চলারপথে রিপোর্ট :
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ইতালি থেকে বিমানবন্দরে এসে হেলিকপ্টারযোগে বাড়ি ফিরলেন আখাউড়ার এক প্রবাসী পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইতালি থেকে ঢাকায় আসার পর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে নিজ বাড়ির সামনে মাঠে এসে নামেন তারা। প্রবাসীদের এমন আগমন দেখতে ভিড় জমান হাজারও উৎসুক জনতা।
ইতালি প্রবাসী আতিকুল ইসলাম সেন্টু মৃধা আখাউড়া উপজেলা মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মৃধা বাড়ির প্রয়াত হাজী ছনু মৃধার ছেলে। তিনি সপরিবারে ইতালিতে বসবাস করেন।
এ সময় প্রয়াত হাজী ছনু মৃধার ছেলে মাজেদুল ইসলাম মিন্টু মৃধাসহ পরিবারের অন্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা জানান, বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল এই মাঠে তার ছেলেরা একদিন হেলিকপ্টারে চড়ে অবতরণ করবে। আজ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কিন্তু বাবা জীবিত নেই।
এ সময় প্রবাস ফেরত ইতালি প্রবাসী পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের প্রশংসা করে বলেন, আগে যেখানে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে ফিরতে অনেক ভোগান্তি ও সময়ক্ষেপণ করতে হতো; অথচ এখন হেলিকপ্টারে চড়ে ঢাকা থেকে মাত্র ২০-২২ মিনিটে আখাউড়ায় নিজ বাড়িতে চলে আসা যায়।
এদিকে এলাকায় প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার অবতরণ করে। এই দৃশ্য ও হেলিকপ্টার দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশুসহ কয়েক হাজার উৎসুক জনতার ভিড় জমে।
আখাউড়া থানার ওসি আসাদুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় হেলিকপ্টার অবতরণের খবরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সক্ষম ছিল দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় মদ ও গাজাসহ দুই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি গ্রেফতার হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। ৩০ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় আখাউড়া থানার এস আই মো: জয়নাল আবেদীনসহ পুলিশের একটি টিম আখাউড়া বাইপাস সড়কে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ২০ বোতল হুইস্কি ও একটি সিএনজিসহ মো: রুহুল আমিন (৩৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত রুহুল আমিন কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ছোট কেজুরী গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের পুত্র।
এদিকে আজ দুপুর দেড়টায় পুলিশ আখাউড়া পৌরসভার মসজিদ পাড়ায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এসময় দুই কেজি গাজাসহ জারু মিয়া (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত জারু মিয়া পৌরসভার মসজিদ পাড়া গ্রামের লাল মিয়ার পুত্র।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মোহাম্মদ ছমি উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মাদক মামলা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে লাগেজ পার্টি। শেষ পর্যন্ত তারা কাস্টমস কর্মকর্তাসহ তিনজনকে পিটিয়ে আহত করেছে। নিয়ে গেছে কোটি টাকার অবৈধ পণ্য।
আজ ১৫ মার্চ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কাস্টমস অফিস ও আখাউড়া-আগরতলা সড়কে দু’দফায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ কামরুল পারভেজ আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকি দুই আহত হলেন, কাস্টমসের সিপাহি পদে কর্মরত মো. জুম্মন ও মো. ইমন মিয়া।
সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িতসহ স্থানীয় প্রভাবশালী লাগেজ পার্টির চক্রটিকে ওই মামলায় আসামী করা হতে পারে বলে জানা গেছে গেছে।
স্থানীয় ও আহতদের সূত্র জানায়, বেলা সোয়া তিনটার দিকে ভারত ফেরত এক বা একাধিক যাত্রী সাত-আটটি ব্যাগে করে প্রচুর মালামাল নিয়ে আসেন। নিয়ম অনুসারে কাস্টমসের লাগেজ স্ক্যানিংয়ের কক্ষে না নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে ফেলা হয়। তখন কাস্টমসের পক্ষ থেকে এসব পণ্য স্ক্যানিং কক্ষে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় স্থানীয় চক্রটি। তারা এ নিয়ে কাস্টমসের লোকজনের সঙ্গে বাগবিতন্ডার জড়িয়ে পড়েন। এরই ফাঁকে মালামাল নিয়ে ওই অটোরিকশা দ্রুত চলে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষও তাদের পিছু নেয়। বিজিবি ক্যাম্প পার হওয়ার পর অটোরিকশাটিকে আটক করে কাস্টমসের লোকজন। তখন পেছনে থেকে মোটর সাইকেলে এসে কয়েকজন যুবক কাষ্টম্স কর্মকর্তাদের উপর হামলা করে। এতে কাস্টমসের তিনজন আহত হন। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। এর মধ্যে আহত একজন আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নেয়।
আহত সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মো. কামরুল পারভেজ বলেন, সাত-আটটি ব্যাগে বিপুল পরিমাণ মালামাল ছিলো। স্ক্যানিং করতে রাজি না হয়ে তারা উল্টো ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে অটোরিকশা নিয়ে চলে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর অটোরিক্সাটি আটক করা হলে ওই এলাকার কবির, আওলাদ, হৃদয়সহ কয়েকজনের নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মাল নিয়ে আসা যাত্রী ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি সেটি জানা যায়নি। তবে তাদের সঙ্গে স্থানীয় একটি বড় চক্র রয়েছে। হামলায় তিনিসহ তিনজন আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত সেটি জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান। হামলাকারিসহ তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতে রপ্তানি হলেও এখন রপ্তানি হচ্ছে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য। মূলত এখন হিমায়িত মাছের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য। তবে মাছ রপ্তানি কমার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০৪ কোটি টাকা কম। এছাড়া তলানিতে ঠেকে আছে বন্দরের আমদানি বাণিজ্যও। ফলে আশানুরূপ রাজস্ব পাচ্ছে না বন্দর এবং শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চললেও ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত এ বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানি হয়।
