চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২০ জুন মঙ্গলবার বিকেলে বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থীদের অংশগ্রহনে পাগল শংকর মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু হয়। এ সময় বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পন্ডিত বাড়ি ও বলভদ্র ব্রিজ হয়ে মন্দিরে এসে শেষ হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্দিরের সভাপতি অসিম কুমার পালের সভাপত্বিতে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম এমপি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন, থানার (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহুল রায় প্রমুখ।
মন্দিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী এই রথযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দরা মনের বাসনা পূরণের আশায় এই রথযাত্রাটিতে অংশগ্রহণ করেন। রথযাত্রাটি পরিচালনা করেন মন্দিরের প্রধান অধ্যক্ষ সুখদা বলরাম দাস।
চলারপথে রিপোর্ট :
জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে নাসিরনগরে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকালে উপজেলার চাতলপাড় ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করণের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এসময় বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন ঘোষণা করেন উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল চন্দ্র চৌধুরী ।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক প্রভাষক শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। এছাড়া প্রধান বক্তা ছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অসীম কুমার পাল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ লতিফ হোসেন, চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চাতলপাড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আব্দুল আহাদ ও চাতলপাড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুল কাশেম ইদু মিয়া।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ালীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ লিয়াকত আব্বাস টিপু, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক রুবিনা আক্তার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম শুভ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক রাহুল রায়, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিজানুর রহমান, মোঃ রবিউল ইসলাম, চিত্তরঞ্জন দত্ত, গোকর্ণ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ শাহজালালসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে সবাইকে জনগণের সেবার মন মানসিকতা নিয়ে এগুতে হবে এবং স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এছাড়াও এ সময়ে তিনি জনগণের সামনে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরেন।
সন্ধ্যার পর সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ১নং চাতলপাড় ইউনিয়ন দক্ষিণ শাখায় আমিনুল হক চৌধুরীকে সভাপতি ও আব্দুল মজিদকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
নাসিরনগর প্রতিনিধি :
নাসিরনগরে গত ২৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ওরস থেকে ফেরার পথে ৩০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটক করে ডাকাতির ঘটনার পর পুনরায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯-এর সিলেট ক্যাম্পের সদস্যরা। গত সোমবার মধ্যরাতে প্রযুক্তির সহায়তায় নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের আতুকুরা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ডাকাত দলের মূলহোতা হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার উড়ালকুল গ্রামের আবদু রউফের ছেলে মোঃ আবুল কালাম (২৬), একই জেলার লাখাই উপজেলার মুরিআগ গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৪), একই উপজেলার বামে কাটিয়ারা গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে মোঃ রিপন মিয়া (২১), ফিরোজ মিয়ার ছেলে লাভলু মিয়া (২৩), একই এলাকার মৃত হাজী মলয় মিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান জুয়েল (৩৫) ও নিবারন সরকারের ছেলে সবুজ সরকার (২১)। এ সময় অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।
