জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ‘গাজা প্রস্তাব’ পাস

আন্তর্জাতিক, 23 December 2023, 860 Views,

চলারপথে ডেস্ক :
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা প্রস্তাব পাশ হয়েছে। গাজা উপত্যকায় আরও অধিক মানবিক সহায়তা পাঠানোর এ প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাশ হয়েছে। খবর আলজাজিরা।

banner

২২ ডিসেম্বর শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। প্রস্তাবটির খসড়ায় গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতির কথা থাকায় এতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পরে যুদ্ধবিরতির কথা বাদ দিয়ে শুধু মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এক সপ্তাহ ধরে ঝুলে থাকা প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত পাশ হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি বন্ধে এতে কোনো আলোচনা করা হয়নি।

নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ দেশের মধ্যে ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও; যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য রাশিয়া বলেছে, এই প্রস্তাব একটি ‘দন্তহীন’ ও ‘অক্ষম’ প্রস্তাব।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভাসিলি নিবানজিয়া বলেছেন, এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে বলা হয়নি। এর বদলে এটির মাধ্যমে ‘মুক্তহস্তে’ ইসরাইলকে তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

গাজায় ইসরাইলের হামলায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা পৃথিবীর নরক বলে মন্তব্য করেছেন।

Leave a Reply

অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর রোডে নান্দুরা Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর Read more

আশুগঞ্জে ৮৭ কেজি গাঁজাসহ একজন আটক

চলারপথে রিপোর্ট : ৮৭ কেজি গাঁজাসহ আশরাফুল (২১) নামে এক Read more

আখাউড়ায় স্ত্রীর অভিযোগে মাদকাসক্ত স্বামীর কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগে মাদকাসক্ত Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রির দায়ে…

চলারপথে রিপোর্ট : মাত্র সাড়ে ৭ টাকার ইনজেকশন প্রায় ৫০ Read more

এশিয়ান কাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক : মিয়ানমারকে হারিয়ে চমক দেখানোর পর বাংলাদেশ নারী Read more

কোটি টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ

চলারপথে রিপোর্ট : ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বীজ, সার ও গাছের চারা…

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে সরাইল Read more

ইখলাস মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান : ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর Read more

প্রাথমিক তদন্তেই ভুয়া মামলার আসামিরা রেহাই…

অনলাইন ডেস্ক : উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন Read more

গাজীপুরে শফিক, তারিক, পাপনের ১০ তলা…

জায়েদুল কবির ভাঙ্গি, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর : গাজীপুর সদরের চান্দনা Read more

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ…

অনলাইন ডেস্ক : বরগুনার পাথরঘাটায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা Read more

‘বিয়ে হচ্ছে না, পাত্রী খুঁজে দেন’, সরকারি ক্যাম্পে যুবকের আর্জি

আন্তর্জাতিক, বিনোদন, 8 July 2024, 996 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
জনসেবার জন্য সরকারি ক্যাম্প, সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন। নিজেদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে হাজির সবাই। বসে রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। সমস্যা শুনে তা সমাধানের আশ্বাসও দিচ্ছেন। সেই ক্যাম্পে হাজির এক যুবক। পেশায় তিনি কৃষক। কিন্তু কর্মকর্তাদের কাছে যে সমস্যার কথা তিনি বলেন, তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়!

banner

কী চেয়েছিলেন যুবক? তার দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে একা। তাকে বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজে দিতে হবে। তা শুনে কার্যত হেঁসে লুটোপুটি খাওয়ার জোগাড় সরকারি কর্তাদের। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কর্ণাটকে।

জানা যায়, রাজ্যের কোপ্পাল জেলায় ‘জনস্পন্দন’ নামে একটি সরকারি ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল প্রশাসন। জনগণের অভাব-অভিযোগ শুনছিলেন কর্মকর্তারা এবং যথাসম্ভব সমাধানও করা হচ্ছিল।

সেখানেই সঙ্গপ্পা নামে ওই কৃষক তার জন্য পাত্রী খুঁজে দেওয়ার আবেদন জানান। জেলা কমিশনার নলিনী অতুলের কাছে গিয়ে তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে পাত্রী খুঁজছি। কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না। কেউ আমাকে পাত্রী দিতে রাজি নয়। এতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি। স্যার, পাত্রী খুঁজে দেন!

এলাকার অন্যসব বাসিন্দা যখন পানির অভাব, রাস্তা ঠিক করার দাবি জানাচ্ছিলেন; সেখানে ওই যুবকের এ ধরনের দাবি শুনে প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে যান সরকারি কর্মকর্তারা। উত্তর কী দেবেন বুঝতে না পেরে মাথা চুলকাতে থাকেন তারা।

সঙ্গপ্পাকে প্রাথমিকভাবে বোঝানো গেলেও তার পাত্রী খোঁজার আবেদনের কী হবে, এখনো ভাবছেন কর্তারা।

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস

আন্তর্জাতিক, 1 June 2023, 1117 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
অনলাইন ডেস্ক :
ইতিহাসের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক বিপর্যয় পেরিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার পথে আরো এক ধাপ এগিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানোর যে নির্দেশনা বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে— তাতেই মিলেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস।

banner

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রী ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদের হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ করার নির্দেশনা দিয়েছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন থেকে ঋণের বিপরীতে আড়াই শতাংশ কম হারে সুদ কেটে রাখবে।

সামঞ্জস্য রক্ষা করতে অবশ্য সমপরিমাণ সুদের হার হ্রাস করা হয়েছে স্থায়ী আমানতের বিপরীতেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ১৩ শতাংশ সুদ দেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আগে এই হার ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিএসএল) জানিয়েছে, ২৫০টি বেসিস পয়েন্টে ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানো হয়েছে। মূলত জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সচল করতেই নেওয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।

অযৌক্তিক কর কাট-ছাঁট, অব্যবস্থাপনা, আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি ও করোনা মহামারির সময়কার অর্থনৈতিক স্থবিরতার জেরে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষ দিকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে শ্রীলঙ্কা। দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছে যায় ৭০ শতাংশে। ডলারের মজুত না থাকায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল সে সময়।

রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাই মূলত এজন্য দায়ী। জনগণের প্রবল বিক্ষোভে গত জুন মাসে রনিল বিক্রমাসিংহের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাজাপাকসে সরকার। সেই থেকে একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও অর্থমন্ত্রী উভয় পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন বিক্রমাসিংহে।

দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরিভিত্তিতে ২৯০ কোটি ডলার ঋণের (বেইল আউট ঋণ) আবেদন করে বিক্রমাসিংহের সরকার। দেশটির অর্থনীতির গতিবিধি যাচাই শেষে গত মার্চে সেই ঋণ মঞ্জুর করে আইএমএফ।

কলোম্বভিত্তিক এশিয়া সিকিউরিটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জীওয়া ফেরনান্দো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নিয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সম্ভবত চলমান এই অর্থনৈতিক সংকটের শেষ পর্যায়ে আছি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিবিএসএল’র গভর্ণর পি. নন্দলাল বীরাসিংহে রয়টার্সকে বলেন, ‘আসলে সংকট থেকে উত্তরণের ব্যাপারটি ধাপে ধাপে ঘটে। আমরা কেউই বলতে পারি না যে আগামী কাল কিংবা আজ থেকে এক বা দু’সপ্তাহের মধ্যে আমরা সব ঠিক করে ফেলতে পারব।’

‘তবে বর্তমানের যে পরিস্থিতি, তা বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি – শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সংকট থেকে উত্তরণের ধারাবাহিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে কিংবা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে।’

আবার চলতে শুরু করল করমণ্ডল এক্সপ্রেস, তদন্ত ধামাচাপার অভিযোগ মমতার

আন্তর্জাতিক, 7 June 2023, 1153 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের উড়িষ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার প্রায় ১১৬ ঘণ্টা পর ফের ট্র্যাকে ফিরল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। আজ ৭ জুন বুধবার কলকাতার শালিমার স্টেশন থেকে ফের যাত্রা শুরু করল যাত্রীতে পরিপূর্ণ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। নির্দিষ্ট সময় দুপুর ৩টা ২০ মিনিট থেকে ৬ মিনিট দেরিতে এদিন শালিমার স্টেশন থেকে রওনা দেয় চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে।

banner

ভারতের তিন দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর প্রথমবার ট্র্যাকে ফেরা করমণ্ডল সফরে আতঙ্কই যেন ছিল যাত্রীদের সঙ্গী। যাত্রীদের মধ্যেও চলে শুক্রবারের বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা। তা সত্ত্বেও যেতে হবেই, বলছেন যাত্রীদের অনেকে। তা প্রিয়জনকে বিদায় জানিয়ে ঈশ্বরকে স্মরণ করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন যাত্রীরা। ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে দুর্ঘটনার পর প্রথম যাত্রায় ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

উদ্বেগের মধ্যেই ট্রেনটি ছাড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সাঁতরাগাছি পৌঁছনোর পর এসি বিকল হয়ে যায় ট্রেনের তাপানুকুল কামরার। সাঁতরাগাছিতে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। দমবন্ধ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যাত্রীরা। এরপর দ্রুতগতিতে মেরামত কাজ শুরু করে রেল। বি–১ এবং বি–২ কোচে এসি চালু হলেও বি–৩ কোচে ফের এসি বিভ্রাট দেখা দেয়। তবে প্রায় ৩০ মিনিট পরে অবশ্য ঠিক হয়ে যায় সেটিও।

এদিকে বুধবার ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতদের পরিবারের হাতে চেক বিতরণের পর নেতাজি সুভাষ ইনডোর স্টেডিয়ামের এক অনুষ্ঠানে বিস্ফোরক দাবি করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ‘সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। ট্রেন দুর্ঘটনার সত্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যাঁরা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাঁরা এঁদের কাছে কৈফিয়ত চান। সত্য সামনে আসুক। কেন দুর্ঘটনা হল? কেন এতজন মারা গেলেন? বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। সিবিআই কী করবে? ক্রিমিনাল কেস হলে সিবিআই করবে। পুলওয়ামা দেখেননি? তৎকালীন রাজ্যপাল তো বলেই দিয়েছেন।’ একইসঙ্গে করমণ্ডল-বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ১০০ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন মমতা। পাশাপাশি যারা এ দুর্ঘটনায় দায়ী তাঁদের কঠোর শাস্তির দাবিও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

কানাডাকে উড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাপুটে জয়

আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, 2 June 2024, 1175 Views,

স্পোটর্স ডেস্ক
প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসর বসেছে। ২ জুন প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় আইসিসির দুই সহযোগী সদস্য স্বাগতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা। ডালাসে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে যুক্তরাষ্ট্রের বোলারদের ব্যাপক শাসন করে কানাডা স্কোরবোর্ডে জমা করে ১৯৪ রানের বড় সংগ্রহ। জবাবে ব্যাট করতে অ্যারন জোন্সের ব্যাটিং তাণ্ডবে ১৪ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্র।

banner

আজ ২ জুন রবিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় ৩০ মিনিটে দুই প্রতিবেশী দল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুন শুরু করেন কানাডার দুই ওপেনার অ্যারন জনসন ও নবনীত ডালিওয়াল। এইি উদ্বোধনী জুটি করে ৪৩ রান। দলীয় ৪৩ রানের মাথায় অ্যারন জনসনের বিদায়ে প্রথম উইকেট হারায় দলটি। ১৬ বলে ২৩ রান করে ফেরেন এই ব্যাটার।

এরপর দলীয় ৬৬ রানে পারগাত সিংয়ের বিদায়ে দ্বিতীয় উইকেট হারায় দলটি। ৭ বলে ৫ রান করেন এই ব্যাটার। এরপর নবনীতকে নিয়ে দারুন জুটি গড়েন নিকোলাস কির্তন। দলীয় ১২৮ রানের মাথায় নবনীতের বিদায়ে তৃতীয় উইকেট হারায় দলটি। ৪৪ বলে ৬১ রানে বিদায় নেন তিনি। এরপর নিকোলাসের ব্যাটে ভর করে ভালো সংগ্রহ দাঁড় করায় কানাডা।

জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ওপেনার স্টিভেন টেলরকে হারায় যুক্তরাষ্ট্র। বেশি করতে পারেননি অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। ১৬ বলে সমানসংখ্যক রান করেন তিনি। এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। অ্যারন জোন্স ও অ্যান্ড্রেস গুসের ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করেন। জোন্সই বেশি মারমুখী ছিলেন। মাত্র ২২ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। ফিফটির দেখা পান গুসও। মাত্র ৫৮ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন তারা। ৪৬ বলে সাতটি চার ও তিন ছক্কায় ৬৫ রান করেন গুস। এরপর কোরি অ্যান্ডারসনকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন জোন্স। তিনি অপরাজিত ছিলেন মাত্র ৪০ বলে চারটি চার ও ১০ ছক্কায় ৯৪ রান করে। আর এতে ১৪ বল বাকি থাকতে সাত উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল স্বাগতিকরা।

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশে’র সন্ধানে

আন্তর্জাতিক, 18 December 2023, 971 Views,

ডেস্ক রিপোর্ট :

banner

বেশ কয়েক বছর আগে এই তথ্যটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন আজমত হোসেইন, যে কাশ্মীরি যুবক ছিলেন হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সর্বক্ষণের সঙ্গী আর ঘনিষ্ঠ অনুচর। বাংলাদেশ নিয়ে খবরাখবর করি শুনে তিনি বলেছিলেন, “জানেন কি, আমাদের কাশ্মীরেও আছে বাংলাদেশ নামে আস্ত একটা গ্রাম?”

শুধু তা-ই নয়, আরো জেনেছিলাম এই ‘বাংলাদেশ’ নামে গ্রামটা নাকি গিলানি সাহেবের জন্মস্থান জুরিমাঞ্জ-এর ঠিক পাশেই! পরে গুগল ম্যাপেও খুঁজে বের করি সেই বাংলাদেশ, তবে বিশদে খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় সে কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

মাসকয়েক আগে কাশ্মীরেরই একটা খবরের কাগজে চোখে পড়ে, সেই ‘বাংলাদেশ’ গ্রামের লোকেশনে উলার লেকের ধারেই শুরু হয়েছে বিগ বাজেট একটি দক্ষিণী ছবির শ্যুটিং। এমন কী, বলিউড ছবিরও সেট পড়েছে ‘বাংলাদেশে’ – এমনটাও জানানো হয়েছিল।

বুঝতে পারি, কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’ ইদানীং ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছে, ওই এলাকার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন দলে দলে।

তখনই স্থির করে ফেলি, কীভাবে এই ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ হল, সেটা জানতে একবার যেতেই হবে ওই গ্রামে। অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্নটা পূর্ণ হল এ মাসের গোড়ায়।

শ্রীনগর শহর থেকে এমনিতে ওই জায়গাটার দূরত্ব আশি কিলোমিটার। তবে নানা কারণে সোপোর-বান্দিপোরা রোড হামেশাই বন্ধ থাকে বলে প্রায়শই পুরো উলার লেক পরিক্রমা করে পৌঁছতে হয় সেই গ্রামে – রাজধানী থেকে পাড়ি দিতে হয় অন্তত সোয়াশো কিলোমিটার রাস্তা।

তবে বিস্তর মেহনত করে একবার ‘বাংলাদেশে’ পৌঁছলে বোঝা যায়, কেন গ্রামটি বাইরের দুনিয়ার কাছে এভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গ্রীষ্মের পিক সিজনে তো বটেই, ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডাতেও সেখানে এখন পর্যটকদের ঢল ও ট্রেকারদের তাঁবু।

