নবীনগরে বর্ষাকালে ভাটি অঞ্চলে থৈথৈ জলে দাঁড়িয়ে থাকে হিজল গাছের সারি

নবীনগর, 26 May 2023, 1253 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সুবিন্যস্থ বেণি জুড়ে গাছে দুলছে আশ্চর্য সুন্দর হিজল ফুল। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। প্রতি বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের হাওড় বেষ্টিত ভাটির অঞ্চলে এ ফুলের দেখা মিলে, এখন সেই সময়। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরে ফিরেই এসেছে হিজলের কথা। কবির ভাষায়- “চোখে তার হিজল কাঠের রক্তিম/চিতা জ্বলে”। একই ভাবে হিজল বনে ঘুঘু দেখে উচ্ছ্বসিত কবি লিখেছেন- “পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে”। অবশ্য কবিতার বাইরে বাস্তবে হিজল গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গণসংগীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস সুরে সুরে বলেছেন- “হাওড়ের পানি নাই রে হেথায়, নাই রে তাজা মাছ/বিলের বুকে ডালা মেলা, নাই রে হিজল গাছ”। অর্থাৎ দিন দিন হিজল গাছের সংখ্যা কমছে। বর্তমানে গাছটি প্রায় দুর্লভ। এ গাছটি সংস্কৃত নাম নিচুল, এ ছাড়াও জলন্ত ও নন্দীক্রান্ত নামেও পরিচিত। হিজল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Barringtonia acutangula। এটি Lecythidaceae পরিবারের সদস্য। এটি বাংলাদেশের ভাটির অঞ্চলে বহুকাল ধরে টিকে থাকলেও এর আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারত। গাছ মাঝারি আকারের, উচ্চতা ৫-১০ মিটার পর্যন্ত, এর ডালপালা থাকে ছড়ানো, বাকল যথেষ্ট পুরো, ঘনছাই রঙের হয়ে থাকে, বীজ থেকে গাছ হয়। খাল, বিল, নদী, ডোবা, হাওর ইত্যাদি জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। এটি পানির নিচে কয়েক মাস জীবিত থাকতে পারে। এ গাছের মূল আকর্ষণ লাল ও গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুল, ফুলের আছে মিষ্টি ঘ্রাণ। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে- “ফুলের মঞ্জুরী ৬-১৫ ইঞ্চি লম্বা। বহুপুষ্পিক ফুলের বৈশিষ্ট্যে হিজল অনন্য”।

banner

হিজল বীজের অনেক ঔষুধি গুনাগুন আছে- মাথা ও কপাল ব্যথা হলে হিজল বীজ শুকিয়ে গুড়া করে দুই চামচ পরিমাণ এক কাপ দুধসহ সকালে এবং বিকেলে খেলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। পেটে গ্যাস হলে, ঢেকুর উঠলে, পেট ফাঁপা হলে হিজল বীজ চূর্ণ করে গরম মসলা সহ খেলে কিছুক্ষনের মধ্যে সেই সমস্যা চলে যায়। চোখ উঠলে, চোখ লাল হলে, চুলকায়, পানি পড়ে। সেই সময় বীজ নিয়ে পাথরে ঘসে চন্দনের মত চোখের চারি পাশে লাগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ রাখার পর ছোট নেকড়া ভিজিয়ে মুছে দিলে যন্ত্রণা কমে যায়। হিজল ফুল গভীর রাতে ফুটে, সকাল হতে না হতেই ঝড়ে যায়। হিজল সাধারণত জলমগ্ন বা জলসংলগ্ন অঞ্চলে ভাল হয়। তাই নবীনগরের ভাটির অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে টিকে আছে হিজল গাছ। নদী সংলগ্ন গ্রাম গুলোতে নৌকা দিয়ে গেলে চোখে পড়ে অপূর্ব হিজল গাছের সারি কারন- হিজলের আবাস নিচু এলাকা/ হাওড় অঞ্চল।

নবীনগরের মত দেশের হাওড় বেষ্টিত সাত জেলার ৪০টি উপজেলায় কম বেশি প্রায় প্রতি গ্রামেই দেখা যায় হিজল। নিচু জলাঅঞ্চলে মাছের অভয়রাণ্য তৈরিতে এই গাছের ডাল ব্যবহৃত হয়। ভরা বর্ষায় নবীনগরের ভাটি অঞ্চলে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় নৌকা থেকে চারপাশে তাকালে থৈ থৈ জলের মধ্যে দেখা যায় হিজল গাছ। যেন ঘাটে নৌকা লাগতেই স্বাগত জানাচ্ছে হিজলের ফুল। স্থানীয়দের খুব চেনা এ গাছটি শুকনো মৌসুমেও দিব্যি থাকে। এমনকি রাজধানী শহরের একাধিক উদ্যানেও দেখা যায় হিজল গাছ। বর্তমানে কিছু সরকারি বেসরকারি প্র্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ গাছ লাগানো হচ্ছে। হিজলের প্রাণশক্তি অনেক বেশি, দীর্ঘজীবী গাছ, বিধ্বংসী বন্যা কিংবা তীব্র খরাও একে কুপোকাত করতে পারে না। জল এবং স্থল দুই জায়গাতেই এরা সাবলীল, এদের এই আলাদা বৈশিষ্ট্য ও অভিযোজনের কারনে হিজল সবার দৃষ্টি কাড়ে।

