চলারপথে রিপোর্ট :
ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ভারতীয় সীমান্তঘেষা বিজয়নগর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক ও নৈর্সগিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিজয়নগর উপজেলার টিলা ভূমির মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের ফলই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই বিজয়নগরে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ফল বিক্রি করা হয়।
উৎপাদিত দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন। বিদেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদি। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন, ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টা, ৪২ হেক্টর জমিতে পেয়ারা ও ১৬ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি করা হয়। প্রায় ১ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পেয়ারা প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা ও প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় এখানকার ধানি জমি গুলোকেও লিচু বাগানে পরিনত করতে থাকেন চাষীরা।
চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে এই উপজেলায়। এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর। বিজয়নগরে চাষ করা হয় পাঁচ ধরনের লিচ। এর মধ্যে রয়েছে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু।
বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় রয়েছে এই লিচুর বাগানগুলি। এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলার কামালমুড়া গ্রামের মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, তার বাগানে থাকা ৭০ টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকা বিক্রি করছেন। উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, তার ৪টি বাগানে থাকা ১৭০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন।
উপজেলার মহেশপুর গ্রামের লিচুর চাষী মাসুদুল হাসান বলেন, তার বাগানে থাকা ৬০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন।
২০১৫ সাল থেকে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে সবুজ মাল্টার চাষ শুরু হয়। গত বছর উপজেলার ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় গত ২০১৬ সাল থেকে বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপন করেন চাষীরা। শুরুতে রসালো এই ফলটির ফলন নিয়ে চাষীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ থাকলে খরচ কম এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাল্টার প্রতি আগ্রহ বাড়ে চাষীদের।
বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে ৭৫৪টি মাল্টার বাগান। গত বছর বাগানগুলোতে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামের মালটা বাগানের মালিক মোঃ সোহাগ ভূইয়া জানান, তার বাগানে ১২০টি মালটা গাছ আছে। গত বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রায় দুইশত বছর আগে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষ শুরু হয়। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় আস্তে আস্তে কাঁঠাল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয় এখানকার চাষীরা। চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমোড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও এবং পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঠাল বাগান। চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হয়েছে।
গত দুই বছর ধরে বিজয়নগরে লটকনের চাষ হলেও চলতি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর উপজেলার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ করা হয়। উপজেলার চম্পকনগর, মেরাশানি, সিঙ্গারবিল ও পাহাড়পুর এলাকায় রয়েছে লটকনের বাগান। উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হলেও শুধু উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান।
মেরাশানী গ্রামের লটকন চাষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭/৮ বছর আগে তিনি ময়মনসিংহ জেলা থেকে ১০০ লটকনের চারা এনে একটি বাগান করি। প্রথমে যখন লকটকের বাগান করি এলাকার অনেকেই এনিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। গত ২ বছর ধরে কিছু কিছু গাছে লটকন ধরা শুরু করলেও এবছর সব গাছে লটকন ধরেছে। তিনি বলেন, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার উপর লটকন বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বানিজ্যিকভাবে আমি লটকনের চাষ করবো।
উপজেলার সিঙ্গার বিল গ্রামের লটকন বাগানের মালিক জাকির মিয়া বলেন, এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে পাইকারা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার বাগান থেকে তিনি ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।
একই এলাকার আবদুল হাসিম বলেন, তার বাগানে ১০০টি লটকন গাছ আছে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে লটকন নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাব্বির আহমেদ বলেন, বিজয়নগরের মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপকারি। এই বছর বাণিজ্যিকভাবে উপজেলায় লকটন চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ২০/২৫ জন চাষী ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশাকরি এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন চাষীরা।
তিনি বলেন, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন “সি” তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম।
উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। “মিয়াজাকি” আম গাছও আছে তাঁর বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ হাদিউল ইসলাম সৃজন বলেন, ফলের জন্য উর্বর ভূমি বিজয়নগর উপজেলা। দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সাধ্যমত সব ধরণের সহযোগিতা করা হয় চাষিদেরকে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলায় দেশীয় ফল কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন উৎপাদরের পাশাপাশি বিদেশী ফল আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদিও চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে “মিয়াজাকি” আম। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে সূর্যডিম আম চাষেই গুরুত্ব দিচ্ছি । এই আমটিকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে বাজারজাত করার জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা চাষীদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকি। প্রতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রয় করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাফেজ ফয়সাল আহমেদ।
তার এ অর্জনে বাবা-মাসহ গর্বিত জেলাবাসী।
তিনি জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের মো. সিরাজ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় সময় ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার এশার নামাজের পর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের পক্ষ থেকে বিজয়ী ফয়সালের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মক্কার ডেপুটি গভর্নর প্রিন্স বদর বিন সুলতান।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ১৬৬ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ফয়সাল আহমেদ তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। যার পুরস্কার হিসেবে তাকে দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল (প্রায় ৫২ লাখ ৬২ হাজার ৫৭৯ টাকা) ও সম্মাননা পদক। ফয়সাল রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন।
তার বাবা মো. সিরাজ মিয়া দীর্ঘদিন সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটিয়ে বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। হাফেজ ফয়সালের এক ছোট বোন রয়েছেন। ফয়সাল বড় সন্তান।
হাফেজ ফয়সাল আহমেদের বাবা মো. সিরাজ মিয়া বলেন, ফয়সাল আহমেদ ছোট থেকেই ইসলামী পড়ালেখার প্রতি বেশ মনোযোগী। সে সব সময় স্বপ্ন দেখত, ইসলামী বিষয়ে ভালোভাবে পড়ালেখা করে একজন আলেম হবে। সে স্বপ্ন নিয়েই সে এগিয়ে যাচ্ছে। তার প্রথম হেফজ বিষয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মৈন্দ বারুরা দারুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে। এরপর সে জেলা শহরের ইকরা মাদ্রাসায় কিছুদিন পড়াশোনা করে। বর্তমানে ফয়সাল রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় পড়ছে। সে সৌদি আরবে এতো প্রতিযোগীদের সঙ্গে অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে যে সুনাম বয়ে এনেছে, তাতে পিতা হিসেবে আমি গর্বিত। আমি চাই, আমার ছেলে একজন ভালো মানুষ ও একজন ভালো আলেম হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুক।
তার মা বলেন, ফয়সাল সব সময় বলে, সে ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর ঘর দেখবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। আমার ছেলে এত বড় কৃতিত্ব অর্জন করেছে, আমি তাতে গর্বিত। আমরা স্বপ্ন দেখি, ফয়সাল যেন ভালো আলেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং ইসলামের খেদমতের পাশাপাশি দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারে।
এ বিষয়ে ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বকুল জানান, ফয়সালের এ কৃতিত্ব কেবল ইয়াছাপুরা ইউনিয়নের নয় বরং ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সমগ্র বাংলাদেশের কৃতিত্ব। তার এমন অর্জনে আমরা সবাই গর্বিত। তিনি দেশে এলে আমাদের ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা জানানো হবে।
গত ২৫ আগস্ট সৌদি আরবের ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধানে মক্কায় ৪৩তম বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে বিশ্বের ১১৭টি দেশ থেকে ১৬৬ প্রতিযোগী অংশ নেন। পাঁচ বিভাগে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সর্বমোট ৪০ লাখ সৌদি রিয়াল পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় পূর্ণ কোরআন হিফজ বিভাগে তৃতীয় হয়েছেন হাফেজ ফয়সাল আহমেদ।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগরে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়া আনুমানিক ১০ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি।
শিশুটি অচেতন থাকায় তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন বিজয়নগরের মেরাসানি রেলস্টেশনে অতিক্রম করছিল। এসময় চলন্ত ট্রেন থেকে একটি শিশু পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা গিয়ে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবিদ আল হাসান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে শিশুটি ব্রেইনে আঘাত পেয়েছে। তবে সিটি স্ক্যান রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলীম হোসেন শিকদার বলেন, শিশুটির পরিচয় শনাক্তে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী বিল থেকে আব্বাস ভূঁইয়া (৪৮) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৭ এপ্রিল শনিবার রাতে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের হালদু বিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আব্বাস ভূঁইয়া ওই ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামের সিদ্দিক ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য জসিম উদ্দিনের ছোট ভাই।