বিএনপি মনে করে দেশের বাইরে থেকে কেউ এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, রাজনীতি, 27 March 2023, 720 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের সংস্কৃতি ছিল। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে এসেছে আজকে তারাই গণতন্ত্রের ছবক দেয়!

তিনি বলেন, শুধু দেশের ভেতরে নয়, দেশের বাইরে গিয়েও নালিশ করা বিএনপির চরিত্র। তারা মনে করে দেশের বাহিরে থেকে এসে কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন সচেতন। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে লাভ হবে না।

২৭ মার্চ সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল- এদেশের মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, বাসস্থান পায়, চিকিৎসা পায়, উন্নত জীবন পায়। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়েই তিনি আমাদের এই স্বাধীনতা এনে দেন।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ১৯৪৮ সালে আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেই আন্দোলনের পথ বেয়েই তিনি ধীরে ধীরে এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। তারই ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে এদেশ স্বাধীন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদেরকে একটি রাষ্ট্র দিয়েছেন, একটি জাতি হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন, বিশ্ব দরবারে আত্মপরিচয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য। তিনি চেয়েছিলেন তাদের ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করবেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন। আর এসব কারণেই তিনি এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যার যা কিছু আছে তা নিয়ে এদেশের মানুষ লড়াই করতে নেমে গিয়েছিল। বাংলাদেশের যুদ্ধটা একটি জনযুদ্ধ ছিল। যারা ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসেছে, দেশের মানুষকে তৈরি করেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দিয়েছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত শুধু তা নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও মাঠে নেমে গিয়েছিল। যে যেভাবে পেরেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। যেহেতু এটা গেরিলা যুদ্ধ, গেরিলা যোদ্ধারা যখন দেশে ঢুকেছে, এদেশের মা-বোনেরা রান্না করে খাওয়ার দেওয়া, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের তথ্য দেওয়া; সেই কাজগুলো করেছে। একটা জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এদেশে স্বাধীনতার বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নালিশ করে তাদের ওপরে নাকি খুব অত্যাচার। অত্যাচার তো আমরা করি নাই। অত্যাচার করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। জিয়াউর রহমান এসে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। সেনা বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, সৈনিক থেকে শুরু করে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে নির্বিচারে ফাঁসি দিয়েছে, গুলি করেছে, হত্যা করেছে। পরিবারগুলো তাদের লাশও পায়নি। সব লাশ গুম হয়ে গেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করা এবং প্রথমে লেবাস পড়ে ক্ষমতায় যাওয়া, রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে, আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে যাওয়া আর ক্ষমতা উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দখল গঠন করার কালচারটাই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। অবৈধ দখলকারীদের হাতে তৈরি করা যে সংগঠন তারা নাকি গণতন্ত্র চায়। যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিক্টেটেডের মধ্য দিয়ে, তারা আবার গণতন্ত্র চায়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র দেয়নি, তারা গণতন্ত্র দেবে। গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে। ওদের জিজ্ঞেস করতে হয়, তাদের জন্মটা কোথায়? অবৈধ দখলদারি এটা তো আমাদের কথা না। আমাদের উচ্চ আদালত বলে দিয়েছে যে, জিয়া-এরশাদ সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপর তারাও নাকি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামও করে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম।

Leave a Reply

সরাইল থানা পুলিশের উদ্যোগে আন্ত:ইউনিয়ন কাবাডি…

চলারপথে রিপোর্ট : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক Read more

জমির নিবন্ধন কর এলাকাভেদে কমল কিছুটা

অনলাইন ডেস্ক : কয়েকটি ক্ষেত্রে জমি নিবন্ধনের খরচ আবার কিছুটা Read more

জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ১২ দিন প্রবেশ…

অনলাইন ডেস্ক : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ৪-১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত Read more

সারাদেশে অবৈধ প্রার্থী ৭৩১ জন, বৈধ…

অনলাইন ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারাদেশে Read more

মুরগীর আড়তে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “মায়ের দোয়া মোরগ সেন্টার” নামে একটি Read more

বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতেই হবে:…

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‌‘আমাদের নদী বাঁচাতেই Read more
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শরিকরা

