১০০ কোটি টাকার কোকেনসহ মালাউইর নারী গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 25 January 2024, 754 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সলিড কোকেনের চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। আফ্রিকান দেশে মালাউইর এক নারী ৮ কেজি ৩০০ গ্রামের এই কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে নিয়ে আসনে। বুধবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালাউইর নাগরিক নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকোকে (৩৫) কোকেনের এই চালানসহ গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা কোকেনের মূল্য ১০০ কোটি টাকা।

ডিএনসি জানায়, কোকেনের এই চালানটি আফ্রিকার দেশ মালাউই অথবা ইথোপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল চালানটি পাচার করার জন্য। কারণ এই পরিমাণ কোকেন চাহিদা বাংলাদেশে নেই।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ।

তিনি বলেন, কোকেন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের দেশি ও বিদেশি সক্রিয় কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কোকেনের একটি বৃহৎ চালান আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আফ্রিকান একজন নাগরিকের মাধ্যমে ঢাকায় আসবে এমন তথ্য পাই আমরা।

‘এর পর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়। এপিবিএনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম গঠন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেওয়া হয়। ফ্লাইটি থেকে নামা সব বিদেশি যাত্রীকে আমরা ফলো করি।’

তানভীর মমতাজ বলেন, এ সময় দেখা যায়, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো (৩৫) নামে এক বিদেশি নারী বিমানবন্দরের নিচতলায় ভিসা অন এ্যারাইভাল ডেক্সে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন লাগেজে কোকেন আছে। পরবর্তী সময়ে লাগেজের ভেতরে বিশেষভাবে রাখা ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো আফ্রিকান দেশ মালাউইর নাগরিক। তিনি প্রথমে মালাউই থেকে ইথোপিয়া যান। পরে তিনি ইথোপিয়া থেকে যান দোহাতে। পরে তিনি দোহা থেকে কাতারের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশ থেকে আবারও মালাইউতে যাওয়ার কথা ছিল। কোকেনের এই চালানটি বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার কথা ছিল। পরে বাংলাদেশ থেকে কোকেনের চালানটি অন্য কোনো দেশে চলে যেত। আমাদের ধারণা তাওয়েরা সোকো কোকেনের এই চালানটি মালাইউ থেকে নয়তো ইথোপিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানান, ২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশে একবার এসেছিলেন। গার্মেন্টস ব্যবসার কথা বলে তিনি ওই বছর বাংলাদেশে আসেন। এবারও তিনি বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন। অন এ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য তিনি তার পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করছিলেন। সোকো মালাইউতে পেশায় একজন নার্স। তিনি মূলত কোকেনের এই চালানের বহনকারী। বাংলাদেশে তিনি আরেক জন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই চালান পৌঁছে দিয়ে নিজ দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল।

বাংলাদেশে সোকো কার কাছে কোকেন হস্তান্তর করতেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তবে বাংলাদেশ অবস্থারত কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই কোকেন যাওয়ার কথা ছিল। আমরা একজন বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব।

২০২৩ সালে সোকো বাংলাদেশে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তানভীর মমতাজ বলেন, তখনো তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে এসেছিলেন। তিনি আসলে কিসের জন্য এসেছিল সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।

কোকেনের এই আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি চক্র জড়িত আছে। এই চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে কোনো দেশে যাওয়ার কথা ছিল, এমন প্রশ্নে মাদকের এই কর্মকর্তা বলেন, এগুলো আমরা আমাদের তদন্ত শেষে বলতে পারব। তবে এটা বলতে চাই- কোকেনের চালানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল না। কারণ বাংলাদেশে এই পরিমাণ কোকেন কনজিউম করার মার্কেট নেই।

এই কোকেনের আনুমানিক বাজার দর ১০০ কোটির ওপরে। দেশের ইতিহাসে সলিড কোকেনের এইটিই বড় চালান বলে জানান ডিএনসির এই কর্মকর্তা।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান, জরিমানা…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান চালিয়েছে Read more

মধ্য পাইকপাড়া চামেলীবাগ জামে মসজিদের কমিটি…

মোজাম্মেল হক সভাপতি ও রাশেদ কবির আখন্দ সাধারণ সম্পাদক শহরের Read more

নবীনগরে ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ব্যবসায়ী…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগর উপজেলার নাছিরাবাদ গ্রামের মো. আশিক মিয়া Read more

আখাউড়ায় ছাত্র অধিকারের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায়…

চলারপথে রিপোর্ট : ৪ বছর আগে আখাউড়ায় ছাত্র অধিকার পরিষদের Read more

সরাইলের ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও Read more

ভাটপাড়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণের চেষ্টাকালে…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাটপাড়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় দ্বীপা রানী কর (২২) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও পদত্যাগের…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পলি ক্যাবলস এর মতবিনিময় সভা…

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পলি কেবলস -এর বিক্রয় ও বিপণন কার্ষক্রম উন্নয়ন লক্ষ্য Read more

ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন

চলারপথে রিপোর্ট : ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা (সদস্য) কোনো দলীয় প্রার্থী Read more

নবীনগরে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মানববন্ধন

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত Read more

বিজয়নগরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগরে নাশকতার মামলায় চম্পকনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও Read more

প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ১৮৯১ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা

জাতীয়, 15 April 2024, 271 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলার ভোটে তিনটি পদে এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আজ ১৫ এপ্রিল সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, এবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হবে ১৭ এপ্রিল। আর মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ভোট গ্রহণ ৮ মে।

উল্লেখ্য, প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল সোমবার (১৫ এপ্রিল)। শেষ সময় মোট ১ হাজার ৮৯১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এবার মোট চার ধাপে ৪৮০টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে পরে দুটি উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়।

ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথ: ১৬০০ ক্লিপ চুরি, অল্পের জন্য রক্ষা

জাতীয়, 21 September 2023, 607 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে রিপোর্ট :
ভাঙ্গা-রাজবাড়ি রেলপথের ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নওপাড়া মহল্লায় রেলের এক হাজার ছয়শত স্লিপারের ক্লিপ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা আসার পথে ঘটনাস্থলের আগেই ট্রেনটি থামিয়ে দেন রেলওয়ে পুলিশ। ফলে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান ট্রেনের যাত্রীরা।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভাঙ্গার সাথে রাজবাড়ীর রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৮ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। এর দুই ঘণ্টা পর রেল লাইনের স্লিপারের ক্লিপগুলি আবার স্থাপন করার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটায় বলে জানায় পুলিশ।

ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, রেললাইনের স্লিপারের এক হাজার ছয়শত ক্লিপ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। পরে রাজবাড়ী থেকে রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অভিজ্ঞরা এসে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক করে।

ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার তাকদির হোসেন বলেন, ফরিদপুরের বাখুন্ডা ও পুখুরিয়া পার হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় নিয়মিতই ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা হয়। মাঝে মাঝে যাত্রীরাও আহত হন। তবে এবারের ঘটনা সুপরিকল্পিতভাবে কোনও সংবদ্ধচক্র করে থাকতে পারে। এঘটনায় রাজবাড়ী রেলওয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হবে।

রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় মামলা হবে।খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিয়ানমারে সাজা শেষে দেশে ফিরলেন ২৯ বাংলাদেশি

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 3 October 2023, 994 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
মিয়ানমারে সাজা ভোগের পর দেশে ফিরেছেন ২৯ বাংলাদেশি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর প্রচেষ্টায় এসব বাংলাদেশিকে আজ ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে দেশে ফেরত আনা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ ২-বিজিবি’ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।

মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিকরা হলেন মহেশখালী উপজেলার শাকের উল্লাহ (২৮), এখলাছ মিয়া (২৬), শফি আলম (২৫), পারভেজ (২৪), মিজানুর রহমান (১৮), মোবারক মিয়া (২৪), মো. মহিউদ্দীন (২২), ছালামত উল্লাহ (১৭), মং থিন (৪২), গিয়াস উদ্দিন (২২), রাকিবুল হাসান রাকিব (২২), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও মোবারক উদ্দিন (১৮)।

উখিয়া উপজেলার মো. শাহেদ(১৮), মো. তারেক (১৮) ও মো. সাবের। বান্দরবান সদরের সিন থোয়ে মং মারমা (৩২), থুইচিং প্রু (২৩), লামা উপজেলার থার তুন হ্লা (৩৬)। রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ইয়ং ছা থুই মারমা(২৬), থান হ্লা সিন/সোয়ে সিন ওরফে ইউসিচিং মারমা (৩০), বেতবুনিয়া উপজেলার ইউ তান ওয়ারা ওরফে স্যার থুই ইউ (৩৪), টেকনাফ উপজেলার মো. ইরফান (২২), মো. ইলিয়াছ(১৯), মো. জহির আহমেদ (৩১), মো. আবদুল আজিজ (২১), মো. তৈয়ব (৩২), আব্দুর সিদ্দিক (২৭) ও রুবেল(২০)।

