আজ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস

জাতীয়, 14 December 2023, 852 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
মহান বিজয়ের ৫২তম বছরের আর এক দিন। এর পরই বাঙালি মেতে উঠবে বাঁধভাঙা উল্লাসে। কিন্তু এই উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে এক রক্তের ইতিহাস।

banner

মৃত্যু, সম্ভ্রমহানি, নির্যাতন, কান্না, ক্ষুধা, ঘরবাড়ি হারানো, শস্যের পোড়া খেত-মুষড়ে পড়া একটা কালের স্মৃতি। ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিকালের একটি ক্ষত বুকের গহিনে আজও হানা দিয়ে যায়।

বিজয়ের ঠিক মাহেন্দ্রক্ষণের আগে জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আজ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের মানুষের বেদনাবিধুর দিন।

১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

এ মাটির প্রিয় সেসব সন্তানের লাশের গন্ধ যেন আজও বাতাসে ভাসে। সন্তানহারা মা, স্বামীহারা স্ত্রী, পিতৃহারা সন্তানের করুণ হৃদয়ের কান্না আর রক্তক্ষরণ কেনোদিনও থামার নয়।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলার মানুষের ওপর পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। নির্বিচারে বাঙালি হত্যা, মাইলের পর মাইল ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ভৌত অবকাঠামো ধ্বংস করা, নারীদের সম্ভ্রমহানি-সবকিছুই করেছে তারা। কিন্তু বাঙালির রণকৌশলের কাছে তারা টিকতে পারছিল না।

তাই বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনে মাঠে নামে।

রাতের অন্ধকারে বাসা অথবা কর্মস্থল থেকে শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে তারা হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করা।

দেশের নানা জায়গায় হত্যাযজ্ঞ চললেও মূল হত্যাযজ্ঞ চলে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রাখা হয়।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরপরই বুদ্ধিজীবীদের নিকটাত্মীয়রা বধ্যভূমিতে অনেকের লাশ খুঁজে পান। তাদের নিথর দেহজুড়েই ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা।

কারও কারও শরীরে একাধিক গুলিও ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে অনেককে হত্যা করা হয়েছিল। ক্ষতচিহ্নের কারণে অনেকের লাশ তাদের প্রিয়জনরা শনাক্তও করতে পারেননি।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডা. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমদ, খোন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সৈয়দ নাজমুল হক, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ড. আবদুল খায়ের, ড. সিরাজুল হক খান, ড. ফয়জল মহী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, কবি মেহেরুন্নেসা, গিয়াস উদ্দীন আহমদ প্রমুখ।

Leave a Reply

অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর রোডে নান্দুরা Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর Read more

আশুগঞ্জে ৮৭ কেজি গাঁজাসহ একজন আটক

চলারপথে রিপোর্ট : ৮৭ কেজি গাঁজাসহ আশরাফুল (২১) নামে এক Read more

আখাউড়ায় স্ত্রীর অভিযোগে মাদকাসক্ত স্বামীর কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগে মাদকাসক্ত Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রির দায়ে…

চলারপথে রিপোর্ট : মাত্র সাড়ে ৭ টাকার ইনজেকশন প্রায় ৫০ Read more

এশিয়ান কাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক : মিয়ানমারকে হারিয়ে চমক দেখানোর পর বাংলাদেশ নারী Read more

কোটি টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ

চলারপথে রিপোর্ট : ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বীজ, সার ও গাছের চারা…

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে সরাইল Read more

ইখলাস মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান : ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর Read more

প্রাথমিক তদন্তেই ভুয়া মামলার আসামিরা রেহাই…

অনলাইন ডেস্ক : উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন Read more

গাজীপুরে শফিক, তারিক, পাপনের ১০ তলা…

জায়েদুল কবির ভাঙ্গি, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর : গাজীপুর সদরের চান্দনা Read more

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ…

অনলাইন ডেস্ক : বরগুনার পাথরঘাটায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা Read more

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ দুই নারীর মৃত্যু

জাতীয়, 14 January 2024, 755 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধদের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দগ্ধ অবস্থায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ ১৪ জানুয়ারি রবিবার সকালে রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসরিন বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নাসরিন বেগম রংপুর নগরের তাজহাট এলাকার বাসিন্দা।

banner

এর আগের দিন শনিবার সকালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০) সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি উপজেলার গোয়ালু গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের স্ত্রী। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিট এবং সার্জারি, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে ৪২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, কনকনে শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে ৪৪ জন দগ্ধ রোগীর মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুরসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে এসব দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে অগ্নিদগ্ধ দুজন রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামান।

