নবীনগরের নারী ভাইস চেয়ারম্যানসহ দু’জনের নামে মামলা

নবীনগর, 26 May 2023, 1234 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান মোসাম্মাৎ শিউলি আক্তার ও তার স্বামী কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের স্টোর কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। ২৫ মে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাফি মো. নাজমুস্ সাদাৎ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

banner

মো. হাবিবুর রহমান উপজেলার চরলাপাংয়ের চিত্রী গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক জানান, মো. হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী শিউলি আক্তার একে অপরের সহযোগিতায় এক কোটি ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখলে রেখেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাবিবুর রহমান ১৯৮৮ সালে স্বাস্থ্য সহকারী পদে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে স্টোরকিপার পদে ও ২০১৫ সালে স্টোর অফিসার পদে পদোন্নতি লাভ করে বর্তমানে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। হাবিবুর রহমানের নামে ৫৫ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৬ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া তার আয়কর নথিতে প্রদর্শিত পারিবারিক ব্যয় ১৫ লাখ ৬ হাজার ৫০৮ টাকা। পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৪ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০১৭-১৮ কর বর্ষে আয়কর নথি খোলার সময় পূর্বের বছরগুলোতে চাকরির বেতন-ভাতা হতে সঞ্চয় এবং আয়কর নথি খোলার পরের বেতন-ভাতাসহ আয় পাওয়া যায় ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৮ টাকা। অনুসন্ধানকালে তার নামে অর্জিত সম্পদের চেয়ে আয়ের উৎস ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৬ টাকা কম পাওয়া যায়।

অপরদিকে তার স্ত্রী নারী ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি আক্তারের আয়-ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে নবীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ২০১৪-১৫ কর বর্ষ হতে ২০২১-২২ কর বর্ষ পর্যন্ত খাত ভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী দাখিল করে আসছেন। তিনি তার দুই ছেলের নিকট থেকে হেবা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পদ ব্যতীত তার নামে এক কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৪৯ লাখ ৩২হাজার ৫১৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি নিজের নামে এক কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৪ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ২৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৩৩ টাকা। পারিবারিক ব্যয়সহ তার সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৭ টাকা। এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০১৪-১৫ কর বর্ষে আয়কর নথি খোলার পূর্বের বছরগুলোতে বিভিন্ন আয় এবং আয়কর নথি খোলার পরের ব্যবসা, বাড়িভাড়া ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত ভাতাসহ তার এক কোটি ১২ লাখ ১১ হাজার ৩৪৯ টাকার আয়ের উৎস পাওয়া যায়। তার নামে অর্জিত সম্পদের চেয়ে ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ৯৮ টাকার আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়। অনুসন্ধানকালে মো. হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রীর এক কোটি ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

Leave a Reply

নিষেধাজ্ঞার আগেই টিকটক বন্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রে

অনলাইন ডেস্ক : আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রে অফ Read more

যুদ্ধবিরতির আগে ২৩ ফিলিস্তিনির প্রাণ নিলো…

অনলাইন ডেস্ক : গাজায় গত ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে Read more

মোবাইলে তালাক বলায় গৃহবধূর আত্মহত্যা

চলারপথে রিপোর্ট : প্রবাসী স্বামী মোবাইলে তালাক বলায় মারিয়া আক্তার Read more

আজ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত Read more

মার্শা বার্নিকাট, আলেইনা তেপলিৎজ ও ডেরেক…

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোকবল ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ Read more

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে ঘুষের ভিডিও ভাইরাল, এসআই…

অনলাইন ডেস্ক : নাটোর সদর থানার ভেতরে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য Read more

নেপালকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক : মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে Read more

সরাইলে ইটভাটা মালিককে জরিমানা

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইলে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন Read more

বাঞ্ছারামপুরে জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : প্রথমবারের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে Read more

বিতর্কে অংশ নেয়া মানেই তথ্য ভিত্তিক…

চলারপথে রিপোর্ট : অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সাইফুল ইসলাম Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আইসিটি শাখা উদ্বোধন

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে নতুন কম্পিউটার সংযোজিত আইসিটি শাখার Read more

