অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসকে দেশের জাহাজ নির্মাণ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে জমি দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। আজ ৪ আগস্ট তাঁর কার্যালয়ে বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন বিদায়ী সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি (নেদারল্যান্ডস) যদি চান, তবে আমরা আপনাকে (বাংলাদেশে) ড্রাইডকের জন্য জায়গা দিতে পারি।’
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে উভয়েই দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।’
প্রেস সচিব বলেন, “বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘এখানে কাজ করতে পেরে আমি খুশি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে থাকবে।’ লিউয়েন বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান একটি চমৎকার পরিকল্পনা এবং এটি বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়ন এবং আইসিটি বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে, কারণ এসব খাতে নেদারল্যান্ডের যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে।’ আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাচ রাষ্ট্রদূত।”
প্রেস সচিব আরো বলেন, “শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের মতো জমি পুনরুদ্ধার করতে চায়।’ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আলোচনাকালে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মধ্যেও বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হবে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে প্রথমে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেন এবং পরে তার সরকার এই কর্মসূচির প্রসার ঘটায়।’ বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো প্রচণ্ড অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে।”
অ্যাম্বাসেডর এ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নির্বাচনি মনোনয়ন পর্ব শেষ হলে বুঝা যাবে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ নির্বাচনে যাবে কিনা। কিংবা আমাদের বিরুদ্ধে যারা দাড়াচ্ছেন কোন দল বেশি শক্তিশালী, কোন দল কম শক্তিশালী সেটা পরে বুজা যাবে। আমরা চাই নির্বাচনে সকলেই অংশগ্রহণ করুক। একটি উৎসব ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের আগামী দিনের সরকার পছন্দ করে নিবে।
আজ ২২ নভেম্বর বুধবার দুপুরে চাঁদপুরস্থ কদমতলা রোডের শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সংসদীয় আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকে। তাই সকলের মনোনয়ন চাইবার গনতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। মনোনয়ন কাকে দেওয়া হবে সেটা মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত কিন্তু চাইবার অধিকার সবার আছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এসময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবসহ বিএনপি নেতারা তরুণদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ধ্বংসের শিক্ষা দিচ্ছেন, অগ্নিসন্ত্রাসের শিক্ষা দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার চট্টগ্রামের জামালখান এলাকার রাস্তায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামে অমর ভূমিকা রাখা মাস্টারদা সূর্যসেন, মাওলানা মনিরুজ্জামান থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং স্বযত্নে রক্ষিত ম্যুরালগুলো বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে যাওয়ার পথে তারা ভাঙচুর করেছে। এর অর্থ বিএনপি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কোনটাই মানে না এবং ধ্বংস করতে চায়। আমার প্রশ্ন তারা তরুণদের কি শিক্ষা দিচ্ছে? এই ভাঙচুর, অগ্নিসন্ত্রাসের শিক্ষা দিচ্ছে!’
আজ ১৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের (বিএসপি) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোথাও রাস্তার পাশে এতো সুন্দরভাবে ইতিহাস, ঐতিহ্যের প্রদর্শনী নেই, যেটি চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় করা হয়েছে। প্রায় শতাধিক বিভিন্ন চিত্রকর্ম সেখানে স্থান পেয়েছে। এই দৃষ্টিনন্দন দেয়ালে আমাদের পুরো ইতিহাস তুলে আনা হয়েছে এবং সেগুলো তারা ভাংচুর করেছে। এ অপরাধের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে এবং এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব যখন বক্তৃতা করে তখন মনে হয় ভেতরে ভেতরে উনি ‘এফআরসিএস’ পাস করেছেন, উনি এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও বটে। কারণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, আর মির্জা ফখরুল সাহেব গলা ফাটিয়ে বলেন উনি জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে। এখন ডাক্তারদের কথা ঠিক না ফখরুল সাহেবের কথা ঠিক, এটাই হচ্ছে প্রশ্ন।’