Leave a Reply

নিষেধাজ্ঞার আগেই টিকটক বন্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রে

অনলাইন ডেস্ক : আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রে অফ Read more

যুদ্ধবিরতির আগে ২৩ ফিলিস্তিনির প্রাণ নিলো…

অনলাইন ডেস্ক : গাজায় গত ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে Read more

মোবাইলে তালাক বলায় গৃহবধূর আত্মহত্যা

চলারপথে রিপোর্ট : প্রবাসী স্বামী মোবাইলে তালাক বলায় মারিয়া আক্তার Read more

আজ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত Read more

মার্শা বার্নিকাট, আলেইনা তেপলিৎজ ও ডেরেক…

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোকবল ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ Read more

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে ঘুষের ভিডিও ভাইরাল, এসআই…

অনলাইন ডেস্ক : নাটোর সদর থানার ভেতরে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য Read more

নেপালকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক : মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে Read more

সরাইলে ইটভাটা মালিককে জরিমানা

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইলে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন Read more

বাঞ্ছারামপুরে জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : প্রথমবারের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে Read more

বিতর্কে অংশ নেয়া মানেই তথ্য ভিত্তিক…

চলারপথে রিপোর্ট : অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সাইফুল ইসলাম Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আইসিটি শাখা উদ্বোধন

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে নতুন কম্পিউটার সংযোজিত আইসিটি শাখার Read more

পর্যটককে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৬

অনলাইন ডেস্ক : কক্সবাজার পৌরসভার সমিতিপাড়ায় অস্ত্রের মুখে ৩ পর্যটককে Read more

তিন মাস পর পর রক্ত লাগে, এমন অসুস্থতা নিয়েই জিপিএ-৫ পেলেন সাজন

নবীনগর, 27 November 2023, 716 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত মেধাবী ছাত্র সাজন সাহা। তিন মাস পর পর শরীরে দিতে হয় রক্ত।
তারপর জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে অসুস্থতা নিয়েও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

banner

সাজন সাহা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং পালপাড়া গ্রামের সঞ্জিত সাহা ও স্মৃতি রাণী সাহার ছেলে।

জানা গেছে, সঞ্জিত সাহা কাজ কারেন খাবার হোটেলে। একদিকে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সাজন সাহার শরীরে ধরা পড়ে জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। গত ২ বছর আগে একমাত্র ছোট বোনটিও মারা যায় শারীরিক অসুস্থতায়। সব মিলিয়ে তার জীবনযুদ্ধ যেন হার মানায় সবকিছুকেই।

কথা হয় জীবন যুদ্ধে লড়াকু সৈনিক সাজন সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, শরীরে যখন রক্ত কমে আসে তখন শরীরজুড়ে জ্বর আসে, মাথা ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল হয়ে ভেঙে আসে। তবু হার মানিনি। রক্ত দিয়ে আবারও নেমে পড়ি ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে। আমার মা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেন ভাল কিছু করার জন্য। তবে শারীরিক দুর্বলতা আমাকে হার মানাতে না পারলেও দরিদ্রতা আমার এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বাবার সামান্য আয় দিয়ে আমার চিকিৎসা আর সংসার চালাতে হিমশিম খায়। আমার ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার। যেন দরিদ্র মানুষের ন্যায় বিচারে কাজ করে যেতে পারি। তারপরও আমি হতাশ হচ্ছি না। সৃষ্টিকর্তা যখন এইটুকু এগিয়ে নিয়ে এসেছেন, হয়ত তার ইচ্ছাতেই সবাই আমার পাশে থাকবেন। আমার এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করবে।

তিনি আরো বলেন, আমার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। স্বেচ্ছাসেবী ব্লাড ফাউন্ডেশন আমার জন্য তিন মাস পর পর রক্তের ব্যবস্থা করে থাকেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

সাজনের সহপাঠীরা বলেন, সে একজন মেধাবী ছাত্র। নিয়মিত কলেজ করত। সে অসুস্থ হলেও দৃঢ়তার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সাজনে সবার জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।

সাজনের মা স্মৃতি রাণী জানান, আমার ছেলে প্রায় ১০ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখি তবে সাদ আর সাধ্যের ফারাক যে নির্মম বাস্তবতা। অর্থহীন সংসারে এগিয়ে যাওয়া অনেক কষ্ট। আমার ছোট মেয়েটিও দুই বছর আগে মারা গেছে। এখন সাজনই আমার একমাত্র সম্বল। যেহেতু আমার ছেলে অসুস্থ তাই আমি চাই সে একটা ভাল সরকারি চাকরি করুক।

