সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 28 March 2023, 1593 Views,

চলারপথে ডেস্ক :
সৌদি আরবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন।

আজ ২৮ মার্চ মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ তথ্য জানান তিনি।

হতাহত বাংলাদেশিদের মধ্যে অধিকাংশই চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৮ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তবে এ তালিকার ৮ জনই মৃত নয়। মন্ত্রণালয় বলছে, এটি নিখোঁজ বা মৃতের তালিকা।

এ তালিকায় যে ৮টি নাম রয়েছে সেগুলো হলো- শহিদুল ইসলাম (সেনবাগ, নোয়াখালী), মামুন মিয়া (মুরাদনগর, কুমিল্লা), মো. হেলাল (নোয়াখালী), সবুজ হোসাইন (লক্ষীপুর), রাসেল মোল্লা (মুরাদনগর, কুমিল্লা), মো. আসিফ (মহেশখালী, কক্সবাজার), মো. ইমান হোসাইন রনি (টঙ্গি, গাজীপুর) এবং বকু মিয়া (চাঁদপুর)।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, সৌদি আরবে যে বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে সেটিতে ৪৭ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৫ জন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত বাংলাদেশিদের সৌদি আরবের বাংলাদেশ মিশন দেখভাল করছে বলেও জানান পররাষ্ট্রের মুখপাত্র।

এদিকে সৌদি আরবের আল-এখবারিয়া টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, সোমবার মক্কায় ওমরাহ পালনের জন্য যাওয়ার সময় দক্ষিণাঞ্চলীয় আসির প্রদেশে একটি সেতুর সঙ্গে সংঘর্ষে বাসটি উল্টে আগুন ধরে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

চ্যানেলটি নির্দিষ্ট সমস্যার কথা উল্লেখ না করে জানায় দুর্ঘটনা কবলিত ‘গাড়ির সমস্যা’ হয়েছিল।

অন্যদিকে সৌদির বেসরকারি সংবাদপত্র ওকাজ বলেছে, দুর্ঘটনাটি বাসের ব্রেকের সমস্যার কারণে হয়েছে। এর ফলে বাসটি সেতুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গিয়ে আগুন ধরে যায়।

আসির প্রদেশের ঘটনাটি ইসলামের পবিত্রতম শহর মক্কা ও মদিনায় নিরাপদে যাওয়ার বিষয়টিকে কার্যত চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। রমজানে বহু মানুষ ওমরাহ করতে মক্কায় যাচ্ছেন এবং হজের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি, এমন সময়ে এ ঘটনা ঘটল।

এর আগে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে মদিনার কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছিলেন।

Leave a Reply

দিল্লি মেট্রোর ১৬০০ যাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক : ভারতের দিল্লিতে মেট্রোয় আসন নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা Read more

সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার:…

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় দলমত Read more

এবারের অলিম্পিকে ২০৬টি দেশের অ্যাথলেট অংশ…

অনলাইন ডেস্ক : খেলার দুনিয়ার সবকিছুকে ছাড়িয়ে যার অবস্থান। যেখানে Read more

অব্যবহৃত মোবাইল ডাটার মেয়াদ কি বাড়বে,…

অনলাইন ডেস্ক : হঠাৎ করে মোবাইল ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে যায় Read more

স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, লাশ বাথরুমে ফেলে…

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকের টাকার জন্য স্ত্রী তানিয়া বেগম (৩৬)কে Read more

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো যুবকের

চলারপথে রিপোর্ট : বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আখতার হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক Read more

দুই মাদকসেবীর কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আরিফ মিয়া (২৭) ও ছাত্তার মিয়া Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতার চার মামলায় গ্রেফতার ৪১

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, Read more

৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে Read more

কোহলি-রোহিতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে চান গম্ভীর

অনলাইন ডেস্ক : আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় বিরাট কোহলি ৩৮ Read more

রাশিয়ার সুন্দরী বাইকার তুরস্কে দুর্ঘটনায় নিহত

অনলাইন ডেস্ক : রাশিয়ার বিখ্যাত সামাজিক ইনফ্লুয়েন্সার তাতায়ানা ওজোলিনা তুরস্কে Read more
ফাইল ছবি

ট্রেন চলাচল নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি:…

অনলাইন ডেস্ক : দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কবে থেকে ট্রেন চলবে Read more

হাত হারানো শিশু নাঈমকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ

আশুগঞ্জ, জাতীয়, 31 January 2024, 509 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছর বয়সি শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেয়।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট করতে হবে। ১০ বছর পর নাঈম হাসান নাহিদ ডিপোজিটের টাকা তুলতে পারবে।

রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, শিশুটি এইচএসসি পাশ না করা পর্যন্ত তাকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়েছে। ভৈরবের নূর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও অ্যাডভোকেট মো. বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তামজিদ হাসান। তারা বিনা পয়সায় শিশুটির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন বলে জানান।

২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকার নুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় শিশু নাঈমের ডান হাত মেশিনে ঢুকে যায়। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় তার হাত।

নাঈমের পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার দিন ওয়ার্কশপের ম্যানেজার রাজু আহমেদ তার ছেলেকে জোর করে মেশিন চালাতে দিলে এমন দুর্ঘটনা ঘটে।

