চলারপথে রিপোর্ট :
খানাখন্দে বেহাল হয়ে পড়েছে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় এলজিইডির ২৪ কিলোমিটার সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে। কার্পেটিং উঠে অসংখ্য গর্তের তৈরি হয়েছে।
প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ার অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন অটোরিক্সার চালকরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে জানা গেছে, মেঘনা উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা। মানিকারচর বাজারের দিদার মেম্বারের মোড় থেকে আলীপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা ও মানিকারচর বাজার থেকে রামপুর বাজার পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। রাস্তাগুলো তিন বছরের বেশি সময় ধরে সংস্কার করা হয়নি।
সড়কগুলো দিয়ে গোবিন্দপুর, বড়কান্দা, বাহেরখোলা, মানিকারচর বিশেষ করে উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ভাটেরচর পর্যন্ত সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় যাতায়াত করছে শত শত যানবাহন ও যাত্রী। কিন্তু ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে আগের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন যানবাহনের চালকরা। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য নিয়ে আসেন এই রাস্তা দিয়ে। বেহাল রাস্তার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এসব রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার, ভ্যান, ট্রাক, বাস চলাচল করছে।
মেঘনা বাসস্ট্যান্ড থেকে ভাটেরচর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত। অনেক জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। অনেক জায়গায় বৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেঙে সংকুচিত হয়ে গেছে।
মানিকারচর বাজারের দিদার মেম্বারের মোড় থেকে আলীপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গর্ত হয়ে গেছে। সড়কের অনেক অংশে মোটরসাইকেল দিয়ে যাতায়াত করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
মানিকারচর রামপুরঘাট পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কে দেখা গেছে, রাস্তার বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে গর্তের তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তার অনেক জায়গায় ভাঙন ধরেছে। সংকুচিত রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
অটোরিক্সার চালক বেলাল হোসেন জানান, রাস্তায় অনেক খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সুস্থ মানুষেরও নাভিশ্বাস ওঠে। অনেক সময় রিকশায় করে এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে তাঁদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে।
ভ্যান চালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘ভাঙাচোরা রাস্তায় ভ্যান চালাতে গিয়ে প্রায়ই নাটবল্ট খুলে পড়ে যায়। ফলে সারাদিন ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালিয়ে যা রোজগার করি, তার একটা অংশ মেরামতেই শেষ হয়ে যায়। ২০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট।’
সিএনজি চালিত অটোরিক্সার চালক রহিম মিয়ার ভাষ্য, বেহাল রাস্তার কারণে প্রতি মাসে গাড়ি মেরামত বাবদ অনেক টাকা খরচ করতে হয়। তাই ভাড়া একটু বাড়িয়ে নিতে হচ্ছে। এই রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে শারীরিক অনেক সমস্যা হচ্ছে তাঁদের।
মুরাদনগর উপজেলা সদরের মাইক্রোবাসের চালক শাহ আলম জানান, মেঘনা হয়ে ঢাকায় যাওয়া অনেক সহজ। কিন্তু রাস্তাগুলোর করুণ অবস্থার কারণে তাঁদের যেতে বেগ পেতে হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলীম হোসেন বলেন, উপজেলার কয়েকটি রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল। উপজেলা সদর কিংবা ঢাকায় যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে রাস্তাগুলো সংস্কার না হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন অটোরিক্সার চালকরা।
এলজিইডির মেঘনা উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুল ইসলাম সিকদার জানান, সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াধীন।
অনলাইন ডেস্ক :
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিটন চন্দ্র দে’র বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি ৩০ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত দিয়েছেন।