নবীনগর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এ কে এম রেজাউল করিম জানান, সাজনের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। সে কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র। আমরা আশা করি তার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে। আর আমরা নিজস্ব উদ্যোগে তার সহযোগিতায় পাশে থাকব।

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

নবীনগরে কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন এবাদুল করিম বুলবুল এম.পি

নবীনগর, 23 September 2023, 835 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার লাউরফতেপুর ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামে ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান অতিথি থেকে উদ্বোধন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৫ নবীনগরের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল।

banner

এসময় উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আইডিপি আর মো. শাহ আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হাবিবুর রহমান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক, জেলা পরিষদ সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন, নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম, আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট সুজিত কুমার দেব, বিপি মোশাররফ হোসেন সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম নজু, নিয়াজুল হক কাজল, প্রণয় কুমার ভদ্র পিন্টু,সাইফুর রহমান সোহেল,ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, আবু মুসা, এম আর মুজিব, সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা লোকমান হোসেন শিশু,প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম মিনাজ, ,মডেল প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো.আবু কাউসার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বললেন হাজার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দৌড়গারায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পাশাপাশি বাস্তবায়নও করেছিলেন মাঝখানে ৫ বছর বিএনপির ক্ষমতায় এসে সেই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আবার কমিউনিটি ক্লিনিক এর কার্যক্রম চালু করেছেন যার সুবিধা আমরা সকলেই এখন ভোগ করছি।কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের শেষে গ্রামের রাস্ত দি য়ে যাওয়ার পথে উভয় পাশের বাড়ির মহিলাদের নিকট উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কা ভোট চাইলেন।

নবীনগরে সড়ক ও খালের জায়গা দখলের অভিযোগ

নবীনগর, 26 April 2024, 534 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে চলছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ‘র জায়গা দখলের মহোৎসব! আর এইসব দখল মহোৎসবের আড়ালে কোটি টাকার বাণিজ্যে মেতে উঠেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে গিয়ে এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেয়া ‘তরী বাংলাদেশ’ এর একটি ফেইসবুক পোস্ট নজরে আসলে নড়েচড়ে বসেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ঘটনাটি নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের মালাইবাংগরা বাজার এলাকায়।

banner

কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত বাংগরা বাজার। বাজারটির পশ্চিম পাশে সওজ’র সড়ক। সড়কের পশ্চিম পাশে প্রসস্ত খাল। যা যুক্ত হয়েছে অদের খালের সাথে। এই সড়কের পাশে দোকানপাট নির্মাণের নামে সরকারী জায়গা হরিলুট চলছে দীর্ঘদিন ধরেই!

জানা যায়, সওজ’র একশ্রেণীর অসাধূ কর্চারীর যোগসাজসে এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় সরকারী জমি দখলের এই মহোৎসবের পাশপাশি চলে আসছে বিশাল অংকের আর্থিক বাণিজ্যও। যার পরিমাণ কোটি কোটি টাকা। রাস্তা ও খালের পাশে দখলের মহোৎসবের ফলে একদিকে যেমন সংকুচিত হয়ে খালটির অবস্থা হচ্ছে বেহলা, অন্যদিকে সড়কও হচ্ছে সংকুচিত। এতেকরে এখানে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে প্রকট আকারে। যানজট লেগে থাকার কারণে যাত্রীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর।

এ ব্যাপারে ‘তরী বাংলাদেশ’ এর আহবায়ক শামীম আহমেদ বলেন, কিছুদিন যাবৎ তরী’র কাছে বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন সংবাদ আসছিলো যে, ‘নবীনগরের সাবেক এমপি এবাদুল করিম বুলবুলের সময়ে বাংগরা বাজারের পাশে দুইশ’টির মতো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ওই উচ্ছেদের বছর পাড় না হতেই আবারও সেই জায়গায় দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা তৈরী করছে দখলদারার।’এমন সংবাদের সত্যতা যাচাই করতেই গত ২১ এপ্রিল রবিবার নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশ’ এর একটি প্রতিনিধিদল দখলকৃত স্থানটি পরিদর্শন করে। আহবায়ক শামীম আহমেদ এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, তরী বাংলাদেশ এর আহবায়ক কমিটি সদস্য, খালেদা মুন্নী ও সোহেল রানা ভূঁইয়া প্রমূখ। তরী বাংলাদেশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পেয়ে গত ২৩ এপ্রিল তরী’র পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য আবেদন করা হয়।

