ্য বের করে। তাদের দেওয়া তথ্যের সাথে এনআইডি কার্ডের নাম, বয়স ও বাবার নাম মিল আছে। তবে ঠিকানা কুমিল্লা লিখা। আমরা তাদেরকে লাশ নেওয়ার জন্য শুক্রবার রাতের ট্রেনে থানায় আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা না আসায় অজ্ঞাতানামা হিসেবে মরদেহটি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামকে দেওয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহত কামাল উদ্দিন হৃদয়ের শশুর জাবের আহমেদ বলেন, আমার জামাতা চট্টগ্রামে ফলের ব্যবসা করতো। সে মাজারের ভক্ত ছিল। প্রতি বছরই ওরশের সময় মাজারে যেত। ওই দিন দুপুরে ভিডিও কল করে আমাদের সাথে বলে। মাজার এলাকার দৃশ্য দেখায়। মাগরিবের সময় ফোন করে বলেছিল ভিডিও কল করতে কিন্তু মোবাইলে চার্জ ছিল না। পরে ফোন চার্জ দিয়ে কল দিয়ে তার মোবাইলটি বন্ধ পাই। তারপর অনেকবার ফোন করেও ফোন সচল পাইনি। পরদিন শুক্রবার দুপুরে আখাউড়া থানা থেকে আমাদেরকে ফোন করে। পরে ছবি পাঠালে আমরা সনাক্ত করি। আমাদেরকে বলেছিল ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে এ ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চলারপথে রিপোর্ট :
এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতে রপ্তানি হলেও এখন রপ্তানি হচ্ছে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য। মূলত এখন হিমায়িত মাছের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য। তবে মাছ রপ্তানি কমার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০৪ কোটি টাকা কম। এছাড়া তলানিতে ঠেকে আছে বন্দরের আমদানি বাণিজ্যও। ফলে আশানুরূপ রাজস্ব পাচ্ছে না বন্দর এবং শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চললেও ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত এ বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানি হয়।
পাঁচ বছর আগেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের তালিকায় ছিল- হিমায়িত মাছ, পাথর, রড, সিমেন্ট, তুলা, ভোজ্য তেল, এলপি গ্যাস, প্লাস্টিক, শুঁটকি ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছোট হয়ে এসেছে সেই তালিকা। বর্তমানে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট ও প্লাস্টিকসহ হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য যাচ্ছে ভারতে।
রপ্তানিকৃত পণ্যের অর্ধেকই হিমায়িত মাছ। আর মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, পুঁটি, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ও পাবদাসহ সব ধরনের চাষের মাছ। প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য আড়াই মার্কিন ডলার। প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতিত) গড়ে এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে।
তবে, গেল কয়েক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ রপ্তানি হলেও এখন তা কমে অর্ধেকে নেমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দরের রপ্তানি আয় কমেছে। মূলত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তাজা মাছ পাচারের কারণে রপ্তানি ক্রমেই কমছে বলে অভিযোগ মাছ রপ্তানিকারকদের।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আখাউড়া উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত তাজা মাছ পাচার হচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হিমায়িত মাছের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিষয়টি বিজিবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটি বন্ধ না করতে পারলে যে কোনো মুহূর্তে হিমায়িত মাছের রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়বে।
এদিকে, ভারত থেকে পণ্য আমদানিও এখন অনিয়মিত। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে গম, ভুট্টা পাথর ও পেঁয়াজ। নিজেদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এতে করে বন্দরের রাজস্ব আদায়ও তলানিতে ঠেকেছে।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২৮ টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে শুল্ক কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা। তবে বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য।
স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক পণ্য এখন নিজ দেশ থেকেই সংগ্রহ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমে এখনও বন্দরটির ঘুড়ে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সেজন্য যখন যে পণ্যের চাহিদা, সেটি আমদানির সুযোগ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে- সেটি আগে থেকে বলা যায় না। সেজন্যই আমরা সব পণ্য আমদানির জন্য বন্দর খুলে দেওয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু আমাদের সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে কিছু পণ্যের তালিকা দিয়ে আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটির এখনও সুরাহা হয়নি।
