চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারতীয়দের জন্যও অনুকরণীয়। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের জন্য ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই দেশেরই মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের যে মিল রয়েছে তা পরবর্তী প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অব্যাহত থাকবে।
আজ ৩ মার্চ শুক্রবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ও মানুষের কল্যাণে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তা সারা পৃথিবীর কাছে অনুকরণীয়। বাংলাদেশ ও ভারতের উন্নয়নের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তা চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, মার্চ মাস হলো বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাস। এই মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এই মাসেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
এর আগে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমাদের লোকসংগীতের জায়গাটি অনেক সমৃদ্ধ। আমাদের বাউল ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।
৭ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী জিএস মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দুদিনব্যাপী লোকসংগীত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগেরকার দিনে লোকসংগীত তথা বাউলদের অনেক কদর ছিল। যা হারিয়ে গিয়েছিল। নরওয়ের নাগরিক ওয়েরা সেথার আমাদের লোকসংগীতকে ভালোবেসে আবার উজ্জীবিত করেছেন। যা আবার আমাদের জগতে ফিরে এসেছে। তিনি লোকসংগীত চর্চায় প্রতিষ্ঠা করেছেন মায়ের তরী। যা দেখতে এসেছি।
কিশোর বয়সের স্মৃতিচারণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আজ থেকে ৫০ বছর আগে কিশোর বয়সে লোকসংগীতের আসর বসত। বসত গীতিকার সুরকার ও শিল্পীদের আড্ডা। তখন এসব আসরে ছুটে যেতাম। মাঝে এসব হারাতে বসেছিল। যা আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। সেই পুরনো বাদ্যযন্ত্র আজ এসেছে অনুষ্ঠানে। সেই তবলা, দোতরা, হারমোনিয়াম…। বাউলদের আসল জিনিস দোতরা। দোতারায় বাউলের সুর ওঠে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ তথা আমাদের লোকসংগীতকে ভালোবেসে তার উৎকর্ষ সাধনে যিনি কাজ করছেন। নরওয়ের নাগরিক সেই ওয়েরা সেথার চাইলে আমরা তাকে সানন্দে নাগরিকত্ব দেব ইনশাআল্লাহ।
৭ মার্চ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস আমাদের হৃদয়ের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়, আমাদের মুক্তির ভাষণ দেন। আমাদের স্বাধিনতার মাস। কীভাবে নিরস্ত্র বাঙালি একটি ভাষণ শুনে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে হানাদার মুক্ত করেন। আজ সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। এ দিনে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। যা শুনে নিরস্ত্র বাঙালিরা দেশকে হানাদার মুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৭ মার্চ শুধু ভাষণ নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণাও। তাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ভাষণ শুনে আমাদের আর পেছনে ফিরতে হয়নি।
মায়ের তরীর প্রতিষ্ঠাতা নরওয়ের নাগরিক লোকসংগীত গবেষক ওয়েরা সেথারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার কবির, বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুজ্জামান মানিক, স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ, রংপুরের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টিএমএ মমিন, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর ই আলম সিদ্দিকী ও কবি সাহিত্যিক ফেরদৌস আরা বিউটিসহ অনেকে।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা কথা বলার চেষ্টা করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর গাড়ির সামনে দাঁড়ালেও এড়িয়ে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
অনলাইন ডেস্ক :
বেশি মাছ ধরা এবং অন্যান্য মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভঙ্গুর সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতির হাত থেকে বিশ্বের মহাসাগর ও নদীগুলোকে রক্ষায় মেরিন বায়োডাইভারসিটি অব এরিয়াজ বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন (বিবিএনজে) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেনারেল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিংয়ের ট্রিটি ইভেন্ট চত্বরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বুধবার ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’র অধীনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ কথা জানান। চুক্তিতে সাধারণ ঐতিহ্য হিসেবে বর্ণিত জেনেটিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান এবং নেদারল্যান্ডের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী লিজে শ্রেইনেমাচারের সঙ্গে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগদানের পাশাপাশি জলবায়ু গতিশীলতার ওপর সম্মেলন এবং ১৮তম এশিয়া সহযোগিতা সংলাপসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন।
মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ বাকি দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হয়ে উঠেছে। ধনী দেশগুলো মূলত কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবদান মাত্র ০.৪৭ শতাংশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধনী দেশগুলোকে প্রতি বছর জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মেনে চলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করে না। তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জলবায়ু তহবিল থেকে নামমাত্র অর্থ পেয়েছে। প্রতিশ্রুতি মেনে চলার জন্য ধনী দেশগুলোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার।
এ সময় অন্যদের মধ্যে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদ উপস্থিত ছিলেন। খবর-বাসস
চলারপথে রিপোর্ট :
