চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সার ৫ যাত্রী নিহত হয়েছে। আজ ২১ আগস্ট সোমবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জে কাভার্ড ভ্যান চাপায় ও সরাইল উপজেলায় বাস চাপায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৩ জন।
জানা যায়, সোমবার দুপুরে আশুগঞ্জে থেকে যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড় আসার পথে মহাসড়কের সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকামুখী একটি কাভার্ড ভ্যান (ঢাকা মেট্রো ম-২৭-৮২৩৭) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ওই সিএনজি চালিত অটোরিক্সাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন পুরুষসহ এক শিশু মারা যায়। এর মধ্যে আহত একজনকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মারা যায়। নিহতরা হলো জেলার সরাইল উপজেলার বড়ইবাড়ি গ্রামের ফরিদা মিয়ার ছেলে সিএনজি চালক মোঃ সোহেল মিয়া (২৭), একই গ্রামের নাজমুল মিয়ার ছেলে মোঃ জিলানী (৮), পানিশ্বর ইউনিয়নের শাখাইতি গ্রামের আছকর মিয়া (৬০) ও কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার মির্জাপুর গ্রামের মোঃ রশিদ মিয়ার ছেলে উজ্জল (৩৫)। এ ঘটনায় আরো ৩ যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, নিহত জিলানীর ছোট বোন দেড় বছর বয়সী তাইরিন, বাবা নাজমুল মিয়া ও মা শাহানা বেগম। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, সোমবার দুপুরে একই মহাসড়কে জেলার সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকায় বাস চাপায় সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রী আবু হানিফ (৬০) নিহত হয়েছে। তিনি আখাউড়া উপজেলার আব্দুল হাসেমের ছেলে। এ ঘটনায় আরো দুই যাত্রী আহত হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঢাকাগামী বাসটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সাটিকে চাপা দিলে অটোরিক্সার ৩ যাত্রী গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু হানিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, দুপুরে আশুগঞ্জে থেকে যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্স বিশ্বরোড আসার পথে মহাসড়কের সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকামুখী একটি কাভার্ড ভ্যান (ঢাকা মেট্রো ম-২৭-৮২৩৭) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ওই সিএনজি চালিত অটোরিক্সাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন পুরুষসহ এক শিশু মারা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। এর মধ্যে আহত একজনকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মারা যায়। এছাড়া সরাইলেও সড়ক দুর্ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সব ঘটনায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরাইল প্রতিনিধি :
সরাইলে খাদিজা বেগমের (৪৫) পরিবারের দুই ছেলে প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে আশেক মিয়া (২২) শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী। মেজ ছেলে লাদেন মিয়া (১৮) শারীরিক প্রতিবন্ধী। মিথ্যা মামলায় স্বামী দুলাল মিয়া (৫০) জেলখানায়। মেয়ে একটি নবম শ্রেণিতে পড়ে। বইখাতা ও বেতনের অভাবে লেখাপড়া বন্ধের পথে।
বড় ছেলে আশেক জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। কিছুটা চলাফেরা করতে পারলেও লাদেন ঘরের বাইরে যেতে পারে না। লাদেনের যখন আট বছর বয়স তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। সে সময় লাদেনের বাবা জমিজমা বিক্রি করে দেশের নামিদামি বহু হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও লাভ হয়নি। সেই থেকে লাদেনের হৃদয় যেন বেদনার বালুচর।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধূলা করা ছোট্ট লাদেন এখন হয়ে গেছেন প্রতিবন্ধী। তখন থেকে বাইরে বের হয়ে দিনের সূর্য আর রাতের চাঁদ কিছুই দেখা হয় না তার। ছোটবেলার ছোটাছুটি আর বন্ধুদের সঙ্গে মাতামাতি এখন কেবলই স্মৃতি। সবই বিধাতার খেলা। আশা ছেড়ে দিয়েছেন সুস্থ হওয়ারও। এখন আর চিকিৎসা করার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই। কোথায় পাবেন অত টাকা? কোথায় করাবেন চিকিৎসা? প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কোনোরকমে অর্ধাহার-অনাহারে চলে তাদের সংসার।
সকালে খেলে বিকালের খাবার থাকে না। ক্ষুধায় ছটফট করে কাটে সারারাত। তাদের শেষ সম্বল যেটি ছিল, সেই ভিটেবাড়িটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। অসুস্থ ছেলেমেয়েদের মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় খাদিজা আশ্রয় নিয়েছেন লাদেনের চাচার বাসায়।
এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী খাদিজার স্বামী ফেঁসে গেছেন মিথ্যা মামলায়। জেলখানায় রয়েছেন ছয় মাস ধরে। একদিকে দুই সন্তান অসুস্থ, মেয়ের পড়ার খরচ, স্বামী জেলখানায়। অন্যদিকে ২০১২ সাল থেকে বেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত খাদিজা। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। চারবার করিয়েছেন বেস্ট ক্যান্সারের অপারেশন। তাতেও সফল হয়নি। ক্যান্সারের জীবাণু ছড়িয়ে গেছে পুরো শরীরে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বেলা থাকতেও যেন আঁধার এসে গ্রাস করেছে তাকে। শুধু মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই তার।
উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে বৃহস্পতিবার সরেজমিন যান এ প্রতিবেদক। তার কাছে নিজের এ ভাগ্যবিড়ম্বনার কথা তুলে ধরেন মৃত্যুশয্যায় ক্যান্সারে আক্রান্ত খাদিজা। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই চান স্বামীর। জানান বাঁচার আকুতি। বাঁচাতে চান ছেলেমেয়েদেরও। দুই ছেলের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করতে চান। পড়াতে চান মেয়েকে। আর এ জন্য দেশবাসীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন তিনি। চাইছেন তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়াক। আর এ জন্য দিয়েছেন বিকাশ নম্বর। খাদিজার বিকাশ নম্বর ০১৭৭২২৯৪৬৮৪।
চলারপথে রিপোর্ট :
ওমরা হজ্ব করার ইচ্ছে পূরন হলোনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার নিজাম উদ্দিন সরকারের। গত সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার ভৈরব রেলওয়ে জংশনের আউটার পয়েন্টে মর্মান্তিক এক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। নিজাম উদ্দিন সরকার (৬৫) সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামে। ট্রেন দুর্ঘটনার সময় নিজাম উদ্দিন সরকারের সাথে তার পুত্রবধূ ফাতেমা বেগম (২৩) নাতনি তানহা বেগম (৪) এবং ১০ মাস বয়সী নাতি মুয়াস উদ্দিন ছিলো। তারা তিনজন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
গতকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর বরইছাড়া ঈদগাহ মাঠে নিজাম উদ্দিন সরকারের নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
গ্রামবাসী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওমরা হজ্ব করার ইচ্ছে পোষন করেছিলেন নিজাম উদ্দিন সরকার। ওমরার কাগজপত্র জমা দেয়া ও পুত্রবধূ ফাতেমাকে চিকিৎসা করানোর জন্য সোমবার সকাল ৯ টায় ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা দেন তিনি।
ভৈরব রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বেলা ১১টার সময় কালনী ট্রেনে করে তার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু স্টেশনে যেতে দেরি হওয়ায় ট্রেনটি মিস করেন তিনি। পরে দুপুর তিনটার সময় পুত্রবধূ ফাতেমা ও দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে ভৈরব রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে তিনি এগারো সিন্ধুর ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এদিকে রাতে বাবার মৃত্যুর খবর শুনে সৌদি আরব থেকে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি এসে পৌছান বড় ছেলে কাঞ্চন সরকার। নিজাম উদ্দিন সরকারের ছোট ছেলে আনিস সরকার সাংবাদিকদের জানান, তার বাবা ওমরা হজ্ব করার নিয়ত করেছিলেন। ওমরা করার জন্য কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য তিনি সোমবার সকাল ৯ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওয়ানা দেন। সন্ধ্যায় শুনে ট্রেন দুর্ঘটনায় বাবা মারা গেছেন। তিনি বলেন, বাবার আর ওমরা করা হলো না। মহান আল্লাহতায়ালা যেন বাবার ওমরা কবুল করেন।
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় সৈয়দ শফিকুল ইসলাম (৭৫) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন। আজ ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড মোড় খাজা গরীবে নেওয়াজ পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জেলা শহরের পশ্চিম মেড্ডা (শরিফপুর) এলাকার সৈয়দ মুরতাজ মোল্লার ছেলে।
জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম প্রতিদিনের ন্যায় জেলা শহর থেকে বিশ্বরোড মোড়ে তার ছেলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে বিশ্বরোড মোড় খাজা গরীবে নেওয়াজ পাম্পের সামনে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় পেছন থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস তাকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে বিশ্বরোড খাটিখাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ঘাতক মাইক্রোবাসটিকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বাদ এশা পরমানন্দপুর ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
এর আগে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ৩টায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, ‘বাবা দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে এক সপ্তাহ আগে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিলেন। শুক্রবার রাত ৩টা ২ মিনিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’
এর আগে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার প্রথম জানাযা শনিবার সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। পরে সড়কপথে মরদেহ সরাইল উপজেলা সদরে আনা হয়। শনিবার বাদ আসর সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ মাঠে। বাদ মাগরিব তৃতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় পরমানন্দপুর গ্রামে। শনিবার বাদ এশা পরমানন্দপুর ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
এ দিকে সরাইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জানাজায় অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার, সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, নাসিরনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. রাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা প্রমুখ। এ সময় সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলী আজাদ উপস্থিত ছিলেন। তবে জানাজায় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।