পর্যটককে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৬

অনলাইন ডেস্ক : কক্সবাজার পৌরসভার সমিতিপাড়ায় অস্ত্রের মুখে ৩ পর্যটককে Read more

নবীনগরে ওল কচু চাষের নতুন সম্ভবনা

নবীনগর, 26 July 2023, 897 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নবীনগর উপজেলায় কয়েক বছর ধরে ওল কচুর আবাদ হচ্ছে। খরচ কম কিন্তু ফলন বেশি হওয়াতে কৃষক বসত বাড়ি কিংবা ফলজ বাগানে সীমিত পরিসরে আবাদ করছে। ইব্রাহীমপুর ব্লকের ওল চাষী মোখলেছ মিয়া বলেন- আগে নবীনগরে বাণ্যিজিক ভাবে ওল কচু চাষাবাদ দেখিনি, আমি এ বছর চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

banner

ইতিমধ্যে অনেকেই ওল চাষে আগ্রহী। ওল কচুর পাশাপাশি বীজ বিক্রি করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। বড়িকান্দি ব্লকের কৃষক আজিজ মিয়া জানান- ওল কচু আমাদের এলাকায় নতুন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই নতুন ফসল আবাদ করেছি। ২০ শতক পরিত্যক্ত উচু জমিতে আবাদ করেছি এখন পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি ভালো। নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- ওল কচু গাছে তেমন কোন রোগ হয় না, তবে পাতা ও কচু পঁচা রোগ দেখা যেতে পারে, ওল কচুর ক্ষেত্রে কীট পতঙ্গ তেমন কোন সমস্যা হয় না। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, গোড়া মাটি উঁচু করে দেয়া ও খড় বা আচ্ছাদন দিয়ে মাটি ঢেকে দিলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। জৈব সার ব্যবহার করা ভাল। তবে রাসায়নিক সার যেমন- ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি ও কিছু দেওয়া যায়। গাছ লাগানোর ৭-৯ মাস পর যখন ৮০% গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাবে, তখন ওল সংগ্রহ করতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান- কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্র্রকল্পের আওতায় আমরা নতুন জাতের কন্দাল ফসল জনপ্রিয় করার জন্য প্রদর্শনী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকি। ওল কচু চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি – এপ্রিল পর্যন্ত ভাল সময়, এর পর রোপণ করলে ফলন কমে যায়।

নাটঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩ ঘণ্টা খোলা, চাবি থাকে পাশের বাড়িতে

নবীনগর, 11 March 2023, 1326 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা নাটঘর ইউনিয়ন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন বিশাল জায়গাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। নিজের খেয়াল খুশি মতো আসেন এই কেন্দ্রের একমাত্র স্টাফ ফার্মাসিস্ট শাহ আলম। সরকারি এই স্থাপনার চাবি এলাকাবাসীর কাছেই দিয়ে রেখেছেন তিনি।

banner

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটঘর ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এই ৩০ হাজার মানুষকে সেবা দিতে ইউনিয়নে রয়েছে একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এর ভেতরে রয়েছে ৬টি কক্ষ। প্রতিদিন এই সেবা কেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকার সরকারি নিয়ম থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টা খোলা থাকে।

এই কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট পদে থাকা শাহ আলম নামে একজন দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এলাকাবাসীর কাছে শাহ আলম ডাক্তার নামে পরিচিত। প্রতি কর্মদিবসে শাহ আলম সকাল সাড়ে ৯টার পর এসে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার ভেতর চলে যান। এরপর তালাবদ্ধই থাকে এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র৷ সরকারি এই স্থাপনার চাবিও তিনি দিয়ে রাখেন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে।

সরেজমিনে দুপুর ১টায় নাটঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় গেট তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলে জানান, ডাক্তার শাহ আলম কিছুক্ষণ আগে চলে গেছেন। এর চাবি রয়েছে পাশের বাড়ির রিনা বেগম নামে এক নারীর কাছে।

রিনা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, আজ আমার কাছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চাবি নেই। চাবি আছে এলাকার আব্দুল হান্নানের কাছে৷

আব্দুল হান্নানকে খবর দিলে তিনি রিনা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান গেইটের তালা খোলেন। এরপর ভবনের গেটের তালা খুলে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করেন।

জানতে চাইলে আব্দুল হান্নান বলেন, চাবি আমার কাছেও থাকে। ডাক্তাররা টিকা দিতে বা ডেলিভারির রোগীরা এলে আমাকে খবর দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টার ভেতরে খোলা হয়, আর দুপুরে চলে যান ডাক্তার শাহ আলম।

রিনা বেগম বলেন, আমি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধোয়ামোছার কাজ করি। পাশাপাশি ডেলিভারির কাজ করি। প্রতিদিন জোহরের আযান দিলে শাহ আলম ডাক্তার চলে যান।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাটঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট শাহ আলম বলেন, এই কেন্দ্রে আমি ছাড়া কেউ সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। রিনা বেগম স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। এই অফিসের চাবি রিনা বেগমের কাছেও আছে। আমাদের অফিস টাইম সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা। আমি নিয়মিত অফিস করি।

নবীনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। নাটঘরে শুধুমাত্র একজন ফার্মাসিস্টের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি স্টাফ বাড়াতে। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছি। নাটঘর কেন্দ্রে নিয়মিত অফিস না করা এবং সরকারি সম্পদের চাবি অন্যের কাছে দিয়ে রাখার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের আপনারা (সাংবাদিক) তথ্য দিলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়।

নবীনগরে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা কৃষকরা আগাম স¦প্ন দেখছেন

নবীনগর, 31 January 2023, 1368 Views,

নবীনগর প্রতিনিধি :
নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদীবাহিত পলির বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে ব্যাপক ভাবে সরিষা চাষ হচ্ছে। এ বছর সরিষা চাষে সাফল্যে আশানুরুপ সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এ এলাকার কৃষকরা রবি মৌসুমে সরিষা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশা করছে। উপজেলার যে সব ইউনিয়নে বেশী সরিষা আবাদ বেশী হয় সে সকল ইউনিয়ন গুলো হল রছুুল্লাবাদ, বীরগাঁও, বড়াইল, সলিমগঞ্জ, কৃষ্ণনগর, বিটঘর, নাটঘর। এ বছর কৃষকরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সরিষা চাষ করেছে প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে। মন প্র্রতি সরিষার মুল্য ৩,৫০০-৪,০০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৮-৯ মন সরিষা উৎপাদন হয়। এ বছর বৃষ্টিতে ক্ষতি না হলে প্রায় ২,০০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হত।

banner

কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. আবু তাহের তার চাষকৃত জমির পরিমান- ৫০ শতক। বিটঘর ইউনিয়নের গুড়িগ্রামের হারেছ ভূঁইয়া তার চাষকৃত জমির পরিমাণ- ১০০ শতক। প্রতিটি জমিতেই তরতাজা সবুজ সরিষা গাছ গুলোতে হলুদ ফুলে ফুলে ভরে ওঠায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। সরেজমিনে এ সমস্ত এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে কোন কোন জমিতে তাজা সরিষা ফুল / কোন জমিতে ফুল ঝড়তে শুরু হয়েছে। কোন জমির গাছ গুলোতে সরিষার দানা ও বাঁধতে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। রতনপুর ইউনিয়নের ভিটি বিশারা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক মিয়া জানান, এ বছরই তিনি ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তার জমিতে সরিষার গাছ গুলো যেভাবে লকলকিয়ে উঠেছে এবং হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে তাতে তিনি এ বছর সরিষার ভাল পাবেন বলে আশাবাদি হয়েছেন। রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের রছুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক খন্দকার ফরিদ মিয়া জানান, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় জমিতে সরিষার ফলন ভাল হবে বলে তিনি আশা করছেন। গত বছর যে সমস্ত জমিতে অন্য ফসল চাষ করেছিলেন এবার সেই জমিতেই অত্যান্ত কম খরচে সরিষা চাষ করেছেন। সরিষার বাড়ন্ত ফুলে ভরা গাছগুলো দেখে তিনি আশান্বিত হয়েছেন । এবারে সরিষা উৎপাদন করে তিনি যথেষ্টই লাভবান হতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার জানান,অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকার চেয়ে উঁচু এলাকার পলি সমৃদ্ধ বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে সরিষা ফসলের আবাদ ভাল হচ্ছে। কারণ এ রুপ জমি গুলো অত্যন্ত উর্বর। এ বছর রবি মৌসুমে কৃষকরা মরিচ, সরিষা, ছিটানো পিঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, ভুট্টা, ধনিয়া পাতা, গোলআলু – মিষ্টি আলু, বাদামসহ বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে চাই, যা গ্রামাঞ্চলের চিরায়ত অভাব নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দাফন সম্পন্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের লক্ষীমুড়া গ্রামের নিহত হারুন মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মনিপুর বন্দরবাজার বালুর মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্থানীয় হারুন মিয়ার আত্মীয় স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে। এর আগে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে হারুন মিয়া নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন দুপুরে ময়নাতদন্তের পর হারুন মিয়ার মরদেহে এসে পৌঁছায় তার নিজ এলাকায়। মরদেহ পৌঁছার পর থেকেই স্থানীদের ভিড় বাড়ে তার বাড়িতে। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজু আহমেদ, পত্তন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা হৃদয় আহমেদ জালাল, সাবেক মেম্বার সেলিম মিয়া, হোসেন মিয়া, মাওলানা সিরাজ আকরামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। নিহত হারুন মিয়ার ভাতিজা সোহেল বলেন, দুধ মিয়া সরাসরি করিম মিয়ার পক্ষে নিয়েছে। যার কারণে আমার চাচা হারুন মিয়া হত্যার শিকার হয়েছে। আমার চাচার হত্যার সাথে দুধ মিয়া জড়িত। দুধ মিয়াসহ যারা আমার চাচাকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির দাবি জানাই।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবে হারুন মিয়ার জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অভিযুক্ত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে তিনি জানান।