প্রচলিত আছে, মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরই না কি কাশ্মীর নিয়ে একদা বলেছিলেন :
আগর ফিরদৌস বার রু-য়ে জমিন অস্ত
হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত!
বাংলায় এই অমর পংক্তির অনুবাদ করা যেতে পারে, ‘এই পৃথিবীর বুকে কোথাও যদি স্বর্গ থেকে থাকে তাহলে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই!’
এখন এই লাইনগুলো আসলে কবি আমীর খসরুর লেখা, না কি অন্য কারও – তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
কিন্তু এই ‘জন্নত-ই-জাহান’ বা ‘ভূস্বর্গ’ খেতাবের সবচেয়ে বড় দাবিদার যে কাশ্মীর – তা নিয়ে বোধহয় বিন্দুমাত্র বিতর্ক নেই!
আর সেই ভূস্বর্গের বুকে আজ বাহান্ন বছর ধরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশ’ও যে বহাল তবিয়তে টিঁকে আছে এবং ক্রমশ বিখ্যাত হচ্ছে, এ খবরও রীতিমতো রোমাঞ্চ জাগায় বই কী!
যেভাবে এই নামকরণ
ডিসেম্বরের এক হিমেল সকালে যখন বান্দিপোরা জেলার এই বাংলাদেশ গ্রামে পৌঁছলাম, তখন মুষলধার বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে জনপদ। উলার লেক থেকে আসা ঠান্ডা হওয়ায় হাত-পা অবশ হওয়ার উপক্রম।
উলারের অন্য পারে মাউন্ট হরমুখের তুষারধবল চূড়া কুয়াশাতে আবছায়া। আর লেকের বুকে রাজহাঁসের ঝাঁক আর সাইবেরিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের উদ্দাম দাপাদাপি।
বাংলাদেশ গ্রামের কূলে কয়েকটা নৌকা ওই তুমুল বৃষ্টিতেও মাছ ধরতে ব্যস্ত। আর পর্যটকদের জন্য চালু হওয়া শিকারাগুলো লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে ইতিউতি।
গ্রামবাসীদের দেখা মিলল দুপুরের ঠিক আগে আগে, যখন জোহরের নামাজের ঠিক আগে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন।
কীভাবে তাদের গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ হল, সেই প্রশ্নের জবাবে নবীন যুবক নিসার আহমেদ দার কিংবা প্রবীণ পঞ্চায়েত সদস্য গুলাম আহমাদের কাছে মোটামুটি একই রকম বিবরণ পেলাম।
আসলে পাশের জুরিমাঞ্জ গ্রামে (যেটা আবার সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জন্মস্থান, তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে খাল খনন বিভাগের একজন ভূমিহীন শ্রমিক) ’৭১ সালের শীতে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড হয়েছিল।
সেই আগুনে প্রায় পুরো গ্রামটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গ্রামের এক পাশে উলার লেকের কোল ঘেঁষে অনেকটা ফাঁকা জমি ছিল, তখন সেখানেই সর্বস্ব-হারানো পরিবারগুলোকে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয় সরকার।
এরপর প্রশ্ন ওঠে, নতুন এই জনপদটা তো জুরিমাঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে – তো এই গ্রামের নাম কী দেওয়া হবে?
তখন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সারা পৃথিবীর সঙ্গে জুরিমাঞ্জও সে খবর রেডিওতে শুনেছে।
সেই নবীন রাষ্ট্রকে সম্মান জানাতে নতুন গ্রামটির নামও দেওয়া হবে ‘বাংলাদেশ’ – এমনটাই সেদিন স্থির করেছিলেন ওই জনপদের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের নামে গ্রামটির নামকরণের মূল আইডিয়াটা কার, এটা নিয়ে অবশ্য দুরকম ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।
নিসার আহমেদ দার জানালেন, তিনি বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছেন তখন কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই না কি পরামর্শ দিয়েছিলেন নতুন গ্রামটির নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হোক, আর গ্রামবাসীরা সানন্দে সেটা মেনেও নিয়েছিলেন।
তুলনায় প্রবীণ গুলাম আহমাদ বা গুলাম নবি বাট অবশ্য বললেন বাইরের কারও পরামর্শে নয় – গ্রামের তখনকার মুরুব্বিরা মিলেই না কি স্থির করেছিলেন নতুন জনপদের নাম দেবেন তারা বাংলাদেশ, সদ্য স্বাধীন দেশটিকে স্বীকৃতি জানাবেন।
দুটোর যে কোনও ব্যাখ্যাই সত্যি হতে পারে, তবে ‘বাংলাদেশ’ নামটা নিয়ে ওই গ্রামের যে আলাদা একরকম গর্ব আছে তা টের পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।
প্রথম দিকে নামটা মুখে মুখে চালু থাকলেও ২০১০ সালে বান্দিপোরা জেলার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার অফিসও বাংলাদেশ নামটিকে নথিভুক্ত করেছে, এখন প্রায় ৭০টি পরিবারের সাড়ে তিনশো লোকের বসবাস সেখানে।
গ্রামের আশি বছরের প্রবীণা আজাইব বিবি বিকেলের দিকে খুব যত্ন করে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসিয়ে কাশ্মীরের বিখ্যাত ‘কাহওয়া চা’ খাইয়ে আপ্যায়ন করছিলেন।
তাঁর সন্তানদের মধ্যে দু’জন মূক ও বধির, কোনও ক্রমে হাঁস ও মুরগী প্রতিপালন করে তিনি নিজের বিরাট সংসার চালান।
এত কষ্টের মধ্যেও আজাইব বিবি হাসিমুখে বলছিলেন, “আমাদের গ্রামের নামটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম! গোটা কাশ্মীরে এরকম নাম আপনি আর কোথাও পাবেন না!”
গ্রামের সব লোকজন মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সায় দেন, জানাতে ভোলেন না এই যে অন্য একটি দেশের নামে তাদের গ্রামের নাম – বিষয়টা তাদের অন্য রকম একটা ভালো লাগা দেয়!
বেড়াতে বা কাজে কাশ্মীরের অন্যত্র গেলেও তারা প্রথমেই বলেন, “আমরা বাংলাদেশ গ্রাম থেকে এসেছি!” আগে লোকজন শুনে একটু অবাক হত, কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সবাই চিনে গেছে এই অভিনব নামের গ্রামটিকে।
‘বাংলাদেশে’র পুনর্জন্ম
তবে প্রায় বাহান্ন বছর আগে এই নামকরণ হলেও পরবর্তী প্রায় চার দশক ‘বাংলাদেশ’ একটি অখ্যাত জনপদ হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হালে সেই ছবিটা খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
আর এর পেছনে খুব বড় ভূমিকা রয়েছে উলার লেককে ঘিরে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার।
উলার লেক হল সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে বৃহত্তম মিঠা পানির লেক, কাশ্মীরের সুপরিচিত ডাল লেকের অন্তত সাড়ে আট গুণ এর আয়তন।
কিন্তু শ্রীনগরের ডাল লেক পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হলেও তুলনায় উলারে ‘ট্যুরিস্ট ফুটফল’ অনেক কম, যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উলারের আকর্ষণ বোধহয় বেশি ছাড়া কম নয়।
সম্প্রতি সেই ছবিটাই বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ‘উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’, সরকারি অর্থায়ন আর বেসরকারি সহযোগীদের নিয়ে তারা নতুন করে আঁকছেন উলার লেকের চালচিত্র।
“আমাদের এই প্রকল্পে একটা খুব বড় জায়গা নিয়ে আছে বাংলাদেশ গ্রাম, কারণ ওই এলাকাটার পর্যটন সম্ভাবনা অপরিসীম”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মুদাসির মেহমুদ।
গত দু-তিন বছরের মধ্যে ‘বাংলাদেশে’র সৌন্দর্যায়নে তারা বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন।
জুরিমাঞ্জ-বাংলাদেশ-ওয়াতলাব গ্রামগুলোকে ঘিরে উলারের তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক বুলেভার্ড।
ইতিমধ্যেই লেকের বুক চিরে তৈরি হয়েছে প্রায় দুশো মিটার লম্বা একটি বোর্ডওয়াক, যেটির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় একদম উলারের বুকে। পদ্মের বনের ওপর দিয়ে ডানা ঝাপটাতে দেখা যায় নানা প্রজাতির মাইগ্রেটরি বার্ডদের।
‘বাংলাদেশ’ গ্রামের বাসিন্দারা এই বোর্ডওয়াকেরই নাম দিয়েছেন ‘ভিউপয়েন্ট’।
নিসার আহমেদ বলছিলেন, “বছরতিনেক আগে এই ভিউপয়েন্ট খোলার পর থেকেই হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুব বেড়ে গেছে।”
“ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া-ইউরোপ থেকেও আজকাল দলে দলে পর্যটকরা আসছেন।”
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গুলাম আহমাদ জানাছেন, ২০২২ আর ২০২৩র গ্রীষ্মে এমন কী বাংলাদেশ থেকেও জনাকয়েক পর্যটক তাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। মানে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরের বাংলাদেশ দেখতে!
এমনিতে বাংলাদেশ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই উলার লেক-নির্ভর।
তারা কেউ লেকে মাছ ধরেন, কেউ আবার লেকের তীরে হাঁসের চাষ করেন।
অনেকে আবার নৌকায় লেকের বুক থেকে তুলে আনেন ওয়াটার চেস্টনাট, জলের যে কাঁটাওলা ফসল অনেকটা বাংলার ‘পানিফলে’র মতো দেখতে। কাশ্মীরিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন ‘সিংগারা’।
উলার লেকের বুকে পদ্মবন থেকে পদ্মের কন্দ বা ‘নদরু’ তুলে আনাটাও বাংলাদেশে অনেকেরই পেশা। এই নদরু দিয়ে তৈরি ‘ইয়াখনি’ নামে একটি পদ কাশ্মীরে খুবই জনপ্রিয়, আর বাংলাদেশের ‘নদরু’ এখন পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোরের বাজারেও।