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন আওয়ামী Read more

অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : কসবা থেকে অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে Read more

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে…

চলারপথে রিপোর্ট : আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে আজ Read more

শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার মনোন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময়…

চলারপথে রিপোর্ট : শিক্ষাবান্ধব-নিরাপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া অব্যাহত রাখতে শিক্ষকদের যার যার Read more

অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল বাজারের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে গড়ে Read more

সিঙ্গাপুরকে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফিফা Read more

ইউটিউব দেখে বোমা তৈরি করতে গিয়ে উড়ে গেল কবজি

জাতীয়, 14 July 2023, 256 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে রিপোর্ট :
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ইউটিউব দেখে বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আবদুল্লা আল নোমান (২৪) নামের এক যুবকের কবজি উড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার আরকাইম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নোমান উপজেলার সমপুর গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, নোমান বগাদানা ইউনিয়নের আরকাইম গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রাতে তিনি কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ইউটিউব দেখে বোমা তৈরি করছিলেন। এ সময় বিকট শব্দে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। এতে তার হাতের কবজি উড়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করে।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় আবদুল আজিজ নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।

শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩০

জাতীয়, 14 April 2023, 502 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪৩০। আজ সকালে সোনালি সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।

‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। নববর্ষ বিদায়ী বছরের গস্নানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায়

মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্রজাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ-কুটির হতে বিলাসবহুল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের মেগাসিটি-সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফলগুধারা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে উদযাপন করে উৎসবের আমেজে। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্র করার আর কুসংস্কার ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধা-বিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। নতুন পোশাক পরে সবাই মিলিত হন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের যে প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু করেছিল তা আজ বিশ্ব জুড়ে বর্ষবরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরে বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগরজীবনে এই দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান।

কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজু উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে জাতি তার স্বকীয়তা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তি সঞ্চয় করে, সচেষ্ট হয় আত্মপরিচয় ও শিকড়ের সন্ধানে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যে আবদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করে স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল।

১৪২৯-এর আনন্দ বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। ১৪৩০ সনকে বরণ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে ঘরোয়া পরিবেশে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হলো বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানমালা আমাদের সেই ঐতিহাসিক চেতনাকে প্রোজ্জ্বল করে। স্বদেশ মানস রচনায় বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সর্বোপরি ইতিহাসের আলোকে রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনাকে পরিহার করে আধুনিক ও প্রাগ্রসর অভিধায় জাতিসত্তাকে যথাযথ প্রতিবাদ করার সম্মিলিত প্রতিশ্রম্নতি বাংলা নববর্ষকে দান করেছে অনবদ্য মাঙ্গলিক যাত্রাপথ।

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো বাংলা বর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। আর বাঙালিদের কাছে বাংলা নববর্ষ বরণ হলো একটি প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মঙ্গলশোভাযাত্রা। ইউনেস্কো বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরও সুদৃঢ় করুক, নববর্ষের উদার আলোয় ও মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই হোক নতুন বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ এর প্রত্যাশা।

নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার ও সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া। বাঙালির বর্ষবরণ ইলিশ ছাড়া হয় না। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওযার ব্যবস্থা থাকে। ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখের জনপ্রিয় খাদ্য। এই দিনের একটি পুরানো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকে নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ও কুস্তি। হাল আমলে ক্রিকেট ও ফুটবল যুক্ত হচ্ছে।

দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয় সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গস্নানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেন। এদিনে তারা হালখাতা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ ভোর থেকে শুরু হয়। ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।

হালখাতা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরানো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন লাল রংঙের হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে। ১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীযের্র সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।

আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরও একটি শোভাযাত্রা। তখন প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অশুভ মানুষের কথা ভেবে মুখোশ করা হয় শোভাযাত্রায়।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার পহেলা বৈশাখকে জাতীয় পার্বণ হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছায়ানটের গানে গানে যে প্রতিবাদের ধারা সৃষ্টি করেছিল তা মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার পথে বড় শক্তি যুগিয়েছে। ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পরে যেমন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছায়ানট যেন মানবতার পক্ষে লড়াইয়ে তাদের প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করছে বারবার। আজ সেই আলোড়ন পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে।

বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হোক: মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক

আখাউড়া, রাজনীতি, 24 November 2023, 46 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ছেড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সরকারের কোনো আপত্তি থাকবে না।

আজ ২৪ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া খরমপুর কেল্লা শহীদের মাজার জিয়ারতকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কিছু বলার থাকলে তারা ইলেকশন কমিশনকে বলুক। কমিশন সেটি বিবেচনা করবে।

মন্ত্রী বলেন, যদি বিএনপি নির্বাচনে আসতে চায় আমরা তাদের সব সময় অভিনন্দন জানাই। ধ্বংসাত্মক কাজ ছেড়ে সাংবিধানিক পথে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা থাকবে।

এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা, কসবা-আখাউড়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন, আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম, আখাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার বাহার মালদার প্রমুখ।

আমরা ক্ষমতায় গেলে এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলবো: ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, রাজনীতি, 7 January 2023, 1255 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
বিএনপি ঘোষিত আন্দোলনের দশ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা বিষয় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে শহরের পুনিয়াউটস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এর বাসভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাবিব উন-নবী-খান সোহেল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিব উন-নবী-খান সোহেল বলেন, পল্টনে বিএনপির জনাতঙ্কের ভয়ে পল্টনে সভা করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। তিনি আওয়ামীলীগের সমালোচনা করে বলেন, তারা এখন চামচামিতে লিপ্ত। ছাত্রলীগকে পকেট মার এবং মোবাইল চোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ভারে মঞ্চ থেকে ধপাস করে ভেঙ্গে পড়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। এমনিভাবে একদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গদিও ধপাস করে ভেঙ্গ পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা তাদের ২৭ দফা প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংস্কার কমিশন করবো। কেন করবো? আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বিনা ভোটের ক্ষমতায় থেকে সংবিধানকে কাটাছেড়া করে একে দলীয় একটা বইয়ে পরিণত করেছে। সংবিধানের কিছু ধারা এমনভাবে পরিণত করেছে, যে ভবিষ্যতে কোনো সংসদে এটি পরিবর্তন করা যাবে না। এটিকে বেআইনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনা ভোটে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ। সংবিধান সংস্কার করার এখতিয়ার রাখতে পারেন না। এই ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই। তিনি বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো। যে বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ। দল মত নির্বিশেষে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলবো।
তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিগত সময়ে স্বাধীনতা স্বপক্ষকে ও বিপক্ষে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদকে সামনে এনে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। আমরা জাতিকে বিভক্ত করা থেকে ফিরিয়ে আনবো। আমরা সকলকে দেখিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে দলীয় সরকার অধীনে অবাধ সুস্থ নির্বাচন না হবে, ততদিন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হতে হবে। জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া সুযোগ দিতে হবে। সংবিধানের মালিক জনগন। জনগণ তার মালিকানা হারিয়েছে। তাই আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেই সময়কার নির্বিচনে প্রায় সকল আসনের জয়লাভ করেছিল। দু-একটিতে ন্যাপ ও জাসদের প্রার্থী জয়লাভ করলেও পড়ে তাদেরকে পরাজিত দেখানো হয়েছে।
