চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার রসুল্লাবাদ ইউনিয়নের দাররা গ্রামে দেবরের দেয়া আগুনে গৃহবধূ লতিফা বেগম অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত দেবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহিলা পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে মানববন্ধন পালিত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি শোভা পালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাথী চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীমা শিকদার দীনা, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আসমা খানম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নেলি আক্তার, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড সাজিদুর রহমান, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ-উর-রহমান, নোঙ্গর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সভাপতি শামীম আহমেদ, জেলা ছাত্র মৈত্রীর সভাপতির ফাহিম মুনতাসির প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নবীনগর উপজেলার রসুল্লাবাদ ইউনিয়নের দাররা গ্রামে দেবর জালাল তার ভাবী লতিফা বেগমকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বক্তারা অবিলম্বে লতিফা বেগমকে হত্যাকারী জাললকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ বুধবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লতিফা বেগম। তিনি দাররা গ্রামের প্রবাস ফেরত মোঃ জাকারিয়া আল-আমিনের স্ত্রী।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে বিস্তির্ণ হাওরাঞ্চলের কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে জৈবসার। ‘জলকমল’ খ্যাত এ জৈবসার দামে কম ও মান ভালো হওয়ায় এতে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
নবীনগর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পাইলট প্রকল্প হিসাবে এ প্লান্টটি চালু করা হলেও ল্যাব টেষ্টে গুণগত মানের স্বীকৃতি মিলায় এখন বাণিজ্যিক ভাবে ১০টি প্লান্ট স্থাপন করা হবে যা থেকে প্রতিমাসে ৫০ টন জৈব সার উৎপাদিত হবে যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। জেলা সদর ছাড়াও নদী ও হাওরবেষ্টিত নবীনগর উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের সাথে নৌপথে যোগাযেগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কচুরিপানা।
এতে নৌপথ ক্রমশ সংকুচিত হবার পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়ে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ। নৌপথ স্বাভাবিক রাখতে কচুরিপানা পরিষ্কার করে তা উৎপাদনশীল কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলায় আখের ছোবড়া থেকে বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার উৎপাদনের বিষয়টি নজরে আসার পর কচুরিপানা থেকে জৈবসার উৎপাদনের পকিল্পনা নেয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সংগৃহীত কচুরিপানরা নিচের কালো অংশটুকু কেটে ফেলে পাতাসহ বাকি অংশটুকুর দেড় টন পরিমাণ স্তূপ করে ১৫ সেন্টিমিটার পর পর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ট্রাইকোডার্মা নামক এক ধরণের ছত্রাক এবং ২০০ গ্রাম চুন ছিটিয়ে এ সার তৈরী হচ্ছে। এই সার তৈরি করতে দুই মাস সময় লাগে। পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে সুফল পাওয়ায় নবীনগর উপজেলায় বাজারজাত করা হয়েছে। উপজেলার বিসিইসির ২৬টি ডিলার জৈবসার কর্নার স্থাপন করে তা বিক্রি করছেন। এখন পর্যন্ত ৫ টন সারা বিক্রি হয়েছে। ১০ জন কৃষকের সমন্বয়ে তৈরি এই প্লান্টটি থেকে প্রতিমাসে ৫ টন সার উৎপাদনের কথা জানালেন, নবীনগর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু নোমান।
এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি উপজেলায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার ২৫ ভাগ কমায় বৈদেশি মুদ্রার সাশ্রয়ের কথা জানালেন, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম। এ প্রকল্পটি উদ্ভাবনী মেলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে স্ত্রীকে চা বানানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে বাড়িতে লাশ হয়ে ফিরলেন মো. বাচ্চু মিয়া (৭৫)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কাচারির মোড়ে অটোরিকশা উল্টে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
নিহত বাচ্চু মিয়া (৭৫) উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বাচ্চু মিয়া অটোরিকশা দিয়ে নবীনগর আসার পথিমধ্যে শ্রীরামপুর গ্রামের কাচারি মোড় সড়কে অটোরিকশাটি উল্টে গেলে বাচ্চু মিয়া ছিটকে রাস্তায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে গাড়ির চালকসহ স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে বলেছেন, তুমি চা বানাও, আমি ঘুরে এসে চা খাব। ওনার কথামতো চা বানিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় খবর এলো তিনি অটোরিকশা থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখি তিনি মারা গেছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে দ্বিতীয়বারের মতো নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জুর রহমান।
আজ ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী রিটার্নিং ও নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ফরহাদ তানভীরের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, মেয়র শিব শংকর দাস, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য জহির উদ্দিন সিদ্দিক টিটু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ, সদস্য গুলাম শাহরিয়ার বাদল, পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমুখ।
নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে ফয়জুর রহমান বাদল নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নির্বাচনী বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে সবাইকে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করতে হবে।’
২০১৪ সালে তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
সুবিন্যস্থ বেণি জুড়ে গাছে দুলছে আশ্চর্য সুন্দর হিজল ফুল। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। প্রতি বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের হাওড় বেষ্টিত ভাটির অঞ্চলে এ ফুলের দেখা মিলে, এখন সেই সময়। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরে ফিরেই এসেছে হিজলের কথা। কবির ভাষায়- “চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম/চিতা জ্বলে”। একই ভাবে হিজল বনে ঘুঘু দেখে উচ্ছ্বসিত কবি লিখেছেন- “পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে”। অবশ্য কবিতার বাইরে বাস্তবে হিজল গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গণসংগীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস সুরে সুরে বলেছেন- “হাওড়ের পানি নাই রে হেথায়, নাই রে তাজা মাছ/বিলের বুকে ডালা মেলা, নাই রে হিজল গাছ”। অর্থাৎ দিন দিন হিজল গাছের সংখ্যা কমছে। বর্তমানে গাছটি প্রায় দুর্লভ। এ গাছটি সংস্কৃত নাম নিচুল, এ ছাড়াও জলন্ত ও নন্দীক্রান্ত নামেও পরিচিত। হিজল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Barringtonia acutangula। এটি Lecythidaceae পরিবারের সদস্য। এটি বাংলাদেশের ভাটির অঞ্চলে বহুকাল ধরে টিকে থাকলেও এর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারত। গাছ মাঝারি আকারের, উচ্চতা ৫-১০ মিটার পর্যন্ত, এর ডালপালা থাকে ছড়ানো, বাকল যথেষ্ট পুরো, ঘনছাই রঙের হয়ে থাকে, বীজ থেকে গাছ হয়। খাল, বিল, নদী, ডোবা, হাওর ইত্যাদি জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। এটি পানির নিচে কয়েক মাস জীবিত থাকতে পারে। এ গাছের মূল আকর্ষণ লাল ও গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুল, ফুলের আছে মিষ্টি ঘ্রাণ। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে- “ফুলের মঞ্জুরী ৬-১৫ ইঞ্চি লম্বা। বহুপুষ্পিক ফুলের বৈশিষ্ট্যে হিজল অনন্য”।
হিজল বীজের অনেক ঔষুধি গুনাগুন আছে- মাথা ও কপাল ব্যথা হলে হিজল বীজ শুকিয়ে গুড়া করে দুই চামচ পরিমাণ এক কাপ দুধসহ সকালে এবং বিকেলে খেলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। পেটে গ্যাস হলে, ঢেকুর উঠলে, পেট ফাঁপা হলে হিজল বীজ চূর্ণ করে গরম মসলা সহ খেলে কিছুক্ষনের মধ্যে সেই সমস্যা চলে যায়। চোখ উঠলে, চোখ লাল হলে, চুলকায়, পানি পড়ে। সেই সময় বীজ নিয়ে পাথরে ঘসে চন্দনের মত চোখের চারি পাশে লাগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ রাখার পর ছোট নেকড়া ভিজিয়ে মুছে দিলে যন্ত্রণা কমে যায়। হিজল ফুল গভীর রাতে ফুটে, সকাল হতে না হতেই ঝড়ে যায়। হিজল সাধারণত জলমগ্ন বা জলসংলগ্ন অঞ্চলে ভাল হয়। তাই নবীনগরের ভাটির অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে টিকে আছে হিজল গাছ। নদী সংলগ্ন গ্রাম গুলোতে নৌকা দিয়ে গেলে চোখে পড়ে অপূর্ব হিজল গাছের সারি কারন- হিজলের আবাস নিচু এলাকা/ হাওড় অঞ্চল।
নবীনগরের মত দেশের হাওড় বেষ্টিত সাত জেলার ৪০টি উপজেলায় কম বেশি প্রায় প্রতি গ্রামেই দেখা যায় হিজল। নিচু জলাঅঞ্চলে মাছের অভয়রাণ্য তৈরিতে এই গাছের ডাল ব্যবহৃত হয়। ভরা বর্ষায় নবীনগরের ভাটি অঞ্চলে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় নৌকা থেকে চারপাশে তাকালে থৈ থৈ জলের মধ্যে দেখা যায় হিজল গাছ। যেন ঘাটে নৌকা লাগতেই স্বাগত জানাচ্ছে হিজলের ফুল। স্থানীয়দের খুব চেনা এ গাছটি শুকনো মৌসুমেও দিব্যি থাকে। এমনকি রাজধানী শহরের একাধিক উদ্যানেও দেখা যায় হিজল গাছ। বর্তমানে কিছু সরকারি বেসরকারি প্র্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ গাছ লাগানো হচ্ছে। হিজলের প্রাণশক্তি অনেক বেশি, দীর্ঘজীবী গাছ, বিধ্বংসী বন্যা কিংবা তীব্র খরাও একে কুপোকাত করতে পারে না। জল এবং স্থল দুই জায়গাতেই এরা সাবলীল, এদের এই আলাদা বৈশিষ্ট্য ও অভিযোজনের কারনে হিজল সবার দৃষ্টি কাড়ে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরের জিনদপুর ইউনিয়নের চারপাড়া এলাকায় গতকাল ২৪ জুলাই বুধবার রাতে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে সাতটায় পাশ্ববর্তী মুরাদনগর উপজেলার টংকি ইউনিয়নের বাইরা গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে ছাব্বির (২০) মোটরসাইকেল যোগাযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর আসার পথিমধ্যে চারপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বিপরীত থেকে আসা রাব্বির মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইটি মোটরসাইকেলে থাকা ৩জন নিহত হয়েছে।
নিহতরা হচ্ছে ছাব্বির (২০), জিনদপুর গ্রামের হাফেজ মিয়ার ছেলে রাব্বি (২১) ও জিনদপুর ইউনিয়নের মালাই গ্রামের কাদির মেম্বারের ছেলে পিয়াস। ঘটনাস্থলে ছাব্বির ও কুমিল্লা নেওয়ার পথে রাব্বি ও পিয়াস মারা যায়।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম বলেন, দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন মারা গেছে।ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।