চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী আখাউড়া উপজেলায় এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন বাজারে পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের লিচু। রসালো, সুমিষ্ট ও মুখরোচক ফল হিসেবে লিচু পছন্দ বাঙালি সব শ্রেণির মানুষের কাছে। দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় খুশি বাগান মালিক ও ক্রেতারা। সেই সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ চাহিদাও বেড়েছে। বেড়েছে বেচাকেনাও।
এদিকে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা পাকা লিচু বাগানগুলোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটক। লিচু বাগানে তারা প্রিয়জনদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। ফেরার সময় কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন লিচু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচুর চাষ শুরু হয়েছে গত দুই যুগ আগে। উপজেলার সীমান্তঘেঁষা মনিয়ন্দ, আখাউড়া উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের ধর্মনগর, কর্মমঠ, রাজমঙ্গলপুর, নোয়ামুড়া, ঘাগুটিয়া, শিবনগর, খারকোট, মিনারকোট, আজমপুর, আমোদাবাদ, রামধন নগর, চানপুর, রাজাপুর, কল্যাণপুর, আনোয়ারপুর, হীরাপুর, কুড়িপাইকাসহ আখাউড়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে লিচুর চাষ হয়ে থাকে।
এ উপজেলায় উৎপাদিত লিচুর মধ্যে পাটনাই, বোম্বাই, এলাচি, চায়না-২, চায়না-৩, বেদানা ও স্থানীয় জাতের লিচু রয়েছে। এখানকার মাটি লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি মৌসুমে লিচুর ভাল ফলন হয়েছে। এছাড়াও লিচু বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পেয়ে খুশি এখানকার চাষিরা।
আখাউড়ার লিচু বেশ রসালো ও সুমিষ্ট হওয়ায় জেলার বাইরেও বেশ কদর রয়েছে। প্রকারভেদে বাগান থেকে একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ – ৩০০ টাকা দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে তা নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এদিক লিচু বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন জেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা থেকেও পরিবার পরিজনদের নিয়ে আসছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটক।
আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের গ্রিন ভিলেজ পার্কের মালিক অ্যাডভোকেট মনির হেসেন চৌধুরী বলেন, আমার লিচু বাগানে বিভিন্ন জাতের শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে। লিচু গাছে এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর গাছে ফুল আসার পরপরই দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। যারা কিনেছেন তারা অনেক লাভবান হয়েছেন।
আখাউড়ায় প্রধান লিচুর বেচাকেনা হচ্ছে পৌরশহরের সড়ক বাজারে। এছাড়াও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন এবং স্টেশন সড়কের দুই পাশে প্রতিদিন লিচুর বাজার বসছে। ফলে স্টেশন সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশনগামী ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটগামী ট্রেনযাত্রীদের।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ উপজেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফল চাষ হয়ে থাকে, তার মধ্যে চলতি মৌসুমে প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছ।
এ বছর তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে কিছু কিছু বাগানে ফলন কম হলেও উৎকৃষ্ট লিচু উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া।
তিনি আরো জানান, আখাউড়া উপজেলা থেকে এ বছর অন্তত দেড় কোটি টাকার লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক জেলা প্রশাসকের সামনে জাতীয় সংগীত শুদ্ধভাবে গাইতে না পারার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতে আবারো নতুন করে আলোচনায় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এবার পরীক্ষার হলে বসে এক শিক্ষার্থী টিকটক করে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ে; যা ইতোমধ্যে ভাইরালও হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনায় ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।