শামীম আহমেদ আরো বলেন, আমরা সরজমিন গিয়ে যা দেখলাম তা রীতিমতো বিস্মিত হওয়ার মতো! বাজারের উত্তর পাশে নেমে পায়ে হেটে বাজারের দক্ষিণ মাথায় অদের খালের উপর অবস্থিত ব্রিজটির কাছে যাই। সেখানে ব্রিজের নীচের অবস্থা দেখে আরও বিস্মত হই! পরে আমরা অদের খালটির রাজাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে অবাক হই। এখানে একটি অবৈধ ব্রিজও দেখতে পাই যার ফলে নৌরুট বন্ধেরও অভিযোগ আছে! এ বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ করছি।

শামীম আহমেদ বলেন, এখানে যেভাবে দখলের হরিলুট চলছে তা দেখে মনে হবেনা দেশে আইন বলতে কিছু আছে! তিনি বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন কালে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে সরকারী জায়গায় গড়েতোলা এসব দোকানের বৈধতা দিচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

নাম প্রকাশ না করা সর্তে বেশ কয়েকজন অবৈধ দখলদার জানান, প্রতিটি দোকনের পজিশন ফিরে পেতে মাথাপিছু এক থেকে দেড় লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের!

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারজুড়ে চলা এই দখলের প্রতিযোগিতায় যাত্রীছাউনি হয়েছে সেলুন! ব্রিজের ওপরে বসেছে চায়ের দোকান। অদের খালের পাশ নদী দখল করে বসানো হয়েছে মুরগীর দোকান! যার মালিক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইয়ের বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

বাংগরা বাজার কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল আলম রবি বলেন, সবাই নিজ নিজ দায়িত্বেই সড়কের পাশে দোকানঘর নির্মাণ করছে। এখানে কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন করা হয়নি। তিনি বলেন, তারা আগে থেকেই এখানে ব্যবসা করে আসছিল। সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণকাজের প্রয়োজনে সাবেক এমপির অনুরোধে তারা দোকান সরিয়ে নিয়েছিল।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত আছি। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালাব।’

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় তরী’র একটি পোস্ট আমার নজরে আসে। এ বিষয়ে জেলাপ্রশাসক স্যারের সাথেও কথা বলেছি। আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, অবৈধ দখলকৃত জায়গাগুলো সওজ’র। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যদি উচ্ছেদে সহযোগিতা চায় তাহলে আমরা সহযোগিতা করব।’

বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়স্থল: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

নবীনগর, রাজনীতি, 14 July 2023, 1439 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপির কর্মকাণ্ডে সমালোচনা করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপি মানে বগুড়া-নোয়াখালী পার্টি। এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়।

banner

এটি স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়স্থল। বড় আশা করে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগাযোগ করেছিল। তারা এসে ঘুরেও গেছে। তাদের একটিই প্রশ্ন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাইছি সেটা। এখন তারা বিপদে পড়ে গেছে। ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও থেকে তাদের বের হয়ে আসতেই হবে।
আজ ১৪ জুলাই শুক্রবার বিকেলে নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় রাজনৈতিক-সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে বানচাল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে যদি নির্বাচন করতে ব্যর্থ হই তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সুতরাং নির্বাচন সময়মতো হবে। সেই নির্বাচনে জনমত কাজে লাগিয়ে কীভাবে আমরা আবারও সরকার গঠন করতে পারি- সেই চেষ্টা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুজিত কুমার দেব, জেলা পরিষদের সদস্য নাসির উদ্দিন ও সংস্কৃতিকর্মী শুকলা রানী ভট্টাচার্য প্রমুখ। মতবিনিময় সভা শেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন উপজেলায় জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা

নবীনগর, বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 1 June 2024, 976 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর ও বিজয়নগর এই তিন উপজেলার নির্বাচনের প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। জয়ের আশায় প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। প্রার্থী নিজে এবং তাদের কর্মী সমর্থকদের মাধ্যমে নিজ নিজ প্রতীকের প্রচার করছেন তারা। এদিকে ভোটারদের মতে, সৎ যোগ্য ও এলাকার উন্নয়নে যিনি ভূমিকা রাখবেন, যাকে সুখে দুখে পাশে পাওয়া যাবে, তাকেই তারা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবেন। তবে ভোটার এবং প্রার্থী সকলেই আশাবাদী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ ভোটাররা সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে চান। তবে জয়ের ব্যাপারে সকল প্রার্থীরাই আশাবাদী। আর তাই সেই আশায় প্রার্থীরা বিরামহীন চালিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ প্রচার প্রচারণা। দিন যতই যাচ্ছে প্রার্থী, কর্মী ও ভোটারদের মধ্যে বাড়ছে আুৎসবের আমেজ। প্রার্থীর পক্ষে কর্মীরা সালাম জানাচ্ছেন ভোটারদেরকে। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, বিজয়নগর ও নবীনগর উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

banner