তাঁর ভাষ্য, ২৫ মে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচন চলার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে ৩০০০ টাকার জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক লিটন চন্দ্র দে। কিন্তু তাঁর হাতে দেওয়া রসিদে ৫০০ টাকা লেখা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তাঁকে গালাগালি করেন ওই বিচারক। একই সঙ্গে ছয় মাসের জন্য কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন।
আবুল কাশেম উপজেলার ঠাকুরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। ২৫ মে বিকেলে এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে যাচ্ছিলেন তিনি। সোয়া চারটার দিকে চন্দনপুর ইউনিয়নের তুলাতুলি কাচারীকান্দি গ্রামে পৌঁছান। ওই গ্রামের পূর্বপাশের সড়কে যাওয়ার পর সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি চালক বলেন, ‘স্যার আপনাকে ডাকেন।’ কাশেমকে সেখান দিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চান ওই কর্মকর্তা। তিনি রোগী দেখতে যাওয়ার কথা জানালে লিটন চন্দ্র দে বলেন, এখন যাওয়া যাবে না। তখন কাশেম বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা জানালেও ছাড়তে রাজি হননি। বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কাশেমের ভাষ্য, ‘সেখানে গাড়ি থামতে বললে আমি এসিল্যান্ড স্যারের কাছে যাই। তিনি আমাকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছি জানিয়ে ৩০০০ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু রসিদে ৫০০ টাকা লেখা ছিল। বিষয়টি জানতে চাওয়ায় তিনি (এসিল্যান্ড) আমার সঙ্গে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন ও ছয় মাসের জেল দেওয়ার ভয় দেখান।’ এর প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
তবে এমন অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘মিথ্যাচার’ বলে দাবি করেন লিটন চন্দ্র দে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৩০০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। সেখানে পুলিশ ও আনসারের অনেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আমি তাঁকে বলেছি, ৫০০ টাকা জরিমানা না দিলে তিন দিনের সাজা দেওয়া হবে।’
মেঘনার ইউএনও রাবেয়া আক্তার বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। তাঁর হাতে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আসেনি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার অভিযোগটি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, ‘এমন যদি হয়ে থাকে, অবশ্যই তা খুবই দুঃখজনক। এসিল্যান্ড সাহেবের ব্যাপারে (জমিজমার) খারিজ নিয়েও নানা অভিযোগ আমার কাছে আসছে।’
চলারপথে ডেস্ক :
চলতি বছরের হজের জন্য নিবন্ধিত হজযাত্রীদের বায়োমেট্রিক ভিসা আবেদন ১৬ এপ্রিল থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে। যেসব হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন সৌদি আরবের ভিসার জন্য কেবল তাদের বায়োমেট্রিক কার্যক্রম শুরু হবে।
আজ ১২ এপ্রিল বুধবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা সব জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়, ঢাকায় অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগারগাঁও, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমপ্লেক্স, ঢাকা ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয় এবং আশকোনার হজ অফিসে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ সময় পাসপোর্ট জমা দিয়ে রশিদ নিতে হবে।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে এবং হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) অফিসে বায়োমেট্রিক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে হজ এবং ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি ভিসা পেতে হলে বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক নিবন্ধন (আঙুলের ছাপ ও মুখমণ্ডলের ছবি) সম্পন্ন করার নিয়ম চালু করে সৌদি সরকার। এজন্য ‘সৌদি ভিসা বায়ো অ্যাপ’-এর মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডেটা দিতে হবে। গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করা যাবে। এই অ্যাপে নিবন্ধন ও বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ছাড়া ভিসা মিলবে না।
অনলাইন ডেস্ক :
‘জুতার তলা ক্ষয় হইয়া গেছে হাঁটতে হাঁটতে। সময় পাইলেই পুলামাইয়ার লাইগা ছুইটা আসি বাড়িত। গোসল করাই, খাওয়াই, তারপর ঘুম পাড়াইয়া আবার ছুটি গার্মেন্টে। হেগো বাপ ফালাইয়া চইলা গেছে, আমিতো মা, আমি তো যাইতাম পারতাম না।’ কথাগুলো বলছিলেন ত্রিশ বছর বয়সী গার্মেন্টকর্মী আয়েশা।