যদিও ঘটনার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত এসএসসি পরীক্ষার্থী সাব্বির হোসেন ও তার অভিভাবককে ডেকে সতর্ক করেছেন মাত্র।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শশাংক রায় চৌধুরী সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরীক্ষার হলে মোবাইল এলাও না। এ ঘটনায় ওই ছাত্রের অভিভাবককে ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি আজ ৯ এপ্রিল রবিবার গণিত পরীক্ষার দিন হল থেকে অন্তত ১৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বসে তাদের ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আগত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলছে। গত বৃহস্পতিবার ছিল ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা। ওই দিন শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন পরীক্ষা চলাকালীন হলে বসে টিকটক ভিডিও তৈরি করে তার ফেসবুকে আইডিতে আপলোড করে। পরীক্ষার হলে টিকটক ভিডিওর পনেরো সেকেন্ডের একটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।
পরীক্ষার হলে ধারণকৃত টিকটক ভিডিওটিতে দেখা যায়, যেখানে পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ কেন্দ্রের ভেতরে বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে একটি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মাধ্যমে।
আখাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে কোনো বিদ্যালয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষার নামে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার পরীক্ষার হলে বসে মোবাইল ফোনে টিকটক ভিডিও ধারণের প্রশ্নই উঠে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম সম্প্রতি উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বিভিন্ন খোঁজখবর নেন। এ সময় শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে না পারায় জেলা প্রশাসক রাগান্বিত হয়ে ওই বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেনের বেতন স্থগিত এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় খড়মপুর কল্লা শহীদ (র.) বার্ষিক ওরসে এসে ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন নিহত ও ১ জনত আহত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে আখাউড়া-সিলেট বাইপাস রেলপথের খড়মপুর মাজার শরীফ এলাকায় সেতু পারাপারের সময় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
তারা হলেন- নরসিংদী জেলার মাধবদি থানার নোয়াকান্দি গ্রামের গাজী মিয়ার পুত্রে শুকুর মিয়া (৬০), একই জেলার পলাশ উপজেলার মোতালেব মিয়ার পুত্র মোজাম্মেল, (২০), নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলার চিলকান্দি গ্রামের তমিজ উদ্দিনের ছেলে মতি ভূঁইয়া (৫৫)। অপর ১ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আমিরুল ইসলাম নামে আহত একজনকে উদ্ধার করে রাতেই আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় পুলিশ।
আজ ১১ আগস্ট শুক্রবার সকালে তার স্বজনরা এসে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর রাত্র থেকে আখাউড়া পৌরশহরের খড়মপুর কল্লা শহীদ (র.) ৭ দিন ব্যাপী বার্ষিক ওরস শুরু হয়েছে। উরস উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে মাজার এলাকায়। রাত্র সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট রেলপথের মাজার সংলগ্ন এলাকায় ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের থাক্কায় এবং ঝাঁপ দিয়ে পানিতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাতেই ২টি মরদেহ উদ্ধার করে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা এবং দুপুর ১২টার দিকে আরও ২ টি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়াস সার্ভিসের কর্মীরা।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ট্রেনের গতি বেশি ছিল এবং ট্রেনটি সেতুর কাছাকাছি এসে হুইসেল দেওয়ায় সেতু পার হতে না পারায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শুক্কর আলীর ছোট ভাই সামসুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নৌকা দিয়ে ৪০/৪৫ জন লোক খড়মপুর আসেন। মাজারের পশ্চিমে রেললাইনের পাশে নৌকা রেখে তারা কয়েকজন পায়ে মাজারের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ ট্রেন চলে আসলে ভাই ট্রেনের ধাক্কা খেয়ে পানিতে পরে যায়। পরে তার লাশ দেখে সনাক্ত করি।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন খন্দকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাজার শরীফে আসা লোকজন রেলসেতু পারাপার হচ্ছিল। এসময় ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন এলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন আসার সংকেত দেয়। লোকজন তাড়াহুড়া করে রেলসেতু পারাপার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সেতু থেকে নদীতে ছিটকে পড়ে নিহত হয়। খবর পেয়ে আখাউড়া ফায়ার সার্ভিস নদী থেকে ২টি মরদেহ উদ্ধার করে। পরে শুক্রবার ভোরে এবং দুপুরে আরো ২টি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এদের মধ্যে দু’জনকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আখাউড়া থানার ওসি মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞাত একজনকে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়েছে। আখাউড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মুনিম সারোয়ার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ২টি এবং শুক্রবার ২টি মরদেহ উদ্ধার করেছি। এখনও খোঁজাখুজি চলছে।