নবীনগরে গ্রীষ্মের নয়নাভিরাম বরুণ ফুল

নবীনগর, 10 May 2023, 1388 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
গ্রামবাংলায় গ্রীষ্মকালে যে বনফুলটি বেশি চোখে পড়ে, সেটি হল- বরুণ গাছের ফুল। গাছ ভরা অফুরন্ত প্রস্ফুটিত এ ফুল প্রকৃতিতে এক অনাবিল উচ্ছ্বাস এনে দেয়। বরুণকে নবীনগরের আঞ্চলিক ভাষায় বলে বন্না ফুল। গ্রামের শিশুরা বরুণ ফুল ও ফল খেলার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। এখন বরুণ ফুল ফোটার সময়, এ সময় গ্রামে গেলে নয়নাভিরাম বরুণ ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্যে বিমোহিত না হয়ে উপায় নাই। বরুণের বৈজ্ঞানিক নাম-Crateva religiosa. ইংরেজি-sacred garlic pear এবং temple plant . এটি Crateva গণের একটি ফুল। এদের অন্য নাম হল- বালাই লামক, অবিয়ুচ, বন্না, এবং বিদাসি। এটি জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং কতিপয় প্রজাতি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় গাছ। বাংলাদেশের মানুষ অতীতকালে ফল পাকাতে এই গাছের পাতা ব্যবহার করতেন। বর্তমানে ফল পাকাতে ক্ষতিকারক ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এই গাছের কদর এখন নেই। বর্ষায় বরুণের ফল ঝুলে থাকতে দেখা যায়, ফল দেখতে কদবেলের মত। গাছ মাঝারি ধরনের এবং প্রচুর ডালপালা যুক্ত। বাকল ছাই রঙের মধ্যে সাদা সাদা ফোঁটা যুক্ত। পাতা যৌগিক, তিনটি পত্রক একক বোঁটায় জন্মে। ফুল চৈত্র-বৈশাখ মাসে ফুটে। ফুলের পাপড়ি ঘিয়ে রঙের, পুংকেশর দেখতে অনেকটা বিড়ালের গোঁফের মতো। মাঘ ফাগুনে পাতা ঝরে যায়, পূর্ণ প্রস্ফুটিত বরুণ গাছ বড়ই দৃষ্টিনন্দন। হাজারো ফুলের মাঝে নিচু জলাভূমিতে বসন্তে স্নিগ্ধতা ছড়ায় বরুণ ফুল। বরুণ ভাটি এলাকায় বেশি জন্মায়, নবীনগরের যে গ্রাম গুলো পানিতে তলিয়ে যায় সে গ্রাম গুলিতে অনেকটা অনাদর অবহেলায় আজ ও টিকে আছে বরুণ গাছ।

banner

বরুণের ভেষজ গুণ :- অর্শরোগীরা রোগে খুব কষ্ট পেলে তিলের তেলে মাখানো বরুণ পাতা জলে সিদ্ধ করে ওই জলে গোসল করলে অর্শ রোগের ব্যথা-বেদনা দূর হয়। এর পাতা চর্মরোগ, ব্যথা, বাত নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। শিকড়ের বাকলের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক রোগে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা ফল রান্না করে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। শ্রীলঙ্কায় বাতের রোগে বরুণ পাতা ব্যবহৃত হয়। খাওয়ার আগে বরুণের মুকুল একটু লবণের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা বাড়ে। পিত্তপাথরের রোগে ১০ গ্রাম বরুণের বাকল কেটে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে অর্ধেক অবস্থায় নামিয়ে সকাল-বিকাল সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মেয়েদের মুখের মেছতা দূর করতেও বরুণ বেশ উপকারী। এ ক্ষেত্রে বরুণ বাকল ছাগলের দুধে মিশিয়ে দৈনিক একবার করে মুখের কাল দাগে লাগালে দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়। যাদের শরীরের গাঁটে গাঁটে বাতের ব্যথা, এমনকি পায়ের তলাতেও ব্যথা ও ফোলা, তারা শুষ্ক বরুণ পাতা (৫-৭ গ্রাম) ৩ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে আনুমানিক ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে পানিটা আধা গ্রাম শুষ্ক আদাচূর্ণের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খেলে ব্যথা ও ফোলা দুটোই কমে যায়।