২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর নাঈমের বাবা দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। এরপর চলতি বছরের গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট নাঈমের এক হাত হারানোর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল জারি করে আদেশ দেন।

একাদশে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, আবেদন শুরু ১০ আগস্ট

জাতীয়, 6 August 2023, 514 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের ফলের ভিত্তিতে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হবে আগামী ১০ আগস্ট। আগামী ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এবারও তিন দফায় আবেদন গ্রহণ করা হবে।

আজ ৬ আগস্ট রবিবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিস্তারিত তথ্য সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

প্রথম পর্যায়ের নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর। এরপর ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় এবং ২৩ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে।

তিন ধাপের ফল প্রকাশের পর ২৬ থেকে ৫ অক্টোবর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। ক্লাস শুরু হবে ৮ অক্টোবর থেকে।

ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা বা হাতে হাতে কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। কেবল অনলাইনে আবেদন করা যাবে।

অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া: অনলাইনে এই ওয়েবসাইটের (www.xiclassadmission.gov.bd) মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাদশে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। ১৫০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ দশটি কলেজে ভর্তির পছন্দক্রম দেওয়া যাবে আবেদনে।

একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে তার মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে প্রকাশিত ফলাফলে।

বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে : আইজিপি

জাতীয়, 17 January 2024, 295 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপদে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

আজ ১৭ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব প্রাইডে আগামী ২-৪ ফেব্রুয়ারি ও ৯-১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ দুই পর্বে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় সভাপতিত্বকালে এসব কথা বলেন তিনি।

আইজিপি দুই পর্বে অনুষ্ঠিতব্য ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উভয় পক্ষের আয়োজকদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইজতেমা আয়োজনের আহ্বান জানান।

সভায় উপস্থিত তাবলীগের উভয়পক্ষের মুরুব্বিগণ ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গৃহীত সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সভায় অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশনস) নাসিয়ান ওয়াজেদ ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা ট্রাফিক বিভাগ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ইজতেমার নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পরিকল্পনা উপস্থাপন করে।

ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, নৌ টহল, বিস্ফোরক দ্রব্য বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম দায়িত্ব পালন করবে। ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় আকাশে র‍্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে।

সভায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি ও তাবলীগের মুরুব্বিগণ উপস্থিত ছিলেন।

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় ৯৫৮ টন রডের প্রথম চালান গেল ত্রিপুরায়

আখাউড়া, আন্তর্জাতিক, 23 January 2023, 1652 Views,

আখাউড়া প্রতিনিধি :
ভারত থেকে ৯৫৮ টন রডের প্রথম চালান আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় নেওয়া হয়েছে। আজ ২৩ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে বাংলাদেশি ট্রাকে করে রডগুলো আগরতলা স্থলবন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাটা স্টিলের ৯৫৮ টন রড এমভি বোলকার নামের একটি জাহাজে গত ৭ জানুয়ারি কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে লোড করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় জাহাজটি আশুগঞ্জ বন্দরে এসে নোঙর করে। পরে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এগুলোর সিঅ্যান্ডএফের দায়িত্বে আছে আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন জানান, আশুগঞ্জ নৌবন্দরে জাহাজ থেকে ট্রাকযোগে আখাউড়া স্থলবন্দরে আনা হয়। কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার দুপুর থেকে রডগুলো ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বন্দরে খালাস করা হয়।

তিনি বলেন, ত্রিপুরার আগরতলার মেসার্স এসএম করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য রডগুলো নেওয়া হচ্ছে।

আখাউড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) আতিকুল ইসলাম জানান, ইন্দো-বাংলা প্রোটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেডের আওতায় এ পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। বন্দরে রক্ষণাবেক্ষণ বন্দর মাশুলবাবদ ৩০৫ টাকা ২২ পয়সা ট্রাকপ্রতি পাবে।

ভয়াল কালরাত আজ

জাতীয়, 24 March 2024, 181 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত। ১৯৭১ সালের এ রাতেই বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর ঘনতমসা। পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের একটি ঘটেছিল আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিতে।

রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো বর্বর শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বাঙালি জনগণের ওপর। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সম্ভার নিয়ে রাত ১০টার পর সারা দেশে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা শুরু করে তারা।

সামরিক ভাষায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল পাক-হানাদারদের এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিল। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় বিভীষিকা ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ঢাকা শহরে।

বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সেই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল উন্মত্ত পাক বাহিনীর গণহত্যাকাণ্ড। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ, করে অগ্নিসংযোগ। এই রাতেই গ্রেফতার করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। ২৫ মার্চের কালরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জোগায়।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন নিরপরাধ বাঙালির ওপর কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে। পাক হানাদার বাহিনী জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে জল্লাদের মতো বাংলার নিরপরাধ জনগণের ওপর মেশিনগান, মর্টার আর ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।

রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারী বাজারসহ ঢাকাজুড়েই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী।

মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক, সঙ্গে সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

হানাদাররা চলার পথে রাস্তার দুই পাশে গুলি ছুড়ে মেরে ফেলে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।’

এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে ছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখণ্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।

পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যুহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। হানাদার বাহিনী এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় তার বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের রাতে ১ মিনিট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। অন্ধকারে থাকবে দেশ।