একমাত্র আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমেই বন্দরে আবার কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসতে পারে। যার মাধ্যমে সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব পাবে’- উল্লেখ করেন ফোরকান আহমেদ খলিফা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বন্দরগুলো থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের বিষয়টি অনেকাংশেই আমদানি বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি অনিয়মিত হওয়ায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে কম। আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীরা যেসব পণ্য আমদানির জন্য তালিকা দিয়েছেন- সেটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হচ্ছে। অচিরেই এ বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা করছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ চালুর মধ্য দিয়ে দু’দেশের বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে-এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে অনুমতি মিলেছে ভুটানে উৎপাদিত সব (সুতা ও আলু ব্যতীত) পণ্য ও ভারতের ৬০টি পণ্য। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের পণ্য উল্লেখিত রেলপথ দিয়ে রপ্তানি করা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এর এক প্রজ্ঞাপন থেকে আমদানির-রপ্তানির এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৩১ অক্টোবর এ প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। আজ ৬ নভেম্বর সোমবার এ প্রতিবেদকের হাতে প্রজ্ঞাপনটি আসে। একই প্রজ্ঞাপনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আরো চারটি পণ্য আমদানির অনুমতি মিলেছে। এসব পণ্য হচ্ছে, ভুষি, ডাল, বুট ও বাঁশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারির কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে। রেলপথের আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ হলে কয়েক মাসের মধ্যেই ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন বাবুল সোমবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্য খেই হারিয়ে ফেলেছে। রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি মেলায় এখন বাণিজ্যে নতুন ধারা ফিরে আসবে। ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।’
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু হলে দু’দেশের বাণিজ্যে আরো গতি বাড়বে। বিশেষ করে পাথর ও গম আমদানি আমাদের সহজ হবে। ভারতের ট্রেন বাংলাদেশে চলে আসবে বলে কমে আসবে পরিহন ব্যয়। ইতিমধ্যেই পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে, ভারতের অংশে রেললাইনের কিছু কাজ বাকি থাকায় এখনই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া সীমান্ত হয়ে দু’দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগের উদ্বোধন হয়েছে বুধবার। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আরো একটি রেল যোগাযোগ স্থাপন হলো।
এদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মুখিয়ে আছেন ভারতীয়রা। বিশেষ করে সেখানকার ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ মনে করছে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে কলকতা হয়ে সেদেশের বিভিন্নস্থানে গেলে তাদের অনেক সময় বেঁচে যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যাওয়াটা তাদের জন্য সহজ হবে।
তবে এখনই এটা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ হয়ে আগরতলা-কলকাতা ট্রেন চলাচল। এ ক্ষেত্রে বাধা মিটার গেজ রেললাইন। কেননা, আখাউড়া থেকে ভৈরব পর্যন্ত ব্রডগেজ (ডুয়েল গেজ) হলেও ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরোটাই এখনো মিটার গেজ রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই পথটুকু ব্রডগেজ লাইনে পরিণত না করা হয় ততক্ষণ বাংলাদেশ হয়ে সরাসরি আগরতলা থেকে কলকাতা যাওয়া সম্ভব না। ভারতের অভ্যন্তরের পুরোটাই ব্রজগেজ বিধায় বাংলাদেশ থেকেও গাড়ি যাওয়া সম্ভব না।
আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আবু জাফরও জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে আগরতলা থেকে কলকাতা ট্রেন চলাচল হুট করেই সম্ভব না। তবে এক্ষেত্রে আগে ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরো অংশে ব্রডগেজ লাইন করতে হবে।
একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারত-বাংলাদেশ এর মধ্যে রেলওয়ের এ সংযোগ প্রকল্পটি চালু হলে মূলত ভারতীয়রা ব্যবসায়িরাই বেশি লাভবান হবেন। এক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা পণ্য ট্রেনে করে ত্রিপুরাসহ আশপাশের সাতটি রাজ্যে সহজেই নিয়ে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন থাকায় ট্রেন চলাচলের কোনো অসুবিধা হবে না।