তিনি তার পিতা অলি আহাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমার পিতা সেই সময়ের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু পরে নির্বাচনের ফলাফল বদলে তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে বিজয় দেখানো হয়েছে। সেই থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ভোট কারচুপি করছে বলে অভিযোগ করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা হবে উল্লেখ করে রুমিন বলেন, সকল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হয়ে হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। রাষ্ট্রপতির কোন ক্ষমতা নাই। তিনি কেবল জানাজা পড়েন আর ফিতা কাটেন। এর বাইরে তার আর কোন কাজ নেই। এই ফিতা কাটা আর জানাজা পরা থেকে রাষ্ট্রপতিকে বের করে নিয়ে আসবো আমরা। যেখানে আমরা ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করবো। টানা দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এছাড়া আমরা বলেছি, সংসদকে আমরা দুই কক্ষে বিভক্ত করবো। একটি হবে উচ্চকক্ষ অপরটি হবে নিম্নকক্ষ। সংদকে কার্যকর করার জন্যে এই উদ্যোগ নেয়া হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে দেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন লুটপাটের সর্ব রাজ্য। বিদ্যুৎ খাত, ব্যাঙ্ক খাত, রাস্তাঘাট অবকাঠামোগত খাতে লোটপাট করা হচ্ছে। সে জন্য কমিশন গঠন করবো। শ্বেতপত্র প্রকাশ করবো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত আদালতে সম্প্রীতি ঘটে যাওয়া প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বারের সভাপতি যে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন একজন জজ সাহেবকে, এটা আদালতে চলতে পারে না। তিনি আদালতের সমালোচনা করে বলেন, আপনারা বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখলে জামিন দেন না। সরকারের ইশারায় আপনারা চলেছেন। এখন এর জন্য আপনারা দায়ী।
মির্জা ফখরুল ইসলামের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মীর্জা ফকরুল অত্যন্ত সজ্জন রাজনীতিবিদ। তাকে রাত ৩টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তুলে নেয়া হয়েছে। তাকে চারদিন ধরে কোন ডিভিশন দেওয়া হয় নাই। হাইকোর্ট রিট করে ডিভিশন নিতে হয়েছে। তার নাম না থাকায় সত্ত্বেও তিনি জামিন পাননি। এটাই বাংলাদেশের আদালতের অবস্থা। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ তৈরী করবো। সেই বিচার বিভাগ দল মত নির্বিশেষে সকলের জন্য আইনের সমান প্রয়োগ দেখাবে। আমরা প্রশাসনিক সংস্কার করবো। কারণ প্রশাসনে তো এখন লীগ ছাড়া আর কিছু নাই। পুলিশ লীগ, ক্যাডার লীগ, বিচারক বিচারক লীগ। এই লীগের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে।
রুমিন বলেন- আমরা মিডিয়া কমিশন গঠন করবো, মিডিয়া কিভাবে পক্ষপাত মূলক আচরণ করে। পক্ষপাত মূলক খবর পড়ে। তিনি টকশো প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আপনারা টকশো গুলো দেখেছেন, কতটুকু ধোকা দেয় তারা। আমরা দু’একটা কথা বলতে গেলে আওয়ামী লীগের চ্যালা, আওয়ামী লীগের দলের একজন বক্তা কথা বলা শুরু করে দেয়। এরকম মিডিয়া আমরা চাই না। আমরা নিরপেক্ষ মিডিয়া তৈরি করবো। তিনি বলেন, ডিজিটাল এ্যাক্ট এর ভয় দেখিয়ে মিডিয়ার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। তথ্য কমিশনার চাপ দিয়ে মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ধরনের চাপ বিএনপি ক্ষমতায় আসলে হবে না।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যে গুম, খুন, নির্যাতন, হেফাজতে রেখে নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তার প্রত্যেকটি বিচার করবো।
শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে জিডিপির পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ চিকিৎসা করতে গিয়ে ফকির হয়ে যাচ্ছে। তাদের জমি জমা বিক্রি করতে হচ্ছে। সে অবস্থা থেকে আমরা বাংলাদেশকে মুক্ত করবো।
সভায় জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান জিল্লুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল হক সাঈদ, সদস্য রফিক শিকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারান সম্পাদক ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য জহিরুল হক খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি এবং জেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

জাতীয়, 15 July 2023, 220 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
পাবনার ঈশ্বরদীতে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ১০ জন। আজ ১৫ জুলাই শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের মুলাডুলি আমতলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বাসের হেলপার ভরত চন্দ্র সরকার রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র সরকারের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সকালে রাজশাহী থেকে রাব্বি পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস পাবনার দিকে যাচ্ছিল। একই সময়ে বিপরীতমুখী দ্রুতগামী একটি ট্রাক নাটোরে দিকে যাচ্ছিল। মুলাডুলি আমতলা অতিক্রমকালে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে বাসের হেলপার নিহত হয়।

পাকশী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশীষ কুমার স্যানাল বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আহতদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পাবনার পাকশী হাইওয়ে থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।