চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় বাচ্চু মিয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
আজ ২২ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার কাছারি মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত বাচ্চু গোপালপুর মধ্যপাড়ার মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, সকালে বাচ্চু মিয়া বাড়ি থেকে অটোরিকশায় করে নবীনগর সদরে আসছিলেন। পথে শ্রীরামপুর এলাকায় অটোরিক্সাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। এ অবস্থায় বাচ্চুকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
এতিম ছাত্রদের নিয়ে নবীনগরে যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে নবীনগরের একটি এতিমখানায় দৈনিক যুগান্তরের দুই যুগে পদার্পণ উপলক্ষে এতিম ছাত্রদের নিয়ে কেক কাটা, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি মোস্তাক আহাম্মদ উজ্জ্বলের উদ্যোগে নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ খানকায়ে কামাল্লা দরবার শরীফ হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্বপ্নদ্রষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দোয়া পরিচালনা করেন মাদ্রাসার হাফেজ মো. মিনহাজুল আবেদিন। দোয়া-মোনাজাতে এতিম ও হাফিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান সোহেল, সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল হক মমিন, বাড়াইল ইসলামি একাডেমির প্রধান শিক্ষক এরশাদুর রহমান, ইউপি সদস্য সেলিম এলাহী, মো. জুয়েল সরকার, মো. আবু মুছা, মো. সাজেদ সরকার, ওমর ফারুক, যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম পিন্টু, শ্যামল আহাম্মেদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘যুগান্তর দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সুশাসন, বাক-স্বাধীনতায় উদার মানসিকতা, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, সামাজিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, তথ্য অধিকার, ন্যায়বিচার, শান্তি-সমঝোতা, দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনে সর্বদা সচেষ্ট ছিল এবং থাকবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কারণে যুগান্তর দেশের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। এই পত্রিকায় রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, স্বাস্থ্যসহ সব বিষয় প্রকাশ করে থাকে। বিশেষ করে দুর্নীতি ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন গুরত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়। এ পর্যন্ত আসতে অনেক স্বচ্ছতা ও দায়িত্বতাশীলতার সাথে কাজ করতে হয়েছে।’
এ সময় বক্তারা মরহুম নুরুল ইসলামের সহধর্মিণী যমুনা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাড: সালমা ইসলাম এমপি এবং তার সুযোগ্য উত্তরসূরি যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম ও পরিচালকদের অকুণ্ঠ কর্ম অনুপ্রেরণায় আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য দোয়া করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের নবীনগর নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফয়জুর রহমান বাদলকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক সাঈদ।
আজ ২৪ ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে সলিমগঞ্জ বাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সাঈদ বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। এবার নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা ও নৌকার ভোটারদের বিভক্ত না করে নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফয়জুর রহমান বাদলকে সমর্থন দিতেই নির্বাচন থেকে সরে এসেছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার নিজ গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়।
অভিযুক্ত শান্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
তিনি উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে।
