ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিস্থিতি বিচার বিভাগের কালো দাগ: হাইকোর্ট

জাতীয়, 14 February 2023, 1132 Views,

চলারপথে ডেস্ক :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতের এজলাসে বিচারকের বিরুদ্ধে শ্লোগান, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনা দেশের বিচার বিভাগে ‘কালো দাগ’ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের তিন আইনজীবীর উপস্থিতিতে এ মন্তব্য করে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে আদেশ দেন।

আদালত বলেন, অবস্থা এমন চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নিষিদ্ধসহ কঠোর পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হবো।

এদিন শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টির পিসফুল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। আজ থেকে সব কোর্ট চলছে। আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। সবকিছুর সমাধান হবে, আমাদের একমাস সময় দিন।

জবাবে হাইকোর্ট বলেন, কিছুই (ডেভেলপমেন্ট) হয়নি। হাইকোর্টে এটার তারিখের (শুনানির) আগে ওখানে একটু নাড়াচাড়া করেন। আমরা বুঝি। দিন যাচ্ছে আর টাইম নষ্ট করছেন। এটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আপনারা (রুলের) জবাব দিলে দেন, না দিলে না দেন। আমরা আমাদের মতো এগোবো। একটা কোর্টকে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রেখেছেন। সবকিছু আমরা দেখছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, সব আইনজীবীকে কলঙ্কিত করেছে।

এসময় তিন আইনজীবীর পক্ষে ফের সময় চাওয়া হলে আদালত বলেন, আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট হোক আর সদস্য হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বার কাউন্সিল আছে। তবে বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকেই করবো। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে চোখ রাখি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারে কী হচ্ছে। আপনারা কোর্ট বর্জন করছেন করেন, কিন্তু বিচার প্রার্থীরা কোর্টে গেলে তাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে, থ্রেট দেওয়া হচ্ছে। আপনারা একতরফা (এক্সপার্টি) গেলে আমরাও (এক্সট্রিম) যাবো। কে বারের সভাপতি, কে বিজ্ঞ আইনজীবী তা আমরা দেখবো না। এরা বাংলাদেশে প্রাকটিস (আইন পেশা পরিচালনা) করার যোগ্য কি না, সেটাও আমরা দেখবো।

এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনার ৮টি ফেসবুক ও ৫টি ইউটিউব ভিডিও সরানো হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে বিটিআরসি।

গত ১৭ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে দ্রুত এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

ওইদিন আদালতে ভিডিও অপসারণের নির্দেশনা প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ওইদিন আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আদালত ও আইনজীবীদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।
ওইদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও জেলা জজের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অবিলম্বে অপসারণে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিটিআরসিকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।

আদালতে ওইদিন আইনজীবীদের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম. সাঈদ আহমেদ রাজা, শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে তা কাম্য নয়। হাইকোর্টের আদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন আইনজীবী আদালতে এসেছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে নিয়ে বিষয়টি প্রশমনের উদ্যোগ নেবেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।

তিনি বলেন, আদালত আছে বলেই আমরা আইনজীবী। আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান থাকতে হবে। উভয়পক্ষকে আরো সংবেদনশীল ও যতœশীল হতে হবে। আদালতকেও আইনজীবীদের বুঝিয়ে কাজ করতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এ ধরনের ঘটনা ভুল বার্তা দেয়। বিচারপ্রার্থী জনগণ যেন ভোগান্তিতে না পড়েন তা সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) আইনজীবী মো. আক্কাস আলী, আইনজীবী জুবায়ের ইসলামকে আজকে সশরীরে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। গত ৫ জানুয়ারি আদালত অবমাননার রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

গত ২ জানুয়ারির ঘটনায় ‘এজলাসে আদালতের বিচারক ও কর্মচারীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের জন্য আদালত অবমাননার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা’ শীর্ষক একটি চিঠি সুপ্রিম কোর্টে পাঠান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক।

এ চিঠি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। পরে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য গত ৪ জানুয়ারি বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে নথি উপস্থাপন করা হয়। এরপর হাইকোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন আইনজীবীকে তলবের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন।
এরপর গত ১০ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের ২১ আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগারের বিরুদ্ধে আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্ট রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে ওই ২১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
যে ২১ আইনজীবীকে তলব করা হয়েছে তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বাবুল, আইনজীবী মিনহাজুল ইসলাম, এমদাদুল হক হাদি, নিজামুদ্দিন খান রানা, আনিছুর রহমান মঞ্জু, মো. জুম্মন চৌধুরী, রাশেদ মিয়া হাজারী, জাহের আলী, মো. আ. আজিজ খান, দেওয়ান ইফতেখার রেজা রাসেল, মো. ছদর উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রনি, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আরিফুল হক মাসুদ, মীর মোহাম্মদ রাইসুল আহম্মেদ, মহিবুর রহমান, মো. জাকারিয়া আহমেদ, মো. মোবারক উল্লা, মো. ফারুক আহমেদ, সফিক আহমেদ, ইকবাল।

ওই ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগার প্রধান বিচারপতির কাছে একটি আবেদন করেন।

আবেদনে জেলা জজ আদালতে এজলাস চলাকালে বিচারকের নামে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ শ্লোগান দিয়ে বিচারকাজ বিঘ্নিত ও বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ মানহানির ঘটনায় প্রতিকার চাওয়া হয়।

Leave a Reply

আখাউড়া ব্লাড ফাউন্ডেশন বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মিলনমেলা…

চলারপথে রিপোর্ট : রক্তদান হোক আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার, এই Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৯ জনের…

চলারপথে রিপোর্ট : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আব্দুল হাদিস নামের Read more

আশুগঞ্জে গাঁজাসহ দুই নারী আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস থেকে ৬ কেজি গাঁজাসহ Read more

অভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন বিএনপির: মির্জা…

অনলাইন ডেস্ক : ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যায়’ ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র দেশে Read more

অসামাজিক কাজের লিপ্ত থাকার অভিযোগে আটক…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজ বাড়িতে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার Read more

মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ছেন কেজরিওয়াল!

অনলাইন ডেস্ক : জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার দু’দিন পরই Read more

আমরা ছাপানো ভোটে নির্বাচিত হতে চাই…

চলারপথে রিপোর্ট : বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন Read more

টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবল তাজমহল

অনলাইন ডেস্ক : গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল Read more

মাজারে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে…

অনলাইন ডেস্ক : দেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থান ছাড়াও সুফি Read more

মহাপরিচালকসহ নন নার্সিং প্রশাসনের ক্যাডারদের অপসারণ…

চলারপথে রিপোর্ট : নার্সিং পেশা ও নার্সদের নিয়ে কটুক্তি করায় Read more

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়…

চলারপথে রিপোর্ট : জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস. Read more

শহীদ আবু সাঈদের কবরের পাশে জামিয়া…

গতকাল রংপুর শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন হেফাজতে ইসলাম Read more

ডেঙ্গু মশা কামড়ায়, বিএনপি আগুন জ্বালায়: তথ্যমন্ত্রী

জাতীয়, রাজনীতি, 4 August 2023, 897 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ডেঙ্গুর চেয়ে বিএনপিকে বেশি মারাত্মক বললেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু (এডিস) মশা কামড়ায়, আর বিএনপি আগুন জ্বালায়।

আজ ৪ আগস্ট শুক্রবার সকালে রাজধানীর খামারবাড়ি গোল চত্বর এলাকায় কৃষক লীগ আয়োজিত এডিস মশা নিধন ও সচেতনতা তৈরি কর্মসূচি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু মারাত্মক, বিএনপি আরো বেশি মারাত্মক। ডেঙ্গুর চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশি মারাত্মক। ডেঙ্গু মশা কামড়ায়, বিএনপি আগুন জ্বালায়। বিএনপি গাড়ি পোড়ায়, মানুষ পোড়ায়, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারে। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গু মশার চেয়েও বিএনপি মারাত্মক।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার, রাজনৈতিক কর্মসূচি দরকার। কোনো দল আজ পর্যন্ত ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধনের জন্য কর্মসূচি দেয় নাই।

তিনি বলেন, করোনার মহামারিতে আমাদের নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা করোনায় মারা গেছেন। আমাদের দলীয় ১২ জন সংসদ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজকে দেশে হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। অনেক দেশে আমাদের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। মৃত্যুর হারও সেখানে বেশি।

বিএনপির সমালোচনা করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনার সময় মাঝেমধ্যে ফটোসেশন ছাড়া তাদের (বিএনপি) আর কোথাও দেখা যায়নি। এখন আছেন তারেক-জোবায়দার কেন শাস্তি হলো সেটা নিয়ে। তারা রাজনীতিটা জনগণের জন্য করে না। বিএনপি রাজনীতি করে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং তাদের পরিবারের জন্য।

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কৃষিবিদ সুব্রত কুমার দাস।

কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি আকবর আলী চৌধুরী, হোসনে আরা এমপি, আব্দুল লতিফ তারিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু, শামীমা আক্তার খানম প্রমুখ।

বিয়ের অনুষ্ঠানের মাংস কিনতে গিয়ে সড়কে ঝরল ২ প্রাণ

জাতীয়, 14 July 2023, 607 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
চট্টগ্রামের রাউজানে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মাংস কিনতে গিয়ে সড়কে রাখা বিকল ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ২ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বৈজ্জাখালী গেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- জয় চৌধুরী (৩২) ও অন্তু তালুকদার (২৮)। জয় বোয়ালখালী গোমদন্ডরী মন্টু চৌধুরী ছেলে। তিনি কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ছিলেন। আর অন্তু তালুকদার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দৌলন তালুকদারের ছেলে। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মুরগি কিনতে বের হন জয় ও অন্তু। পথে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বৈজ্জাখালী গেট এলাকায় বিকল ট্রাকের সঙ্গে তাদের মোটর সাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে তারা গুরুতর আহত হন। রাত ৯টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাফিক পুলিশ নুরুন বলেন, বিকল ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক টুটন মজুমদার বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নজরুল ছিলেন মানব জাতির কবি: নৌ প্রতিমন্ত্রী

জাতীয়, 25 May 2023, 931 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সনাতন ও মুসলমানের কবি ছিলেন না; তিনি ছিলেন মানব জাতির কবি। তিনি মানবতার কথা বলে গেছেন।

তাঁর সাহিত্যের মধ্যে সবকিছু পাই। তাঁর প্রতিভা উপলব্ধি করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে প্রত্যক্ষ করতে হবে।
২৫ মে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত গাহি সাম্যের গান মঞ্চে ১২৪তম নজরুল জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দক্ষ কূটনৈতিকতায় ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশে আনেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেন। বঙ্গবন্ধুই কবি নজরুলকে ধারণ করে আমাদের মুক্তির চেতনায় স্থান দিয়েছিলেন, তার প্রমাণ পাই। জাতীয় কবি নজরুলের আলোচনা করতে গেলে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম আলোচনায় আসে। সাহিত‍্যের মধ্য দিয়ে একটি জাতিকে কীভাবে জাগ্রত করা যায়, সেটি তাদের দু’জনের সাহিত্য কর্মে ফুটে উঠেছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের চাওয়া-পাওয়াকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’-এটিকে জাতীয় সঙ্গীত এবং নজরুলের ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ এটিকে রণ সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের দু’জনকেই সম্মানিত করেছেন। আমরা নজরুলের সাহিত্য চর্চাকে ছড়িয়ে দিয়ে তার প্রতি সম্মান দিতে পারব। সেই লক্ষ্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকাশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারী, রেজিস্ট্রার

কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, বিশ্ববিদ‍্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রামিম আল করিম, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম ‘নজরুলের কাব্য প্রতিভার উন্মেষ ও বিকাশ’ বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ১২৪তম নজরুল জন্মজয়ন্তী-২০২৩ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানটি সদ‍্যপ্রয়াত কল্যাণী কাজীকে উৎসর্গ করা হয়।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রতিমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষেধ

জাতীয়, 11 May 2023, 1018 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ ১১ মে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সভায় এ তথ্য জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, এই ৬৫ দিন দেশি-বিদেশি মৎস্য আহরণকারীদের অবৈধ মৎস্য আহরণ যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৪টি জেলার ৬৭টি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধের এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২ জেলের জন্য প্রথম ধাপে ১৭ হাজার ৪১৯ টন ভিজিএফের চাল এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকার উপকরণ সহায়তা দেবে।

মন্ত্রী বলেন, মাছকে বেড়ে উঠতে দেওয়া এবং অবৈধ আহরণ বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। কাউকে আইনের বাইরে কিছু করতে দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে যে কোনো চাপ মোকাবিলা করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য দেখা গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন নৌবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি, নৌ পুলিশের ডিআইজি, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বেশ কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, মেরিন হোয়াইট ফিশ ট্রলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী বোট মালিক সমিতি, বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন ও জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির প্রতিনিধিরা।

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় রাখতে নৌকায় ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 29 December 2023, 379 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বরিশালবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারলে বরিশালে ছয় লেনের রাস্তাসহ অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নেরও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

আজ ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। যখন জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল তখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আসলে দেশ এগিয়ে যায়। কাজেই এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি।

এ সময় নতুন ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার আহ্বান, যারা প্রথমবার ভোট দিতে আসবেন, নিশ্চয় চাইবেন না যে, আপনার ভোট ব্যর্থ হোক। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’

আওয়ামী লীগ যখন জনগণের জন্য উন্নয়ন করে, তখন বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেললাইন কেটে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ মরার ফাঁদ পাতে। মা আর সন্তানকে একসাথে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এই দৃশ্য বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। গাড়িতে আগুন দেয়। ২০০১ সালের অগ্নিন্ত্রাস শুরু করেছিল। এরপর ২০১৩, ২০১৪ সালের পর এখন আবার শুরু করেছে।