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজয়নগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলাম জানান, যেখান থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়েছে এর থেকে সীমান্ত ২০০-৩০০ গজ দূরত্বে হবে। তবে এটি সীমান্ত সংক্রান্ত কোনো ঘটনা নয়। নিহতের পায়ের নিচে এবং কানের নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতগুলো কিসের তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, নিহতের পরিবারের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ চলে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে সেটি থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগরে নৈশ প্রহরীকে বেঁধে ফেলে একটি মার্কেটের দুইটি দোকানে ডাকাতি হয়েছে। গতকাল ভোর রাতে উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের সাতবর্গ বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম মার্কেটে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোর রাতে ১০/১৫ জনের একটি ডাকাতদল মাকের্টে হানা দেয়। তারা মার্কেটের নৈশ প্রহরী নূর মিয়াকে বেদম মারধোর শেষে তাকে বেঁধে ফেলে।
পরে ডাকাতরা দোকানের তালা কেটে মেসার্স আল মদিনা ব্যাটারি এন্ড আইপিএস দোকানে প্রবেশ করে। পরে তারা দোকানে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় দোকানের মালিক মনিরুল ইসলাম মনির মারধোর করে এবং তাকেও বেঁধে দোকানে থাকা আইপিএস-ব্যাটারিসহ অন্যান্য মালামাল ও নগদ টাকা লুটে নেয়।
এসময় ডাকাতদল মার্কেটে থাকা জহিরুল ইসলামের দোকানের তালা ভেঙ্গে পুরাতন ব্যাটারী ও যন্ত্রপাতি পিকআপে তুলে নিয়ে যায়। ডাকাত দল চলে যাওয়ার পর নূর মিয়া ও মনিরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাদেরকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রাজু আহমেদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার ও আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরের উৎপাদিত আখের রসের লালি দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে। কৃষি নির্ভর বিজয়নগর উপজেলায় গত কয়েকযুগ ধরে উৎপাদিত হচ্ছে আখের রসের লালি। মূলত শীতকালেই এই লালি উৎপাদিত হয়। এই লালি পিঠা-পুলির সাথে খেতে পছন্দ করেন ভোজন রসিকরা। আবার অনেকে মুড়ির সাথেও খান এই লালি।
চলতি বছর প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার লালি বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টতা।
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলা, বিজয়নগর উপজেলা, কসবা উপজেলা ও আখাউড়া উপজেলার কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়। এসব আখের রস থেকে লালি উৎপাদন করেন চাষীরা।
চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়। এই আখ থেকে অন্তত ১শ টনেরও বেশি লালি উৎপাদন হবে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, দুলালপুর ও বক্তারমুড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার বংশ পরস্পরায় বাণিজিক্যভাবে লালি উৎপাদন করে আসছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে শুরু হয় লালি তৈরির কাজ। মূলত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে লালি তৈরি ও কেনা-বেচা। প্রতি কেজি লালি বা তরল গুড় খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশ এলাকা থেকে মানুষ লালি তৈরী দেখতে যায় বিজয়নগরে। অনেকে ফিরে যাওয়ার সময় লালি নিয়ে যাওয়া সহ আখের রস খেয়ে যান। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পযন্ত চলে লালি তৈরির কাজ।
প্রথমেই চলে আখ মাড়াই। পরে মহিষের ঘানি দিয়ে আখ মাড়াই করে আখের রস সংগ্রহ করা হয়। পরে রস ছাকনি দিয়ে ছেকে রাখা হয় বড় কড়াইয়ে। পরবর্তীতে এই রস দুই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। জ্বাল দিয়ে রস লাল রং ধারণ করলে নামানো হয় কড়াই থেকে। এভাবেই তৈরি হয় মুখরোচক লালি বা তরল গুড়।
লালি নিতে আসা বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের শারমিন আক্তার জানান, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে তিনি দুলালপুর থেকে লালি কিনে নিয়ে যান। তার শ্বশুরবাড়ির সবাই এই লালি খুবই পছন্দ করেন। তিনি জানান, পিঠার সাথে লালি খেতে খুবই ভালো লাগে।
দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ও লালি উৎপাদনকারী মোহাম্মদ আলী ও রাকিব মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও তাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আখ চাষ করতো। বর্তমানে কমে যাচ্ছে আখ চাষীর সংখ্যা। আবার আখ কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। ঘানি টানানোর জন্য লাখ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দিয়ে মহিষ কিনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে লালি তৈরিতে যে খরচ পড়ছে, সে অনুযায়ি দাম পাওয়া যায় না।
একই গ্রামের আরেকজন লালি চাষী সহিদ মিয়া জানান, বংশ পরস্পরায় তিনি লালি তৈরি করে আসছেন। তবে ভালো লাভ না হওয়ায় বিগত সময়ের চেয়ে এবার কম জমিতে আখ চাষ করেছেন।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাব্বির আহমেদ জানান, লালিগুড় তৈরিতে কোন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয় না। ক্ষতিকর কোন উপাদান ব্যবহার না করায় সারাদেশেই লালির জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, লালি গুড় উৎপাদনের সংশ্লিষ্টদের উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।