উল্লেখ্য, খড়মপুর মাজার শরীফে সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক ওরশ চলবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত।
চলারপথে রিপোর্ট:
বিস্তির্ণ ফসলের মাঠ চারপাশে। জমিতে যাওয়ার মেঠো পথ মাঝখান দিয়ে। পথের এক প্রান্তে গড়ে উঠেছে ছোট্ট বসতি। কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা এ পথ ধরে জমিতে যায়। বসতির লোকজনও এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে।
পথের এক পাশে বড় একটি একটি পুকুর। পুকরের চারপাড়ে রয়েছে সহস্রাধিক কলা গাছের বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। কলাপাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে কলার মোচা। হাওয়ায় দুলছে কচি সবুজ কলাপাতা। এক অপরূপ দৃশ্য নজর কাড়ছে কৃষক, শ্রমিক, পথচারিদের। চলার পথে একটু দাঁড়িয়ে চোখ বুলায় কলাবাগানের দিকে। মাঝে মধ্যে স্থানীয় তরুন-যুবারাও আসে কলাবাগান দেখতে।
আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট কুড়িপাইকা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার (অব.) জাবেদ ইকবাল খন্দকার ছোট কুড়িপাইকা ফসলি মাঠে বাগানটি করেছেন। ইতোমধ্যে শতাধিক গাছে কলার ছড়া এসেছে। কয়েক ছড়া কলা নিজেরা খেয়েছেন। পাইকাররা এসে বাগান দেখে দরদাম করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি উদ্যোক্তা খুশি। দুই লক্ষাধিক টাকার কলা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ ইকবাল খন্দকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১ বছর আগে সাড়ে তিন বিঘা অনাবাদি জমিতে পুকুর খনন করেন। পুকুরের চারপাড়ে সবরি জাতের ৪’শ কলা রোপন করেন। সাথে কিছু সাগর ও আনাজি কলা। একটি চারা থেকে ৩/৪টি গাছ হয়েছে। বর্তমানে বাগানে প্রায় ১ হাজার ৩’শ কলা গাছ আছে। প্রায় দেড়শ গাছে কলা এসেছে। আরও আসছে।
কলা গাছের বাগান করার পরিকল্পনার বিষয়ে প্রবীন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ ইকবাল খন্দকার আরও বলেন, আমি জমিতে এসে দেখি কৃষক-শ্রমিকরা রোদের মধ্যে জমিতে কাজ করে। রোদে বসে খাবার খায়। শ্রমিকরা প্রায়ই বলতো এখানে যদি গাছ থাকতো তাহলে তাদের সুবিধা হতো।
এজন্য আমি পুকুর খনন করে পুকুরের চার পাড়ে কলা গাছ রোপন করেছি। ১২টি কাঁঠাল গাছ লাগিয়েছি। শ্রমিকদের বলেছি বাগানে বসে খাবার খাওয়া এবং বিশ্রাম করার জন্য। অনেক সময় ছেলে মেয়েরা এখানে ঘুরতে আসে। বাগান দেখে আনন্দ পায়।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৩ হাজার টাকার কলার চারা রোপন করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুকুরে কাতল, রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছেন। আশা করছেন দুই লক্ষাধিক টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন। শ্রমিক নিয়ে তিনি নিজেই বাগানোর দেখাশুনা করেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলা গাছে ছোট বড় কলার ছড়া ঝুলছে। পাতার ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছে কলার মোচা। পুকুরে মাঝে মাঝে টুপ-টাপ শব্দ করে করে জানান দিচ্ছে মাছেরা আছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ ইকবাল খন্দকারের সৌদি আরব প্রবাসী পুত্র সুমন খন্দকার বলেন। বাবা সব সময় কৃষি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে তিনি আনন্দ পান। আমরা বিদেশ থেকে খোঁজ খবর রাখি। যখন যা প্রয়োজন হয় সহযোগিতা করি। বাগানটি দেখে খুব ভালো লাগছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাস্সুম বলেন, ভালোভাবে পরিচর্যা করলে সবগুলো গাছেই কলা আসবে। সবরি কলার ফলন ভালো। রোগ-পোকার আক্রমন কম হয়। অন্যান্য কলার তুলনায় সবরি কলার পুষ্টিগুণ বেশি। আইরনের চাহিদা পূরণ করে।
সবরি কলার বাজার চাহিদাও বেশি। কৃষক আসাদের সাথে যোগাযোগ করতে আমরা তাকে পরামর্শ দিব। আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে বলবো বাগানটি দেখে আসতে।
চলারপথে রিপোর্ট :
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আখাউড়া প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৫ মার্চ শনিবার সকালে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মুরাদ হোসেন ভূইয়া।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জুয়েল মজুমদার, উপজেলা যুবলীগের য্গ্মু আহবায়ক আব্দুল মমিন বাবুল, আখাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ শফিকুল ইসলাম, আখাউড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাক হান্নান খাদেম, টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জালাল হোসেন মামুন প্রমুখ।
