ভুল চিকিৎসায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগে গ্রেফতার ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 19 March 2023, 1571 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আল খলিল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ইশতিয়াক আহমেদ প্রকাশ ইকরাম (২১) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

banner

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার বেলা ১১টার দিকে নিহতের স্বজনসহ স্থানীয়রা হাসপাতালে ভাংচুর করেছে।

পাশাপাশি শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ও মানববন্ধন করেছে নিহতের স্বজনসহ বন্ধুরা। নিহত ইশতিয়াক আহমেদ সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের চান্দিয়ারা গ্রামের হাজী সহিদ মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় লোকজন, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ইশতিয়াক বেশ কয়েকদিন ধরে নাকের পলিপাস সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর নাকের মাংস বেড়ে গিয়েছিল। নাকের অস্ত্রোপচারের জন্য গত শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে সে জেলা শহরের পুরাতন জেলরোডস্থ আল খলিল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়।

ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ট হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রাফিউল আলম তার অস্ত্রোপচার করেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ইশতিয়াককে ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয়। সেখানে তাকে অচেতন করার ইনজেকশন দেন অবেদনবিদ (এনেস্থেশিস্ট) ফৌজিয়া মমতাজ সুপ্তি। অস্ত্রোপচারের পর অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে অচেতন ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়।

পরে বিষয়টি জানতে পেরে রোগীর মা শরিফা বেগম ও তাঁর ভাবী ভয় পেয়ে চিৎকার-চেচামেচি শুরু করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে পুনরায় অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যান। এরপর থেকে রাত পর্যন্ত স্বজনরা বার বার ইশতিয়াককে দেখার চেষ্টা করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে দেখার সুযোগ দেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইশতিয়াক ভালো আছেন বলে তার স্বজনদের আশ্বস করেন। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে রোগীর স্বজনকে না জানিয়ে অচেতন অবস্থায় ইশতিয়াক জেলা শহরের কুমারশীল মোড়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইসিইউ স্পেশালাইডজ এন্ড জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করে আল খলিল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইশতিয়াকের মৃত্যু হয়।

বেলা ১১টার দিকে ইশতিয়াকের স্বজনরা আল খলিল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাসপাতালের একজন মালিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেন। বেলা ১২টার দিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠানো হয়।

এদিকে দুুপুর দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে নিহতের স্বজন ও বন্ধুরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহসহ নিহতের বন্ধুরা বক্তব্য রাখেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন আল খলিল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল সাকিব (৩২), কর্মী আরিফুল ইসলাম (২৮) ও এমদাদুল বাছির (৩৩)।

দুপুরে ভুল চিকিৎসায় ইশতিয়াকের মৃত্যুর অভিযোগ এনে নিহেতর বড় ভাই বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে আল খলিল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান খলিলুর বশির, চিকিৎসক রাফিউল আলম ও ফৌজিয়া আক্তার টিকলিকে আসামী করে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

নিহতের ভাবী আরজিনা আক্তার বলেন, ইশতিয়াককে সুস্থ অবস্থায় অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয়। চিকিৎসক রাফিউল আলম তার অস্ত্রোপচার করেন। বিকাল চারটায় অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে বেডে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর পর তাঁকে ডাকতে ও নাড়াচাড়া করানোর কথা বলেন চিকিৎসক। এক পর্যায়ের তাঁর হাত পা ঠান্ডা ও কালো হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে তাঁকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটর নেয়া হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসক ফোৗজিয়া সঠিকভাবে এনেস্থেসিয়া না দেয়ায় তাঁর এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানতে পারি। আমাদেরকে কিছু না বলে তাঁকে অন্য হাসপাতালের আইসিউতে নিয়ে যায় ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার বেলা ১২টায় আইসিইউ হাসপাতাল ইশতিয়াকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইসিইউ স্পেশালাইডজ এন্ড জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) আবু কাউসার বলেন, তাকে আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় আনা হয়। শনিবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ব্যাপারে নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাফিউল আলমকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি রিসিভ করনে নি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ইশতিয়াকে মৃত্যুর বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তার ভাই বাচ্চু মিয়া। ঘটনার প্রেক্ষিতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

ইখলাস মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান : ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর Read more

প্রাথমিক তদন্তেই ভুয়া মামলার আসামিরা রেহাই…

অনলাইন ডেস্ক : উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন Read more

গাজীপুরে শফিক, তারিক, পাপনের ১০ তলা…

জায়েদুল কবির ভাঙ্গি, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর : গাজীপুর সদরের চান্দনা Read more

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ…

অনলাইন ডেস্ক : বরগুনার পাথরঘাটায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা Read more

ইসরাইলি হামলায় একদিনে আরো ৮১ ফিলিস্তিনি…

অনলাইন ডেস্ক : গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৮১জন ফিলিস্তিনি Read more

কৃষি বীজ সংরক্ষণাগার ভেঙে দোকান নির্মাণের…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলি Read more

মিথ্যা মামলা করলে কী কী শাস্তি?