প্রতারণার শিকার ৬ ভুক্তভোগী নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত রায়কে অভিযুক্ত করে ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, শান্ত কুমার রায় ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় সিগারেটের এজেন্ট ও র্স্বণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রামে তার বাবার স্বর্ণের দোকান রয়েছে। সে নাম ব্যবহার করে তার বাবার সহযোগিতায় শান্ত কুমার রায় এলাকায় বিশ্বস্ত হয়ে উঠেন, সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের টার্গেট করে ব্যাংকের রেটের চেয়ে উচ্চ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সিগারেটের ব্যবসা ও স্বর্ণের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কথা বলে নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।
গত শনিবার ও রোববার (১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি) অনেকের টাকা ফেরত দেওয়ার তারিখ ছিল, ওইদিন থেকেই শান্ত লাপাত্তা, তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। শুরু হয় কানাঘুষা, বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক টাকা নেওয়ার তথ্য। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আরো জানা যায়, নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের হকের ৪০ লাখ টাকা, মো. সুজন মিয়ার ২০ লাখ টাকা, আব্বাস উদ্দিনের ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ছগির আহমেদের ১২ লাখ টাকা, শ্যামল চন্দ্র দাসের ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, অক্লান্ত চন্দ্র দেব নাথের ৩ লাখ টাকা ও নিখলী গ্রামের খোরশেদ আলমের ৫ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
এছাড়া থোল্লাকান্দি গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের ৩৯ লাখ টাকা, থোল্লাকান্দি গ্রামের আতিকুর রহমান রনির (বিকাশের দোকান) ৩ লাখ টাকা, বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের শাহ জালালের (বিকাশের দোকান) ৫৩ লাখ টাকা, ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়ার ১১ লাখ টাকা, বাড়াইল গ্রামের (বিকাশের দোকান) মাহফুজুর রহমানের ৩ লাখ টাকা, নরসিংদী জেলার মুরাদনগরের বাদল মিয়ার ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায়। এসব পাওনাদাররা শান্ত ও তার বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযোগকারী শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, স্বর্ণ কিনবে বলে আমার কাছ থেকে চেকের মাধ্যমে ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়। লাভ হলে এর কিছু অংশ দেবে বলে আমাকে জানায়। কিন্তু টাকা দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। এখন খুঁজে পাচ্ছি না।
অপর ব্যক্তি ছগির আহমেদ বলেন, ব্যবসায়িক কাজে শান্ত আমার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেয় গত জুলাই মাসে। বলেছিল তার বাবার স্বর্ণ ব্যবসা আছে দিলে লাভ হবে। কিন্তু এরপর থেকে আমার টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন তারিখ দিতে থাকে। গত শনিবারে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে আর পাচ্ছি না। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাচ্ছি। সে আমার মতো অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে।
ব্যবসায়ী মো. হক সাহেব বলেন, শান্ত ও তার বাবা ব্যবসার কথা বলে আমার কাছ থেকে প্রায় সময়ই টাকা নিতো, আবার ফেরতও দিয়ে দিতো, সর্বশেষ ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে, অন্য কারও কাছ থেকে টাকা নিতো এটা আমার আগে জানা ছিল না, এখন শুনতে পাচ্ছি আমার মতো ৩০ থেকে ৪০ জনের কাছ থেকে সে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
অপরদিকে সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রিফাত আহম্মেদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা, বড়িকান্দি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দেওয়ার কথা বলে জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত কুমার রায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়কে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তার মোবাইল ফোন (০১৭৮৮৫৫০১৩০) বন্ধ পাওয়া যায়।