ইজারা নিয়ে মুখোমুখি দুই উপজেলার জেলে

নাসিরনগর, সরাইল, 13 May 2023, 2247 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিল শাপলা জলমহাল ইজারা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার জেলেরা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। নাসিরনগরের জেলেরা বলছেন, বংশ পরম্পরায় ওই বিলে মাছ ধরে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কয়েক দশক ধরে সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নেন। সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতার তদবিরে সরাইলের জেলেরা বিলটি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা নাসিরনগরের জেলেদের মাছ ধরতে বাধা ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অপরদিকে সরাইলের জেলেদের ভাষ্য, তাঁরা মিলেমিশে বিলে মাছ ধরতে চান।

banner

৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের বিল শাপলা জলমহালটির অবস্থান নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের পূর্ব পাশে। কাছেই তিতাস নদী। জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতিতে নিবন্ধিত জেলে ৫৩৮ জন। এ ছাড়াও অনিবন্ধিত আরও প্রায় ৭০০ জেলে এখানে মাছ ধরেন। সব মিলিয়ে ১২০০ জেলে পরিবারের সদস্য প্রায় ১০ হাজার। তাঁরা সবাই বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলের দক্ষিণে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রাম। শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিবন্ধিত সদস্য ৪৯।

জেঠাগ্রামের প্রবীণ জেলে মিলন দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘আমার বাপের জন্ম এই বিলের পাড়ে। আমার জন্মও। ছেলেমেয়েও জন্ম নিছে এ বিলের পাড়েই। আমরার আগের পুরুষ বিলের পাড় থাইক্যা মাছ ধরত।’ নিজেদের কোনো জমিজমা না থাকায় বিলের মাছ আর পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই জীবন পার করছেন মিলন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বিল না পাই, মাছ ধরতাম না পারি, তইলে বাল-বাচ্চা (ছেলেমেয়ে) লইয়া না খাইয়া মরণ লাগব।’

তাঁর মতো এমন হাজারো জেলের আশঙ্কা–এবার না বিলের ইজারা সরাইলের শাহজাদাপুরের জেলেরা নিয়ে যান! এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি জলমহালটি ছয় বছরের (১৪৩০-১৪৩৫ বঙ্গাব্দ) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ জন্য আবেদন করে শাহাজাদাপুর গ্রামের তিতাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে–এমন আশঙ্কায় জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি। তাই তিতাস সমিতির আবেদন বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরের সই করা চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। পরে জলমহালটি তিন বছর মেয়াদে নতুন করে ইজারা দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এতে আগ্রহী হয়ে তদবির শুরু করে শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।

নাসিরনগরের জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা জানান, ১৯৭৭ সালে সমিতি গঠনের পর থেকে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে তাঁরাই বিলটি ইজারা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি শাহাজাদাপুরের জেলেরা তা ইজারা নিতে চাইছেন। নাসিরনগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ৪(চ) অনুযায়ী স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সংগঠন, নিকটবর্তী বা তীরবর্তী মৎস্যজীবীদের জলমহাল বন্দোবস্ত প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির এ অধিকার বেশি।

জেঠাগ্রামের জেলে হিরামন দাস বলেন, ‘বিলে মাছ ধরনের লাইগ্যা নতুন জাল, নৌকা কিনা হয়ছে এনজিও থেইক্যা (ঋণ নিয়ে)। এই গেরামের কয়েক হাজার মানুষ কোটি টাকা ঋণ নিছে।’ এভাবে ঋণ নিয়ে মাছ ধরে তা শোধ করেন জানিয়ে হিরামন বলেন, ‘আমরার এলাকার বিল যদি সরাইলের মানুষরে দিয়া দেয় তাইলে ঋণ শোধ করতে বসতঘরটাও বেইচ্যা দিয়ন লাগব।’

জেলে নয়ন দাসের ভাষ্য, ‘আমরার লোকজন বিলে গেলেই সরাইলের লোকজন মাইরধর করে। এহন হুনতাছি সরাইলের লোকেরা নাকি বিল লইয়া যাইব। এই বিলের লগে আমরার রক্ত মিশ্যা আছে। জান থাকতে বিল কেউরে নিতে দিমু না।’

জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ইজারা বিষয়ে শুনানির জন্য গত ৭ মে জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়েছে। সরাইলের জেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে মাছ ধরারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের অভিযোগ, জলমহালের ইজারা সরাইলের জেলেদের পাইয়ে দিতে তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।

সরাইলের শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, ‘কাগজেপত্রে বিলের মৌজা নাসিরনগরের। মিলেমিশেই বিলের মাছ ধরতে চাই। আমরাও জেলে পরিবার। কিন্তু ওই এলাকার জেলেরা তাতে রাজি হচ্ছেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে কথা বলিনি। বিলটি নাসিরনগরের, এটা সবাই জানে। সরাইল ও নাসিরনগরের প্রকৃত জেলেরা যেন মিলেমিশে মাছ ধরতে পারে–সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’ বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র ঘেঁটে বিলটি দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগরের জেলেরাই ইজারা নিয়ে মাছ ধরছেন বলে জানান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার। ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নিকটবর্তী ও তীরবর্তী হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামই আসে।

বিল ইজারা দিতে রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী যাঁরাই উপযুক্ত, তাঁরাই এ বিল (ইজারা) পাবেন।

Leave a Reply

অক্সফোর্ডে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন আমাল…

হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : ব্রিটিশ-লেবানিজ মানবাধিকার বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় Read more

নবীনগর প্রেসক্লাব নির্বাচনে ৫ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়…

মো. কামরুল ইসলাম, নবীনগর : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর প্রেসক্লাবের আগামী Read more

ইয়াবাসহ একজন আটক

চলারপথে রিপোর্ট : যাত্রী বেশে মাদক পাচারের সময় ৪ হাজার Read more

ইসরাফিল হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ইসরাফিল হত্যা মামলার আসামী বাবু মিয়া(৩৫) কে Read more

বিজিবির অভিযানে দেড় কোটি টাকার পণ্য…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলায় বিজিবির অভিযানে দেড় Read more

ফেইসবুকে ছেলের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে গ্রেফতার…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক Read more

বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিলো বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী

অনলাইন ডেস্ক : মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী কক্সবাজারের Read more

কালীগঞ্জে বিয়ে করে ফেরার পথে বরের…

অনলাইন ডেস্ক : বিয়ে করে বাড়ি ফেরার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত Read more

ডাকাত দলের সদস্য আটক

চলারপথে রিপোর্ট : যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক, ডাকাতির সরঞ্জামসহ সংঘবদ্ধ Read more

বিরল নীলগাই উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : বাগাতিপাড়া উপজেলার শেখপাড়া এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির Read more

যুক্তরাষ্ট্রে নারী নেত্রীদের সাথে ব্যারিস্টার জায়মা…

হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উইমেনস ফেলোশিপ Read more

অষ্টগ্রাম সমাজ কল্যাণ সমিতির ৩৪তম বার্ষিক…

চলারপথে রিপোর্ট : অষ্টগ্রাম সমাজ কল্যাণ সমিতির ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ Read more

সরাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

সরাইল, 20 April 2024, 442 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে।

banner

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার দুপুরে উপজেলার ধরন্তী ও পাকশিমুল ইউনিয়নে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার আতাউর রহমানের ছেলে সুলতান (২৩) ও সরাইলের পাকশিমুল ইউনিয়নের লোপাড়া গ্রামের আক্তার মিয়ার ছেলে মো. মিস্টার মিয়া (১৪)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দুপুরে নাসিরনগর থেকে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা বিশ্বরোড যাচ্ছিল। পথিমধ্যে নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক সড়কের ধরন্তী এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক্টরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার যাত্রী সুলতান নিহত হন এবং অপর যাত্রীরা আহত হয়। তারা সবাই জেলার আশুগঞ্জে একটি হোটেলে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন।

এদিকে পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূইশ্বর চান্দের হাটি এলাকায় ট্রাক্টর চাপায় পিষ্ট হয়ে মিস্টার মিয়ার নামে এক কিশোর নিহত হয়। তবে কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ট্রাক্টরগুলো আটক করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। এসব ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

সরাইলে এনজিও বিষয়ক সমন্বয় সভা

সরাইল, 20 March 2024, 527 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সরাইলে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা এনজিও বিষয়ক মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

banner

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব মো. পারভেজ আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেজবা উল আলম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিও’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোছা: নাজমা বেগম, উপলদ্ধি’র মো. শরীফ উদ্দিন, কমিউনিটি ডেভেল্পমেন্ট এসোসিয়েশন সিডিএ’ র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, মিতালী’র মোহাম্মদ মাহবুব খান, সুকের প্রতিনিধি মো. সাদেকুর রহমান, ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কীম সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ। বর্তমানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হচ্ছে ‘জিরো হোম ডেলিভারি’ নিশ্চিতকরণ। সঠিক সময়ে জন্মনিবন্ধনকরণ, কৃষি জমি ধ্বংস করে মাটি বিক্রয়, বাল্যবিয়ে ও মাদক প্রতিরোধ বিষয়ে সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম আপনাদেরকে (এনজিওদেরকে) জোরদার করতে হবে। আর এই কাজটির সফল বাস্তবায়ন করে সরকারকে সহযোগিতা করুন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাসিরনগরে মাঠে থাকলেন ১৩ প্রার্থী

নাসিরনগর, 22 April 2024, 518 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত চারজনের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থক একজন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

banner

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চারজনের মধ্যে তিনজনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা এ কে একরামুজ্জামানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে নাসিরনগর উপজেলা।

আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। আজ ২২ সোমবার শেষ দিনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ ফজলে ইয়াজ আল হোসাইন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলার গুনিয়াউক ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত গোলাম সামদানি ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন মিয়া পাঠান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ইয়াছিন প্রবাসী হুমায়ুন কবীরকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ টি এম মনিরুজ্জামান সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, আওয়ামী লীগের সমর্থক উপজেলার ধরমন্ডলের বাসিন্দা প্রমোদ রঞ্জন সূত্রধর এবং কুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের টানা চারবারের (২০১৬ সাল পর্যন্ত) চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ওমরাও খান।

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন। এই আসনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ নেতা রোমা আক্তার, মনিরুজ্জামান সরকার ও প্রদীপ কুমার রায় একরামুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। অন্যদিকে উপজেলার ধরমন্ডলের প্রমোদ রঞ্জন সূত্রধর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের অনুসারী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসিম কুমার পাল বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত হলো কাউকে সমর্থন দেওয়া হবে না। আর দলের যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা কেউই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। তাঁরা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতার কলার ছড়ি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেছে। নির্বাচন যেহেতু উন্মুক্ত। তাই কে প্রার্থী হলো বিবেচ্য বিষয় নয়।

বিএনপির নেতা ওমরাও খান বলেন, ‘সারা দেশেই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেসব নেতা-কর্মী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন, বিএনপি তাঁদের বহিষ্কার করবে। নেতা-কর্মীরা বহিষ্কার হবেন। এতে কিছু যায়-আসে না। এখানে নির্দলীয় নির্বাচন হবে। আর কোনো প্রার্থীকে আমি প্রভাবশালী মনে করি না। কেউ কোনো প্রভাব বিস্তার করতেও পারবে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অফিসে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালিত

কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, 24 December 2024, 268 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের সংগঠন “আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ” এর উদ্যোগে সারা দেশের ন্যায় আজ ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়ও বিভিন্ন অফিসে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালিত হয়েছে।

banner

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত উপসচিব পুলে কোটা পদ্ধতি বহাল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বহির্ভূতকরণের প্রতিবাদ এবং কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত সকল অফিসে এক ঘণ্টার ‘কলম বিরতি’ পালন করা হয়। প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। কলম বিরতি পালনকালে কর্মকর্তাগণ বলেন, উপসচিব পুল কোনো বিশেষ ক্যাডারের পদ নয়।

সার্ভিস এক্ট ১৯৭৫ অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে সিভিল সার্ভিসের সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাগণকে উপসচিব ও তদুর্ধ্ব পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অপকৌশল ও অজুহাতে এ সকল পদে নিজেদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার। ২০১৮ এর নির্বাচনের পর সার্ভিস এক্ট ১৯৭৫ রহিত করা হয়। এছাড়া ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ২০ ফেব্রুয়ারি এ সকল পদ নিজেদের তফসিলে বসিয়ে নিয়েছে প্রশাসন ক্যাডার। এরূপ কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে ভারসাম্যহীন ও অকার্যকর করার মাধ্যমে দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে গভীর ষড়যন্ত্র ও মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির নামান্তর।

এসময় কর্মকর্তাগণ বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০% পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছে যা মৌলিক অধিকার ও জুলাই-বিপ্লবের সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। যেহেতু প্রশাসন ক্যাডার নাগরিকদের কোনো অনগ্রসর অংশ নয়, সেহেতু উক্ত ক্যাডারের জন্য উপসচিব পুলে কোটা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানেরও সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন। এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশ করার কথাও জানানো হয়েছে যা উদ্দেশ্যমূলক। “আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ” এর সাথে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পরিষদ কলম বিরতি ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১১ থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত সকল অফিসে স্ব-স্ব কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি, ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ।

নাসিরনগরে ৫৩তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত

নাসিরনগর, 2 November 2024, 221 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সমবায়ে গড়ব দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় কার্যালয়ের আয়োজনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে ৫৩তম জাতীয় সমবায় দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ ২ নভেম্বর শনিবার নাসিরনগর উপজেলা সদরে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

banner

নাসিরনগর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারজানা খন্দকারের সভাপতিত্বে সহকারি পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহিন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরানুল হক ভূইয়া।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রবিউস সারোয়ার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাকী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: রফিজ মিয়া ও প্রেসক্লাব সভাপতি সুজিত কুমার চক্রবর্তী।

সভায় বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি বসির আহমেদ, ধীবর সমবায় সমিতির সদস্য নিখিল দাস, হরেন্দ্র দাস প্রমুখ।

এ সময় স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন সমিতির নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুল হক ভূইঁয়া বলেন, একটি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য সমবায়ের প্রসার ঘটাতে হবে। আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য সমবায় সমিতির সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।