পাঁচ বছর আগেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের তালিকায় ছিল- হিমায়িত মাছ, পাথর, রড, সিমেন্ট, তুলা, ভোজ্য তেল, এলপি গ্যাস, প্লাস্টিক, শুঁটকি ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছোট হয়ে এসেছে সেই তালিকা। বর্তমানে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট ও প্লাস্টিকসহ হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য যাচ্ছে ভারতে।
রপ্তানিকৃত পণ্যের অর্ধেকই হিমায়িত মাছ। আর মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, পুঁটি, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ও পাবদাসহ সব ধরনের চাষের মাছ। প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য আড়াই মার্কিন ডলার। প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতিত) গড়ে এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে।
তবে, গেল কয়েক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ রপ্তানি হলেও এখন তা কমে অর্ধেকে নেমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দরের রপ্তানি আয় কমেছে। মূলত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তাজা মাছ পাচারের কারণে রপ্তানি ক্রমেই কমছে বলে অভিযোগ মাছ রপ্তানিকারকদের।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আখাউড়া উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত তাজা মাছ পাচার হচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হিমায়িত মাছের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিষয়টি বিজিবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটি বন্ধ না করতে পারলে যে কোনো মুহূর্তে হিমায়িত মাছের রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়বে।
এদিকে, ভারত থেকে পণ্য আমদানিও এখন অনিয়মিত। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে গম, ভুট্টা পাথর ও পেঁয়াজ। নিজেদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এতে করে বন্দরের রাজস্ব আদায়ও তলানিতে ঠেকেছে।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২৮ টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে শুল্ক কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা। তবে বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য।
স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক পণ্য এখন নিজ দেশ থেকেই সংগ্রহ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমে এখনও বন্দরটির ঘুড়ে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সেজন্য যখন যে পণ্যের চাহিদা, সেটি আমদানির সুযোগ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে- সেটি আগে থেকে বলা যায় না। সেজন্যই আমরা সব পণ্য আমদানির জন্য বন্দর খুলে দেওয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু আমাদের সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে কিছু পণ্যের তালিকা দিয়ে আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটির এখনও সুরাহা হয়নি।
একমাত্র আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমেই বন্দরে আবার কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসতে পারে। যার মাধ্যমে সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব পাবে’- উল্লেখ করেন ফোরকান আহমেদ খলিফা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বন্দরগুলো থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের বিষয়টি অনেকাংশেই আমদানি বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি অনিয়মিত হওয়ায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে কম। আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীরা যেসব পণ্য আমদানির জন্য তালিকা দিয়েছেন- সেটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হচ্ছে। অচিরেই এ বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা করছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই ছাইদুর রহমান (স্বপন) এবং আখাউড়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন। আজ ২১ মে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কসবা ও আখাউড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
কসবা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছাইদুর রহমান স্বপন (কাপ-পিরিচ প্রতীক) ৮৬ হাজার ৬৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জীবন ( আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৯৫৯ ভোট।
বিজয়ী চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান স্বপন (কাপ-পিরিচ প্রতীক) আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলার কুটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতেই তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি অ্যাডভোকেট রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন (আনারস প্রতীক) আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তিনি কসবা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক।
অপরদিকে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোঃ মনির হোসেন (ঘোড়া প্রতীক) ২৮ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান (আনারস প্রতীক) মোঃ মুরাদ হোসেন ভ‚ইয়া পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৬৩ ভোট।