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, এ পর্যন্ত ছয়জন পাওনা টাকার বিষয়ে নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নদীপথ। তখন তিতাস ও বুড়ি নদী পানিতে ছিলো টইটম্বুর। বর্ষা মৌসুমে দু’কূল উপচে পানি খালবিল, মাঠঘাট, হাওড় বিলে গিয়ে পড়ত। বারো মাসই এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল নৌযান। কিন্তু এখন ভরা বর্ষা মৌসুমেও সেই নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। পলি জমে কোথাও কোথাও ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও আবার ধান চাষ হচ্ছে। হাট-বাজার ও বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে এক সময়ের প্রমত্তা তিতাস ও বুড়ি নদী এখন মরা খাল আর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। একসময় দিনরাত তিতাস ও বুড়ি নদীতে উত্তাল ঢেউ আর জাহাজের সাইরেন শোনা গেলেও এখন এর অস্তিত্বই হারিয়ে যেতে বসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সহ নবীনগর উপজেলায় উন্নয়নের নামে ফসলি জমি ও খাল-বিল দখল করে সড়ক, স্থাপনা, বসতবাড়ি, হোটেল ও ফল ব্যবসায়ীরা বর্জ্য ফেলার কারনে তিতাস ও বুড়ি নদী এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী নবীনগর উপজেলায় যোগদান করার পর নবীনগর উপজেলা সহ নবীনগর পৌর প্রশাসকের দ্বায়িত্ব নেয়ার পর তিতাস ও বুড়ি নদী রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যোগদানের মাত্র কয়েক মাসেই সামাজিক নানা ইস্যুতে কাজ করছেন তিনি। নবীনগর সদরের তিতাস ও বুড়ি নদীকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে তিনি এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে, আবার কখনো একাই তিতাস ও বুড়ি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যান। নবীনগর সদর বাজারের ঘুরে ঘুরে নদী রক্ষায় জনসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরন করে বেহাল দশার চিত্র তুলে ধরছেন জাতীয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
সম্প্রতি ইউএনও রাজীব চৌধুরী কে দেখা যায়, নবীনগর পৌর সভার উদ্যোগে তিতাস ও বুড়ি নদীর পৌর সদরের শহর রক্ষা বাধে ফেলা ময়লা পরিস্কার করছেন। এবং নদীর পাড়ে জনসচেতনতামূলক ব্যনার টানিয়ে পৌর ডাস্টবিনে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার জন্য বিনীতভাবে আহ্বান জানাচ্ছেন।
স্থানীয় সূধি সমাজের নেতৃবৃন্দরা জানান, তিতাস ও বুড়ি নদীর নাব্যতা সংকটে যখন হারিয়ে যেতে বসেছে তখন ইউএনও রাজীব চৌধুরী সদরের শহর রক্ষা বাধের ময়লা আবর্জনা স্তূপ পরিস্কার করে বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন স্থাপন করে সচেতনা মূলক লিফলেট বিতরণ করছেন। তিনি একাই দায়িত্ব নিয়ে নদী রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের উচিত ইউএনও রাজীব চৌধুরীর পাশে দাঁড়ানো।
এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক রাজীব চৌধুরী বলেন,‘নদী বাঁচলে নবীনগর বাঁচবে’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে নবীনগর পৌরসভার উদ্যোগে তিতাস নদীকে দূষণমুক্ত করতে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিতাস পাড়ের ময়লা প্রতিদিন পৌরসভার ডাম্পিং স্পটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নদী পাড়ে সরবরাহ করা হয়েছে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। সচেতনতামূলক কার্যক্রম হিসেবে ব্যবসায়ীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেছি। বিভিন্ন জায়গায় তিতাসকে দূষণমুক্ত রাখতে সচেতনতামূলক ব্যানার টাঙানো হয়েছে। তিতাস ও বুড়ি নদী রক্ষার কার্যক্রমকে টেকসই করতে নদীর পাড়ে স্থাপন করা হচ্ছে ১৬ টি সিসি ক্যামেরা। তিতাস ও বুড়ি নদী রক্ষায় নবীনগর উপজেলা ও পৌরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে গুঞ্জন পাঠাগার। মাত্র ৩টি বই নিয়ে যাত্রা করা গুঞ্জন পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারের বই দিয়ে পড়াশুনা করে। ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ ছোট একটি টিনের একচালা ঘরে যাত্রা শুরু করা পাঠাগারটি এখন ১ তলা বিশিষ্ট ভবন।
গুঞ্জন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া (৩২)। তিনি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মরহুম স্বপন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে স্বপন মিয়া জেলার কসবা উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।
স্থানীয়রা জানান, ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো স্বপন মিয়ার। ২০০৪ সালে স্বপন মিয়া যখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই তিনি তার বাড়ির একটি টিনের ঘরে মাত্র তিনটি বই দিয়ে পাঠাগারটি চালু করেন। পাঠাগারের নামকরন করেন “গুঞ্জন পাঠাগার”। প্রায় ১৯ বছরে পাঠাগারটি এখন ১০ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। পাঠাগারে গ্রামের ছেলে মেয়েরা এক সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র দেড় বছর বয়সে পিতাকে হারান স্বপন মিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন মা রাজিয়া খাতুন। তিনি মাটি কাটার কাজ করে সন্তানদের খুবই কষ্টে লালন-পালন করেন। স্বপনের দুই ভাই রিকশা চালক।