আজ ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের দক্ষিণ পৈরতলায় র্যাব-৯ এর অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৯-এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মমিনুল ইসলাম এই তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের খান্দুরা গ্রামের সৈয়দ আক্তার হুসাইনের বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়। ওরস মাহফিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত উপস্থিত হন। ওরস শেষে শুক্রবার ভোর রাতে ভক্তরা সিএনজিচালিত অটোরিক্সা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার চাপরতলা-ছাতিয়াইন সড়কের বুড়ইউরি গ্রামের পাশে পৌছলে ১৫/১৬ জনের একটি ডাকাত দল প্রায় ৩০টি অটোরিক্সা আটক করে যাত্রীদের চোখ বেঁধে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতরা ৩০ জন যাত্রীকে মারধোর করে ও কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় পরদিন ডাকাতির শিকার এক অটোরিক্সার চালক বাদি হয়ে নাসিরনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনার পর গত সোমবার মধ্যরাতে র্যাব প্রযুক্তির সহায়তায় উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের আতুকুরা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬জন ডাকাতকে গ্রেফতার করে। এ সময় ডাকাতদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও ৫টি বাটন মোবাইল ফোন, ৩ টি স্মার্ট টাচ মোবাইল ফোন, নগদ ৬ হাজার ১৬০ টাকা উদ্ধার করে। গ্রেফতারকৃতরা গত ২৭ জানুয়ারি ৩০টি অটোরিক্সায় ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
‘রাইতে ঘর থাইক্যা বাইর হইতে পারি না। সাদা সাদা কাপড় পইর্যা জিন বাড়িতে আইয়া ডর দেখায়। ঘরের চুলা ভাঙছে, দরজায়ও তালা দিছে।’ এক দমে কথাগুলো বলছিলেন হাবিবা আক্তার। তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার আতুকুড়া গ্রামে। কিছুদিন আগেই এ গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জাজু আক্তার (১০) হত্যায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয় শিউলি আক্তার নামের এক নারী। এর পর থেকেই হাবিবার বাড়িতে জিনের উপদ্রব আর নেই। তবে আতঙ্ক কাটেনি তাঁর মতো গ্রামের অন্য বাসিন্দাদের।
আতুকুড়া গ্রামটি পড়েছে ফান্দাউক ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। আতুকুড়া গ্রামেরই শাহ আলম মিয়ার মেয়ে জাজু আক্তার পড়ত আতুকুড়া মাস্টার কিন্ডারগার্টেনে। ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে হঠাৎ নিখোঁজ হয় শিশুটি। সারাদিন খোঁজাখুঁজির পরও খোঁজ মেলেনি তার। আশপাশের এলাকার মসজিদের মাইকে জাজুর নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়। দিন শেষে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে জাজুকে জিনে নিয়ে গেছে। ওই দিন সন্ধ্যার পর বাড়ির পাশের খালে পাওয়া যায় শিশুটির লাশ। তার পরিবারের লোকজনও বিশ্বাস করতে শুরু করেন, জিনই হয়তো হত্যা করেছে তাদের মেয়েকে। কিন্তু নাসিরনগর থানা পুলিশ এ কুসংস্কারে বিশ্বাস করেনি। তারা তদন্ত শুরু করে সেই রাতেই।
পুলিশের পরামর্শে পরদিন থানায় মামলা করেন জাজুর বাবা শাহ আলম মিয়া। তিন দিন পর পুলিশ প্রতিবেশী কাজী মিয়ার স্ত্রী শিউলি (২৫) ও তার শ্বশুর দুধ মিয়াকে গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই চম্পক চক্রবর্তী আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৭ অক্টোবর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে জাজু হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসে। ৯ অক্টোবর বুধবার রাতে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। জবানবন্দির সূত্র ধরে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শিউলি নিজেকে জিনের মা হিসেবে পরিচয় দেয়। দাবি করে, তার ওপর জিনের আসর আছে। কিন্তু জাজুর বাবা শাহ আলম এসব বিশ্বাস করতেন না। হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে শিউলির বাড়িতে জিন নামানো হয়। সেখানে দাবি করা হয়, পাঁচ মণ মিষ্টি ও পাঁচটি গরু দিলে এলাকার সব সমস্যার সমাধান হবে। তবে এসব কুসংস্কারের প্রতিবাদ করেন শাহ আলম। এ কারণেই তাঁর মেয়ে জাজুকে শিউলির নেতৃত্বে হত্যা করা হয়।
গতকাল ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে জাজুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। তার বই-খাতা ও ব্যাগ পড়ে আছে ঘরে। মেয়ের মৃত্যুতে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে গেছেন মা জুনু বেগম। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখ ভিজে যায়। আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘আমি বিচার চাই না, আমার ছোড মাইয়াডারে ফিরত চাই।’ জুনু-শাহ আলম দম্পতির বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর বাড়িতে থাকেন। আর দুই ছেলে রয়েছে। তারাও বোন হত্যার পর আতঙ্কিত। একই এলাকার মরহম আলী বলেন, ‘বক্তব্য দিলে আমার বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চাদের মাইরা ফেলতে পারে। জাজুরে মারনের পর খাইরুল নামে আরেকটা ছোড ছেলেরে মারতে চাইছিল।’
আরেক ভুক্তভোগী বিলকিস বলেন, ‘আমার ঘরে তিনজন জিন সাদা কাপড় পইরা ৯টা তালা দিয়া গেছে। চাবি সঙ্গে নিয়া গেছে। আমরা জানালা দিয়া সব দেখছি। কিন্তু ভয়ে ঘর থাইকা বের হই নাই।’
জাজু হত্যা মামলার তদন্তে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, জিনের ভয়ে দীর্ঘদিন গ্রামের অনেকে রাতে ঘর থেকে বের হতে পারেন না। এমনকি চক্রটি জিনের ভয় দেখিয়ে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা এবং গবাদি পশু হাতিয়ে নিয়েছে। ওসি আব্দুল কাদের বলেন, কয়েক বছর ধরে আতুকুড়া গ্রামের সাধারণ মানুষ বিকেলের পর ঘর থেকে বের হতেও পারতেন না। সন্ধ্যার পরপরই কারও ঘরের দরজায় তালা দেওয়া হতো। আবার কারও ঘরের দরজায় সাদা সুতা দিয়ে বাঁধা; কারও বাড়ির রান্না করার চুলা ভেঙে রাখত। এ ছাড়া কারও ঘরের টিনের চালায় ইট ছোড়া হতো।