“আমি ধিক্কার জানাই, ওই বিএনপি-জামায়াতকে। বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসী দল। এই সন্ত্রাসী দলের রাজনীতি করার কোনো অধিকার বাংলাদেশে নেই। কারণ তারা মানুষ পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে, ওদের রাজনীতি মানুষ পোড়ানোতে। তাদের এদেশের মানুষ চায় না। তাদের দোসর কে? যারা একাত্তরের গণহত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ করেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিয়েছে। যাদের বিচার করেছি, সাজা দিয়েছি; সেই যুদ্ধাপরাধীরা হচ্ছে তাদের দোসর।”

তিনি বলেন, একদল হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিং এবং যত প্রকার অপকর্ম…এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী সেই দল। তার সাথে জুটছে যুদ্ধাপরাধী দল। এরা নির্বাচন চায় না। বানচাল করতে চায়।

নৌকায় ভোট দিলে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরিক হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আপনাদের কাছে আহ্বান, আপনারা ৭ তারিখে সকলে সকাল সকাল সবাই ভোট কেন্দ্রে যাবেন। মার্কাটা কি? নৌকা মার্কা। এই নৌকা হচ্ছে নুহ (রা.) নবীর নৌকা। মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিল।

“এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।”

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিখাতে দেশকে এগিয়ে নিতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে দরে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলতে চাই। যাতে বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম চলতে পারে।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ছেলে মেয়ে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিখবে। দক্ষ জনশক্তি হবে। আমাদের সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্ট সরকার হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট অর্থনীতি হবে, সমাজ ব্যবস্থা স্মার্ট হবে।”

দেশের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বরিশালে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আজকে অবহেলিত বরিশাল আজ কোথায় আছে। বরিশাল কি উন্নত হয়েছে?’ এ সময় উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে বরিশালের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বরিশাল বিভাগে নৌবাহিনীর ঘাটি করেছি, সেনানিবাস করেছি, এলাকার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেখানে সোলার প্যানলসহ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় নিচ্ছি। ভবিষ্যতে বরিশালেও নিয়ে আসব যাতে আরও শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।’

“তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল কুয়াকাটায় চলে আসবে, সেখানে স্থাপন করা হবে যাতে দক্ষিণাঞ্চলের ইন্টারনেট নির্বিঘ্ন হয়। বরিশাল ছিল অন্ধকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, এখন প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কথা দিয়েছিলাম কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। কথা রেখেছি। আমরা দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, এখন দিন বদলে গেছে।”

ভাঙা থেকে বরিশাল-কুয়াকাটা এবং পায়রা পোর্ট পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই আমাদের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই বরিশালে আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।

এ সময় বরিশাল একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, মেরিন একাডেমি করে দিয়েছি, প্রতিটি নদীর ওপর সেতু করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, বরিশাল ছিল শষ্য ভাণ্ডার। আবারও সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য খাদ্য সংরক্ষণাগার করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে দক্ষিণাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সেটা মাথায় রেখে ডেল্টা প্লান ২১০০ পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা আমি করে দিয়েছি। কাজেই এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কারা পারবে? একমাত্র আওয়ামী লীগ পারবে।

এ সময় তিনি বলেন, দারিদ্রের হার ৪১ থেকে ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ২৫.১ ভাগ ছিল, তা ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশের হতদরিদ্র থাকবে না। আমরা গৃহহীণদের ঘর করে দিচ্ছি। প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, জমি পাবে। কেউ গৃহহীন থাকবে না।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে দেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির অভয়ারণ্য করেছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার যুগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ থেকে থেকে ২০০১ সালে দেশ যত এগিয়েছিল, তারপর তার থেমে গেল। চক্রান্ত করে ২০০১ এ আমাদের হারানো হয়। এরপর যে অথ্যাচার শুরু হলো। এই বরিশাল থেকে ২৫ হাজার জনগণ আমার কোটালীপাড়া গোপালগঞ্জে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ ঘরে থাকতে পারত না। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ হাত কাটা, পা কাটা, চোখ তোলা, হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড়গুড়ো করে মারা, ঘরবাড়ি দখল করা, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করা, ফাহিমা-মহিমা কতো মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এইভাবে তাদের অত্যাচার চলেছিল।’

“২০০১ থেকে ২০০৬ ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার যুগ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও ওই বিএনপি ক্ষমতায় থেকে তাদের ভাগ্য গড়েছিল।”

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে সমস্ত দেশের গ্রেনেড হামলা বোমা হামলা। এমনকি আমার ওপর পর্যন্ত গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাঁচিয়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আমাদের মানবঢাল করে সেদিন রক্ষা করেছিল। এই বাংলাদেশকে তারা একটা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দুর্নীতির অভ্য়ারণ্য করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী তার জনসভার শেষ দিকে বরিশাল বিভাগের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বরিশালবাসীর কাছে ভোট চান।