কসবায় বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান

কসবা, 3 November 2023, 54 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
কসবায় অস্বচ্ছল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

খাড়েরা সবুজ সংঘের এ কার্যক্রমের আওতায় ২৬জন অস্বচ্ছল এসএসসি পরীক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি এবং ২৬ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের মাঝে মানবিক ভাতা কার্ড প্রদান করা হয়।

আজ ৩ নভেম্বর শুক্রবার সকালে খাড়েরা মোহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন।

সবুজ সংঘের সভাপতি বিশিষ্ট লেখক লোকমান হোসেন পলার সভাপতিত্বে এ কার্যক্রমের উদ্ধোধন করেন খাড়েরা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির।

বিশেষ অতিথি ছিলেন খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমেদ খান, বাদৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিপন আহমেদ ভূইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের পাঠাগার সম্পাদক এইচ. এম. সিরাজ, কসবা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের স্বপন, খাড়েরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মীর হেলাল উদ্দিন, খাড়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আবু হামজা ও খাড়েরা মোহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দুলাল মিয়া।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সংস্কৃতি ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মজিবুর রহমান খান, জোবায়ের মাহমুদ তপন, নুরুল আমিন, শিক্ষক নেতা নরুল ইসাম চৌধুরী ও আবদুল রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নারী-পুরুষ, সাংবাদিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাবেদ রহিম বিজন বলেন, সবুজ সংঘের মানবিক কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ কাজটি সমাজের সকলের দ্বারা হয়ে ওঠে না। লোকমান হোসেন পলা সবুজ সংঘের মাধ্যমে এ মানবিক কাজটি করছেন। তিনি সমাজের বিত্তবানদের এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সবুজ সংঘের সভাপতি লোকমান হোসেন পলা জানান, সবুজ সংঘের এ মানবিক কার্যক্রম ৩য় বৎসরে পদার্পন করেছে। অস্বচ্ছল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফর্ম ফিলাপের জন্য উপজেলার খাড়েরা ও বাদৈর ইউনিয়নের ৭টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি মাদ্রাসার ২৬জন শিক্ষার্থীকে ২ হাজার টাকা করে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া খাড়েরা ইউনিয়নের ২৬জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের মাঝে মানবিক ভাতা কার্ড প্রদান করা হয়। এই কার্ডধারীরা প্রত্যেক মাসের প্রথম শুক্রবার ৫ শত টাকা করে মানবিক ভাতা পাবেন। এদিকে সবুজ সংঘের উদ্যোগে রমজান মাসে ইফতার এবং ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহায় ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। তিনি জানান, এ কার্যক্রমে আমাদের এলাকার সমমনা বন্ধুরা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।

Leave a Reply

জমির নিবন্ধন কর এলাকাভেদে কমল কিছুটা

অনলাইন ডেস্ক : কয়েকটি ক্ষেত্রে জমি নিবন্ধনের খরচ আবার কিছুটা Read more

জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ১২ দিন প্রবেশ…

অনলাইন ডেস্ক : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ৪-১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত Read more

সারাদেশে অবৈধ প্রার্থী ৭৩১ জন, বৈধ…

অনলাইন ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারাদেশে Read more

মুরগীর আড়তে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “মায়ের দোয়া মোরগ সেন্টার” নামে একটি Read more

বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতেই হবে:…

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‌‘আমাদের নদী বাঁচাতেই Read more
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শরিকরা

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন আওয়ামী Read more

অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : কসবা থেকে অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে Read more

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে…

চলারপথে রিপোর্ট : আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে আজ Read more

শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার মনোন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময়…

চলারপথে রিপোর্ট : শিক্ষাবান্ধব-নিরাপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া অব্যাহত রাখতে শিক্ষকদের যার যার Read more

অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল বাজারের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে গড়ে Read more

সিঙ্গাপুরকে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফিফা Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ আশুগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির কমিটি…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ আশুগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সভা Read more

৩২ কিলোমিটার ডাবল লাইন রেলপথে বদলে যাবে সেবার মান

কসবা, 8 February 2023, 499 Views,

বিশেষ প্রতিনিধি :
অবেশেষে চালু হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থেকে মন্দবাগ ও কুমিল্লার শশীদল থেকে রাজাপুর পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল লাইন রেলপথ। এরই মধ্যে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডবল লাইন চালু হলে গুরুত্বপূর্ণ এ রেলপথে দ্বিগুণের বেশি গতিতে ট্রেন চলবে। সেই সঙ্গে নতুন ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সময় সাশ্রয়সহ যাত্রী সেবার মান বাড়বে।

আজ ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন।

আখাউড়া-লাকসাম ডবল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের প্রকল্প পরিচালক সুবক্ত গীন জানান, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথে ১৯০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ ও বিদ্যমান লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কুমিল্লা থেকে লাকসাম পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রেলপথের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবে কসবা রেলস্টেশনের কাজ ও সালদানদী রেলসেতুর কাজ সীমান্ত আইনের অজুহাতে বিএসএফের বাধাসহ নানা কারণে অবশিষ্ট কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। বর্তমানে এ রেলপথের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কসবার মন্দবাগ এলাকার আংশিক রেলপথ ও সালদা রেল ব্রিজের কাজ বিএসএফের বাধায় নির্মাণকাজ বিঘ্নিত হওয়ায় কুমিল্লা শশীদল থেকে মন্দভাগ পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার ক্রস ওভারের মাধ্যমে সিংগেল লাইনে ট্রেন চলাচল করবে।

তবে, এর সমাধান শীঘ্রই হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

তিনি আরো জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি কসবা থেকে মন্দবাগ এবং শশীদল থেকে রাজাপুর সেকশনে আরো ৩২ কিলোমিটার রেলপথ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ডাবল লাইন ট্রেন অপারেশন উদ্বোধন করা হবে। অবশিষ্ট ৩৩ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ লাইনের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।

কয়েকজন যাত্রী বলেন, আগে সিংগেল লাইন থাকাতে ট্রেনের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ডাবল লাইন চালু হলে ট্রেনের যাত্রীরা নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। সেবার মান বাড়বে। ট্রেনের সংখ্যা নতুন করে আরও দুটি বাড়ায়, তাহলে যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, এখন ডাবল লাইন হবে, এতে আমরা অনেক খুশি। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আগে আসা যাওয়া করতে অনেক কষ্ট হয়েছে, এখন তা হবে না। অবশিষ্ট যে কাজগুলো রয়েছে, তা দ্রুত শেষ করে ফেললে যাত্রীদের জন্য সুবিধা হবে।

মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমান মন্ডল বলেন, সিংগেল লাইনে গাড়ি সঠিক সময়ে চালানো অসুবিধা হতো। ডাবল হওয়াতে ট্রেন একদিকে আসবে আরেক দিকে যাবে। সেবার মানও বাড়বে। ফলে কোনো ধরনের দুর্ঘটনারও শঙ্কা থাকবে না।

আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্ত গীন বলেন, আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের লাইফ লাইন। এ পথ ডবল লাইন করার ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নতুন নতুন ট্রেনের সংযোজনসহ যাত্রাপথে অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে। ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করবেন। অবশিষ্ট রেলপথ চলতি বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

কসবায় চার মণ ভারতীয় গাঁজাসহ গ্রেফতার ৩

কসবা, 25 October 2023, 82 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় চার মণ ভারতীয় গাঁজাসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার ভোরে সৈয়দবাদ বাসস্ট্যান্ড অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

এসময় একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কসবা উপজেলার দেলী গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া (৩৮), পৌর এলাকার আড়াইবাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম (২৯) ও ফুলতলী গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া ওরফে মহারাজ (৩৬)।

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে গাঁজার একটি বড় চালান আসছে। পরে পুলিশ সৈয়দবাদ বাসস্ট্যান্ডে অভিযানে গেলে ভাই ভাই ট্রান্সপোর্টের (ঢাকা মেট্রো-ন ২০-৬১৫৩) বড় একটি কাভার্ড ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। পুলিশের সন্দেহ হলে ভ্যানের ভেতর তল্লাশির কথা বললে চালকসহ চোরাকারবারিরা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের তিনজনকেই আটক করে।

তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভ্যানের ভেতর নয়টি পাটের বস্তা ও তিনটি কালো বড় ট্রলি ব্যাগের ভেতরে থাকা ১৬০ কেজি গাঁজা জব্দ করে পুলিশ।

এ ঘটনায় আটকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

সাংবাদিক এইচ.এম. সিরাজ’র পিতার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কসবা, 31 December 2022, 500 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
আজ ১ জানুয়ারি’২৩ রোববার সাংবাদিক এইচ.এম. সিরাজ’র পিতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ মিয়ার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামস্থ নিজ বাড়িতে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।

গৃহিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রোববার বাদ ফজর মরহুমের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ, বাদ আসর মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মহফিল এবং তাবারুক বিতরণ। এসব কর্মসূচিতে মরহুমের আত্মীয়-পরিজন, শুভানুধ্যায়ী এবং স্থানীয়দের সবান্ধব অংশগ্রহণ একান্তভাবে কামনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কসবার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের প্রাক্তন রেশন ডিলার, গোপীনাথপুর শহীদ বাবুল উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য, বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ মিয়া বিগত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ৯৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ মিয়ার দ্বিতীয় পুত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের গ্রন্থাগার সম্পাদক, দৈনিক প্রজাবন্ধু’র নির্বাহী সম্পাদক ও দৈনিক শেয়ার বিজ’র জেলা প্রতিনিধি, শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, কবি ও লেখক এইচ.এম. সিরাজ তার পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকল মহলের নিকট দোয়া কামনা করেছেন।

আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী: আইনমন্ত্রী

কসবা, জাতীয়, 6 January 2023, 970 Views,

স্টাফ রিপোর্টার:
স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষতি হয় বর্তমান সরকার এমন কিছু করেনি বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেছেন, এই আইন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণের জন্য নয়। সাইবার ক্রাইমকে আইনের আওতায় আনার জন্য করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কসবা প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন আনিসুল হক। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাবেদ রহিম বিজন।
আলোচনা সভায় মন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাসী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আমরা স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা কখনো চাইনা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব হোক। জামিনের বিষয়ে সরকার নিম্ন আদালতে হস্তক্ষেপ করেছে, বিরোধী দলগুলোর এমন অভিযোগ সাংবাদিকেরা আইনমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ঠিক নয়। সরকার আদালতে হস্তক্ষেপ করে না। নিম্ন আদালতে বেল (জামিন) না পেলে মহানগর দায়রা আদালতে যাবে। তা ছাড়া ওখানে না হলে হাইকোর্টে যাবে, এটাই নিয়ম।
তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। কিন্তু আইনমন্ত্রীর সাফ কথা, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সংবিধান অনুযায়ী যে সময় উল্লেখ আছে, সেই সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানে যা নাই, তা হবে না। কেয়ারটেকার সংবিধান নেই, তা অবৈধ। সবাই নির্বাচনে আসেন। জনগণ যাকে চায়, তাকে ভোট দেবে। নেত্রী শেখ হাসিনার কারণে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, পরিষ্কার পানি ঘোলা করবেন না।
কসবা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওছার ভূঁইয়া, কসবা পৌরসভার মেয়র গোলাম হাক্কানী, সাবেক মেয়র এমরান উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ, কসবা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক ভূঁইয়া, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, কসবা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগ আহ্বায়ক আফজাল হোসেন।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 2918 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।