এ পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, মূলত স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই শিউলির কিছু লোক এসব অপকর্ম করে আসছিল। এসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করেন জাজুর বাবা শাহ আলম। এর জের ধরে তাঁর মেয়েকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. মাসুক আল মারজান বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র জিন-ভূতের কল্পকাহিনি বানিয়ে তাবিজ ও পানি বিক্রি করে আসছে। এর ফলে মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। বিষয়টিকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, এ থেকে মুক্তি পেতে হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে সুশিক্ষা পৌঁছে দিতে হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
চারপাশে সবুজ। ঠিক মাঝখানে লাল। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন বাংলাদেশের পতাকা। নাসিরনগর উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চিত্র এটি। উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামে এটি করা হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম জানান, উত্তর লক্ষ্মীপুরে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪০টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘরসহ ভূমি পেয়েছেন বিধবা নারী, স্বামী পরিত্যক্তা, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী ও গৃহহীনরা। ঘরগুলো দৃষ্টিনন্দন করতে চাল লাগানো হয়েছে জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজে। ২২ মার্চ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলো হস্তান্তর করা হবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৬৬২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে নতুন ঘর। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বুধবার এসব ঘর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে প্রধানমন্ত্রী ঘর হস্তান্তরের পর জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম জানান, মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন (যাদের জমি নেই, ঘরও নেই) তাদের পুনর্বাসনের জন্য চতুর্থ পর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ ধাপে ৬৬২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পাবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর এসব পরিবারকে ঘরের চাবি ও দলিল বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১০৫টি, বাঞ্ছারামপুরে ১২৬টি, নবীনগরে ১০০টি, আখাউড়ায় আটটি, সরাইলে ৪৯টি, আশুগঞ্জে ২০টি ও নাসিরনগর উপজেলায় ২৫৪টি পরিবার রয়েছে। এরই মধ্যে সুবিধাভোগী ভূমি ও গৃহহীনদের নামে ভূমির দলিল নিবন্ধন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, দুই কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা ঘরগুলো একই নকশায় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) এ‘র আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার উঠান/উন্মুক্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে তথ্য অফিসার দীপক চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নাসিরনগর উপজেলার সহকারী উপজেল শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ কবীর হোসেন, প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্র রায়, সহকারী শিক্ষক আব্দূল হক, সহকারী শিক্ষক অনিতা রাণী মজুমদার, সহকারী শিক্ষক তানজিনা আক্তার, সহকারী শিক্ষক রোকসানা পারভীন ও সহকারী শিক্ষক রায়হানা বেগম-পূর্বভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সভাপতির বক্তব্যে দীপক চন্দ্র দাস বলেন ডেঙ্গু, শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দান, শিশু ও নারীর অধিকার, শিশুর যথাযথ বিকাশ, অটিজম, শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধ, পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্যোগকালীন নারী- শিশুর সচেতনতা, জেণ্ডার সমতা ও নিরাপদ মাতৃত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে উন্মুক্ত আলোচনা করেন।
উক্ত উঠান বৈঠকে বাল্যবিবাহ ও মাদক আসক্তকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসাবে আখ্যা দিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহ ও মাদক আসক্ত আমাদের জন্য একটি ভয়াভহ সমস্যা। এ সমস্যা দূর করার জন্য একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একটি বাল্য বিবাহ শুধু একটি মেয়ের জীবন ধ্বংস করেন তা নয় বরং দুটি পরিবারই শেষ হয়ে যায়, ঠিক তেমনি মাদক আসক্ত ব্যক্তি পুরো সমাজের জন্য হুমকিস্বরুপ। অনুষ্ঠানে শিক্ষকবৃন্দ ও আগত শ্রোতা প্রায় তিন শতাধিক উপস্থিত ছিলেন।