আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয় কমেছে ৩০৪ কোটি টাকা

আখাউড়া, জাতীয়, 6 July 2023, 1156 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে রিপোর্ট :
এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতে রপ্তানি হলেও এখন রপ্তানি হচ্ছে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য। মূলত এখন হিমায়িত মাছের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য। তবে মাছ রপ্তানি কমার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০৪ কোটি টাকা কম। এছাড়া তলানিতে ঠেকে আছে বন্দরের আমদানি বাণিজ্যও। ফলে আশানুরূপ রাজস্ব পাচ্ছে না বন্দর এবং শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চললেও ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত এ বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানি হয়।

পাঁচ বছর আগেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের তালিকায় ছিল- হিমায়িত মাছ, পাথর, রড, সিমেন্ট, তুলা, ভোজ্য তেল, এলপি গ্যাস, প্লাস্টিক, শুঁটকি ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছোট হয়ে এসেছে সেই তালিকা। বর্তমানে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট ও প্লাস্টিকসহ হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য যাচ্ছে ভারতে।

রপ্তানিকৃত পণ্যের অর্ধেকই হিমায়িত মাছ। আর মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, পুঁটি, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ও পাবদাসহ সব ধরনের চাষের মাছ। প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য আড়াই মার্কিন ডলার। প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতিত) গড়ে এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে।

তবে, গেল কয়েক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ রপ্তানি হলেও এখন তা কমে অর্ধেকে নেমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দরের রপ্তানি আয় কমেছে। মূলত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তাজা মাছ পাচারের কারণে রপ্তানি ক্রমেই কমছে বলে অভিযোগ মাছ রপ্তানিকারকদের।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আখাউড়া উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত তাজা মাছ পাচার হচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হিমায়িত মাছের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিষয়টি বিজিবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটি বন্ধ না করতে পারলে যে কোনো মুহূর্তে হিমায়িত মাছের রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়বে।

এদিকে, ভারত থেকে পণ্য আমদানিও এখন অনিয়মিত। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে গম, ভুট্টা পাথর ও পেঁয়াজ। নিজেদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এতে করে বন্দরের রাজস্ব আদায়ও তলানিতে ঠেকেছে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২৮ টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে শুল্ক কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা। তবে বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য।

স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক পণ্য এখন নিজ দেশ থেকেই সংগ্রহ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমে এখনও বন্দরটির ঘুড়ে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সেজন্য যখন যে পণ্যের চাহিদা, সেটি আমদানির সুযোগ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে- সেটি আগে থেকে বলা যায় না। সেজন্যই আমরা সব পণ্য আমদানির জন্য বন্দর খুলে দেওয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু আমাদের সেই দাবি পূরণ হচ্ছে না। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে কিছু পণ্যের তালিকা দিয়ে আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটির এখনও সুরাহা হয়নি।

একমাত্র আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমেই বন্দরে আবার কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসতে পারে। যার মাধ্যমে সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব পাবে’- উল্লেখ করেন ফোরকান আহমেদ খলিফা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বন্দরগুলো থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের বিষয়টি অনেকাংশেই আমদানি বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি অনিয়মিত হওয়ায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে কম। আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীরা যেসব পণ্য আমদানির জন্য তালিকা দিয়েছেন- সেটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হচ্ছে। অচিরেই এ বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা করছি।

Leave a Reply

দিল্লি মেট্রোর ১৬০০ যাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক : ভারতের দিল্লিতে মেট্রোয় আসন নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা Read more

সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার:…

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় দলমত Read more

এবারের অলিম্পিকে ২০৬টি দেশের অ্যাথলেট অংশ…

অনলাইন ডেস্ক : খেলার দুনিয়ার সবকিছুকে ছাড়িয়ে যার অবস্থান। যেখানে Read more

অব্যবহৃত মোবাইল ডাটার মেয়াদ কি বাড়বে,…

অনলাইন ডেস্ক : হঠাৎ করে মোবাইল ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে যায় Read more

স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, লাশ বাথরুমে ফেলে…

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকের টাকার জন্য স্ত্রী তানিয়া বেগম (৩৬)কে Read more

