চলারপথে রিপোর্ট :
সমাজ সেবায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘‘মাদার অব হিউম্যানিটি’’ পরিবর্তিত নাম ‘‘জাতীয় মানব কল্যাণ পদক-২০২০’’ গ্রহণ করছেন, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার। গতকাল গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে এই স্বর্ণ পদক পরিয়েদেন এবং রেপ্লিকা ও সম্মাননা সনদ হস্তান্তর করেন। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জনাব র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সে কারণে বিশ্বদরবারে ‘‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’’ বা ‘‘মানবতার মা’’ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১৯ সালে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক নীতিমালা-২০১৮’’ কার্যকর করে।
সমাজসেবায় সর্বোচ্চ অবদানের জন্য আল-মামুন সরকার ২০২০ সালে প্রথমবারের মত এই পদকের জন্য জাতীয় ভাবে মনোনিত হন। পরবর্তীতে নামকরণ জটিলতায় ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রী পরিষদ সভায় নামকরণ পরিবর্তন করে, ‘‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক’’ নির্ধারণ করা হয়। এই সম্মাননায় পঁচিশগ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, একটি রেপ্লিকা ও সম্মাননা পত্র এবং নগদ দুই লক্ষ টাকার চেক অন্তর্ভূক্ত।
চলারপথে রিপোর্ট :
ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি মন্তব্য করে জনগণকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, যে কোন ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে দেশে এক অসন্তোষ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। আপনারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন এবং এই চেষ্টা যদি কেউ করে সেই চেষ্টাকে আপনারা জানতে পারলে আইনের আওতায় আনার জন্য পদক্ষেপ নিবেন। আশা করি, আমরা যদি সজাগ থাকি, সচেতন থাকি বাংলাদেশ কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।
আজ ২৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে প্রদত্ত গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। টানা তিন বার কসবা-আখাউড়া আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এবং তৃতীয় মেয়াদে আইনমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বিএনপি-জামাতের সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেকবার যখন আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচন দেই তখন বিএনপি-জামাত ষড়যন্ত্র শুরু করে। যাতে তারা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে। নির্বাচন যাতে বাংলাদেশে না হয়। গণতন্ত্র যেন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা না পায়। জনগণের সমর্থনে প্রত্যেকবার শেখ হাসিনা তাদের ষড়যন্ত্র ধ্বংস করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ প্রমান করেছে তারা শেখ হাসিনার সরকার চায়। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটা উন্নত দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে বসবে। আপনারা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করে রাখলেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো।
বিপুল ভোটে নির্বাচিত করায় আনিসুল হক কসবা-আখাউড়াবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনার আমার জন্য দোয়া করবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি।
মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি জনগণের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন আনিসুল হক।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আশুগঞ্জ-সরাইল আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ড. অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। এসময় আওয়ামলীগের পক্ষে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল।
এর আগে বিকালে সংবর্ধনাস্থলে এসে পৌঁছলে মন্ত্রীকে ফুল বরণ নেয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
চলারপথে রিপোর্ট :
মুগদায় ট্রাকে গ্যাস নেওয়ার সময় ট্রাকের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সাদ্দাম সর্দার (২৬) নামে এক যুবক মারা গেছেন। ট্রাকের হেলপার ছিলেন ওই যুবক। এ ঘটনায় মো. হিমেল নামে একজন আহত হন।
আজ ২১ মার্চ মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে মুগদার একটি ফিলিং স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জানান, মুগদার দেশ সিএনজি পাম্প স্টেশনে ভোর পাঁচটার দিকে ট্রাকে গ্যাস নেওয়ার সময় ট্রাকের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে হেলপার সাদ্দাম ঘটনাস্থলেই মারা যান। এছাড়া হিমেল নামে আরো একজন আহত হন। হিমেলকে প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে হিমেলকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, নিহত যুবকের নাম ছাড়া পুরো পরিচয় জানা যায়নি। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেকের মর্গে রয়েছে। আহত হিমেল জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে মাদকের বিষয়টি। আওয়ামীলীগে ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাদক বিরোধী পোষ্ট ও স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
আজ ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সিঙ্গারবিল বাজারে এক পথ সভায়ও মাদকের বিষয়টি তুললেন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
সিঙ্গারবিল বাজারের পথ সভায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাজারে দুধ ও পাওয়া যায় মদও পাওয়া যায়। আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম আপনারা কোনটা কিনবেন। তবে আমার পরামর্শ থাকবে আপনারা দুধ কিনবেন।
পথসভায় র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে বিজয়নগরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হয়েছে। আমি গত ১৩ বছরে কি করতে পেরেছি সেটা আপনারা জানেন। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট দেয়ার সময় আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তিনি মাদক ব্যবসায়ীকে না বলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার আহবান জানান।
এ সময় র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভ‚ইয়া, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিসেস নাছিমা লুৎফুর রহমান (নাসিমা মুকাই আলী), উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সিঙ্গারবিল বাজারের পথ সভার পর মোকতাদির চৌধুরী এমপি সিংগারবিল বাজার থেকে বিষ্ণুপুরে যান।
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসনে আওয়ামীলীগ, স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ছিলেন। গত ১৩ বছরে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মোহাম্মদ মিয়া চাঁন (৫৫) নামে এক বিএনপির নেতা মৃত্যুবরন করেছেন। আজ ১৯ আগস্ট শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাউতলী স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত মোহাম্মদ মিয়া চান উপজেলার চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, জেলা বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দিতে মোহাম্মদ মিয়া চান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন। বেলা ১১টার দিকে মোহাম্মদ মিয়া চান একটি মিছিল নিয়ে কাউতলী স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি স্ট্রোক করেন। অচেতন অবস্থায় দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিজয়নগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব লিটন মুন্সী জানান, কাউতলী থেকে নেতা-কর্মীরা পদযাত্রা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে যাওয়ার পথে কাউতলী স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে পৌছলে হঠাৎ করে তিনি স্ট্রোক করেন। পরে তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে চর-ইসলামপুর থেকে নৌকাযোগে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন মোহাম্মদ মিয়া। পরে কাউতলী থেকে পদযাত্রা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে যাওয়ার পথে কাউতলী স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে পৌছলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি অসুস্থ হন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
সময় থমকে গিয়েছিল এ বাংলার বুকে। তার পাতায় পড়েছিল কালিমার ছাপ। আর পৃথিবী নীরব চোখে দেখেছিল এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
মেশিনগানের গুলিতে মারা হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালিদের। বাদ যায়নি বৃদ্ধ-বয়স্ক-জোয়ান-কিশোর-শিশু কেউ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘরবাড়ি। আজ সেই বিভীষকার ২৫ মার্চের কালরাত।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার আগ্রাসনে বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর কালো আঁধার। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ১৯৭১ সালের এদিন রাত ১০টা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দেশব্যাপী পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিলেন। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় মৃত্যুর নগরীতে পরিণত করেছিলেন ঢাকা শহরকে।
বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের কাজ চলছে।
১৯৭১ সালের এ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশলাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ এবং অগ্নিসংযোগ। এ রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শুত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। এ রাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রণোদনা জোগায়।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ রাতে শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বর্বর হানাদার বাহিনী।
মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক ও সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হানাদারর চলার পথে রাস্তার দুপাশে গুলি ছুড়ে মারে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই।
ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি, আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এ হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।
এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখন্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।
রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যূহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় সেনানিবাসে। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটক রাখা হয়।
২৫ মার্চের পরদিন সকালে লুকিয়ে জগন্নাথ হলের হত্যাযজ্ঞের কিছু আলোকচিত্র ও ভিডিও ধারণ করেছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. নূরুল উলা। ১৯৭২ সালে বাংলার বাণী পত্রিকার এক বিশেষ সংখ্যায় ‘জগন্নাথ হলের মাঠে’ শীর্ষক লেখায় তিনি লিখেন, ‘২৬ মার্চ সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে ক্যামেরা চালু করি। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম, জগন্নাথ হলের সামনেই মাঠে কিছু ছেলেকে ধরে বাইরে আনা হচ্ছে এবং তাদের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। তখনই আমার সন্দেহ হয় এবং আমি ক্যামেরা অন করি। দেখলাম একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক রয়েছে। সে বসে পড়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে। তার দাড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল যে সে মুসলমান। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী তার কোনো কথাই শুনতে চায়নি। তাকে গুলি করে মারা হলো। মাঠের পূর্ব পাশে পাকিস্তানি বাহিনী একটা তাঁবু বানিয়ে ছাউনি করেছিল। সেখানে দেখছিলাম, ওরা চেয়ারে বসে বেশ কয়েকজন চা খাচ্ছে আর হাসি-তামাশা ও আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ছে। যাদের আমার চোখের সামনে মারা হয়েছে ও যাদের মারার ছবি আমার ক্যামেরায় রয়েছে, তাদের দিয়ে প্রথমে হলের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছিল। মৃতদেহগুলো এনে সব এক জায়গায় জমা করা হচ্ছিল এবং ওদের দিয়ে লেবারের কাজ করানোর পর আবার ওদেরই লাইনে দাঁড় করিয়ে এক সারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার মনে হয়, প্রায় ৭০-৮০ জনের মৃতদেহ এক জায়গায় জমা করা হয়েছিল।
শহিদ জননী জাহানার ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে কালরাত নিয়ে ২৬ মার্চের লেখার এক জায়গায় লিখেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রচন্ড যুদ্ধের পর বাঙালি পুলিশরা বেশিরভাগ প্রাণ দিয়েছে। অল্প কয়েকজন পালাতে পেরেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন পাকসেনার গুলিতে ঝাঁজরা। পাক আর্মি ‘দ্য পিপল’ অফিস পুড়িয়েছে, পুড়িয়েছে ইত্তেফাক অফিস। ঢাকায় যত বাজার আছে, বস্তি আছে, সব জায়গা আগুনে পুড়ে ছাই-ছাই হয়েছে রায়েরবাজার, ঠাটারি বাজার, নয়াবাজার, শাঁখারি পট্টি।’