আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে পরীক্ষামূলক চলাচল চলতি মাসেই

আখাউড়া, আন্তর্জাতিক, 22 August 2023, 1088 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ ও ভারতের বহুল কাঙ্ক্ষিত আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল চলতি মাসেই হচ্ছে। আজ ২২ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আখাউড়-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) মো. আবু জাফর মিয়া গণমাধ্যম কর্মীদের এ কথা জানান।

এর আগে দুপুরে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মো. আবু জাফর মিয়ার নেতৃত্বে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দুদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গ্যাংকারযোগে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। সকালে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা হয়নি। তবে প্রথমবারের মতো গ্যাংকারযোগে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অংশের প্রকল্প পরিচালক মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, আমরা মূলত আজকে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প পরীক্ষামূলক ট্রায়াল করতে আসিনি। এ রেলপথ প্রকল্পের কাজটা দেখতে এসেছি, কাজটা কোন পর্যায়ে আছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯৫ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে এবং শেষপর্যায়ের কাজ চলছে বলে তার দাবি। চলতি মাসের মধ্যেই দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ আখাউড়া-আগরতলা বহুল কাঙ্ক্ষিত রেলপথ প্রকল্পে পরীক্ষামূলক ট্রায়াল রান করা হবে।

এ রেলপথ স্থাপনের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যবাসীও খুব উচ্ছ্বসিত। আর এর মধ্য দিয়ে দুদেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য জোরালো হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক ও ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকৌশলী ভাস্কর বকশী বলেন, মঙ্গলবার সকালে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত তা হয়নি। তবে প্রথমবারের মতো গ্যাংকারযোগে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের ট্রায়াল রান করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পটি আখাউড়া-ঢাকা হয়ে আগরতলা এবং কলকাতার মধ্যে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমিয়ে দেবে। প্রকল্পটি চালু হলে ৩১ ঘণ্টার পরিবর্তে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা এবং আগরতলা-কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে দূরত্ব কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫১৩ কিলোমিটার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে রেলপথে বাণিজ্যের দ্বার খুলবে, কমবে পরিবহণ খরচ- এমনটাই দাবি করছেন রেলপথ মন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প কাজ প্রথমে পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। পরে পরিদর্শন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। তারা দুজনই জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আখাউড়া থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। দুই দেশের এ রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার।

এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ কোটি টাকা।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

Leave a Reply

আখাউড়া ব্লাড ফাউন্ডেশন বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মিলনমেলা…

চলারপথে রিপোর্ট : রক্তদান হোক আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার, এই Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৯ জনের…

চলারপথে রিপোর্ট : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আব্দুল হাদিস নামের Read more

আশুগঞ্জে গাঁজাসহ দুই নারী আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস থেকে ৬ কেজি গাঁজাসহ Read more

অভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন বিএনপির: মির্জা…

অনলাইন ডেস্ক : ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যায়’ ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র দেশে Read more

অসামাজিক কাজের লিপ্ত থাকার অভিযোগে আটক…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজ বাড়িতে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার Read more

মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ছেন কেজরিওয়াল!

অনলাইন ডেস্ক : জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার দু’দিন পরই Read more

আমরা ছাপানো ভোটে নির্বাচিত হতে চাই…

চলারপথে রিপোর্ট : বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন Read more

টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবল তাজমহল

অনলাইন ডেস্ক : গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল Read more

মাজারে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে…

অনলাইন ডেস্ক : দেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থান ছাড়াও সুফি Read more

মহাপরিচালকসহ নন নার্সিং প্রশাসনের ক্যাডারদের অপসারণ…

চলারপথে রিপোর্ট : নার্সিং পেশা ও নার্সদের নিয়ে কটুক্তি করায় Read more

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়…

চলারপথে রিপোর্ট : জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস. Read more

শহীদ আবু সাঈদের কবরের পাশে জামিয়া…

গতকাল রংপুর শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন হেফাজতে ইসলাম Read more

পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে আখাউয়া স্থলবন্দর

আখাউড়া, আন্তর্জাতিক, 21 August 2024, 88 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে। পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে আখাউড়ায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়।

সকাল থেকে বন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। এর আগে গতকাল ২০ আগস্ট মঙ্গলবার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন।

দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন জানান, সকালে তীব্র বেগে ভারতীয় পাহাড়ি পানি ঢুকতে থাকে। এতে কয়েকটি গ্রামে পানি ওঠার পাশাপাশি আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু ভেঙে যায়। পুরো বন্দর এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

ইউএনও গাজালা পারভীন জানান, বেশ কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকাবাসী মিলে বাঁধের অংশ মেরামত করেছেন। সেতুটি মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে খবর দেওয়া হয়েছে। তবে, দ্রুত যান চলাচলের উপযোগী করা যাবে না।

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল ফিলিপাইন

আন্তর্জাতিক, 17 November 2023, 431 Views,

অনলাইন ডেস্ক:
ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। আজ ১৭ নভেম্বর শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (জিএফজেড) জানায়, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। এর গভীরতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বলছে, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল মধ্যাঞ্চলীয় বুরিয়াস শহরের ২৬ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠের ৭৮ কিলোমিটার গভীরে।

ফিলিপাইনের সিসমোলজি এজেন্সি জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। আর এটির আফটারশক ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

মোদির মন্ত্রিসভায় যারা শপথ নিতে পারেন

আন্তর্জাতিক, 9 June 2024, 133 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
তৃতীয়বারের মতো আজ শপথগ্রহণ করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সঙ্গে শপথ নেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। তবে মন্ত্রীদের নাম এখনো জানা যায়নি। সূত্রের বরাতে কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। যেখানে উঠে এসেছে অমিত শাহ, রাজনাথ সিংয়ের মতো নেতাদের নাম।

আজ ৯ জুন রবিবার শপথগ্রহণের আগে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, নিতিন গাড়কারি, নির্মলা সীতারমস, ড. এস জয়শঙ্কর, ধর্মেন্দ্র প্রধান, অশ্বীনি বৈষ্ণ ও পিযুষ গোয়াল। তারা সবাই মোদির সর্বশেষ ক্ষমতাকালে মন্ত্রী ছিলেন।বৈঠকে আরও ছিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা শিবরাজ সিং চৌহান, জোতিরাদিত্য শিন্ডিয়া, রাজিব রঞ্জন সিংসহ অন্যান্যরা।

এবার মোদির মন্ত্রিসভায় আগের থেকে অনেক পার্থক্য থাকবে। কারণ এখন মোদির বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই জোটের শরীকদের ওপর অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। দিতে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।

সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও সড়ক ও মহাসড়কমন্ত্রী নিতিন গাড়কারি নিজেদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেই থাকছেন। জয়শঙ্করই থাকতে পারেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী হিসেবে অভিষেক হতে পারে চিরাগ পাসওয়ান, জেডিএসের কুমারাস্বামী ও আপনা দলের অনুপ্রিয়া পাটেলের। বিজেপির অনেক দিনের মিত্র রিপাবলিকা পার্টি অব ইন্ডিয়ার প্রধান রামাদাস আথাওয়ালেও এবার মন্ত্রী হতে পারেন।

সোলায়মানের মরদেহ দেখতে পারার আকুতি বাবার

আখাউড়া, 23 February 2024, 387 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
জীবিকার তাগিদে তিন বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার দক্ষিণ ইউনিয়নের বীরচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল হকে ছেলে মো. সোলেমান মিয়া (২৪)। ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রিয়াদে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সোলায়মান। তার খোঁজ নিতে দু’দিন ধরে বাড়িতে লোকজন আসছেন।

ছবি হাতে বুক চাপড়াচ্ছেন মা। কখনো দু’হাত তুলে বিলাপ করছেন। ছেলের মরদেহ দেখতে পারার আকুতি বাবার কথায়। চোখের কোনে পানি জমা থাকা বাবার শঙ্কা মরদেহ আনতে যে টাকা লাগবে সেটা তিনি পাবেন কোথায়। বোনসহ স্বজনরাও সোলায়মানের শোকে কাতর।

স্থানীয় ও পরিবারের লোকজন জানানা, চার ভাই-বোনের মধ্যে সোলেমান দ্বিতীয়। বাবা দিনমজুর। এখন অসুস্থ। পরিবারের সুখের আমায় বছর তিনেক আগে সৌদিতে যায় সে। এ জন্য পরিবারের লোকজনকে অনেক টাকা ধারদেনা করতে হয়।

এদিকে দেশে আসবেন বলে প্রায় চার মাস আগে মোবাইল ফোনে বিয়ে করেন সোলেমান। এবারের রমজানের আগে বাড়িতে এসে বৌ ঘরে তোলার কথা। স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করতে না করতেই, হাতে মেহেদী না মুছতেই সোলেমান পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। সোলেমানের মৃত্যুতে পুরো পরিবার দিশেহারা।

কেননা, ধারদেনা করে তিন বছর আগে সৌদিতে যান তিনি। এখনো চার লাখ টাকা পাওনা পরিশোধের বাকি। এখন আবার তার মরদেহ আনতে টাকা লাগার খবরে পরিবারের লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
সোলেমানের মা ছেলের ছবি হাতে বারবার বিলাপ করছিলেন, ‘বাপ অসুস্থ দেইক্কা পুলারে মুবাইল ফোনে বিয়া করাইছি। রমজানের আগে বউরে বাড়িত আনলাম অইলে। অহন আমার সব শেষ। আমি পুলার লাশটা দেকতাম চাই। শুনছি লাশ আনতে টেহা লাগবো। এই টেহা আমি পামু কই। সরকার আমডারে সাহাইজ্জ করুক আমার পুতের লাশ দেশে আনার লইগা।

সোলায়মানের প্রতিবেশী ও দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আব্দুর রহিম জানান, পরিবারটি খুবই দরিদ্র। সোলেমানের টাকায় তাদের সংসার চলতো। বৃহস্পতিবার সকালে তার মৃত্যুর খবর আসে। সোলেমানের মরদেহ দেশে আনতে সরকার সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি।

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস

আন্তর্জাতিক, 1 June 2023, 667 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
অনলাইন ডেস্ক :
ইতিহাসের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক বিপর্যয় পেরিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার পথে আরো এক ধাপ এগিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানোর যে নির্দেশনা বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে— তাতেই মিলেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রী ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদের হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ করার নির্দেশনা দিয়েছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন থেকে ঋণের বিপরীতে আড়াই শতাংশ কম হারে সুদ কেটে রাখবে।

সামঞ্জস্য রক্ষা করতে অবশ্য সমপরিমাণ সুদের হার হ্রাস করা হয়েছে স্থায়ী আমানতের বিপরীতেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ১৩ শতাংশ সুদ দেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আগে এই হার ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিএসএল) জানিয়েছে, ২৫০টি বেসিস পয়েন্টে ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানো হয়েছে। মূলত জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সচল করতেই নেওয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।

অযৌক্তিক কর কাট-ছাঁট, অব্যবস্থাপনা, আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি ও করোনা মহামারির সময়কার অর্থনৈতিক স্থবিরতার জেরে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষ দিকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে শ্রীলঙ্কা। দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছে যায় ৭০ শতাংশে। ডলারের মজুত না থাকায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল সে সময়।

রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাই মূলত এজন্য দায়ী। জনগণের প্রবল বিক্ষোভে গত জুন মাসে রনিল বিক্রমাসিংহের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাজাপাকসে সরকার। সেই থেকে একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও অর্থমন্ত্রী উভয় পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন বিক্রমাসিংহে।

দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরিভিত্তিতে ২৯০ কোটি ডলার ঋণের (বেইল আউট ঋণ) আবেদন করে বিক্রমাসিংহের সরকার। দেশটির অর্থনীতির গতিবিধি যাচাই শেষে গত মার্চে সেই ঋণ মঞ্জুর করে আইএমএফ।

কলোম্বভিত্তিক এশিয়া সিকিউরিটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জীওয়া ফেরনান্দো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নিয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সম্ভবত চলমান এই অর্থনৈতিক সংকটের শেষ পর্যায়ে আছি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিবিএসএল’র গভর্ণর পি. নন্দলাল বীরাসিংহে রয়টার্সকে বলেন, ‘আসলে সংকট থেকে উত্তরণের ব্যাপারটি ধাপে ধাপে ঘটে। আমরা কেউই বলতে পারি না যে আগামী কাল কিংবা আজ থেকে এক বা দু’সপ্তাহের মধ্যে আমরা সব ঠিক করে ফেলতে পারব।’

‘তবে বর্তমানের যে পরিস্থিতি, তা বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি – শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সংকট থেকে উত্তরণের ধারাবাহিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে কিংবা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে।’