‘বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য একজন মানুষের স্বাস্থ্যকে রাজনীতিকরণ করার উদাহরণ’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা বেগম জিয়াকে রাজনীতির পণ্য বানিয়েছে। এটা তার জন্য প্রচণ্ড অবমাননাকর। বেগম জিয়ার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা এবং সম্মান রেখে আমি তাদের অনুরোধ জানাবো, দয়া করে বেগম জিয়াকে বা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক পণ্য বানাবেন না।’
সাংবাদিকরা এ সময় প্রশ্ন করেন- ছয় জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে নির্বাচন বিষয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়ার খবর, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রায় দুইশত বাংলাদেশির প্রতিবাদ লিপি দেওয়া এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কংগ্রেসম্যানদের চিঠি না পাওয়ার খবর বেরিয়েছে, এ বিষয়ে আপনার মত কি? এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি তো ইতিপূর্বে কংগ্রেসম্যানদের নামে ভুয়া চিঠিও প্রকাশ করেছিল। যেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে তারা চিঠি পায়নি, সেখানে কংগ্রেসম্যানদের চিঠির যথার্থতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে কংগ্রেসম্যানরা এ রকম চিঠি দিতেই পারে। শতশত কংগ্রেসম্যানের মধ্যে ৬ জন কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছে -এগুলো বাংলাদেশেই খবর হয়, অন্য কোনো দেশে খবর হয় না।’
এর আগে বিএসপি সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু এবং বিএসপির সাধারণ সম্পাদক জি এম কিবরিয়া তাদের বক্তৃতায় সংবাদপত্র পরিষদের পক্ষে নিউজপ্রিন্টের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা, বিগত অর্থ বছরগুলোর ক্রোড়পত্রের বকেয়া বিল পরিশোধ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে বিএসপি সদস্য অন্তর্ভুক্তি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান ব্যবস্থা কেন্দ্রীকরণসহ কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আর আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের অব্যয়িত কয়েক কোটি টাকা আমরা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছি, যাতে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারে। আর দেশে যখন এক-দেড়শ’ পত্রিকা ছিলো তখন বিজ্ঞাপন কেন্দ্রীয়ভাবে ছিল। এখন সাড়ে ১২শ’ পত্রিকা আর বিজ্ঞাপন এতো বেশি যে বাস্তবতার নিরিখে এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়।’
অনলাইন ডেস্ক :
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন।
আজ ১৪ আগস্ট সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসক ও গোয়েন্দা সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে বুকে ব্যথা অনুভব করলে ১৩ আগস্ট রবিবার বিকেলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
২০১৯ সাল থেকে কাশিমপুর কারাগারে আছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এর আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের ইন্দুরকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়। তিনি ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন ও পরে খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় স্থানান্তরিত হন। বাংলা, উর্দু, আরবি ও পাঞ্জাবি ভাষায় দক্ষ এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়ও তার দক্ষতা রয়েছে।
১৯৮০’র দশকের প্রথমদিকে সাঈদী দেশব্যাপী ইসলামী ওয়াজ-মাহফিল ও তাফসির করা শুরু করেন এবং তার সুন্দর বক্তব্যদানের জন্য দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এ সময়ই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনী জোট গঠন করে এবং তিনি এই নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিশেষ প্রতিনিধি :
একসময় রাজা-বাদশাহদের বাহন ছিল ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি। যুদ্ধক্ষেত্রেও তার ঘোড়া ব্যবহার করতো। যদিও এখন এই বাহন হিসেবে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি সেই আদিকাল থেকেই কৃষিকাজে ঘোড়ার ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে ঘোড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজে গরু-মহিষও ব্যবহার হতো। কৃষকরা গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ করতো। কিন্তু কালের বির্বতনে ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল আজ বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কৃষকরা পশু দিয়ে চাষাবাদ না করে উন্নতমানের যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে জমিতে হালচাষ করছেন। এতে কম খরচে স্বল্প সময়ে অধিক জমি চাষ করা সম্ভব।
যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে যখন গরু দিয়ে হালচাষ বিলুপ্তির পথে তখন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মো. হানিফ (৫০) নামের এক কৃষক।
দীর্ঘকাল ধরে রণক্ষেত্রের পাশাপাশি মালামাল ও মানুষ পরিবহনে ঘোড়া ব্যবহৃত হয়ে আসলেও কালের পরিক্রমায় তা আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করা এক বিরল ঘটনা এমনটাই বললেন স্থানীয়রা।
হানিফ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউপির উত্তর পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার বিকালে সরজমিন দেখা যায়, ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করছেন কৃষক হানিফ। হালচাষ দেখতে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়ান।
কৃষক হানিফ জানান, বর্তমান বাজারে এক জোড়া হালের গরুর দাম কমপক্ষে এক লাখ টাকা। সেই তুলনায় বর্তমান বাজারে গরুর চেয়ে ঘোড়ার দাম কম। কিছুদিন পূর্বে তিনি মাত্র ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ছোট সাইজের ঘোড়া কিনেছেন। এ ঘোড়া দুটি দিয়ে তিনি প্রতিদিন এক থেকে দেড় বিঘা জমি চাষ করছেন। তিনি নিজের জমি ছাড়াও গত ৩ বছর ধরে অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন।
তিনি আরো জানান, গরুর চেয়ে ঘোড়া হাঁটে-চলেও অনেক বেশি। ফলে গরুর হালের চেয়ে একই সময়ে ঘোড়া দিয়ে তিনগুণ বেশি জমি চাষ করা যায়। ঘোড়া দিয়ে তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে হালচাষ করতে পারেন। তিনি জমি চাষ করতে বিঘাপ্রতি ৬০০ টাকা করে নেন। এতে তার প্রতিমাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। ঘোড়া দুইটির খাদ্য বাবদ দৈনিক ১০০ টাকা করে খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পরিবারের ৫ সদস্যের খরচ চলে। এ ঘোড়ার হাল দিয়েই তিনি ঘোড়াচ্ছেন তার জীবিকার চাকা। ঘোড়ার হাল দিয়ে অন্যের জমি চাষ করে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই তিনি সংসারের চাহিদা পূরণ করছেন। হালচাষ বা জমিতে মই দিয়ে যা পেয়ে থাকেন তা দিয়েই সংসার ভালোভাবেই চলে।
কৃষক নুরুল আলম, হেলাল জানান, ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করলে মাটি গভীরভাবে খনন হয়। মই দেয়ার সময় জমির উঁচু-নিচুও ভালোভাবে সমান হয়। এতে জমিতে পানি সমানভাবে ধরে রাখা সহজতর হয়। একদিনে অনেক জমিতে হালচাষ করা যায়। ফলে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হয়। তাই এলাকায় হানিফের ঘোড়ার হালের বেশ চাহিদা রয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, কৃষকরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘোড়ার গাড়িও উঠে গেছে। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা দুর্লভ একটি বিষয়। এটা পারসেনট্রিনের মধ্যে পড়ে না। কৃষি বিভাগ আধুনিক মানের যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে।
স্টাফ রিপোর্টার :
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার অমর একুশে। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার ঘটনা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে যে সংগ্রামের সূচনা ঘটেছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চুড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ বিলিয়ে দেয় বাঙালি তরুণ প্রজন্ম। ইতিহাস বিদদের মতে, ভাষার প্রশ্নে একুশের আন্দোলন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রথম সম্মিলিত প্রতিবাদ। রক্তঝরা সে দিনটি তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে আত্ম অধিকার সচেতন করেছিল। সেখান থেকেই সমতা ভিত্তিক সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম দৃস্টান্ত এটি। মাতৃভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আন্দোলনের ৬৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরের রক্তে সিক্ত শোকের এ দিনটি এখন গৌরবের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই বরাবরের মতো এবারও অনন্য আয়োজনে দিনটি পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ফেব্রুয়ারির দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮ দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য সাধারণ অর্জন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার এত বছর পর আজও একুশের অম্লান চেতনা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দেশের সংবিধানে বাংলার স্বীকৃতি মিললেও সর্বস্তরে তা চালুর দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সরকার ক্ষমতাসীন থাকায় জাতি অনেকটা আশান্বিত। বিশেষ করে এ সরকারের আমলে বাংলাভাষা চর্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় আশাবাদী হয়েছে মানুষ।
আজ সরকারি ছুটির দিন।
সারাদেশে আজ দিনের শুরু হয়েছে শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বের দেশে দেশে নানা ভাষা, নানা বর্ণ, নানা সংস্কৃতির মানুষ আজ গাইছে একুশের অমর গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।