অনলাইন ডেস্ক :
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিটন চন্দ্র দে’র বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি ৩০ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত দিয়েছেন।
তাঁর ভাষ্য, ২৫ মে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচন চলার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে ৩০০০ টাকার জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক লিটন চন্দ্র দে। কিন্তু তাঁর হাতে দেওয়া রসিদে ৫০০ টাকা লেখা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তাঁকে গালাগালি করেন ওই বিচারক। একই সঙ্গে ছয় মাসের জন্য কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন।
আবুল কাশেম উপজেলার ঠাকুরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। ২৫ মে বিকেলে এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে যাচ্ছিলেন তিনি। সোয়া চারটার দিকে চন্দনপুর ইউনিয়নের তুলাতুলি কাচারীকান্দি গ্রামে পৌঁছান। ওই গ্রামের পূর্বপাশের সড়কে যাওয়ার পর সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি চালক বলেন, ‘স্যার আপনাকে ডাকেন।’ কাশেমকে সেখান দিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চান ওই কর্মকর্তা। তিনি রোগী দেখতে যাওয়ার কথা জানালে লিটন চন্দ্র দে বলেন, এখন যাওয়া যাবে না। তখন কাশেম বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা জানালেও ছাড়তে রাজি হননি। বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কাশেমের ভাষ্য, ‘সেখানে গাড়ি থামতে বললে আমি এসিল্যান্ড স্যারের কাছে যাই। তিনি আমাকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছি জানিয়ে ৩০০০ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু রসিদে ৫০০ টাকা লেখা ছিল। বিষয়টি জানতে চাওয়ায় তিনি (এসিল্যান্ড) আমার সঙ্গে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন ও ছয় মাসের জেল দেওয়ার ভয় দেখান।’ এর প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
তবে এমন অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘মিথ্যাচার’ বলে দাবি করেন লিটন চন্দ্র দে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৩০০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। সেখানে পুলিশ ও আনসারের অনেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আমি তাঁকে বলেছি, ৫০০ টাকা জরিমানা না দিলে তিন দিনের সাজা দেওয়া হবে।’
মেঘনার ইউএনও রাবেয়া আক্তার বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। তাঁর হাতে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আসেনি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার অভিযোগটি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, ‘এমন যদি হয়ে থাকে, অবশ্যই তা খুবই দুঃখজনক। এসিল্যান্ড সাহেবের ব্যাপারে (জমিজমার) খারিজ নিয়েও নানা অভিযোগ আমার কাছে আসছে।’
অনলাইন ডেস্ক :
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবসহ বিএনপি নেতারা তরুণদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ধ্বংসের শিক্ষা দিচ্ছেন, অগ্নিসন্ত্রাসের শিক্ষা দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার চট্টগ্রামের জামালখান এলাকার রাস্তায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামে অমর ভূমিকা রাখা মাস্টারদা সূর্যসেন, মাওলানা মনিরুজ্জামান থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং স্বযত্নে রক্ষিত ম্যুরালগুলো বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে যাওয়ার পথে তারা ভাঙচুর করেছে। এর অর্থ বিএনপি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কোনটাই মানে না এবং ধ্বংস করতে চায়। আমার প্রশ্ন তারা তরুণদের কি শিক্ষা দিচ্ছে? এই ভাঙচুর, অগ্নিসন্ত্রাসের শিক্ষা দিচ্ছে!’