আয়েশার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায়। কম বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী ঢাকায় দক্ষিণখানে গার্মেন্টে চাকরি করতেন। পরে এক সহকর্মীকেও বিয়ে করেন তাঁর স্বামী। এক পর্যায়ে আয়েশা ও দুই সন্তানের খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেন। সন্তানদের নিয়ে আয়েশা বিপাকে পড়েন। ঢাকায় ছুটে আসেন স্বামীকে খুঁজতে। তাতে ব্যর্থ হন। দক্ষিণখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠেন। ওই আত্মীয়ের সহযোগিতায় এক গার্মেন্টে যোগ দেন। আয়েশা জানান, প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে কাজ শুরু করেন। দুই সন্তানের জন্য খাবার তৈরি করেন। সাড়ে ৭টার মধ্যেই কর্মস্থলে যেতে হয়। দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতিতে হেঁটে আবার বাড়িতে যান। সন্তানদের খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে আবারও ছোটেন কর্মস্থলে। বিকেলে গার্মেন্ট ছুটি হলে বাড়ি ফেরেন। সন্তানদের যত্ন নেন, লেখাপড়া করান। সব কাজ শেষে বিছানায় যান রাত ১১টায়। জীবনের টানে এভাবেই ঘোরে তাঁর ভাগ্যের চাকা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পোশাক খাতে ২০২০ সালে নারী ও পুরুষ কর্মীর হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ। নিম্ন আয়ের নারীশ্রমিকের অধিকাংশই পারিবারিকভাবে সুখী হন না। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে চলে যান অনেক পুরুষ। সন্তানকে নানি-খালার কাছে রেখে কাজ চালিয়ে যান নারী। কেউ কেউ সন্তানদেরও শ্রমে যুক্ত করেন। শুধু পোশাকশিল্পেই নয়, উপকূলীয় অঞ্চলেও পুরুষদের বহুবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বামী মারা গেলেও সংসারের হাল ধরেন নারী।
কক্সবাজার সৈকতে ঝিনুকের মালা বিক্রি করে আবদুল মোতালেব (১০)। সংসারের কাজকর্ম শেষে মোতালেবের মা মালা গাঁথেন। সেই মালা সৈকতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে মোতালেব। সে জানায়, দিনে দুই-তিনটি বিক্রি হয়। একেকটায় লাভ হয় প্রায় ৫০ টাকা। সৈকত থেকে দূরে দরিয়ানগর গ্রামে তার বাড়ি। তার বাবা পরিবার ছেড়ে চলে গেছেন। দিনে যা আয় হয়, তা দিয়ে চাল-আলু কিনে বাড়ি যায় সে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন লাবণ্য। একমাত্র সন্তান শঙ্খনীলকে নিয়েই তাঁর সংসার। এক সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লাবণ্যর স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। নীলের বয়স তখন বছর গড়ায়নি। সেই থেকে শুরু একাকী সংগ্রাম। চাকরির পাশাপাশি একজন আদর্শ মা হিসেবে সন্তানকে দেখভাল করছেন।
জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মনজুন নাহার বলেন, ‘গর্ভে সন্তান ধারণ করলেই যে একজন মা হন, তা নয়। তাঁকে মানসিকভাবেও মা হয়ে উঠতে হয়। শত বাধা-বিপত্তিতেও মানসিকভাবে শক্ত বলেই একজন প্রকৃত অর্থে মা।’
শাশ্বত রূপের মায়েদের সম্মান জানাতেই আজ পালিত হবে ‘বিশ্ব মা দিবস’। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বাংলাদেশে মা দিবস পালিত হয়। দিবসটি পালনে বিভিন্ন সংগঠন প্রস্তুতি নিয়েছে। বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজনে মা দিবস উদযাপন করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে এখন আর কেউ দুর্ভিক্ষের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ মনে করে না। এখন সবাই মনে করে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
আজ ১৫ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে এমন অবস্থায় ছিল, তখন বাংলাদেশ বললে মানুষ মনে করত একটা দুর্ভিক্ষের দেশ, দুর্যোগের দেশ; এদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। জাতির পিতাকে হত্যার পর অনেক দেশ বলেছে, তোমরা তোমাদের নেতাকে হত্যা করেছ? তখন খুনি দেশ হিসেবে আমরা পরিচিত হই। সে সময় আন্তর্জাতিকভাবে কোথাও গেলে বলত বাংলাদেশ তো হাত-পাততে আসে। এখন অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা পরিবর্তন হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এই অফিসে ঢুকতে দিত না, চারদিকে পুলিশি ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। অনেক সময় নেতাকর্মীরা আটকা পড়ত, তখন আমি বাধ্য হয়ে জোর করে ঢুকতাম এবং নেতাকর্মীদের উদ্ধার করতাম। ২০০১ এ নির্বাচনের পর আমাদের অফিসটা হয়ে গিয়েছিল হাসপাতাল। কারণ, বিভিন্ন জেলা থেকে আহত নেতাকর্মীরা এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। নেতাকর্মীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, খাওয়ার ব্যবস্থা আমরা এখানে করেছিলাম।
তিনি বলেন, ‘৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। স্বাধীনতাকে বিকৃত করা হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য অনেক চক্রান্ত ছিল, অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচন করেছি।
নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করেছে, কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সেক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কি অপরাধ এগুলো খুঁজে বের করা, এসব বন্ধ করতে হবে। আমাদের দল ছাড়া কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, আমরা জনগণের যে সমর্থন পেয়েছি সেটা কিন্তু কাজের স্বীকৃতি। দেশে মানুষের জন্য আমরা কাজ করেছি, দেশের মানুষ আমাদেরকে ভোট দিয়েছে, আমাদের জয়ী করেছে। সেখানে হয়ত কেউ জিততে পেরেছে, কেউ জিততে পারেনি। হারজিত যাই হোক সেটা সবাইকে মেনে নিয়ে অন্তত নিজের দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা যদি একে অপরের দোষ ধরতে ব্যস্ত থাকি, এটা আমাদের বিরোধী দলকে আরো উৎফুল্ল করবে, তাদের কিছু সুযোগ দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, যে দল নির্বাচন করে না, তারা তো গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচন করায় অভ্যস্ত না। যেসব জরিপ আন্তর্জাতিকভাবে হয়েছিল তাতে স্পষ্ট ছিল বিএনপি নির্বাচন করলে কখনো সরকার গঠন করার মতো সাফল্য অর্জন করবে না। সেরকম সিটও তারা পাবে না। আওয়ামী লীগের বেলায় সার্ভে ছিল, শুধু একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। আওয়ামী লীগ পর্যাপ্ত সিট পাবে। এ কথা শোনার পর তারা নির্বাচনে আসবে না, এটা তো স্বাভাবিক। তাছাড়া ওদের সৃষ্টি হয়েছিল অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের পকেট থেকে। তারা জানে ক্ষমতায় বসে নির্বাচন করতে। জনগণের ভোট চুরি করা, নির্বাচনে কারচুপি করা, এসব কালচার বিএনপির আমলেই সৃষ্টি। তারা ওটাই ভালো বুঝত।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির আগের চরিত্র দেখলাম গত ২৮ অক্টোবর। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে। ১৩ সালে এভাবে মেরেছিল। সেই একই চিত্র আমরা আবার দেখলাম। তারা বলে ওখানে উসকানি দেওয়া হয়েছিল। যে অঞ্চলে পুলিশকে মারল সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলই না। ওরাই পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে। গাড়ি পোড়ায়। প্রধান বিচারপতির বাড়ি, জাজেস কোয়ার্টার, সাংবাদিক, কেউ ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আমাদের মহিলারা মিছিল নিয়ে আসছিল, তাদের ওপর আক্রমণ করে। এই ঘটনা ঘটিয়ে তারা আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে কাঁদে। তাদের মুরুব্বিদের কথামতো আবার কান্নাকাটি। তারা বলে সেটা উসকানি, আসলে উসকানিটা দিল কে? উসকানি দেওয়ার মতো তো কেউ ছিল না। পুলিশ তখন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। এরা এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাবে, ঘটাতেই থাকবে। দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা, এটাই হচ্ছে বিএনপির চরিত্র।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রতি মাসের বিক্রয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ডিসেম্বর মাসের জন্য ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আগামীকাল থেকে বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে। একইসাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীর মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হচ্ছে।
আগামীকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
উল্লেখ্য, সারা দেশে এক কোটি নিম্ন-আয়ের মানুষ টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী। গত ৯ নভেম্বর টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারীর মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়। আগামীকাল থেকে বিতরণ করা হবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য জায়গায় টিসিবির স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে।
এদিকে ডিসেম্বর মাসে টিসিবির কার্ডধারী একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল অথবা কুঁড়ার (রাইস ব্র্যান) তেল, পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি পেঁয়াজ ও এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। প্রতি লিটার সয়াবিন বা কুঁড়ার তেলের দাম রাখা হবে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা এবং প্রাপ্যতা সাপেক্ষে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও চিনি ৭০ টাকা দামে বিক্রি করবে টিসিবি।
কার্ডধারীরা নিজ নিজ এলাকার পরিবেশকদের দোকান বা নির্ধারিত জায়গা থেকে পণ্য নিতে পারবেন।বাসস