বিভীষিকার সেই কালরাত আজ

জাতীয়, 24 March 2023, 1482 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সময় থমকে গিয়েছিল এ বাংলার বুকে। তার পাতায় পড়েছিল কালিমার ছাপ। আর পৃথিবী নীরব চোখে দেখেছিল এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।

banner

মেশিনগানের গুলিতে মারা হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালিদের। বাদ যায়নি বৃদ্ধ-বয়স্ক-জোয়ান-কিশোর-শিশু কেউ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘরবাড়ি। আজ সেই বিভীষকার ২৫ মার্চের কালরাত।

পাকিস্তানি সামরিক জান্তার আগ্রাসনে বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর কালো আঁধার। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ১৯৭১ সালের এদিন রাত ১০টা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দেশব্যাপী পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিলেন। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় মৃত্যুর নগরীতে পরিণত করেছিলেন ঢাকা শহরকে।

বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের কাজ চলছে।

১৯৭১ সালের এ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশলাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ এবং অগ্নিসংযোগ। এ রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শুত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। এ রাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রণোদনা জোগায়।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ রাতে শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।

রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বর্বর হানাদার বাহিনী।

মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক ও সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হানাদারর চলার পথে রাস্তার দুপাশে গুলি ছুড়ে মারে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই।

ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি, আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এ হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।

এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখন্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।

রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যূহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় সেনানিবাসে। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটক রাখা হয়।

২৫ মার্চের পরদিন সকালে লুকিয়ে জগন্নাথ হলের হত্যাযজ্ঞের কিছু আলোকচিত্র ও ভিডিও ধারণ করেছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. নূরুল উলা। ১৯৭২ সালে বাংলার বাণী পত্রিকার এক বিশেষ সংখ্যায় ‘জগন্নাথ হলের মাঠে’ শীর্ষক লেখায় তিনি লিখেন, ‘২৬ মার্চ সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে ক্যামেরা চালু করি। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম, জগন্নাথ হলের সামনেই মাঠে কিছু ছেলেকে ধরে বাইরে আনা হচ্ছে এবং তাদের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। তখনই আমার সন্দেহ হয় এবং আমি ক্যামেরা অন করি। দেখলাম একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক রয়েছে। সে বসে পড়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে। তার দাড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল যে সে মুসলমান। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী তার কোনো কথাই শুনতে চায়নি। তাকে গুলি করে মারা হলো। মাঠের পূর্ব পাশে পাকিস্তানি বাহিনী একটা তাঁবু বানিয়ে ছাউনি করেছিল। সেখানে দেখছিলাম, ওরা চেয়ারে বসে বেশ কয়েকজন চা খাচ্ছে আর হাসি-তামাশা ও আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ছে। যাদের আমার চোখের সামনে মারা হয়েছে ও যাদের মারার ছবি আমার ক্যামেরায় রয়েছে, তাদের দিয়ে প্রথমে হলের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছিল। মৃতদেহগুলো এনে সব এক জায়গায় জমা করা হচ্ছিল এবং ওদের দিয়ে লেবারের কাজ করানোর পর আবার ওদেরই লাইনে দাঁড় করিয়ে এক সারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার মনে হয়, প্রায় ৭০-৮০ জনের মৃতদেহ এক জায়গায় জমা করা হয়েছিল।

শহিদ জননী জাহানার ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে কালরাত নিয়ে ২৬ মার্চের লেখার এক জায়গায় লিখেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রচন্ড যুদ্ধের পর বাঙালি পুলিশরা বেশিরভাগ প্রাণ দিয়েছে। অল্প কয়েকজন পালাতে পেরেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন পাকসেনার গুলিতে ঝাঁজরা। পাক আর্মি ‘দ্য পিপল’ অফিস পুড়িয়েছে, পুড়িয়েছে ইত্তেফাক অফিস। ঢাকায় যত বাজার আছে, বস্তি আছে, সব জায়গা আগুনে পুড়ে ছাই-ছাই হয়েছে রায়েরবাজার, ঠাটারি বাজার, নয়াবাজার, শাঁখারি পট্টি।’

‘মানুষ বন্ধক’ রেখে ইয়াবা ব্যবসা, গ্রেফতার ২

জাতীয়, 17 May 2023, 1466 Views,

চলারপথে ডেস্ক :
‘মানুষ বন্ধক’ রেখে বাংলাদেশে ইয়াবা আনার মূলহোতা ও এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

banner

গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

তারা হলেন- টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাজমপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাকির আহমেদ জকির ও তার সহযোগী একই এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল।

র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি জসিম নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলার নির্যাতন করে। পরে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়।

ওই ভিডিওতে জসিম জানান, টেকনাফ হাজমপাড়ার বাসিন্দা জকির নামে এক মাদক কারবারি তাকে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারের কাছে বন্ধক রাখে। পরে ২৫ লাখ টাকার ইয়াবা নিয়ে আসে। ইয়াবার টাকা পরিশোধ না করায় জসিমকে শারীরিক নির্যাতন করে ডিলাররা। ভিডিও প্রকাশের পরেই মাদক কারবারিরা আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি র্যাবের নজরে আসার পর র‌্যাব-১৫ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ একটি দল অভিযান অব্যাহত রাখে।

তিনি আরও জানান, একটি সূত্র ধরে র‌্যাব জানতে পারে জাকির হোসেন জকির মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে সাগরপথে মহেশখালী হয়ে চৌফলদণ্ড ঘাটে আসবে। তারপর ঈদগাঁওতে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেবে। র‌্যাব মঙ্গলবার রাতে আল মাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার মসজিদের সামনে অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা থেকে নেমে দুজন লোক কৌশলে পালানোর চেষ্টা করে। র্যাব তাদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪০ হাজার ইয়াবা। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিচয় মেলে।

আবু সালাম চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জকির জানায় সে টেকনাফ ও উখিয়া থানা এলাকার ‘ইয়াবা গডফাদার’। তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোককে সীমান্তবর্তী মিয়ানমার এলাকায় বন্ধক রেখে ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে আসে। জকিরের নামে টেকনাফে থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। দুজনের নামে মামলা করে তাদের কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী : ভূমি অধিগ্রহণে অন্যায্য ক্ষতিপূরণ বন্ধের নির্দেশ

জাতীয়, 5 September 2023, 993 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে অন্যায্য ক্ষতিপূরণের পথ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকল্প হওয়ার খবরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ করে অন্যায্য ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। এ ধরনের অপচেষ্টা রোধে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রকল্প এলাকার ছবি তুলে রাখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।

banner

আজ ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা এবং একনেকের অন্যান্য প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ব্যয় হয় এ খাতে। এর মধ্যে আবার ভূমি মালিকদের কেউ কেউ বেশি ক্ষতিপূরণের লোভে প্রকল্প এলাকায় রাতারাতি বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে দুর্বলতা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। নড়াইলে কালিয়া সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর নকশায় ভুল ধরা পড়ে। সেতুর নিচ দিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে না। জনগণের টাকা গেল, সময় নষ্ট হলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রকল্প নির্মাণ শুরুর আগেই সঠিক নকশা করতে হবে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হওয়া সেতুটির জন্য নতুন করে আরও ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছে একনেক। প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৭৫ কোটি টাকা। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে। এখন ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর অন্য নির্দেশনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল নির্মাণে যথাযথ উচ্চতা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে প্যানেলের নিচে জায়গা থেকে যেখানে পর্যাপ্ত পানি ও বাতাস চলাচল করতে পারে। ফসল ফলানো যায়।

অসমাপ্ত প্রকল্প উদ্বোধন এবং নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাচনী ভাবনা রয়েছে কিনা– সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখন যেসব প্রকল্প চালু হয়েছে, সেগুলো ছয় মাস-এক বছর আগের প্রকল্প। প্রকল্পের যে অংশ ব্যবহার উপযোগী হয়েছে, সে অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষ ব্যবহার করে খুশি।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক। ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। সরকার এটি চাইলে দোষের কিছু নয়। তবে নির্বাচন সামনে রেখে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এখন যেসব প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে, এগুলো আরও আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল।

একনেকে বিভিন্ন খাতের মোট ১৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০টি নতুন, বাকি সাতটি চলমান প্রকল্পের সংশোধনী। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নামমাত্র ১৪ কোটি এবং বাকি ১০ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব জোগান। এ ছাড়া দুটি প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে এক বছর করে। নতুন করে ব্যয় বাড়ানো হয়নি।

অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণসহ পুবাইল ধীরাশ্রম রেল লিঙ্ক নির্মাণে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটির সম্পূর্ণ অর্থই সরকারের নিজস্ব জোগান থেকে দেওয়া হচ্ছে। আগামী অক্টোবরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের অক্টোবরে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের এ প্রকল্প ২০২৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদিত তৃতীয় সর্বোচ্চ বড় ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রকল্পে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এ প্রকল্পও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের। আগামী মাসে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী

জাতীয়, 24 May 2025, 205 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি ছিলেন একাধারে প্রেমিক ও বিদ্রোহী। উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত আর দর্শনেও নজরুলের অনবদ্য উপস্থিতি বর্ণাঢ্য করেছে বাংলা সাহিত্যকে। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (ইংরেজি সাল অনুযায়ী ২৪ মে, ১৮৯৯ সাল) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও। এরই মাঝে তৎকালীন প্রভাবশালী কবি-সাহিত্যিকদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা।

banner

বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।

কাজী নজরুল ইসলাম চিরপ্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কয়জন আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সর্ম্পককে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পড়তে পারেন?

১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।