চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল প্রায় চারশত বছরের প্রাচীন আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ। এটি মুঘল আমলের অপরূপ স্থাপত্য শৈলীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো।
এলাকায় জনশ্রæতি আছে ১৬৬২ সালে দরবেশ শাহ আরিফ সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অপরূপ স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য সমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি নির্মান করেন। তার নামানুসারেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আরিফাইল মসজিদ। এর গম্বুজ ও নান্দনিক কারুকার্য মুঘল আমলের উৎকর্ষতার পরিচয় বহন করে। বর্তমানে মসজিদটি পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে প্রতœতত্ত¡ বিভাগ। মসজিদের পাশেই রয়েছে জোড়া কবর যা আরিফাইল মাজার নামে পরচিত।
প্রাচীন এই মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে আখ্যায়িত করে বর্তমানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা তাদের মনোবাসনা পূরন করার জন্যে এই মসজিদে এসে নামাজ পড়েন।
সরাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই আরিফাইল গ্রামে। আরিফাইল গ্রামে রয়েছে বিশাল বড় এক দিঘী। সাগরদিঘী হিসেবে পরিচিত এই দিঘীটির দক্ষিন পাড়েই অবস্থিত প্রাচীন এই আরিফাইল মসজিদটি। আরিফাইল মসজিদের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট।
এর চার কোনায় চারটি বুরুজ ও মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলো মসজিদের ভেতরের অংশকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে। সেগুলোতে সাজানো হয়েছে পদ্মফুলের ছবিতে। এর দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। চুন, সুরকি ও ইটের গাঁথুনি। মসজিদটির মূল গেইট থেকে শুরু করে মসজিদের ভেতরের বিভিন্ন অংশে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক রেজুয়ানুর রহমান মসজিদটির সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ করেন। মসজিদটি সংরক্ষনের জন্য পূর্বের কাঠামো ঠিক রেখে মসজিদটিতে টাইলস এবং চুনকাম করা হয়েছে। মসজিদটিতে প্রবেশ ও বের হতে একাধিক পথ রয়েছে। প্রাচীন এই মসজিদটির সঠিক ইতিহাস স্থানীয়দের জানা না থাকলেও এলাকাবাসীর কাছে এটি গায়েবি মসজিদ হিসেবে পরিচিত। তাই সওয়াব লাভের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মুসল্লী এসে মসজিদটিতে নামাজ পরেন।
মোহাম্মদ আলী নামে স্থানীয় এক মুসল্লী বলেন, এই মসজিদটি কে সবাই গায়েবি মসজিদ হিসেবেই চিনে। এখানে মানুষ কিছু মানত করলে সেই মানত পূরণ হয়।
ইফতেফার হোসেন নামে স্থানীয় আরেক মুসল্লী বলেন, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে মসজিদের বিষয়ে শুনেছি। তারাও বলতে পারেননি এই মসজিদটি কে কবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে এটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই মসজিদে এসে নামাজ আদায় করেন। আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে আসেন মানত করতে। এখানে যদি কেউ মানত করেন সেই মানত আল্লাহতায়ালা পূরন করেন।
আমরা মসজিদের বাইরে যেন মানুষ নামাজ পড়তে পারেন সেজন্য খোলা জায়গাতে একটি ছাউনী করে দেয়ার জন্য দাবি জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল শুক্কুর বলেন, আমার বয়স এখন ৮৮। আমার দাদা বেঁচেছিলেন ১০৪ বছর। তিনিও মসজিদের সঠিক ইতিহাস বলতে পারে নি।
এদিকে মসজিদটির পাশেই জোড়া কবর রয়েছে। স্থানীয়দের ধারনা দরবেশ শাহ আরিফ এবং তার স্ত্রী এই জোড়া কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।জোড়া কবর বর্তমানে আরিফাইল মাজার নামে পরচিত। এ ব্যাপারে আরিফাইল মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মজিদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এই মসজিদে প্রতিদিন শত শত মানুষ নামাজ আদায় করেন। জুম্মারদিন এই মসজিদে মুসল্লীদের স্থান সংকুলান হয়না। মানুষ কষ্ট করে বাইরে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। তিনি মুসল্লীরা যাতে মসজিদের খোলা জায়গায় নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য খোলা জায়গাতে একটি ছাউনী করে দেয়ার জন্য দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, মসজিদটি এখন প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের অধীনে। মসজিদটির পাশে জোড়া কবর রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ এসে এখানে মানত করেন। টাকা পয়সা দান করেন। প্রতিমাসে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা রেখে মসজিদটির উন্নয়ন কর্মকান্ড তরান্বিত করার আহবান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, আমি মসজিদটি দেখতে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে মাজারে টাকা তোলার বিষয়টি আমরা জানা ছিল না। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মাজারের আয়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে বেপরোয়া গতির ট্রাক্টর চাপায় মো. আবদুর রহিম মিয়া (৫০) এক মাদ্রাসার কর্মচারী নিহত হয়েছে। আজ ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেলা ১টার দিকে সরাইল- নাসিরনগর- লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইল সদরের বড্ডাপাড়া এলাকায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ ঘাতক ট্রাক্টরটি আটক করলেও পালিয়ে গেছে চালক ও হেলপার।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সরাইল রাহমাতুল্লিল আল আমীন মাদ্রাসার অফিস সহায়ক আবদুর রহিম। তার বাড়ি মাদ্রাসা সংলগ্ন বড্ডাপাড়া গ্রামে।
