চলারপথে রিপোর্ট :
চট্টগ্রাম নগরে অভিযান চালিয়ে পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ছিনতাইকারী। রাতের বেলা ঈদের বাজার করতে আসা লোকজনকে লক্ষ্য করে টাকাপয়সা ও মালামাল ছিনিয়ে নিত তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার পাঁচ যুবক হলেন- মো. শাওন ফরাজী (২৫), মো. সজিব (২৭), মো. শাহেদ (৩২), মো. জুয়েল (২১) ও মো. ইয়াছিন (৩০)।
কোতোয়ালি থানার এসআই মোমিনুল হাসান বলেন, গোপন খবর আসে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচে ছিনতাইকারীরা অবস্থান নিয়েছে। এরপর সেখানে অভিযান চালানো হয়। ছিনতাইয়ের প্রস্তুতির সময় ছুরিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের যাচাই-বাচাই করে দেখা গেছে, তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রোজার মাসে তাদের মূল লক্ষ্য ঈদের বাজারগামী লোকজন। তারা রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থান করতো। ওই সময় বাজারে আসা যাওয়া করা লোকজনের কাছ থেকে টাকাপয়সা মালামাল ছিনিয়ে নিত।’
অনলাইন ডেস্ক :
শিক্ষার্থীদের অযথা হয়রানি ও আটক না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ ২ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অযথা হয়রানি ও আটক না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীকে যেন হয়রানি না হয় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।আটকদের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের মূল দাবি আদায় হওয়ায় আশা করি তারা এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ঘরে ফিরে যাবে।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘প্রতিটি হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তে তাদের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এখন কমিশনে তিন জন বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। অনেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রেরণ করেছেন। আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়ে চিকিৎসার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী; দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
কুমিল্লার তিতাসে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে খুন হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ ৭ মে রবিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কুমিল্লা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. তানভীর মাহমুদ পাশা।
তিনি বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে কুমিল্লার তিতাসে পরিকল্পিত খুনের শিকার হয়েছেন যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন।
বোরকা পরে কমান্ডো স্টাইলে গুলি করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। দুর্বৃত্তদের ব্যবহৃত ৩টি বোরকা জব্দ করা হয়েছে।
কর্ণেল মো. তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে র্যাব-১১ এর একাধিক টিম তদন্তে নামে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের বাড়িঘর ও স্থাপনার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। র্যাবের গোয়েন্দা তথ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার ঢাকার রায়েরবাগ থেকে শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার (৪০) ও মো. ইসমাইল (৩৬) এবং চট্টগ্রাম থেকে শাহ আলম ওরফে পা কাটা আলমকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান।
তিনি জানান, এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত অপর ৬ আসামির মধ্যে সুজন ও আরিফ নেপালে, বাদল দুবাই, শাকিল ভারতে ও অলি হাসান সৌদি আরবে এবং কালা মনির অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে আছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া বোরকা পরা ৩ দুর্বৃত্তের পরিচয় অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় এখনই বলা যাচ্ছে না। বিদেশে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাস্থল ও আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সাংবাদিকদের দেখানো হয়। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন র্যাব ১১, সিপিসি-২ এর কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
তিনি জানান, মাদরাসা রোড দিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলে এলেও কিলিং মিশন শেষ করে অন্য রোডে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের অদূরের একটি ঝোপের মধ্য থেকে দুর্বৃত্তদের ব্যবহার করা তিনটি বোরকা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের দাউদকান্দি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে দুপুরে দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ির চালককে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
গত ৩০ এপ্রিল রাত সোয়া আটটার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় ২ মে রাত সাড়ে ১১টায় দাউদকান্দি থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত সাত থেকে আটজনের নামে মামলা করেন নিহত জামালের স্ত্রী পপি আক্তার। জামাল হোসেন তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ ২৩ আগস্ট বুধবার বিকেলে চৌহালীর সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ জরিমানা করেন। শরিফুল বেলকুচির বড়ধুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য।
জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে বেলকুচি ও চৌহালীর সীমান্তবর্তী মহেশখালী সহ আশপাশে যমুনা নদী থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিলন ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম।
এ অভিযোগে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় বালু উত্তোলনের সময় চরবেল গ্রামের শ্রমিক লিটন ও আসাদুলকে আটক করা হয়। পরে ড্রেজারের মালিক শরিফ মেম্বারকে ৫০ হাজার টাকা অর্থ দন্ড দিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়।
চৌহালী সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ভবিষ্যতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন না করার মুচলেকা রেখে আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়। জরিমানাকৃত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে এবং দেশের কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নিয়োগকর্তাদের অঙ্গীকার দৃঢ় করতে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনের প্রতিবন্ধী চাকরিমেলা।
আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে এ মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন)।
এতে অর্থায়ন করে দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস পার্টনারশিপ অন দ্য রাইটস অব পার্সনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস মাল্টিপার্টনার ট্রাস্ট ফান্ড।
জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত এ মেলায় ৪০ জন প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেয় নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
নিয়োগপত্র দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- টিম গ্রুপ, স্বপ্ন, সিআরপি, ই-শিখন, এক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, শেলটেক ও উর্মী গ্রুপ।
মেলায় এসব প্রতিষ্ঠানসহ আরএমজি সেক্টর, আইটি সেক্টর, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রি, এনজিওর জাতীয় ও বহুজাতিক ৩১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার ১ হাজার ২০০ প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থী মেলায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করলেও অংশ নেয় মাত্র ২৫০ জন।
মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক ১১ বছর বয়সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত হারান। তার বাম হাত বাহু থেকে আর ডান হাত কবজি থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। আমার বাবা বিদেশে ছিলেন। করোনার সময় চাকরি হারিয়ে দেশে আসার পর এখন কৃষিকাজ করেন। তাই চাকরির চেষ্টা করছি। আমি ব্র্যাক থেকে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কোর্স করেছি। এ মেলায় অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানে সিভি দিয়েছি। যদি চাকরি হয় তাহলে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকেও সাপোর্ট দিতে পারবো।
চাকরিমেলায় মো. রকিবুল ইসলামকে কাস্টমার এক্সিকিউটিভের নিয়োগপত্র দিয়েছে ই-শিখন। তিনি বলেন, আমার শরীরের বাম পাশ জন্ম থেকে ঠিকভাবে কাজ করে না। আমি অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক করেছি। এ চাকরিমেলা থেকে চাকরি পাওয়ায় খুবই ভালো লাগছে। আরও অনেক কোম্পানিতে সিভি দিয়েছি। আশা করি, আরও ভালো কোম্পানিতেও ডাক পাবো। এ মেলা আমাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম।
চাকরিমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে দেশের উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল হতে পারে। আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের পেছনে ফেলে আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ নেই।
এ সময় বিবিডিএনের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন কাসেম খান, প্রধান নির্বাহী (সিইও) মুর্তজা রাফি খান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর পিটার, সৈয়দ সাদ হোসেন গিলানী, টিম গ্রুপের এইচআর প্রধান খন্দকার ইমাম, এক্সেস বাংলাদেশের ইনক্লোশন লিড তাসলিম জাহানসহ মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিবিড় চর্চার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আজ এক বাণীতে একথা বলেন তিনি।
আগামীকাল ১ জুলাই সোমবার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঐতিহাসিক ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ উপলক্ষ্যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন’।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চ শিক্ষা’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে অত্র অঞ্চলে যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়, সেই রাষ্ট্রটি বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আবাসভূমি ছিল না – এ সত্যটি সবার আগে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৎকালীন তরুণ ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি সবার আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং কালক্রমে হয়ে উঠেছেন বাঙালি জাতির পিতা, ‘বঙ্গবন্ধু, বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। সেই থেকে ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের নিবিড় চর্চা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টিতে এ প্রতিষ্ঠানটির অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৫২’র ভাষা-আন্দোলন, জাতির পিতা ঘোষিত ১৯৬৬’র ছয়-দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন এবং তার (বঙ্গবন্ধু) আহ্বানে ১৯৭১’র মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তীকালে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক সত্তার বিকাশ ও দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা অগ্রভাগে থেকে অব্যাহতভাবে নেতৃত্ব প্রদান করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার দূরদর্শী নির্দেশনায় ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করা হয়, যার মূল বার্তা ছিল- বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্ত-বুদ্ধি চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করা।
আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই জাতির পিতার শিক্ষা দর্শনের আলোকে দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বিজ্ঞান ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি। গবেষণা ও প্রযুক্তির জন্য অনুদান ১০০ কোটিতে উন্নীত করি। আমরা জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, বঙ্গবন্ধু বৃত্তি এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এর প্রবর্তন করি।’
তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে ‘আমরা দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও গুণগত মান বৃদ্ধিতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার কৌশলী পরিকল্পনা: ২০১৮-২০৩০’ সহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা এবং কলেজ পর্যায়ের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ২০২৩-২০৩১ মেয়াদি ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক প্ল্যান প্রণয়ন করেছি। আমরা বিদেশ থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ’ প্রবর্তন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল এ্যাক্ট-২০১৬ পাস করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি, দেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রিসার্চ এন্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ছাত্র ও শিক্ষক আন্তর্জাতিক একাডেমিক কমিউনিটি এবং তথ্য ভান্ডারের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা আহরণে সক্ষম প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক সংকট নিরসনে হল ও ভবন নির্মাণ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা, গবেষণার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নতুন নতুন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৫৮টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র, ছাত্র-ছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল এবং ১৮৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৪ হাজার ৮৯৫ জন এবং পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৯৮১ জন শিক্ষক। শেখ হাসিনা বলেন, অধিকতর উন্নত গবেষণার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে যেকোনো সংকট উত্তরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-গবেষণা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ জ্ঞানের সকল শাখায় এগিয়ে যাবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘জ্ঞান ও আলোর পথের অভিযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন দিগন্ত তৈরি করবে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা-মনন ও সৃজনশীলতা প্রয়োগ করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ তথা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।
তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। সূত্র: বাসস