চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একশত পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নামধারি শ্রমিক নেতা আরব আলী (৩৬)কে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সদর উপজেলার খাটিহাতা মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আরব আলী সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রামের ঈমান আলীর ছেলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে আরব আলী মোটর সাইকেলে করে যাওয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। পরে তার মোটর সাইকেল তল্লাশী করে মোটর সাইকেলের সিটের নিচে লুকানো থাকা একশত পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ওসি আফজাল হোসেন আরো বলেন, আরব আলী একজন চিহ্নিত অপরাধী। সে প্রথম জীবনে খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড়ে পলিথিন বিক্রি করতো। পরবর্তীতে সে টেম্পু চালাতো। এক সময় সে ডাকাত চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার বিভিন্ন থানায় বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদকের প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, আরব আলী জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সহ প্রচার সম্পাদক।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ৯৮ বোতল ফেন্সিডিল সহ তাকে তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছিলো জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ওই মামলায় সে বেশ কিছু দিন হাজতবাস করেন ও পরে জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের (আসন নং-৩১২) সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদের গত ১৯ জুন জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ রোববার সরাইলে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে নাগরিক সমাজের ব্যানারে আওয়ামীলীগের সাবেক নেতারা। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ থেকে উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপিকে অপসারনের দাবি জানান।
আজ ৯ জুলাই রবিবার সকালে সরাইল হাসপাতাল মোড় থেকে উপজেলা চত্বর পর্যন্ত দীর্ঘ কিলোমিটার মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে প্রায় ১ ঘন্টা ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
মানববন্ধন শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সরাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ ইসমত আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল জব্বার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মাহফুজ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একটি কুচক্রী মহল নেতা হওয়ার জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদের স্বামী এ.কে.এম ইকবাল আজাদকে হত্যা করেছে। ওই মহলটি ইকবাল আজাদ হত্যা মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের আসামী করে উপজেলা আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শুন্য করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা প্রকৃত খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। আর উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপি সংসদে দাঁড়িয়ে তার স্বামী হত্যা ঘটনায় নিয়মিত মিথ্যাচার করছেন।
বক্তারা বলেন, কতিপয় দুস্কৃতকারী ইকবাল আজাদকে হত্যা করেছেন। হত্যাকান্ড সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। অথচ ৮জন মুক্তিযোদ্ধাসহ আমাদেরকে আসামী দিয়ে হয়রানি করছে।
বক্তারা বলেন, গত ১৯ জুন উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপি জাতীয় সংসদে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
বক্তারা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপির শ্বশুর আবদুল খালেককে (তৎকালীন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান) হত্যা করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁর ভাসুর হুমায়ূন আজাদ মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়।
বক্তারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার পুনরায় তদন্ত দাবি করে বলেন, প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে। পাশাপাশি উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপিকে জাতীয় সংসদ থেকে অপসারনের দাবি জানান বক্তারা। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন।
উল্লেখ্য, দলীয় কোন্দলের জেরে ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সরাইল উপজেলা সদরে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন সিনিয়র নহ-সভাপতি একেএম ইশবাল আজাদ। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আজাদ উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিক উদ্দিন ঠাকুরসহ দলীয় ২১ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ২০২৪ পালন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ ১৫ মার্চ শুক্রবার সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি র্যালি বের হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মেজবাহ উল আলম ভূঁইয়া সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব শরীফ উদ্দিন, সরাইল প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ মিয়া, বাবুল হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিববুর রহমান এ কে খান, আব্দুল জব্বার, আওয়ামীলীগ নেতা মাহফুজ আলী, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বাবুল মিয়া, সাংবাদিক রিমন খান, জহিরুল ইসলাম রিপনসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে ইটবোঝাই ট্রাক্টর ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। আজ ৮ এপ্রিল শনিবার দুপুরে উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের যাদবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- অটোরিক্সা চালক আল আমিন (১৪) ও যাত্রী আপন চন্দ্র দাস (১৪)।
আল আমিন উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের আলমগীর মিয়ার ছেলে ও আপন চন্দ্র দাস ধীতপুর গ্রামের ওমেলেশ চন্দ্র দাসের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে একটি ইটবোঝাই ট্রাক্টর ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার মধ্যে সংঘর্ষ হলে সড়কে ছিটকে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে আল আমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আপন চন্দ্র দাসকে আহত অবস্থায় সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সরাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১ মার্চ শুক্রবার বাড়িতে এসে মায়ের সাথে দেখা করার কথা ছিলো সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের। ছেলেকে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন মা। ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য বাজার সদাই করে প্রস্তুত ছিলেন মা। কাউছার বাড়িতে ফিরেছেন। তবে জীবিত নয়। লাশ হয়ে। স্ত্রী, তিন সন্তানও কাউছারের নিথর দেহের সঙ্গী হয়ে ফিরেছেন। মায়ের সাথে ছেলের শেষ কথা না শোকে পাথর হয়ে আছেন কাউছারের মা। বাড়ির পাশের কবরস্থানে তখন চলছে এক সারিতে পাঁচটি কবর খোঁড়ার কাজ। আঙ্গিনায় রাখা আছে ৫টি খাটিয়া। আগত লোকজন বলছেন জীবনে কখনো এই গ্রামে এক সাথে পাঁচ কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখিনি। আল্লাহ তাও দেখাইলেন। শুক্রবার বিকেলে সাইরন বাজিয়ে লালবাতি জ্বালিয়ে ৫ লাশ নিয়ে ৪ এম্বোলেন্স প্রবেশ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামে। ওদিকে কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে পাথর হয়েছিল গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়নের নারী পুরূষ। তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে ঘেরাও করে ফেলে লাশবাশী গাড়ি গুলোকে। অঝরে কান্না ও আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে ওই গ্রামের পরিবেশ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে মারা গেছেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ইতালি প্রবাসী কাউছার। বেইলি রোড ট্রেজেডির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনা হচ্ছে কাউছানসহ এক পরিবারের ৫ জন নিহতের ঘটনাটি।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ার প্রয়াত সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন। এলাকায় তিনি সবার কাছে কাউছার নামেই পরিচিত ছিলেন। কাউছার দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে থাকেন। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করতো ঢাকার মধুবাগে। কাউছারের স্বপ্ন ছিল পরিবারের সকলকে নিয়ে ইতালিতে সেটেলড হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছিল। কিন্তু বাস্তবে রূপ নেয়ার মূহুর্তে সব তছনছ হয়ে গেল। গত প্রায় ২ সপ্তাহ আগে কাউছার দেশে এসেছিলেন। কারণ পরিবারের সবার ইতালির ভিসা হওয়ার কথা ছিল। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরিবারের ৫ সদস্যেরই ইতালির ভিসা হয়েছে। দীর্ঘ সময় প্রতিক্ষার পর কাউছারের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন তিনি। আনন্দে কাউছার পরিবারের সকলকে নিয়ে রাতে ওই হোটেলে গিয়েছিলেন ডিনার করতে। এই ডিনারই যে কাল হবে সেটা তো জানা ছিল না কাউছারের। খাবার শুরূ করার পরই ওই হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এ যেন আরেক কেয়ামত। লোকজনের চারিদিকে ছুটোছুটি, আর্তচিৎকার, আহাজারি আর বাঁচার আকুতিতে ভারী হয়ে ওঠে বেইলি রোডের পরিবেশ। অগিকান্ডের লেলিহান শিখা দেখে হোটেলে আটকে পড়াদের অনেকেরই পালস বন্ধ হয়ে যায়। শেষ রক্ষা হলো না ইতালি প্রবাসী কাউছার ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের। একে একে আগুনে পুঁড়ে মৃত্যুবরণ করলেন সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম, দুই মেয়ে সৈয়দা নূর, সৈয়দা কাশফিয়া ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন কেড়ে নিল কাউছারের পরিবারের সকল সদস্যের তাজা প্রাণ। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন তাদের ধূঁলোয় মিশে গেল। কাউছারের স্বজন মো. ফয়সাল বলেন, ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছিল পরিবারটি। ভিসাও হয়েছিল। পরিবারের সকলকে খেতে যাওয়াটাই কাল হলো তাদের। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অপূরণীয় রয়ে গেল। ওই পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না। গোটা পরিবারের এমন আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে স্বজন পাড়া প্রতিবেশী গ্রাম তথা গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়ন। চারিদিকে চলছে আহাজারি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কাউছারদের খালি বাড়িতে ছুটে আসছেন শতশত নারী পুরূষ। সকলের চোখেই অশ্রু। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রূল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, খুবই ভাল মানুষ ছিলেন কাউছার। এমন একটি পরিবারের সকল সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা। শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা ইউনিয়ন। শোকাহত হয়ে পড়েছে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ।
৪ এম্বোলেন্সে ৫ লাশ:
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে তাদের লাশ নিয়ে রওনা দেয় নিজ গ্রাম শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাটায় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর প্রথম গেইট থেকে বাম দিকে প্রবেশ করছে এক সাথে ৪টি লাশবাহী এম্বুলেন্স। এক সাথে ৪টি গাড়ির হৃদয় বিদায়ক সাইরন আর লাল বাতির জ্বলকানিতে কেঁপে ওঠেছে গ্রামবাসী। কারণ এর আগে এমন বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখে অভ্যস্থ নয় তারা। চারিদিক থেকে নারী পুরূষ ও শিশুরা আসছে গাড়ির দিকে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছে কাউছারদের বাড়িতে। বুঝতে বাকি নেই কাউছারদের পরিবারের পাঁচ লাশ এসে গেছে। গ্রামীণ সড়কে মানুষের জটলা। একে একে গাড়ি ৪টি চলে আসল কাউছারের বসতবাড়িতে। বাদ আছন জানাযা। লাশ মসজিদের দিকে নেয়ারও একটা তাড়া। ৫ জনের লাশকে একনজর শেষ দেখা দেখতে শুধু শাহবাজপুর থেকে নয়। পাশের ইউনিয়ন শাহজাদাপুরের দেওড়া শহজাদাপুর ও মলাইশ থেকেও লোকজন এসেছে। এছাড়াও জেলা শহরসহ জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকেও স্বজন ও পরিচিত জন এসেছেন। বাদ আছর অর্থাৎ বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টায় হবে জানাযা। তাই চতুর্দিকে মানুষজন জানাযা করার প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত: গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। রবিবার বাড়ি এসে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছেলে মেয়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য যাওয়ার কথা ছিল কাউছারের। আগামী ১৮ মার্চ তাদের ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। তাদের বাড়ি সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ায়। পারিবারিক কবরস্থানেই তাদের দাফন সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেন স্বজনরা।
৫ কবর ৫ খাটিয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলের সৈয়দ মোবারক হোসেন। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। আগামী ১৮ মার্চ তারা আকাশ পথে ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। কিন্তু বেইলি রোড ট্রাজেডি তাদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এখন তাদের জন্য উপজেলার শাহবাজপুর নিজেদের কবরস্থানে এক সারিতে খোঁড়া হচ্ছে ৫ টি কবর। বাড়ির পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ৫ টি খাটিয়া। স্বজন আর গ্রামবাসীর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠছে ওই বাড়ির পরিবেশ। কি হৃদয়বিদায় দৃশ্য। শান্তনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে গেছে গ্রামবাসীর। স্থানীয়রা জানায়, কাউছারের বসত ঘর ফাঁকাই থাকতো। বলতে গেলে তাদের বাড়িতে লোকজন খুব একটা নেই। সব সময় ওই বাড়িতে বিরাজ করতো সুনসান নীরবতা। বাড়িতে নড়াচড়া করতো কাউছারের চাচাত ভাইয়েরা। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকে কাউছারদের বাড়িতে। কাউছার সহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী। চারিদিকে হ্যাঁ হুতাশ আর চোখের জল। সকলেই জানতে চাচ্ছেন কখন আসবে তাদের মরদেহ। বিভিন্ন জায়গা থেকে সকলেই শুধু পথের দিকে নজর দিচ্ছেন বারবার। জানতে চাচ্ছেন তাদের লাশ বহনকারী গাড়ি কোথায় আছে? কখন আসবে? জানাযা কখন কোথায় হবে? ওদিকে বাড়ির ও গ্রামের লোকজন কাউছারদের পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে এক সাথে ৫ টি কবর খোঁড়ার কাজ শুরূ করেছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কবর খোঁড়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে পাঁচটি খাটিয়া। দেখলে গা শিউরে ওঠে। আর বাড়ির ভেতরে চলছে স্বজনদের আহাজারি। একই কবরস্থানে এক সাথে ৫ কবরের দৃষ্টান্ত খুব কমই আছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। তারা বলেন, এই অগ্নিকান্ড শুধু কাউছারের পরিবারকে নয়, আমাদের গোটা ইউনিয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।
শোকাহত উপজেলা প্রশাসন:
কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের নির্মম মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন সরাইল উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বিকেলে কাউছারদের বাড়িতে যান সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতান। তিনি শোকাহত পরিবারের অন্য সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই সাথে সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জানাযায় সহস্রাধিক লোক:
বাদ আছর খন্দকার পাড়া জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয় ওই ৫ লাশের জানাযা। জানাযায় সাবেক এমপি মৃধাসহ অংশ গ্রহন করেন সহস্রাধিক লোক। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশেই এক সারিতে তাদের ৫ জনকে সমাহিত করা হয়েছে।