চলারপথে রিপোর্ট :
তীব্র গরম আর লোডশেডিং এর কারণে ক্লাসে যখন বসাই যায় না তখন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের একজন প্রভাষক। পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের ওই শিক্ষকের নাম মো. মানিরুল হোসাইন। একাডেমিক ভবনের সামনে গাছতলায় সোমবার বেলা ১টায় দেখা যায় ক্লাস নিচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ হাওরের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সময়ে লোডশেডিং আর তীব্র গরমে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যেতে চায় না। উপজেলা সদরের তুলনায় আশেপাশের ইউনিয়ন গুলোতে লোডশেডিং এর মাত্রাও ব্যাপক। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গাছতলায় ক্লাস নিবেন ওই শিক্ষক।
২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মান্নান মিয়া জানান, সকালে কিছুটা তাপমাত্রা কম থাকলেও বেলা ১১টার পর আর ক্লাসে বসা যায় না। কারেন্ট তো থাকেই না। দুপুর বেলায় তো ক্লাস করার কথা ভাবাই যায় না। স্যার গাছ তলায় ক্লাস নেওয়ায় আমাদের গরম কম লাগে আর ক্লাসও মিস হয় না।
আরেক শিক্ষার্থী জোনাকী বেগম জানান, আমরা গরমের কারণে ক্লাসে বসতে পারি না। বিদ্যুৎ তো থাকেই না। অনেকে গরম সহ্য করতে না পেরে কলেজে আসে না আবার আসলেও চলে যায়। গাছ তলায় ক্লাস করলে এতটা গরম লাগে না।
শিক্ষক মো. মানিরুল হোসাইন বলেন, গরমের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে বসতে পারে না। অনেকে আবার কলেজে আসতেও চায় না। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা হাতে সময় তেমন নেই। তাই গাছতলাই পড়াই, তবু পড়ুক।
চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওমর আলী বলেন, তীব্র গরমে আমার ওই শিক্ষক গাছ তলায় ক্লাস নেয়। আমি তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
১১ জুন মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার মাওলানা আবু আহমেদ কল্যাণ ট্রাষ্ট নামে একটি শিক্ষা ও সেবামূলক সংস্থার উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
কল্যাণ ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবু আহমেদের সভাপতিত্বে সাংবাদিক মনিরুল হোসাইন ও তম্ময় আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার ভূমি কাজী রবিউস সারোয়ার, জেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য এম.বি কানিজ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আজহারুল ইসলাম ভূইয়া, তুরস্কের মানবিক সেচ্ছাসেবী সংস্থা রিভাত এর প্রতিনিধি মোস্তুফা ইরোগলু, বিল্লাল ইরোগলু, হাফেজ মোহাম্মদ যুগনিউল হাসান ও প্রেসক্লাব সভাপতি সুজিত কুমার চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবু আহমেদ কল্যাণ ট্রাষ্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক।
অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে স্কুল ব্যাগ, ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে রমজান (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
আজ ৩১ মে শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়ভাঙ্গা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত রমজান বড়ভাঙ্গা এলাকার কবির মিয়ার ছেলে।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহাগ রানা জানান, সকালে পরিবারের সবাই ঘরে ছিলো। এ সময় শিশু রমজান বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। খেলার এক পর্যায়ে সে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে পড়ে ডুবে যায়। পরে পরিবারের লোকজন শিশুটিকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পুকুরে ভাসমান অবস্হায় শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু রমজানকে মৃত ঘোষণা করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় বাড়িছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। প্রতিপক্ষরা তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গরু, হাঁস, পাকা ধান, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। অবশ্য লুট হওয়া ২২টি গরু উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের কাছে ফেরত দিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তারা বিপাকে পড়েছে ধানি জমি নিয়ে।
বছরের এ সময়টায় পাকা ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করেন পরিবারের সবাই। পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্ক আর প্রতিপক্ষের ভয়ে বাড়িছাড়া হওয়ায় সময় মতো কাটতে না পারায় ৬০টি পরিবারের ৪০০ বিঘা জমির পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে জমিতেই। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন। আজ ২৯ এপ্রিল শনিবার গ্রামবাসীকে নিয়ে ধান কাটার জন্য গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের সম্প্রীতি কমিটি।
এর আগে পাকা ফসল জমিতে নষ্ট হওয়ায় প্রতিকার চেয়ে উপজেলা সমন্বয় সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভলাকুট ইউনিয়নের বীর মুক্তিযুদ্ধা কার্তিক চন্দ্র দাস। পরে সংসদ সদস্য, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিবাদ এড়িয়ে দ্রুত আসামি পক্ষের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেন।