সব মিলিয়ে উলার লেকের তীরে একদা অপরিচিত ‘বাংলাদেশ’ যেন সম্প্রতি নতুন জীবন পেয়েছে, প্রতিবেশী দেশের নামে নামাঙ্কিত গ্রামটির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে দূর-দূরান্তে।
“রাস্তাটা যদি আর একটু ভাল করা হয় আর উলার লেকে নিয়মিত ড্রেজিং-টা চালু রাখা যায় তাহলে দেখবেন আমাদের বাংলাদেশ ট্যুরিস্টদের সামলাতে কূল পাবে না”, একগাল হেসে বলেন প্রবীণ গ্রামবাসী গুলাম নবি বাট।
‘হামলা আওয়ার খবরদার!’
বাংলাদেশ গ্রাম থেকে সন্ধ্যার দিকে যখন শ্রীনগরে ফিরছি, তখনও কিন্তু একটা খটকা রয়েই গিয়েছিল।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ‘ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি নিয়ে এত কথা শোনা যায়, সেই কাশ্মীর কীভাবে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন হওয়া একটি দেশের জন্মকে ‘সেলিব্রেট’ করেছিল সে প্রশ্নটার জবাব কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ গ্রামে পাইনি।
পরে কাশ্মীরি গবেষক ও ‘কে ফাইল’ গ্রন্থের লেখক বশির আসাদ এর একটা চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন।
তিনি জানাচ্ছেন, “সাতচল্লিশে ভারত ভাগ থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর কিন্তু সাধারণ কাশ্মীরিদের সমর্থন পুরোপুরি ভারতের দিকেই ঢলে ছিল। ছবিটা তখন মোটেই আজকের মতো ছিল না, বরং কাশ্মীরিরা তখন সবাই পাকিস্তানি দখলদারির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন।”
“এমন কী সাতচল্লিশ সালের শেষ দিকেই যখন পাকিস্তানি হানাদাররা কাশ্মীরে হামলা চালায়, তখন শ্রীনগর-সহ গোটা ভ্যালিতে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল ‘হামলা আওয়ার খবরদার, হাম কাশ্মীরি হ্যায় তৈয়ার’! মানে তারা তখন পাকিস্তানিদের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন!”
ফলে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দু-টুকরো হওয়াকে কাশ্মীরের একটি জনপদ যে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছিল, তাতে বশির আসাদ এতটুকুও বিস্মিত নন।
“এমন কী সাতাত্তর সালের আগে জামাত-ই-ইসলামীও কিন্তু কাশ্মীরে সেভাবে পায়ের তলায় জমি পায়নি। ফলে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়”, বলছিলেন তিনি।
বশির আসাদ আরও মনে করেন, ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে উগ্রপন্থা আর জঙ্গীবাদের রমরমা শুরু হওয়ার আগে কাশ্মীর ছিল সম্ভবত সমগ্র উপমহাদেশেই সবচেয়ে উদার ও সহিষ্ণু একটি সমাজ – কাজেই সেখানে অবাধ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে চেতনাও ছিল খুব শক্তিশালী।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের আর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও হয়তো আছে – যার আভাস নিহিত ছিল “কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই এই পরামর্শ দিয়েছিলেন”, নিসার আহমেদ দারের এই কথাতে।
সে সময় জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ মীর কাশিম।
কংগ্রেসের এই সিনিয়র নেতা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কাশ্মীরে কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তোলার কৃতিত্ব অনেকে তাঁকেই দিয়ে থাকেন।
একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
ফলে তাঁকে সম্মান জানাতে মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মীর কাশিম বা তাঁর কংগ্রেসি মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য নতুন একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছিলেন, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সত্যিটা ঠিক কী ছিল, আজ হয়তো তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়।
কিন্তু সুদূর উত্তর কাশ্মীরের এক প্রান্তে, সুবিস্তীর্ণ উলার লেকের এক তীরে বাংলাদেশ নামে একটি ছোট্ট গ্রাম যে অর্ধশতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাসকে নিজের বুকে আজও ধরে রেখেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
শুভজ্যোতি ঘোষ
জড়ষব,বিবিসি নিউজ বাংলা, বান্দিপোরা