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো যুবকের

চলারপথে রিপোর্ট : বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আখতার হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক Read more

দুই মাদকসেবীর কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আরিফ মিয়া (২৭) ও ছাত্তার মিয়া Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতার চার মামলায় গ্রেফতার ৪১

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, Read more

৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে Read more

কোহলি-রোহিতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে চান গম্ভীর

অনলাইন ডেস্ক : আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় বিরাট কোহলি ৩৮ Read more

রাশিয়ার সুন্দরী বাইকার তুরস্কে দুর্ঘটনায় নিহত

অনলাইন ডেস্ক : রাশিয়ার বিখ্যাত সামাজিক ইনফ্লুয়েন্সার তাতায়ানা ওজোলিনা তুরস্কে Read more
ফাইল ছবি

ট্রেন চলাচল নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি:…

অনলাইন ডেস্ক : দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কবে থেকে ট্রেন চলবে Read more

সংলাপ নিয়ে আপাতত আমরা ভাবছি না : সেতুমন্ত্রী

জাতীয়, 8 June 2023, 617 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
সংলাপের কথা শুনে বিএনপির নেতাদের আবারও জিহ্বায় পানি এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংলাপ নিয়ে আপাতত আমরা ভাবছি না, ভাবব কি না সেটা পরের বিষয়। গতবারের কথা আমাদের মনে আছে; এক বার নয়, দুই বার তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছি। রেজাল্ট কী?

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে ৮ জুন বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

কাদের বলেন, নিষেধাজ্ঞার জন্য নালিশ করতে করতে বিএনপি এখন নিজেরাই ফাঁদে পড়েছে। তারা নিজেরাই ‘ফাঁদে পড়ে কান্দে’। এখন তারা নালিশ করে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে পেয়েছে ভিসানীতি। এই ভিসানীতি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না, একটা সেই দেশের ব্যাপার। আমরাও আমাদের দেশে কাকে ভিসা দেব, কাকে দেব না, সেটাও আমাদের ব্যাপার। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কী আছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুল সাহেবের জিহ্বায় পানি আসছে। মনে করছে আওয়ামী লীগ তাদেরকে সংলাপে ডাকবে। এই সংলাপের কথা আমরা ভাবছি না। নিরপেক্ষ কে? আপনার নেত্রী বলেছে শিশু এবং পাগল। শিশু এবং পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। কাজেই আপনি শিশু এবং পাগলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজে বের করুন। তারপর বোঝা যাবে কী হবে। আর এটা নিয়ে মাথা খারাপ করে কাজ নেই, এই তত্ত্বাবধায়ক আর আসবে না, তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে। এই মরা জিনিসকে আর জীবিত করার চেষ্টা করবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেনি, এটা নিষিদ্ধ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

তিনি বলেন, বিএনপি নমিনেশন লন্ডন থেকে দেয়, ঢাকা থেকে দেয়, নয়াপল্টন থেকে দেয়, গুলশান থেকে দেয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে নমিনেশন বিক্রি করে। এটাই হচ্ছে বিএনপি। মনে আছে ওই নমিনেশন বাণিজ্য, অনেকের পকেট খালি করেছে। একেক জায়গায় তিনজন চারজন করে নমিনেশন পেয়েছে, এটা হচ্ছে বিএনপি।

কাদের বলেন, আমাদের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ছিল না। খালেদা জিয়ার ইচ্ছায় নির্বাচন কমিশন ছিল আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন। সেটা আর হবে না। সেই দিন চলে গেছে। আমাদের নেত্রী পার্লামেন্ট আইন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপনাদের চিৎকার করার কোনো কারণ নেই।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকে বিদেশি বন্ধুরা তারা চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন। তারা চায় ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের নেত্রী দেশি বিদেশিদের আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন করব। বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়ক। বিএনপি চায় শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এটা মামা বাড়ির আবদার।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মের মধ্যে থাকুন। আপনারা আমাদের শপথে থাকুন। আমাদের আবারও ৬ জুন, ৭ মার্চের শপথ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র গিলে খেয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা গিলে খেয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ গিলে খেয়েছে। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এরা যদি ক্ষমতা ফিরে পায়, বিএনপি নামের বিষধর সাপ গোটা দেশ গিলে খাবে।

বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জনগণকে বলেছি, আপনারা সময় দিন। ১০-১৫টা দিন সময় দিন। সব ঠিক হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর ভরসা রাখুন।

নতুন ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ, এবার তোমরা যারা প্রথমবার ভোট দেবে তোমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ভোটটা দেবে।

সেতুর পিলারে ধাক্কা, ১৮৭ মণ ধান নিয়ে ডুবে গেলো নৌকা

জাতীয়, 10 October 2023, 449 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে রাবার ড্যাম ব্রিজের পিলারে ধাক্কা লেগে ১৮৭ মণ ধানভর্তি একটি নৌকা তলিয়ে গেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

আজ ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার ধানভর্তি নৌকাটি পানিতে ডুবে যাওয়ার ভিডিও ফেসবুক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ৯ অক্টোবর সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের খেওয়ারচর জিঞ্জিরাম নদীর রাবার ড্যাম ব্রিজের নিচে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুর ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী একই ইউনিয়নের আলগার চর গ্রাম থেকে ১৮৭ মণ ধান কিনে নৌকায় সায়দাবাদ ঘাটে যাচ্ছিলেন। পথে খেওয়ার চর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীর ওপর রাবার ড্যাম ব্রিজের পিলারে ধাক্কা লাগে নৌকাটির। এ সময় পানির তীব্র স্রোতের কারণে ধানভর্তি নৌকাটির মাঝখানে ভেঙে তলিয়ে যায়। এতে ১৮৭ মণ ধান ও একটি শ্যালোমেশিনসহ নৌকাটি তলিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা। স্থানীয়রা অনেক চেষ্টার পর মাত্র চার মণ ধান উদ্ধার করেন। তবে এ দুর্ঘটনায় নৌকায় থাকা ৬ জন মাঝি বেঁচে যান।

ক্ষতিগ্রস্ত ধান ব্যবসায়ী নুর ইসলাম জানান, ধারদেনা করে কোনোমতে এই ব্যবসা করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। হঠাৎ এই ক্ষতি হয়ে গেলো। আমি পথে বসে গেলাম।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, ধানভর্তি একটি নৌকা ব্রিজের পিলারে থাক্কা লেগে নদীতে ডুবে গেছে। ওই নৌকাটিতে আনুমানিক ১৯০ মণ ধান ছিল বলে জানতে পেরেছি।

আমরাই মানুষের ভোটের অধিকারের সুরক্ষা দেব: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 7 June 2023, 660 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতই দেশি-বিদেশি চাপ আসুক, এ দেশের মানুষ চাপের কাছে মাথা নত করবে না। আমরাই আমাদের দেশের মানুষের ভোটের অধিকারের সুরক্ষা দেব। আমরা পরমুখাপেক্ষী হবো না, পরের ওপর নির্ভর করে থাকবো না।

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আজ ৭ জুন বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে যা করার তা আওয়ামী লীগই করেছে। দেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে এখন সচেতন। কেউ ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না।

আমেরিকার ভিসা নীতি বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি মনে করে অন্য কেউ কোথাও থেকে এসে নাগরদোলায় করে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু দেবে না। ব্যবহার করবে, কিন্তু ক্ষমতায় বসাতে পারবে না। ক্ষমতায় বসাতে পারে একমাত্র জনগণ।

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দিনের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। দশ থেকে ১৫ দিন পর দেশে আর বিদ্যুতের কষ্ট থাকবে না। এর মধ্যেই দেশে বিদ্যুতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শাজাহান খান, সিমিন হোসেন রিমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি হয়নি : আইনমন্ত্রী

জাতীয়, রাজনীতি, 4 October 2023, 668 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রাজনীতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আরও বলেন, সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।