উকিল আব্দুস সাত্তারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার।
জানা যায়, আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলেন।
আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৭৯ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকার থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আবদুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে ২ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন এ নেতা। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে প্রায় এক মাস ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। কিন্তু নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের কাজ।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন। এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তন হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের মেঘনা নদীর অংশ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম করে মাসখানেক ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা অংশ থেকেও নিয়মিত বালু তোলা হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ছে উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের ওপর।
জানা গেছে, এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ভৈরব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোশারফ হোসেন মিন্টু ও সেখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন মুসা। যদিও বালু উত্তোলনের জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের অনুমতি নেই। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝখানে ও কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিন বসানো। এর প্রতিটি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একেকটি বাল্কহেড। প্রতিটি বোটে ১২/১৩ জন লোকের পাহারা। বেলা ১২টার দিকে দেখা গেল মেন্দিপুর এলাকার মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দেদারচ্ছে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্ডহেডের মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তারা নড়েচড়ে বসে। ছবি তুললে তাদের অনেককেই ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের পিছু নিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। তারা তাদের স্পিডবোট দিয়ে সাংবাদিকদের স্পিডবোটকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরক্ষণেই প্রভাবশালী মহলটি সাময়িক সময়ের জন্য বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ করে দেয়।
সরাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। আমাদের গ্রাম নদী গ্রাস করে নিচ্ছে।
প্রবীণ বাসিন্দা নিজাম মিয়া বলেন, আমার তিন কানি জমি ছিল। এর মধ্যে দুই কানি জমির মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। আমি ছাড়াও অন্যান্য মানুষের ফসলি জমিও চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জীবনটা বাঁচব।
আজব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কাজী লিয়াকত মিয়া বলেন, নদীটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করতাম। ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।
নদীর পাড়েই দু’তলা ভবনের মালিক জুনায়েদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভেঙে চলছে। মূলত অবাধে বালু তোলার কারণে সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন জানে আমাদের ভবন পানিতে চলে যায়। প্রভাবশালী চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আবুল বাশার বলেন, ‘ভৈরবের মুসা মিয়ার (মোশারফ হোসেন) নেতৃত্বে অনুমতি ছাড়াই এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টু মোবাইল ফোন বলেন, ‘বৈশাখ মাস পর্যন্ত আমি নদী ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করেছি। আমার সঙ্গে ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনও ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। এখন কে বা কারা বালু তুলছে জানি না। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ড্রেজারগুলো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বালু তোলে। আমার কাজের সময় ব্যবহার করা একই রকম ড্রেজার যদি তুলে থাকে তাহলে তো আমার কিছুর করার নেই। ’
এ বিষয়ে ভৈরবের আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুসার মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। মন্ত্রণালয় থেকেও এই বিষয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। শুনেছি কখনো তারা মেন্দিপুর আবার কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অংশে বালু তুলে। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও কাজ শেষ। বালু উত্তোলনকারীরা আসলে আমাদের কথা বলে সুবিধা নিতে চায়। যারা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা জয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমানের সঙ্গে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারিভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বর্তমানে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভাঙন রোধে সরাইল, পানিশ্বরসহ বিভিন্ন ভাঙনপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সম্ভাব্যতা প্রকল্পের কাজ চলছে। সম্ভাব্যতা প্রকল্পের সুপারিশের আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে ওই অঞ্চলগুলোতে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।