সরেজমিন খাগালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল এলাকাজুড়ে পাকা ধান পড়ে আছে। আর কয়েকদিন গেলেই সেগুলো আর কাটা যাবে না। ফলে পাকা ধান ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জরিফা বেগম জানান, কৃষিই আমাদের আয়ের একমাত্র ভরসা। সারা বছরের মধ্যে শুধু ধান চাষ করেই আমাদের পেট চলে। কিন্তু এবার যদি ধান না কাটতে পারি আমরা আগামী এক বছর কিভাবে চলবো।ইউএনও স্যার এসে কমিটি গঠন করে দিয়ে গেছে। আশা করছি, দ্রুতই পাকা ধান কাটতে পারবো।
সম্প্রীতি কমিটির প্রধান ও ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুবেল মিয়া বলেন, আমি এ পর্যন্ত ২২টি লুট হওয়া গরু উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। পাকা ধান কাটার জন্য একটি সম্প্রীতি গঠন করা হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয় কৃষক ধান কাটতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বিষয়টি সমাধানে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ফখরুল ইসলাম বলেন, মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় কৃষকের পাকা ধান কাটার অনিশ্চিয়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে ধান কাটার বিষয়ে একটি সম্প্রীতি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আশা করছি, পাকা ধান কাটতে সমস্যা হবে না।
গত ২২ এপ্রিল ঈদের দিন বিকালে খাগালিয়া ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রব মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদের পক্ষের লোকজন খাগালিয়া নতুন বাজার এলাকায় সরকারি খাস জায়গায় ধান মাড়াইয়ের ‘খলা’ স্থাপনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ালে জামাল মিয়া নামে এক কৃষক নিহত হন। এরপরই শুরু হয় প্রতিপক্ষের বাড়িতে লুটপাট।
স্টাফ রিপোর্টার:
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) আসন থেকে ৫ বার নির্বাচিত সাবেক সাংসদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে মন্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগের গ্রামের বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছায়েদুল হক ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম সুন্দর আলী। ছায়েদুল হক ১৯৬৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মত (প্রথম জাতীয় সংসদ) আওয়ামী লীগের টিকেটে নাসিরনগর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে একই সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এর আগে তিনি খাদ্য, দুর্যোগ্য ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার-১-(নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দোজ্জা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম আজ ২৫ ডিসেম্বর সোমবার স্বশরীরে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে হাজির হয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানার অঙ্গীকার করেছেন।
বেলা সাড়ে ১২টার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারি জজ ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল হক এর কাছে এসে তিনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে তার দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি মোঃ শাহজাহান মিয়া বাবু সোমবার বিকেলে এম.পি’র জবাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন আদালতের ওই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফরহাদ হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যের খন্ডিত অংশের বিকৃত করে মিডিয়া কুচক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে।
লিখিত জবাবে তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানার অঙ্গীকার করেন। পত্রিকার রিপোর্ট মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিধায় কারণ দর্শানোর দায় থেকে অব্যাহতি চান তিনি।
লিখিত জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, তার বক্তব্যের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডের কারণে তার নাম জনগণের হৃদয় থেকে মুছে যাবে বুঝিয়েছেন। তিনি কাউকে কোনো প্রকার হুমকি প্রদান করেননি। পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে নেয়া নির্বাচনী তদন্ত কমিটির পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার।
এর আগে গতকাল রবিবার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের নাম নাসিরনগর থেকে মুছে ফেলার হুমকি দেওয়ায় অভিযোগে সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দোজা মোঃ ফরাহদ হোসেনকে ‘তলব’ করেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
গত ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘চেয়ারম্যানের নাম মুছে দিতে চান এম.পি, হাত ভাঙার হুমকি আওয়ামীলীগ নেতার’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হলে সেটির সূত্র ধরে তাকে তলব করা হয়।