আজ ১৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের (বিএসপি) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোথাও রাস্তার পাশে এতো সুন্দরভাবে ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রদর্শনী নেই, যেটি চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় করা হয়েছে। প্রায় শতাধিক বিভিন্ন চিত্রকর্ম সেখানে স্থান পেয়েছে। এই দৃষ্টিনন্দন দেয়ালে আমাদের পুরো ইতিহাস তুলে আনা হয়েছে এবং সেগুলো তারা ভাংচুর করেছে। এ অপরাধের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে এবং এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব যখন বক্তৃতা করে তখন মনে হয় ভেতরে ভেতরে উনি ‘এফআরসিএস’ পাস করেছেন, উনি এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও বটে। কারণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, আর মির্জা ফখরুল সাহেব গলা ফাটিয়ে বলেন উনি জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে। এখন ডাক্তারদের কথা ঠিক না ফখরুল সাহেবের কথা ঠিক, এটাই হচ্ছে প্রশ্ন।’
‘বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য একজন মানুষের স্বাস্থ্যকে রাজনীতিকরণ করার উদাহরণ’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা বেগম জিয়াকে রাজনীতির পণ্য বানিয়েছে। এটা তার জন্য প্রচণ্ড অবমাননাকর। বেগম জিয়ার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা এবং সম্মান রেখে আমি তাদের অনুরোধ জানাবো, দয়া করে বেগম জিয়াকে বা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক পণ্য বানাবেন না।’
সাংবাদিকরা এ সময় প্রশ্ন করেন- ছয় জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে নির্বাচন বিষয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়ার খবর, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রায় দুইশত বাংলাদেশির প্রতিবাদ লিপি দেওয়া এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কংগ্রেসম্যানদের চিঠি না পাওয়ার খবর বেরিয়েছে, এ বিষয়ে আপনার মত কি? এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি তো ইতিপূর্বে কংগ্রেসম্যানদের নামে ভুয়া চিঠিও প্রকাশ করেছিল। যেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে তারা চিঠি পায়নি, সেখানে কংগ্রেসম্যানদের চিঠির যথার্থতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে কংগ্রেসম্যানরা এ রকম চিঠি দিতেই পারে। শতশত কংগ্রেসম্যানের মধ্যে ৬ জন কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছে -এগুলো বাংলাদেশেই খবর হয়, অন্য কোনো দেশে খবর হয় না।’
এর আগে বিএসপি সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু এবং বিএসপির সাধারণ সম্পাদক জি এম কিবরিয়া তাদের বক্তৃতায় সংবাদপত্র পরিষদের পক্ষে নিউজপ্রিন্টের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা, বিগত অর্থ বছরগুলোর ক্রোড়পত্রের বকেয়া বিল পরিশোধ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে বিএসপি সদস্য অন্তর্ভুক্তি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান ব্যবস্থা কেন্দ্রীকরণসহ কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আর আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের অব্যয়িত কয়েক কোটি টাকা আমরা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছি, যাতে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারে। আর দেশে যখন এক-দেড়শ’ পত্রিকা ছিলো তখন বিজ্ঞাপন কেন্দ্রীয়ভাবে ছিল। এখন সাড়ে ১২শ’ পত্রিকা আর বিজ্ঞাপন এতো বেশি যে বাস্তবতার নিরিখে এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়।’
অনলাইন ডেস্ক :
দেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল স্কুল-কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আজ ১৬ জুলাই মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের সকল বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। ২১ জুলাই থেকে পূর্ব ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলবে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক আন্দোলন ও ছাত্র আন্দোলনে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত ১ জুলাই থেকে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে সরকার স্কুল কলেজেও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো।
চলারপথে রিপোর্ট :
ট্রেনের ভেতরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েন তার স্বামী। এক পর্যায়ে ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শককে বিষয়টি জানান তিনি। পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় ট্রেনের মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দেন টিকিট পরিদর্শক। দ্রুতই ট্রেনের মাইকে ঘোষণা করা হয় কোনো চিকিৎসক, নার্স আছেন কি না?
ঘোষণা শোনার পর অন্যান্য কামরা থেকে ছুটে আসেন দুইজন চিকিৎসক ও দুইজন নার্স। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অন্য যাত্রীরাও। মুহূর্তেইে ট্রেনের কামরাটি পরিণত হয় অপারেশন থিয়েটারে। চার মাসের মৃত সন্তান প্রসব করলেও প্রাণে রক্ষা পান ওই নারী।
গত রবিবার রাতে ঢাকা থেকে চিলাহাটীগামী আন্তঃনগর চিলহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। পরে ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদীতে ফিরলে গল্পটি ছড়িয়ে পরে রেলকর্মীদের মাঝে। ঘটনার রাতে ট্রেনটিতে দায়িত্বরত ছিলেন রেলওয়ের পার্বতীপুর হেডকোয়ার্টারের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) আমিরুল হক জাহেদী।
তিনি জানান, রাত ৮টা বাজে তখন। ঢাকা থেকে চিলহাটি যাচ্ছিল আন্তঃনগর চিলহাটি এক্সপ্রেস। টিকিট পরিদর্শন করছিলেন টিটিই আমিরুল হক জাহেদী। হঠাৎ তিনি জানতে পারেন ট্রেনের ‘ঘ’ বগিতে অন্তঃসত্ত্বা এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবরটি জানার পর ট্রেনের মাইকে একটি ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে দ্রুতই মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ট্রেনের মধ্যে যদি কোনো ডাক্তার থাকেন তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ‘ঘ’ কোচে তাকে বিশেষ প্রয়োজন, একজন গর্ভবতী মা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
টিটিই আমিরুল হক জাহেদী জানান, ঘোষণার পর দ্রুতই সব ঘটতে থাকে। ট্রেনের ‘জ’ বগি থেকে ছুটে আসেন ঢাকার ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসক মো. সানাউল্লাহ। ‘চ’ বগি থেকে আসেন রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা ইসলাম রোজা। একই সঙ্গে দুজন নার্স সেখানে উপস্থিত হন। চিকিৎসক সানাউল্লাহ ওই নারীর অবস্থা দেখে জরুরি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সিদ্ধান্ত হয় টাঙ্গাইল স্টেশনে ট্রেন থামানো হবে। ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করলেন এক যাত্রী। এর মধ্যেই ক্রসিংয়ে আটকা পড়ে যায় ট্রেনটি।
এদিকে, অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর রক্তপাত থামছিলই না। তখন দ্রুতই ওই নারীকে ঘিরে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ট্রেনে থাকা নারী যাত্রীরা কাপড় দিয়ে ওই নারীকে ঘিরে ফেলেন। ট্রেনের নারী যাত্রীরা তাদের ব্যাগ থেকে কাপড়, স্যালাইন ও হেক্সিসল যার কাছে যা ছিল বেড় করে দেন। মুহূর্তেই ট্রেনটি পরিণত হয়ে যায় অপারেশন থিয়াটারে। চিকিৎসক সানাউল্লাহর পরামর্শে সঙ্গে থাকা শিক্ষানবীশ নারী চিকিৎসক ও দুইজন নার্স কাজ করতে থাকেন। এরপর দীর্ঘ চেষ্টায় ওই নারী মৃত বাচ্চা প্রসব করলেও প্রাণে রক্ষা পান তিনি।
চিকিৎসক সানাউল্লাহ সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, রোগী এখন অনেকটা শঙ্কামুক্ত। চিকিৎসকের এ ঘোষণায় পুরো ট্রেনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন যাত্রীরা।
টিটিই আমিরুল হক জাহেদী আরো জানান, সবকিছু ভালোভাবে হলেও জরুরি কিছু ওষুধের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক ওষুধ কেনার জন্য যাত্রীরা টাকা তুলতে শুরু করেন। ট্রেনটি তখনও ঈশ্বরদীর কাছাকাছি। তখন বাইরে ঝুম বৃষ্টি। ওষুধ কিভাবে জোগার করা যায়, এ নিয়ে আবার দুশ্চিন্তা। পরে তিনি ঈশ্বরদী স্টেশনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক আব্দুল আলীমকে ফোন করে বিষয়টি জানান। আব্দুল আলীম ওষুধ কিনে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে পাঠান। এরপর সেখানে ট্রেন থামলে ওই নারীকে ওষুধ সেবন করানো হয়। ধীরে ধীরে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই নারী। রাত সাড়ে ৩টা নাগাদ ট্রেনটি দিনাজপুরের ফুলবাড়ি স্টেশনে পৌঁছায়। স্বামীর সঙ্গে এই স্টেশনেই নেমে যান ওই নারী।
টিটিই আমিরুল হক জাহেদী বলেন, চাকরি জীবনে ট্রেনের মধ্যে বেশকিছু মানবিক ঘটনা দেখেছি। এ ঘটনাটি আশ্চর্যের। তবে এমন মানবিক লোক আর দেখেনি। ট্রেনের মাইকে ঘোষণা শুনে ডাক্তার, নার্সসহ অন্যরা যেভাবে এগিয়ে এলেন। সারাটি রাত ওই নারী পাশে বসে থাকলেন, এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ঘটনার পরে টিটিই আমিরুল হক জাহেদী চিকিৎসক মো. সানাউল্লাহসহ তার সঙ্গে সহযোগিতা করা নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুইজন চিকিসক ছাড়াও বেশ কয়েকজন নার্স সেখানে ছিলেন। তারা হলেন-ফারজানা আক্তার, মুন্নি খাতুন, নার্সিং ইন্সট্রাক্টর রেবেকা সুলতানা, খাদিজা খাতুন ও রুমি ইসলাম। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও বিস্তারিত পরিচয় নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চলারপথে রিপোর্ট :
দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রি মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী কল্পনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আঁখিতারা ক্লিনিকে একসাথে চারটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই চার কন্যার জন্ম হয়।
একসাথে জন্ম নেওয়া চার শিশুকে আজ বুধবার দেখতে যান চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। এ সময় তিনি তাদের নামও রাখেন। তাদের নাম রাখা হয়েছে দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়া।
মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জন্ম নেওয়া চার শিশুর চিকিৎসা খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের নাম রাখা হয়েছে পাখির নামে-দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়া। তারা ভালো আছে। তাদের মা কল্পনা খাতুনও ভালো আছেন।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায়, সিজারের মাধ্যমে কল্পনা খাতুন চার কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। নবজাতকরা ডা. মাহবুবুর রহমান মিলনের তত্ত্বাবধানে আছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে প্রসূতি কল্পনা খাতুন কিছুটা অসুস্থ। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়ে নবজাতকদের মা কল্পনা খাতুনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তিনি সম্পূর্ণ বিনা খরচে কল্পনা খাতুনের চিকিৎসার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া তিনি নবজাতকদের দেখে মিষ্টি বিতরণ করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদী ও বিসিক শিল্পনগরীর খাল এবং পুকুর পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
আজ ৫ এপ্রিল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুর বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন কারখানা, পুকুর ও খাল এবং দুপুরে দুপুরে তিনি তিতাস নদীর মেড্ডা শ্মশান ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি ছোট নৌযানে করে তিতাস নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন, জেলা মৎস্য অফিসার তাজমহল বেগম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মনজুর রহমান, বিআইডব্লিউটি’র উপ-পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল কুদদুস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান প্রমুখ।
সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, তিতাস নদী ঐতিহাসিক নদী। এ নদীকে কেন্দ্র করে গল্প-উপন্যাস চলচ্চিত্র রচিত হয়েছে। কিন্তু দখল দুষনের কারণে নদীটির অস্তিত্ব বিলীনের পথে। মানুষ এখানে বর্জ্য ফেলে। প্রশাসন বার বার বলার পরও মানুষ শুনছেনা। এটি খুবই হতাশাজনক।
শুধু প্রশাসন কাজ করলে হবেনা। প্রশাসনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ নদী আমাদের প্রাণ। এটিকে রক্ষা করার জন্যই আমরা কাজ করছি। নদী দখল করে মাছ চাষের ব্যাপারে তিনি অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দখল ও দুষনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেন।
তিনি বিসিক শিল্পনগরীর বর্জ্য শোধানাগার (ইটিপি) যথাযথ বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখানে সংগতি করার মতো কিছুই নেই। শিল্প বর্জ্য উৎপাদন হয় এখানে, কিন্তু বর্জ্য শোধানাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা কমিশন এসে এখানে হতবাক হয়েছি। এখানে শুধু মাত্র কেমিক্যাল নয়, এখানে পয়ঃ বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর এখানে কাজ করছে না। এখানে নাকি মাঝে মাঝে জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানা করে এখানে কোনো কিছুই করা যাবেনা। আমরা আশা করি জনগণের স্বার্থে শিল্প মালিকদের শুভ বৃদ্ধির উদয় হবে।
সভায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।