আজ ৪ অক্টোবর বুধবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, এটা আইনি ব্যাপার। এখানে রাজনীতির কোনো প্রশ্ন নেই। তার (খালেদা জিয়া) পরিবার দরখাস্ত করেছিল, সেটা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আইনে কোথাও নাই এই দরখাস্তে তাকে বিদেশে যাওয়ার পারমিশন দেয়া যায়। বিদেশ যেতে পারবেন না বলে আগেই শর্ত দেয়া ছিল, এখন সেটিকে পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই।

যে দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়েছে তা পরিবর্তন করা যায় কি না-এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে আছে শর্তযুক্ত অথবা শর্তমুক্ত। শর্ত যদি দেয়া হয় তা মানতে হবে। আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা তিনি তা প্রয়োগ করেছেন, এটা পুনরায় প্রয়োগ করার সুযোগ নেই।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে আইনমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইলে দোষ স্বীকার করে চাইতে হয়। বিষয়টি যিনি ক্ষমা চাইবেন তার বিষয়। এটা হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার, যে কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারে।

পঁচাত্তর পরবর্তী সরকার ভোটাধিকার কেড়ে দেশের অগ্রযাত্রা থামায়: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 9 July 2023, 624 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
১৯৭৫ সালের পরবর্তী সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা বন্ধ করে দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় পালাক্রমে বসে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এবং স্বৈরাচারী সামরিক শাসকেরা। শিক্ষাঙ্গনে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। সামরিক শাসক জিয়া ছাত্রদের হাতে তুলে দেয় অবৈধ অস্ত্র ও কালো টাকা। তাদের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। লাশের পর লাশ পড়তে থাকে ক্যাম্পাসগুলোতে।

আজ ৯ জুলাই রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৩-২৪ এর নির্বাচিত ফেলোদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও ফেলোশিপপ্রাপ্তদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেটে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিন্যাসের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। ওই অর্থবছরে শিক্ষাখাতে এদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১.১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনি সব স্কুল-কলেজ পুনর্গঠন করেন এবং নতুন বিদ্যালয়-কলেজ ভবন নির্মাণ করেন। তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি এবং ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-ই-খুদার নেতৃত্বে তিনি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কিন্তু, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর ড. কুদরাত-ই-খুদা কমিশনের সেই রিপোর্ট আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।

১৯৭৩ সালে তিনি মহান জাতীয় সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেন। একই বছরে তিনি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭৪ সালে জাতির পিতা ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা এবং আণবিক শক্তি বিভাগ’ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ সৃষ্টি করেন। আণবিক কমিশন গঠন করেন। ১৯৭৪ সালেই তিনি ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়’ গঠন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-এর পর রাষ্ট্রে গবেষণা তো দূরের কথা, শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। সেশনজট অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জাতির পিতা হাজিদের জন্য হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজ ক্রয় করেছিলেন। দুঃখের বিষয় জিয়াউর রহমান এ হিজবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদ তরী বানিয়েছিলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের নিয়ে যাওয়া হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাসহ প্রতিটি সেক্টরের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং গবেষণায় গুরুত্ব দেই। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রথম ১২ কোটি টাকা গবেষণা অনুদান প্রদান করি। পরবর্তীকালে গবেষণা ও প্রযুক্তির জন্য এ অনুদান ১০০ কোটিতে উন্নীত করি। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নভো থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করি।

সিভিল সার্ভিস, শিক্ষাবিদ এবং দেশের যোগ্য নাগরিকদের জ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপ চালু করা হয়।

এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামের আওতায় নির্বাচিত ফেলোদের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ বিদেশে বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। ফেলোশিপ প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩৯ জন মাস্টার্স ফেলো এবং ৯৮ জন পিএইচডি ফেলো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন।

পিএইচডির জন্য স্কলারশিপ নিশ্চিত করতে আবেদনকারীদের প্রথমে তাদের নিজস্ব সামর্থে বিশ্বের ১০০ সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটিতে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মাস্টার্সের জন্য স্কলারশিপ নিশ্চিত করতে আবেদনকারীদের প্রথমে তাদের নিজস্ব সামর্থে বিশ্বের ২০০ সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটিতে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ভর্তি নিশ্চিত হলেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ) অধীনে বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন জিআইইউর মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুল লতিফ।