বিজয়ী চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন (ঘোড়া প্রতীক) আখাউড়া উপজেলা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব মোঃ মুরাদ হোসেন ভূইয়া (আনারস প্রতীক) উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান।
ভোট গননা শেষে জেলা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কের পাশে আখাউড়া পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। বছরের পর বছর ধরে রেলওয়ে ষ্টেশনের অদুরে রেলওয়ে ভূমিতে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। গুরুত্বপূর্ণ আখাউড়া-চান্দুরা আঞ্চলিক সড়কের উত্তর পাশে ময়লার ভাগাড় থাকায় রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার পথচারিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দূর্গন্ধের কারণে নাক চাপা দিয়ে পথচলতে হয় ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষকে। ভাগাড়ের ময়লার উৎকট দূর্গন্ধে শ্রেণী কক্ষে বসে থাকতে পারছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
এ দূর্বিষহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায় দেড় মাস আগে আখাউড়া পৌরসভার মেয়রের নিকট চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। অবগত করেছেন ইউএনও এবং শিক্ষা অফিসারকেও। কিন্তু প্রশাসনের কোন উদ্যোগ না থাকায় এ নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এদিকে দূর্গন্ধে ক্লাশে বসে থাকতে অসুবিধা হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে ৩ দিন সব ক্লাশ শেষ না করেই বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরশহরের অন্তত ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়াও আখাউড়া রেলওয়ে ষ্টেশন এবং আজমপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হয়ে প্রতিদিন কয়েকশত ট্রেন যাত্রী এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। দৈনন্দিক বাজার সদায়সহ বিভিন্ন কাজে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। ময়লার ভাগাড়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দূর্গন্ধে নাক চাপা দিয়ে যেতে হয়। মানুষের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে উঠে। মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে হরিজন কলোনীর পোষা শুকুর দিনভর ময়লা-আবর্জনায় বিচরণ করার কারণে উৎকট দূর্গন্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠে।
রেলওয়ে স্কুলের কয়েকজনের শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলের সামনে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। ক্লাশে বসে থাকতে অসুবিধা হয়। অতিরিক্ত দূর্গন্ধের কারণে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেওয়ার জন্য হেড স্যারের কাছে দরখাস্ত দিয়েছি।
রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়েল সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রশিদ বলেন, আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। প্রতিদিনই কেউ না কেউ অসুস্থ বোধ করছে। আমরা পড়ালেখার জন্য নিরাপদ পরিবেশ চাই। মাহমুদুল হাসান সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে স্কুলের সামনে রাস্তার পাশে ময়লার দুর্গন্ধে মানুষের কষ্ট চরম পর্যায়ে চলে গেছে।
সড়ক বাজারের এক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মাসুদ রানা প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করেন। তিনি বলেন, ময়লার ভাগাড়ের সামনে আসলে নাকে চাপা দিয়ে চোখ করে রাখি তারপরও মনে হয় বন্ধ হয়ে আসে। এগুলো আমাদের পরিবেশ খারাপ করছে। দ্রুত এগুলো অপসারণ করার দাবি করেন তিনি।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান পলাশ পেশাগত কাজে মাঝে মাঝে আখাউড়া আসেন। তিনি বলেন, দূর্গন্ধের কারণে এই রাস্তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ময়লা না ফেলে অন্যত্র ফেলা উচিত।
সুহেল খাদেম বলেন, এই দুর্বিষহ দুর্গন্ধের কারণে সুস্থ্য মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে। অন্তত ছাত্রছাত্রীদের সুস্থ্যতার কথা চিন্তা করে এখান থেকে ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া দরকার। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জন্য পৌর মেয়রের কাছে অনুরোধ করছি।
আখাউড়া রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান খান বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণীকক্ষে বসে থাকতে পারে না। দূর্গন্ধে ক্লাশ করতে অসুবিধা হয়। ছাত্রছাত্রীরা ২/৩ টি ক্লাশের পর বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার আবেদন করে। এজন্য ৩ দিন স্কুল ছুটি দিতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এসএসসি পরীক্ষার আগে পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করেছিলাম। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং শিক্ষা অফিসারকেও বিষয়টি অবগত করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ দেখছি না।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন, এটি পৌরসভার দায়িত্ব। আমি পৌর মেয়রের সাথে এ ব্যপারে কথা বলেছি। তিনি আশ^স্ত করেছেন এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিবেন।
এ ব্যাপারে আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, ময়লা ফেলার জন্য আমরা জায়গা খোঁজ করছি। জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই বর্জ্য ফেলা হবে। পৌরসভা থেকে ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হবে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদেরকে সমালোচনা না করে জায়গা খুঁজে দিতে বলেন।