স্বপন মিয়া যখন গ্রামের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই একটি পাঠাগার গড়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। তখন তিনি পরিবারের সদস্যদের অমতে একটি এনজিও থেকে ৮ হাজার টাকা ঋন নিয়ে বাড়ির জায়গায় একটি ছোট একচালা টিনের ঘর তৈরী করে মাত্র তিনটি বই দিয়ে গুঞ্জন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাগারটি নিয়ে স্বপনের পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। বড় দুই ভাই তাকে শর্ত দেন, পরিবারে থাকতে হলে পাঠাগার ছাড়তে হবে। কিন্তু স্বপন পরিবারকে ছেড়ে পাঠাগারকে আকড়ে ধরে রাখেন। পরবর্তীতে স্বপনের মা রাজিয়া খাতুন স্বপনকে সম্মতি দেন।
এক পর্যায়ে নিজের পড়াশুনা, সংসার আর পাঠাগার দেখাশুনা করতে স্বপন মিয়া দিন-মজুরি শুরু করেন। পথে ঘাটে ফেরি করে পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ করেননি।
উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
পরে তিনি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সোয়া ২ শতাংশ জায়গা পাঠাগারের নামে দান করে সেখানে ঋণের টাকায় একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন করেন। পাঠাগারেই রাত্রিযাপন করেন তিনি। কলেজ থেকে যে টাকা বেতন পান, তার বেশির ভাগই ব্যয় করেন এই পাঠাগারে।
বর্তমানে প্রতি শুক্রবারে পাঠচক্র বসে পাঠাগারে। সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতার।
নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের রমজান জানান, তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সাথে কৃষি কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে স্বপন তাকে গুঞ্জন পাঠাগারে নিয়ে আসেন। এই পাঠাগারে থাকা বই দিয়েই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনার্স শেষ করে বর্তমানে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স করছেন।
নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ জাহান চৌধুরী জানায়, সে নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ে সে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সবধরনের বই আছে এখানে। এছাড়া তার কয়েকজন সহপাঠীও পাঠাগারে এসে বই পড়ে।
উপজেলার কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রোকসানা জেবিন মলি জানান, গুঞ্জন পাঠাগারের মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পাঠাগারটি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।
পাঠাগারে নিয়মিত আসা পাঠক ও কসবা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তুহিন কান্তি দাস বলেন, নবীনগর তথা পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারটি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ও বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে পাঠাগারটি।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া বলেন, পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও অনেক ব্যক্তি তাকে সহায়তা করেছেন। যার জন্য তিনি পাঠাগারটিকে একচালা টিনের ঘর থেকে পাকা ভবন তৈরি করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘সমাজে আমার মতো অনেকেই আছে- যারা বই কিনে পড়তে পারে না। অর্থের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কথা চিন্তা করেই পাঠাগারটি করা হয়েছে। এই পাঠাগারের জন্য আমাকে পরিবার থেকে আলাদা হতে হয়েছিল। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমি রাস্তায় ফেরী করে পান-সিগারেট বিক্রি করেছি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ হতে দেইনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই পাঠাগারের বই পড়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সুহাতা গ্রাম আলোকিত হয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারের আলোতে। আমি চাই জ্ঞানের এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পাঠাগারের জন্য স্বপন তার নিজের ব্যক্তি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছে। গুঞ্জন পাঠাগার শুধু জ্ঞানের আলোই ছড়াচ্ছে না, ছেলে-মেয়েদের মাদক থেকেও দূরে রাখতে সহায়তা করছে। বই পড়ার কারণে মেধার বিকাশ হচ্ছে, জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে।