চলারপথে রিপোর্ট :
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার এক কলেজ ছাত্রীর সাথে ফেসবুকে প্রেমিক সেজে প্রতারণা করায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে জলঢাকা থানা পুলিশ।
থানা সূত্রে জানাযায়, ওই কলেজ ছাত্রীর ফেসবুক আইডির মাধ্যমে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর হাজিনগর ইউনিয়নের মোস্তফা কামালের ছেলে মোঃ সেন্টু রহমানের ফেসবুক আইডির সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রেমের সম্পর্কের এক পর্যায়ে সেন্টু রহমান কৌশলে বাদীনির একান্ত ব্যক্তিগত ছবি তার ফেসবুক আইডির ম্যাসেঞ্জারে নেয়। এরপর প্রেমিকরূপী সেন্টু রহমান সেই সব ছবির স্ক্রিন শর্ট নিয়ে তার বন্ধু একই জেলার বড়গ্রাম পরসা থানার ঘাটনগর এলাকার সাইদুল রহমানের ছেলে মোঃ সারোয়ার হোসেনকে দেয়। এর পর থেকে দুই বন্ধু মিলে এসব ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন সময় ওই কলেজ ছাত্রীকে ব্লাকমেইল করে টাকা দাবি করে। ভিকটিম টাকা দিতে অস্বীকার করায় সেন্টু রহমান এবং সারোয়ার হোসেন তার একান্ত ব্যক্তিগত ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ভিকটিম বিষয়টি জানার পর তাদের বিরুদ্ধে জলঢাকা থানায় এজাহার দায়ের করেন।
পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার প্রত্যন্ত এলাকায় শিবপুর বাজার থেকে ২৭ আগস্ট রবিবার বিকেলে গ্রেফতার করে। আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আজ ২৮ আগস্ট সোমবার বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান, থানা অফিসার ইনচার্জ মুক্তারুল আলম।
অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি প্রাইভেটকারে আগুন লেগেছে। আগুন লাগার পরই চালকসহ গাড়িতে থাকা দুই জন দ্রুত বেরিয়ে আসায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আজ ৭ মে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সোনারগাঁও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কর্মরত সার্জেন্ট মো. আশিকুর রহমান জানান, হঠাৎ একটি প্রাইভেটকারে আগুন জ্বলতে দেখি। এ সময় পথচারীদের চেষ্টায় আগুন নেভানো হয়। আগুন লাগার পর চালকসহ দুইজন দ্রুত নেমে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আগুন নেভানোর পর গাড়িটিকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান আশিকুর রহমান।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির (বিজিএফসিএল) আওতাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ২৪ নম্বর কূপ থেকে ফের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে ৷
একসময় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা এই কূপ থেকে আজ ৯ জুন শুক্রবার সকাল ১১টার পর দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. শোয়েব।
তিনি জানান, পরিত্যক্ত হওয়ার পর কূপটির ওয়ার্কওভার (সংস্কার) করে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ৷ ৪৫ দিনে ওয়ার্কওভার কাজ শেষ হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কূপটি খনন করেছিল চীনের কোম্পানি সিনো প্যাক।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘তিতাস-২৪নং কূপ থেকে আজ (শুক্রবার) হতে দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘বাপেক্সসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবিরাম প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ নিজস্ব জ্বালানি সক্ষমতায় আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।’
চলারপথে ডেস্ক :
বর্তমান সময়ের আলোচিত ব্যক্তিত্ব গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওইয়ান্না ইলাইহি রাজিউন)। জানা যায় ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রীসহ স্বজন ও দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। পরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি স্যারের জীবনের অবসান ঘটেছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। আমরা জানাজা-দাফনের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।’
জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সেনানী ও সংগঠন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজানে এক মুসলিম পরিবারে তার জন্ম । ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া মানুষটি ব্যক্তিগত যশখ্যাতি ও সমৃদ্ধির জীবনকে পেছনে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাটির টানে দেশে ফিরে এসে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি নিরব লড়াই চালিয়ে যান।
অন্যদিকে দেশে রাজনীতির সুস্থধারা ফিরিয়ে আনতেও নিজের অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলেছেন বার বার। আর এসব কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার অবদানের কথা অজানা ছিল তাদের কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলাদেশের জন্য অন্তপ্রাণ এই মানুষটির বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। রাজধানী ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছেন তিনি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে ভাস্কুলার সার্জারিতে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
জানা যায়, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর সেনানী ও সংগঠক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর লন্ডনে রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে এফআরসিএস পড়ার সময় শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ।
৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার প্রতিবাদে জনসম্মুখে পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলেন। তারপর বৃটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের’ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সংগ্রহ করেন ভারতীয় ভিসা।
দেশের টানে বিলেতের সুখ-সুবিধা ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে লন্ডন থেকে ভারতে এসে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন।
ভারত থেকে দেশে এসে যোগ দেন সম্মুখ সমরে। গেরিলা যোদ্ধা থেকে হয়ে উঠেন রণাঙ্গনের চিকিৎসক। যুদ্ধাহতদের জন্য খোলেন ফিল্ড হাসপাতাল।
মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ গড়তে নিজেকে নিয়োজিত করেন বৃটেনে প্রথম বাংলাদেশি সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ)’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়ে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, আমার পাশে আমার মা থাকবে না, সে দেশে থেকে লাভ আছে? আমার মা বাংলাদেশে ছিল, আমি বিলেতে ছিলাম। আমার মায়ের নির্দেশ ছিল দেশ রক্ষা করো। সে নির্দেশ মেনে আমরা তিন ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।
যুদ্ধে আহত মুক্তিকামী মানুষকে সেবা দিতে বন্ধু ডা. এমএ মবিনের সহায়তায় ডা. জাফরুল্লাহর গড়ে তোলা ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পেতেন যুদ্ধে আহতরা।
শুধু তাই নয়, তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন। যা দিয়ে তারা যুদ্ধে আহত রোগীদের সেবা করতেন। ত্রিপুরার ওই ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে অগণিত মুক্তিযোদ্ধা ফিরেছিলেন যুদ্ধের ময়দানে। তার এই অভূতপূর্ব সেবা পদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে বহনকারী যে হেলিকপ্টারটি হামলার শিকার হয়েছিল তাতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
চলারপথে রিপোর্ট :
প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে সুবর্না মুনতাহা রিজমি নামে এক কলেজশিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি মারধর ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে বখাটেরা। আজ ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত যুবক রিয়ান ও তার সহযোগীরা।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইশমারা এলাকার কাতার প্রবাসী মুরাদ হোসেনের মেয়ে। অভিযুক্ত রিয়ান দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালুহাজী সড়কের প্রবাসী শামীমের ছেলে। সে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পোশাক পড়ে প্রতারণার মাধ্যমে ক্লাস করতো বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মাস ধরে কলেজে আসা-যাওয়ার পথে রিজমিকে রিহান উত্যক্ত করতো। এরমধ্যে রিহান তাকে প্রেমের প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু রিজমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। একপর্যায়ে রিজমি তার পরিবারকে ঘটনাটি জানায়। এনিয়ে রিহানকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছেও বিচার দেয় রিজমির মা। তখন রিহানের মা জানিয়েছে, রিহান আর কখনো রিজমিকে উত্যক্ত করবে না। কিন্তু এরপরও রিহান তাকে উত্যক্ত করতো। প্রায়ই প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করতো। ঘটনার সময় ক্লাসের উদ্দেশে রিজমি বাড়ি থেকে কলেজে রওনা হয়। গাড়ি থেকে নেমে সামাদ স্কুল মোড় থেকে সে হেঁটেই কলেজ যাচ্ছিল। সে কলেজের গেইট পার হয়ে একটু সামনে আসলেই, রিয়ানরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে আক্রমণ শুরু করে। কিল-ঘুসি, ইট ও ছুরি দিয়ে মাথায় ও কপালে রক্তাক্ত জখম করে। তখন তার সঙ্গে আরও ১০-১২ জন ছিলো। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
কলেজছাত্রীর মা সুমি ভূঁইয়া বলেন, রিহান ও তার বন্ধুরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। কে বা কারা আমার মেয়েকে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে এনে ফেলে রেখে গেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহবুবুল করিম বলেন, ঘটনাটি কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটেছে। অভিযুক্ত রিয়ান আমাদের ছাত্র না। রিজমিকে দেখতে হাসপাতালে কলেজের পক্ষ থেকে কয়েকজন শিক্ষককে পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তথা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী-শিক্ষকদের নির্বাচনী দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
২২ নভেম্বর বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত দুটি চিঠি সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর বিধান অনুসরণ’ এবং ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদান’ সংক্রান্ত চিঠি দুটি পাঠানো হয়।
প্রথম চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি (২০২৪) অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও সম্পাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে এবং ওই দায়িত্ব পালনে কোনোরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন না করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছে।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ তথা সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত অফিস, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্য থেকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষককে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ ছাড়াও নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব প্রদান করা হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর বিধানাবলির প্রতি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে। ওই আইনের ৪ ধারায় নির্বাচন কর্মকর্তার চাকরি এবং ৫ ধারায় শৃঙ্খলামূলক বিধানাবলি বিধৃত রয়েছে।
‘নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষক বা যে কোনো ব্যক্তি নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ২(ঘ) ধারায় বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য হবেন এবং তিনি ওই দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নিকট দায়ী থাকবেন। এরূপ দায়িত্ব ও কর্তব্যে নিযুক্তির জন্য নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্র নাও থাকতে পারে। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পালনে অনীহা, অসহযোগিতা, শৈথিল্য, ভুল তথ্য প্রদান ইত্যাদির জন্য অসদাচরণের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা যাবে এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
চিঠিতে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ তথা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী-শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান সম্পর্কে সজাগ থেকে অর্পিত নির্বাচনী দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে যথাযথভাবে পালনের জন্য অনুরোধ করা হয়।
দ্বিতীয় চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা সবার জাতীয় দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা কামনা করেছে।
নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও সম্পাদনের জন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ তথা সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্য হতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগ করার প্রয়োজন হবে। সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্য হতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষককে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ ছাড়াও নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব প্রদান করা হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহ ভোটকেন্দ্র হিসেবে এবং প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা প্রয়োজন হবে।
‘নির্বাচন কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। অতীতেও তারা নির্বাচনের কাজে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা সহযোগিতা প্রদান করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৩ নং আইন) রয়েছে। এতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তিনি তার ওই নিয়োগের তারিখ থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব অব্যাহতি না পাওয়া পর্যন্ত তার চাকরির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রেষণে চাকরিরত আছেন বলে গণ্য হবেন। প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষেত্রমতে রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন এবং তিনি তার যাবতীয় আইনানুগ আদেশ বা নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকবেন। প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব প্রাধান্য পাবে।
এমতাবস্থায় সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রিটার্নিং অফিসারের যে কোনো নির্দেশ জরুরি ভিত্তিতে পালন করার নিশ্চয়তা বিধান করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৬ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ও অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদান সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সবার একটি আবশ্যিক পালনীয় দায়িত্ব। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৪৪ক অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নির্বাচনী সময়সূচি জারি হওয়ার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া ওই অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না।
চিঠিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো-
১. আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে অর্পিত দায়িত্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থা হতে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবিলম্বে নির্দেশ প্রদান।
২. শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিও অনুরূপ নির্দেশ জারি করা।
৩. নির্বাচন পরিচালনার কাজ অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ তথা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, প্রতিষ্ঠান, সংস্থাসমূহকে তাদের যে সমস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচনের কাজে জড়িত আছেন, নির্বাচনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছুটি প্রদান বা অন্যত্র বদলি করা অথবা নির্বাচনী দায়িত্ব ব্যাহত হতে পারে এমন কোনো দায়িত্ব প্রদান হতে বিরত থাকা।
চিঠিতে উল্লিখিত নির্দেশনা জারিসহ আনুষঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্ন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হয়।