শনিবার বেলা ১টার দিকে তিনি সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছনের দিক থেকে বালু বোঝাই বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক্টর রহিমকে চাপা দেয়। ট্রাক্টরের চাপায় ঘটনাস্থলেই রহিম মারা যান। এসময় ট্রাক্টরটি ফেলে চালক ও হেলপার দ্রুত পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রাক্টরটি আটক করে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই সড়কে হাল চাষের ট্রাক্টর গুলো এখন ইট, বালু ও মাটি টানছে। অধিকাংশ চালক ও ট্রাক্টর গুলোর কোন বৈধ কাগজ বা অনুমতি নেই। শিশু ও কিশোর চালকরা কানে মুঠোফোন লাগিয়ে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালিয়ে থাকে। এমন অনিয়ম যখন নিয়ম তখন তো ট্রাক্টর গুলো মানুষকে চাপা দিবেই।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ট্রাক্টরটি আটক করা হয়েছে। চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ওবায়দুল্লাহ সড়কের পাশে আমিনপাড়া গ্রামে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে কয়েকজন প্রভাবশালী মিলে শাহবাজপুর আমিনপাড়া এলাকায় পানি নিস্কাশনের ড্রেইনসহ বিশাল এরিয়া নিয়ে কৃষিজমিতে মাঠি ভরাট করে হাউজিং প্রজেক্ট তৈরী করেছে। এই প্রজেক্টের পাশের সড়কের নীচে পানি নিস্কাশনের ড্রেন রয়েছে। এই ড্রেনের সামনেও মাটি ভরাট করা হয়েছে। তাই কোন কাজে আসছেনা ড্রেন। বৃষ্টির পানি জমে এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সহ কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অত্যন্ত দুর্দশায় ভুগছেন আমিনপাড়ার লোকজন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী হাজি শরিফ চৌধুরী, আলমগীর চৌধুরী ও শহিদ মিয়া চৌধুরী বলেন, পানি নিস্কাশনের ড্রেইনসহ জমিগুলোতে মাঠি ভরাট করার কারণে আমিনপাড়া ও যাদবপুর এলাকার বাড়িঘরসহ রাস্তায় পানি উঠে গেছে। এই পানি গুলো সরানোর ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলে কয়েক ধরে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এছাড়াও প্রায় শতবিঘা জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমরা কোন ফসল করতে পারছিনা। এ সমস্যায় তিনবছর ধরে ভুগছি। বিশেষ করে শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়ার আতংক রয়েছে।এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজের যাইতে পারছে না।
ভুক্তভোগীরা বলেন, হাজি কুদ্দুছ, সিরাজ মিয়া, মামুন মিয়া ও গরু ফার্মের মালিক সিরাজ মিয়া এই প্রজেক্ট করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, আমিনপাড়া ও যাদবপুর এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন। আগে কখনো এখানে জলাবদ্ধতা ছিল না। কয়েক বছর আগে কয়েকজন মিলে জমিগুলোতে প্লট আকারে বিক্রি করার জন্য মাটি ভরাট করে। এজন্য এই সমস্য হয়েছে। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে মাটি ভরাট করার জন্যই এ সমস্যায় কয়েক বছর ধরে ভুগছেন এলাকাবাসি। এছাড়াও পানি নিস্কাসনের নালাটি বন্দ হওয়ার জন্য এই সমস্য হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরনাপন্ন হয়েছি।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবা উল আলম ভূঁইয়া জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি এর সমাধানের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জন্য বলা হয়েছে।
সরাইল প্রতিনিধি :
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার বৈশামুড়া এলাকায় গতকাল বুধবার বিকেলে বাস চাপায় ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার চালক মো. সানু মিয়া (৬০) নিহত হয়েছেন। নিহত সানু ওই গ্রামের মো. লালু মিয়ার ছেলে।
খাটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্টের যাত্রীবাহি বাস সুনামগঞ্জের দিকে যাওয়ার পথে বৈশামুড়া এলাকায় একটি ব্যাটারি চালিত বিভাটেক অটোরিক্সাকে চাপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বিভাটেক চালক সানু মিয়া নিহত হন। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে হাফিজ উদ্দিন (৪৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আজ ৫ আগস্ট শনিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত হাফিজ উদ্দিন উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের ছান্দাল আলীর ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সরাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় একটি দোকানে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল আমিন মিয়ার পরিবারের সঙ্গে হাফিজ উদ্দিনের ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় সালিশ হয়। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে ৪ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে রায়হান নামের একজন হাফিজ উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় হাফিজ উদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আজ ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ওসি আরো জানান, নিহতের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।