এর আগে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ২৫ মার্চের গণহত্যার উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
এসময় বক্তারা ২৫ মার্চের তাৎপর্য তুলে ধরেন বলেন, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সেই রাত্রে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালী জাতির উপর নির্মম ধ্বংষযজ্ঞ চালায়। পৈশাচিক নির্যাতন করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। বক্তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
টিউবওয়েলের মাথা (মাটির উপরের অংশ) নেই ৬/৭ মাস ধরে। কে বা কারা খুলে নিয়ে। এরপর আরলাগানো হয়নি। টিউবওয়েল না থাকায় পানি পানে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের দুতলায় পানির ব্যবস্থা রাখা হলেও অনেকটা হেঁটে সিঁড়ি ভেঙ্গে দুতলায় গিয়ে পানি পান করা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর। আবার অনেক সময় জগে পানিও থাকে না। ফলে তৃষ্ণা পেলে বিদ্যালয় গেইটের বাইরে চা-দোকানে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। তবে ছাত্ররা বাইরে যেতে পারলেও ছাত্রীরা পারে না। ফলে তৃষ্ণা চেপেই ক্লাশে বসে থাকতে হয়। পানির অভাবে বিড়ম্বনায় পড়েন বিদ্যালয়ে অপেক্ষমান অভিভাবকরা। এমন চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের। দ্রুত টিউবওয়েল স্থাপনের দাবী ছাত্রছাত্রীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীণ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির বয়স শত বছরেরও বেশি। আখাউড়া রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের পাশাপাশি স্থানীয় ছেলে-মেয়েরাও এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। উপজেলার একমাত্র সরকারি স্কুল এবং ফলাফল ভালো হওয়ায় এ স্কুলে পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বেশি। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে এক হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পানির পানের জন্য একটি টিউবওয়েল নেই। বিগত ৬/৭ মাস আগে টিউবওয়েলের উপরের অংশটি কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। এর পর আর মাথা লাগানো হয়নি। এজন্য পানি পান সহ অন্যান্য প্রয়োজনে পানি ব্যবহার করতে পারছে না ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। পানি পানের জন্য বিদ্যালয়ের বাইরে চা-স্টল এবং মসজিদের টিউবওয়েল ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু মেয়েরা বাইরে যেতে না পারায় পানির জন্য বেশি কষ্ট করছে। তবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুতলায় জগে পানি রাখা হয়। ছাত্রছাত্রীরা প্রয়োজনে দুতলায় গিয়ে পানি খেয়ে আসতে পারে। তবে ছাত্রছাত্রীর তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময় জগের পানি শেষ হয়ে গেলে পানির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার অনেক সময় পানি না পেয়ে ফিরে আসতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। এদিকে, তীব্র গরমে হঠাৎ একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে গেলে দ্রুত পানি দেওয়ার মত কোন ব্যবস্থা নাই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টিউবওয়েলের উপরের অংশটি নাই। জানতে চাইলে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বলে, ৬/৭ মাস ধরে টিউবওয়েল নষ্ট। পানি খেতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। খেলাধুলা করার পরে হাত-পা ধুতে পারি না। দুতলায় গিয়ে অনেক সময় পানি পাই না। এসময় এক নারী অভিভাবক বলেন, গরমের মধ্যে খুব পানি তৃষ্ণা পায়। কিন্তু স্কুলের টিউবওয়েল না থাকায় পানি খেতে পারি না। হঠাৎ একটা ছেলে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যে পানি দেওয়া তবে সে রকম ব্যবস্থাও নাই। একটা সরকারি স্কুলে এতদিন যাবত টিউবওয়েল নষ্ট। এটা কি শিক্ষকদের নজরে পরে না। তিনি দ্রুত টিউবওয়েল মেরামতের জন্য দাবী জানা।
এদিকে পানির পানের গুরুত্ব বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হিমেল খান বলেন, পানির অপর নাম জীবন। পানির অভাবে শরীরে পানি শূণ্যতা দেখা দিতে পারে। হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। প্রস্রাব জ্বালাপোড়া ইনফেকশন হতে পারে। কিডনি ফেইলিউরও হতে পারে। তাছাড়া এখন তীব্র গরমে প্রচুর ঘাম বের হচ্ছে। তাই এসময় প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। এ ব্যাপারে রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা ছেলেমেয়েদেরকে বলেছি বাড়ি থেকে বোতলে করে পানি নিয়ে আসার জন্য। তাছাড়া দুতলায় জগে পানি রাখা থাকে। ছাত্রছাত্রীরা এসে পানি পান করে। টিউবওয়েলটি কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। আবারও করব।