অনলাইন ডেস্ক : দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো মিথ্যা মামলা। Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বহিস্কার

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা Read more

আখাউড়ায় অবৈধ চায়না রিং জাল ধ্বংস

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় তিতাস নদীতে অভিযান পরিচালনা Read more

রেলপথে মাদক পাচার প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশের…

চলারপথে রিপোর্ট : মাদক চোরাচালান, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ দমন Read more

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সেরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 12 May 2024, 625 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বরাবরের মতো এবারো এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এ এগিয়ে রয়েছে জেলার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়া জেলা শহরের দুটি প্রতিষ্ঠানে পাসের হার শতভাগ।

banner

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২৫ হাজার ২২৯ শিক্ষার্থী। পাস করেছে ২০ হাজার ২৯৪ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৮০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭১৪ শিক্ষার্থী।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল থেকে মোট ৩০ হাজার ৯০৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৪ হাজার ৯৭৩ জন পরীক্ষার্থী। পাসের হর ৮১ দশমিক ৪৫। এসএসি, দাখিল ও ভোকেশনাল মিলিয়ে জেলা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯৬১।

এবছর জেলা থেকে মাদরাসার ১ হাজার ৩৬২ পরীক্ষার্থী এসএসসির দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে পাস করেছে ১ হাজার ১০৩ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৮০ দশমিক ৯৮। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬জন।

এবছর জেলা থেকে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪ হাজার ৩১২ পরীক্ষার্থী এসএসসির ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে পাস করেছে ৩ হাজার ৫৭৬ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০১জন।

বিভিন্ন বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জিপিএ-৫ এ- এগিয়ে রয়েছে জেলার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এ বছর অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ৩২১জন অংশ নিয়ে পাস করে ৩১৯জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮০জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

জেলার গভঃ মডেল গার্লস হাই স্কুল থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ২০১জন অংশ নিয়ে পাস করে ১৯৬জন পরীক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫১ শতাংশ।

জেলার সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ৩৩২জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩২১জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৭জন। পাসের হার ৯৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ১৯৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৮৬জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬২জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

এছাড়া জেলা শহরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেসিডেন্সিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে পাসের হার শতভাগ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেসিডেন্সিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৬৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭জন। বিয়াম ল্যাবরেটরি থেকে ৭জন অংশ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে মন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বৈঠক

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 12 January 2023, 2487 Views,

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।

banner

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের বৈঠক হয়েছে। আইনজীবী ও কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে এ ঘটনা ঘটে।ঢাকায় আইনমন্ত্রীর গুলশানের আবাসিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।বৈঠকের বিষয়ে মফিজুর রহমান জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে যা চলছে, সে সম্পর্কে আদ্যপান্ত জানানোর পর আইনমন্ত্রী বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করার ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতিনিধি হিসেবে মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর নূর দুলালও উপস্থিত ছিলেন।জেলা আইনজীবী সমিতির এই নেতা বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে যে আমরা জেলা জজ শারমিন নিগারের অপসারণ দাবি করছি, তাও তাদের বলেছি। এ ছাড়া বিচারক ফারুক আহমেদও যে চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে তিনটি জরুরি মামলা গ্রহণ না করে, আইনজীবীদের সঙ্গে অসঙ্গত আচরণ এবং ঢালাওভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আইনজীবীদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছেন। সেটাও অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবারও আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কর্মসূচি চলমান থাকবে জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানবীর ভূঁইয়া বলেন, আইনজীবীদের দাবি অনুযায়ী জেলা জজসহ দুই বিচারক ও দুর্নীতিবাজ নাজিরকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আদালত বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, শীতকালীন ছুটির আগে আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল গত ১ ডিসেম্বর। ওই দিন তিনটি মামলা না নেওয়ায় গত ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। এরপর গত ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে গত ৪ জানুয়ারি জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আদালতের সব এজলাসের দরজা ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করে। এর প্রতিবাদে ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা সাধারণ সভা করে তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন। পরে এটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত সপ্তাহের বুধবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা সাত কার্যদিবস আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস পালিত

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 8 December 2024, 572 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
যথাযোগ্য মর্যাদায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাউতলীস্থ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব জেসমিন সুলতানা, জেলা পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত মোহাম্মদ ইশতিয়াক ভূইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহাম্মদ রতন মিয়া বাহার চৌধুরি, আবু হোরায়রাহ প্রমুখ। স্মৃতিস্তম্ভে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ, সিভিল সার্জন কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর সভা, গণপূর্ত বিভাগগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ সমাজসেবা বিভাগ সহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

banner

আজ ৮ ডিসেম্বর রবিবার সকালে নানা আয়োজনে ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় পৌর মুক্তমঞ্চ থেকে একটি র‌্যালি শুরু হয় এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে গিয়ে তা শেষ হয়। এরপর দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ইউনিট, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)জেসমিন সুলতানা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত মোঃ ইশতিয়াক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুক্তা গোস্বামী।

সাবেক সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু হুরায়রাহ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. বাহার চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী মো. রতন মিয়া, সাবেক জেলা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশীদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহিদ খান লাভলু প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা।

সভার প্রথমেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হযরত মাওলানা ক্বারী আল আমীন বিন রেনু। পবিত্র গীতা পাঠ করেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা শ্যামল দাশ গুপ্ত। অনুষ্ঠানে সকল শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা সহ জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘায়ু এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এর আগে শহরের কাউতলীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা একটি বৈষম্যহীন দেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, আমরা সবাই মিলে বৈষম্যবিহীন ও দুর্নীতিমুক্ত একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই। এজন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরী।

সকল শহীদ স্মরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলোচনা, দোয়া মাহফিলে হত্যাকারীদের বিচার দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 10 August 2024, 481 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত ১ জুলাই হতে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে শুরু হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশব্যাপী সংঘটিত কোটা সংস্কার এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে নিহত ছাত্র রংপুরের সন্তান শহীদ আবু সাঈদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, জাহিদুজ্জামান তানভীম, উমর সহ কয়েক শত ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, শিশু, গৃহবধূ, ব্যবসায়ীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা, আহতদের সুস্থতা কামনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

banner

আজ ১০ আগস্ট শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কমিউনিটি সেন্টারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে সভাপতি সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ আহসান উল্লাহ হাসান এর সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন পরিষদ নেতা শরীফ আহমেদ খান, আরমান উদ্দিন পলাশ, অ্যাড. শেখ জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক মোঃ আবুল হাসনাত অপু, মোঃ বাবুল চৌধুরী, আলী মাউন পিয়াস, আলী হায়দার তুষার, কাজল, ডা. মোফখখারুল ইসলাম ছামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা শেখ জুলফিকার আলী, পূর্ণ, প্রভাষক মোশাররফ হোসেন, কামরুল হাসান নান্টু, রুমানা আক্তার শ্যামলী, শামছুল আলম বাবুন, নিয়ন প্রমুখ।

এদিকে, সকালে পৌর কমিউনিটি সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-নাগরিক সমাজের উদ্যোগে শোকাহত ও সম্প্রীতির ব্রাহ্মণবাড়িয়া শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. তৌহিদুল ইসলাম মিথিল। অনুভূতি ব্যক্ত করেন শিক্ষক আব্দুস সাকিব ছোটন, বাচিক শিল্পী আল আমিন শাহীন, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম, শহীদ তানভীম ও শহীদ উমরের মা বাবা, আন্দোলকারী ছাত্র জাহিদ হাসান, দূর্জয় প্রমুখ। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ’র বাবা মা অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। উভয় অনুষ্ঠানে বক্তারা অতি শীঘ্রই আন্দোলনে শহীদ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, শিশু, নারী পুরুষদের গুলি করে হত্যাকারী ছাত্রলীগ এবং পুলিশদের তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, দেশে কোন রাজনৈতিক দলের লেজুর বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন রাখা যাবে না। সমাজে চলমান বৈষম্য দূর্নীতি দূর করতে হবে। আদালতসহ সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। উভয় অনুষ্ঠানে আন্দোলনের সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় স্থানীয় আলেমগণ দোয়া মোনাজাত পরিচালনার পর তাবারুক বিতরণ করা হয় এবং ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই গত ৫ আগস্ট দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা সরকারি টাকায় নির্মিত শেখ হাসিনা সড়ক নামফলক ভেঙ্গে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ সড়ক” নামকরণ করেছেন।

পিতার অভিযোগে মাদকাসক্ত ছেলের কারাদণ্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 23 June 2024, 565 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
পিতার দেয়া অভিযোগে মাদকাসক্ত ছেলেকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২২ জুন শনিবার বিকেলে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাব্বর হোসেন এ সাজা প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্ত জসিম উদ্দিন (২২) ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা (তিতাসপাড়া) এলাকার আরজু মিয়ার ছেলে।

banner

জানা যায়, জসিম উদ্দিন মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার জন্য সে প্রায়ই বাড়িতে অত্যাচার করতো। সম্প্রতি তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। গত শুক্রবার দুপুরে নেশা করে বাড়ির পাশাপাশি বাইরের মানুষের উপর লাঠি, দা নিয়ে হামলা করতে যায়। শনিবার সকালেও দা নিয়ে পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা করে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তার পিতা শনিবার দুপুরের দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কাছে অভিযোগ করেন। পরে তাকে পুলিশ দিয়ে আটক করে বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদকাসক্ত জসিমকে ছয় মাসের সাজা দেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাব্বর হোসেন জানান, ওই যুবক মাদকাসক্ত হয়ে অত্যাচার চালাতো। তার পিতা অভিযোগ করলে তাকে মাদকাসক্ত অবস্হায় আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের (৩৬)(৫) ধারায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সে নিজেও মাদক সেবন ও অত্যাচারের কথা স্বীকার করেছে।