লোকামানপুর এলাকায় ট্রেনের সাথে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। লোকমানপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন দোডাঙ্গি রেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় রাজশাহীগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে মোটর সাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রী নিহত হন। এরা হলেন বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত তছলিমের ছেলে মফিজুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০)। নিহতরা মাড়িয়া গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলে করে জামনগর যাচ্ছিলেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়া বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সফিউল আযম খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে মফিজুর রহমান শ্বশুরালয় মাড়িয়া গ্রাম থেকে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে সঙ্গে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে নিজ বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর পশ্চিমপাড়া গ্রামে ফিরছিলেন। পথে লোকমানপুর রেল স্টেশন এলাকার অদুরে দোডাঙ্গি রেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় রাজশাহীগামী ট্রেনের ইঞ্জিনে সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল ছিটকে পরে দুমরে মুচরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। বিষয়টি ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানাকে অবহিত করার পর তারা ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ত্রুটিপূর্ণ বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়ে সরকার ওই প্রতিবাদ জানায়।
বার্তায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক দফা অসাংবিধানিক দাবির নামে বিএনপি সহিংসতা ও জনবিচ্ছিন্নতার অভূতপূর্ব প্রদর্শনী করছে। বাংলাদেশ সরকার তাতে গভীরভাবে মর্মাহত।
বিএনপির অনুরোধ অনুসারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কিছু নির্দিষ্ট শর্তে ২৮ অক্টোবর তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। তবে বিএনপিকর্মীরা রাস্তায় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ব্যক্তি ও সম্পত্তির ওপর হামলার আশ্রয় নেয়। এ ধরনের ব্যাপক সহিংসতার প্রধান শিকার হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরপরাধ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তি।’
জাতিসংঘকে পাঠানো ‘নোট ভারবাল’-এ (কূটনৈতিক চিঠি) বলা হয়েছে, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশের একজন সদস্যকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা আক্রান্ত ও আহত হয়েছেন। বাস, ফায়ার সার্ভিসের ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অন্য বিচারকদের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ হাসপাতাল চত্বর ও অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বেশ কয়েকটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিএনপির এমন ক্রমাগত নৃশংসতার মুখেও বাংলাদেশ সরকার এবং এর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত সংযম ও ধৈর্য প্রদর্শন করেছে। তারা জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সর্বনিম্ন পর্যায়ের বলপ্রয়োগ করেছে।’
বাংলাদেশ বলেছে, মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতিতে মোটরসাইকেলে চড়ে হামলা করা ‘মুখোশধারী ব্যক্তিদের’ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের বলে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের বিবৃতি ত্রুটিপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার ত্রুটিপূর্ণ এই বিবৃতির প্রতিবাদ জানাবে। গত রাতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর তাদের আগের বিবৃতি সংশোধন করে সঠিক তথ্য তুলে ধরবে। না হলে প্রতিষ্ঠানটি গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গত সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাতে ৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র লিজ থ্রসেল পরদিন গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ সংখ্যা ১১ বলে উল্লেখ করেন।
বস্তুত ঢাকায় গত শনিবারের সংঘাতের সময় পুলিশের এক সদস্য ও যুবদলের এক স্থানীয় নেতার মৃত্যু হয়। পরদিন রবিবার হরতালে ১৩ জেলায় সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে দুইজন পৃথক ঘটনায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। গত মঙ্গলবার বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের প্রথম দিন আরো চারজন নিহত হন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের মুখপাত্রের দেওয়া বিবৃতিতে হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে বিএনপির অভিযোগ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সহিংসতায় সরকার সমর্থিত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততারও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের বিবৃতির বর্ণনা বেশ ত্রুটিপূর্ণ, বাস্তবতাবিবর্জিত। আমরা এর একটা প্রতিবাদ পাঠাব। আমরা মনে করি, তাঁরা যথাযথভাবে অবহিত নন।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যে ঘাটতি আছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে ঘাটতি থাকা খুবই দুঃখজনক।’
চলারপথে রিপোর্ট :
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বাদ এশা পরমানন্দপুর ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
এর আগে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ৩টায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, ‘বাবা দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে এক সপ্তাহ আগে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিলেন। শুক্রবার রাত ৩টা ২ মিনিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’
এর আগে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার প্রথম জানাযা শনিবার সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। পরে সড়কপথে মরদেহ সরাইল উপজেলা সদরে আনা হয়। শনিবার বাদ আসর সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ মাঠে। বাদ মাগরিব তৃতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় পরমানন্দপুর গ্রামে। শনিবার বাদ এশা পরমানন্দপুর ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
এ দিকে সরাইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জানাজায় অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার, সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, নাসিরনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. রাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা প্রমুখ। এ সময় সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলী আজাদ উপস্থিত ছিলেন। তবে জানাজায় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।
উকিল আব্দুস সাত্তারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার।
জানা যায়, আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলেন।
আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৭৯ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকার থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আবদুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে ২ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন এ নেতা। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন।