অনলাইন ডেস্ক :
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা জোরদার এবং অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি এ অঞ্চলের স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য সামুদ্রিক কূটনীতি জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ ১২ মে শুক্রবার ঢাকায় ২ দিনব্যাপী ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) উদ্বোধনকালে তিনি এই আহবান জানান। এ সময় তিনি টেকসই পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে প্রত্যাবাসনে সক্রিয় বৈশ্বিক সহায়তা কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত মহাসাগর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এ অঞ্চলের সব দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। আমি ষষ্ঠ সম্মেলনে ছয়টি অগ্রাধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে চাই। আমরা সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রণয়ন করেছি।
বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এই সম্মেলনের আয়োজন করছে। মরিশাসের প্রেসিডেন্ট ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ২৫টি দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। এছাড়া ডি-৮, সার্ক ও বিমসটেকের প্রতিনিধিসহ প্রায় ১৫০ জন বিদেশি অতিথি অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
উদ্বোধনী অধিবেশনে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজসিং রূপন, মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসেম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সেকেন্ড মন্ত্রী ড. মালিকী ওসমান সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, উন্নয়নের জন্য ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে সামুদ্রিক কূটনীতি গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া এ অঞ্চলের অনেক দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমাতে সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন।
সম্মেলনে তিনি সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়াদান, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমসহ ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে বিদ্যমান ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ চলাচল ও ওভারফ্লাইটের স্বাধীনতার অনুশীলনকে সমুন্নত রাখার আহবান জানান।
শেখ হাসিনা শান্তি সংস্কৃতি এবং জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়ন জোরদারের আহবান জানিয়ে বলেন, এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক নারীদের বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি নাগরিককে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি এ অঞ্চলে একটি বড় মানবিক বিপর্যয় ঠেকিয়েছে। এখন আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও টেকসই উপায়ে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসাবে বহু শতাব্দী ধরে সামুদ্রিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল এবং এই দেশ অনেক আঞ্চলিক প্ল্যাটফরমে সক্রিয়। বাংলাদেশ ভারতীয় মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের কাউন্সিলেরও সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দীর্ঘদিনের পুরোনো ও অপ্রচলিত চ্যালেঞ্জে বিশ্বাস করে। আমরা এই অঞ্চলে শান্তির জন্য আমাদের ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একটি সহনশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অন্য সব দেশও একই কাজ করবে বলে আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক ও আফ্রিকান অঞ্চলে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত প্রভাব রয়েছে। এ অঞ্চলে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪% এবং বৈশ্বিক জিডিপির ৬০% রয়েছে। অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলটি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তাই ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোকে সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একজন দূরদর্শী নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ‘মেরিটাইম জোন’র সীমানা নির্ধারণ করতে, সীমানার মধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা গড়ে তুলতে এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধানের সুবিধার্থে টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেছিলেন। এই আইনটি সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশন, ১৯৮২ গৃহীত হওয়ার ৮ বছর আগে কার্যকর হয়েছিল, যখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে উপলব্ধি সীমিত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনের থিম ‘শান্তি, অংশীদারিত্ব ও সমৃদ্ধি : একটি সহনশীল স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যতের দিকে’ খুবই উপযুক্ত ও সময়োপযোগী। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে নিষেধাজ্ঞা ও পালটা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে এ থিমটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবজাতির টিকে থাকার জন্য শান্তি অপরিহার্য। এটি সারা বিশ্বে নারী ও পুরুষের গভীরতম আকাংক্ষার প্রতিফলন। সেই ভাষণে তিনি ভারত মহাসাগরকে একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসাবে বজায় রাখার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ২৩ মে, ১৯৭৩ সালে জুলিও-কুরি শান্তি পদক দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির প্রবল প্রবক্তা হয়ে উঠেছে।
চলারপথে ডেস্ক :
পদত্যাগ করা বিএনপির সংরক্ষিত নারী এমপি রুমিন ফারহানার আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী ও দলের সহ-সভাপতি আফরোজা হক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনীত প্রার্থী তিনি। এই পদে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বাছাইয়ের পর তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আফরোজা হক। এ সময় জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের নেতৃত্বে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, আজই ছিল সংরক্ষি আসনের এ উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই আগামী ২ মার্চ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৬ মার্চ।
এর আগে বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের পর শূন্য আসনের মধ্যে ছয়টির উপনির্বাচন গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনটি, মতাসীন জোটের শরিক জাসদ একটি, জাতীয় পার্টি একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসনে জয় লাভ করে।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে প্রতি ছয়টি সাধারণ আসনের বিপরীতে একটি সংরক্ষিত আসন পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে একাদশ সংসদে জাসদের তিনজন সংসদ সদস্য থাকলেও জাসদ একটি সংরতি আসন পেয়েছে।
বর্তমানে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত একটি আসনই ফাঁকা আছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শূন্য হওয়া সংরতি আসনটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার সমঝোতা হয়েছে।
এদিকে আফরোজা হক নির্বাচিত হলে জাতীয় সংসদে দম্পতি সংসদ সদস্যের সংখ্যা হবে তিন। অন্য দুই দম্পতি হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খান এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তাঁর স্ত্রী শরিফা কাদের।
একাদশ সংসদে আরেক দম্পতি ছিলেন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। তবে কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত হয়ে সংসদ সদস্য পদ হারান পাপুল। তবে তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এখনো সংসদ সদস্য রয়েছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নেত্রকোনায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় নেত্রকোনা শহরের ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া মাঠে ‘অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই করি, দুর্যোগ সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি’ স্লোগানে দিবসটি পালিত হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা এবং ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ক সচেতনতা মূলক মহড়া প্রদর্শন করে নেত্রকোনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা।
সচেতনতা মহড়া প্রদর্শন পূর্বক আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুন খন্দকার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আশিক নূর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহ শিবলী সাদিক, ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান (ডিএডি), জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম, নেত্রকোনা পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, রেড ক্রিসেন্টের সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু।
ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও অগ্নি নির্বাপক মহড়ার নেতৃত্ব দেন নেত্রকোনা ফায়ার স্টেশনের লিডার খানে আলম খান। মহড়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কাউটরা অংশ নেয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনার দাকোপ উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানি অতি লবণাক্ত। এই এলাকায় নিরাপদ ও সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখা যায়। সুপেয় পানির অভাবে দাকোপ উপজেলার অনেক মানুষই বাধ্য হয়ে ডোবা নালার পানি পান করেন। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন তারা। এলাকাবাসীর সুপেয় পানির অভাব মেটাতে গত সেপ্টেম্বর মাসে চালু করা হয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ইউএনডিপি ও ইউএনসিডিএফ এর সহায়তায় লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন করছে পানির ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ।
দাকোপের বানিশান্তা ইউনিয়নের আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়েছে। বানিশান্তা যৌনপল্লীর ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীসহ ২টি স্কুলের প্রায় ৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্ল্যান্ট থেকে বিনামূল্যে পানি পাচ্ছেন। এছাড়া ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে দৈনিক ১০ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন করে এটিএম কার্ড ও ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় মাত্র প্রতি লিটারে ৫০ পয়সা দামে যৌনপল্লির ১০০ টি পরিবার সহ প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। এই প্ল্যান্টটি দেখাশোনার জন্য পতিতালয়ের এক মা’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্ল্যান্টের আয় দিয়ে প্ল্যান্টটির খরচসহ আবাসিকে থাকা পতিতালয়ের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। যাতে করে পতিতালয়ের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শিখে পতিতালয়ের জীবন থেকে বের হয়ে সরকারের উন্নয়নের মূল স্রোতোধারায় ভূমিকা রাখতে পারেন।
লজিক প্রকল্প থেকে বলা হয়, প্রতি লিটার পানি ৫০ পয়সা করে বিক্রি করা হলে মাসে মোট ৫০,০০০-৭০,০০০ টাকা আসতে পারে। এ টাকার পুরোটাই শিশুদের লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করা হবে। এতে একদিকে যেমন এলাকাবাসীর বিশুদ্ধ পানির অভাব মিটছে তেমনি শিশুদের পড়াশোনার খরচও আসছে।
পতিতালয়ের একজন নারী বলেন, ‘আমাগে ভালো খাবার পানির ব্যবস্থা কেবলমাত্র পোকুরের (পুকুরের) পানি। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে সব শুকিয়ে যায় তখন আমরা খাবার পানির জন্যি খুব কষ্ট পাই। এহন (এখন) এই পেলান (প্ল্যান্ট) হয়ে আমাগে পানির জন্যি কষ্ট করতে হয় না। আমরা ছেলে পুলেদের লেহাপড়ার খরচ জোগাতে পারতাম না। পানি বিক্রির টাকা দিয়ে এহন আমগে ছেলে পিলেদের লেহাপড়ার খরচ দিতে পারি।’
আরেকজন নারী বলেন, ‘আমাগে এহানে খাবার পানির কষ্ট খুব। লবন পানির জন্তি (জন্য) আমরা হনক পথ হেঁটে পুকুরের পানি নিয়ে এসে খাতাম। এহন লজিক প্রকল্পের প্ল্যানের পানি খাচ্ছি। শরিল খারাপ করে না আর ।’
লজিক প্রকল্পটি মূলত ইউএনডিপি বাংলাদেশ, ইউএনসিডিএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন এবং ডেনমার্ক সরকার দ্বারা সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগ। এটির লক্ষ্য হল নির্বাচিত জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সমাধানের পরিকল্পনা ও অর্থায়নের জন্য দুর্বল সম্প্রদায়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজ সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এই বিশেষ প্ল্যান্টটি ইউএনসিডিএফের সহায়তায় পিবিসিআরজি (PBCRG) বা পারফরমেন্স বেসড ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট গ্রান্ট দ্বারা অর্থায়ন করা হয়।
দাকোপের শুধু বানিশান্তাতেই নয় স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত ইউএনডিপি ও ইউএনসিডিএফের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে দাকোপ এলাকায় বাস্তবায়িত জলবায়ু সহনশীল মোট ৬৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৪৬টি প্রকল্পই খাবার পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে এবং কৃষি কাজের পানির জন্য ২টি খাল খনন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রায় ৮ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাচ্ছে এবং প্রায় ১ হাজার মানুষ ৫শ বিঘা জমিতে দুটি করে ফসল ফলাতে পারছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুইগড় থেকে স্বামী-স্ত্রীসহ প্রতারক চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চক্রটি মোবাইল ফোনের পরিচয়ের সূত্র ধরে নানা শ্রেণির লোকজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে মুক্তিপণ আদায় করত। এ অভিযোগে চক্রটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয় মুক্তিপনের জন্য আটকে রাখা হৃদয় হোসেন (৩২) নামে এক যুবককে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ফতুল্লা মডেল থানার উত্তর ভুইগড়ের নজরুল ইসলামের ভাড়াটিয়া আঃ হাইয়ের পুত্র মোঃ মোরশেদ আলম (৩৫), তার স্ত্রী পাপিয়া খাতুন (৩৩), কোরবান আলীর ছেলে মো. নয়ন আলী (২৯) ও ফতুল্লা মডেল থানার উত্তর ভুইগড়ের নজরুল ইসলামের ভাড়াটিয়া শাহিন আলমের স্ত্রী কান্তা মনি (২২)।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোবাইল ফোনে বাসায় ডেকে এনে নগ্ন করে তরুণী দিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলে ও ভিডিও ধারণ করে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মত অপরাধ করে আসছিল। রবিবার এই প্রতারক চক্রটি মোবাইল ফোনে কান্তাকে দিয়ে ফোন করে মানিকগঞ্জ থেকে হৃদয়কে ভুইগড়ের বাসায় ডেকে এনে চার লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। সংবাদ পেয়ে রাত ১১ টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান স্বামী-স্ত্রী সহ প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় আটকে রাখা যুবক হৃদয়কে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া জানান, চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি আরো জানান, চক্রটির হাত থেকে উদ্ধার হওয়া যুবক হ্নদয় হোসেন আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। হ্নদয় মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার আব্দুল মান্নান প্রধানিয়ার ছেলে।
চলারপথে ডেস্ক :
সরকার যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন নিশ্চিত করার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, আইন সংশোধন একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিশেষ করে শ্রম আইন, যা ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যম ঘটে থাকে। তাই এই আইনটি সংশোধনে যুক্তিসঙ্গত সময়ের প্রয়োজন।
আজ ১৬ মে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে শ্রম আইন সংশোধন বিষয়ক টেকনিক্যাল নোট ও গ্লোবাল গুড প্রাকটিস নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শ্রম বিষয়ক আইনি কাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে এবং ইপিজেড শ্রম বিধিমালা জারি করা হয়েছে। শ্রম বিধিমালা সংশোধনের প্রথম রাউন্ডে বিশেষজ্ঞ কমিটির বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আগামীতেও তাদের পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক শ্রমিকের কাজের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রমমান এবং মৌলিক নীতি ও অধিকার অনুযায়ী শ্রম খাতকে উন্নত করার জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই।
অনুষ্ঠানে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শ্রম সচিব মো. এহছানে এলাহী, আইএলও-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমো পুটিআইনেন, বাংলাদেশ এমপ্লোয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরদাশির কবির, এনসিসিডব্লিউই-এর সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।