মঙ্গলবার টেকনাফ জেটিঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ (বিজিবিএমএস) জানান, বিজিবি-বিজিপি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক এবং ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিকের দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে Maungdaw POE (Point of Entrz/Exit) নামক স্থানে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এবং ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চ, পিইন ফিউ এর অধিনায়ক মায়ানমার এর মধ্যে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যার্যে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ-মায়ানমার এর সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এছাড়াও উভয় দেশের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, উত্তরোত্তর উন্নতি এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য উভয় দেশের প্রতিনিধি দল মতামত ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় আটককৃত ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক মিয়ানমারের কারাগারে আটক ছিল। কারাভোগ শেষে সেই ২৯ জনকে কূটনৈতিক যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার লক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট এর দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার ফলে মায়ানমার কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরো জানান, মিয়ানমার থেকে ফেরত আনা ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুলিশের নিকট পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হন্তান্তর করা হয়েছে।

দু’দেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ মহাসড়ক : প্রণয় কুমার ভার্মা

আখাউড়া, আশুগঞ্জ, জাতীয়, 24 July 2023, 1816 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ২৪ জুলাই সোমবার দুপুরে আশুগঞ্জ নৌবন্দর উন্নয়ন ও সরাইল-ধরখার-আখাউড়া বন্দর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী নেতৃত্তে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

এসময় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের দিন গুলোতে আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিবেচনায় আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে। যাতে করে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারি। তিনি বলেন, আমি খুবই খুশি যে এখানকার সাধারণ মানুষজন খুবই আন্তরিকতার সহিত আমাদের সহযোগিতা করেছেন যেন আমরা প্রকল্পের কাজ সুন্দরভাবে শেষ করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, আমি আজ এখানে এসেছি ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক যে প্রকল্পের কাজ হচ্ছে সে কাজের গতিবিধি কেমন চলছে এবং প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে আমাদের আরও কি করনীয় আছে তাই দেখলাম। কানেক্টিভিটির এই প্রকল্পটি আমাদের দু’দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করবে এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এর আগে দুপুরে ভারতীয় হাইকমিশনার আশুগঞ্জ নৌবন্দর হয়ে সড়ক পথে আখাউড়া স্থলবন্দরে এসে পৌছালে তাকে স্বাগত জানান আখাউড়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার অংগ্যজাই মারমা ও স্থলবন্দরের সহকারি পরিচালক মো. আতিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক শোয়েব আহমেদ, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক খালেদ সাহিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইকবাল হোছাইন এবং আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু হয়। করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তিন দফায় বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ, যা শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। ভারতের ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

আমরা বিশ্বব্যাংকের প্রতি আস্থা বজায় রেখেছি : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 2 May 2023, 1127 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে ওঠার পথে বাংলাদেশের মসৃণ উত্তরণ এবং পরবর্তীতে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ লাভ করা, ও এর ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমাদের আস্থা আছে বিশ্বব্যাংকের ওপর। আশা করছি বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশিদার হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও বলেছেন, “২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি মর্যাদা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ লাভের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংককে আমি আমাদের মানব পুঁজি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলিকে একটি মসৃণ উত্তরণের জন্য সহায়তা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ আইডিএ উইন্ডোটি সংরক্ষণ ও অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।”

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরের প্রিস্টন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত “বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছরের প্রতিফলন” শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সোমবার ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সামনে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ রেখেছেন যা বিশ্বব্যাংক ঋণদাতাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত।

এ সময় পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন (আড়াই বিলিয়ন) ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি ছবি তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অবকাঠামো ও লজিস্টিকসে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আশা করব বিশ্বব্যাংক অতীতের মতো আগামী বছরগুলোতে আমাদের ভৌত ও সামাজিক উভয় খাতে মেগা-প্রকল্পগুলোতে সম্পৃক্ত হবে।”

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জাতীয় আকাঙ্খার সঙ্গে জাতিসংঘের এসডিজির সমন্বয় করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের বর্ধিত, ছাড় দেয়া এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের জরুরি প্রত্যাশা রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, মহামারী, সশস্ত্র সংঘাত এবং জলবায়ু জরুরি অবস্থার কারণে চলমান বৈশ্বিক একাধিক সংকট বেশিরভাগ উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোকে গুরুতর চাপের মধ্যে ফেলেছে।

তিনি বলেন, মহামারী ও সশস্ত্র সংঘাত থেকে উদ্ভূত একাধিক সংকট সত্ত্বেও, কিছু উন্নয়ন অংশীদার তাদের ঋণের খরচ এবং সুদের হার বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদেরকে কার্যকর বিকল্প খুঁজে বের করার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে আমাদের অর্থনীতিগুলো উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলি আরও ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আশা করে যে, জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকা-ে বিশ্বব্যাংকের বর্ধিত সম্পৃক্ততা প্যারিস চুক্তির অধীনে অর্থায়নের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের মধ্যে অর্থায়নের সমান বণ্টনের ওপর জোর দেব।”

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিতে বিশ্বব্যাপী রোল-মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, দুর্যোগ-সহিষ্ণু অবকাঠামো এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।

তিনি বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজনের একটি জীবন্ত গবেষণাগার হিসেবে বর্ণনা করেন যেখানে বেশ কিছু প্রকৃতি-ভিত্তিক ও কৌশলগত সমাধান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর অধীনে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের আমন্ত্রণ জানান।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে তারা জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি।

তিনি বলেন, “বিস্তৃত অঞ্চলের জন্য ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তার প্রভাবের পাশাপাশি পরিস্থিতি আমাদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। আমি বিশ্বব্যাংককে আমাদের মানবিক প্রচেষ্টায় যোগদানের জন্য এবং রোহিঙ্গা ও তাদের সম্প্রদায়ের জন্য ৫৯০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের জন্য ধন্যবাদ জানাই।”

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গত চার দশকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ব্যাপক নৃশংসতার পর থেকে তাদের সংখ্যা ১.২ মিলিয়নে পৌঁছেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা এবং তিন ভাইসহ সবকিছু হারিয়ে দেশবাসীকে পাশে পেয়ে তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তাঁকে তাঁর জীবনের অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে তিনি কখনই মাথা নত করেননি।

তিনি বলেন, ‘আমি কখনো মাথা নিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাঙালি একটি বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত ও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, কারণ তার আশেপাশে থাকা লোকদের কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার কারণে এবং সে সাথে রয়েছে দেশের জনগণের অটুট সমর্থন।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং এর প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌসিক বসু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং বৈশ্বিক ঋণদাতা ভিপি মার্টিন সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে সবার সাথে যোগ দিতে পেরে আনন্দিত।

তিনি বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট মালপাসকে তার আমন্ত্রণ ও আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। বিশ্বব্যাংকে অনেক বাংলাদেশীকে নিয়োজিত দেখে আমি আনন্দিত।” তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নির্বিঘেœ এগিয়ে যেতে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক একটি নেতৃস্থানীয় উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে ধারাবাহিকভাবে সহায়তা করে আসছে। বিশ্বব্যাংক চলমান আইডিএ কর্মসূচির অধীনে বাংলাদেশের জন্য বর্তমান বৈদেশিক সহায়তার প্রায় ৩২ শতাংশ অবদান রাখে।

তিনি আরো বলেন, “এছাড়া, আইএফসি এবং এমআইজিএ আমাদের বেসরকারী খাতকেও সহায়তা করছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে (বিশ্বব্যাংক) আমার উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা বিশ্বব্যাংকের প্রতি আমাদের আস্থা বজায় রেখেছি। আগামী দুই দশকে আমাদের সাফল্য নির্ভর করবে আমাদের সম্মিলিত সক্ষমতা এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উপায়ে উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করার প্রচেষ্টার উপর”।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমাদের সংবিধানে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তার নৃশংস হত্যাকা-ের পর, জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দীর্ঘ ২১ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহন তার সরকার ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করে।

তিনি বলেন, “টানা তিন মেয়াদে জনগণ ও দেশের সেবা করার সুযোগ লাভের জন্য আমি আমাদের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। গত দেড় দশকে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলির জন্য বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। ”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে এবং ২০২১ সালে, জাতিসংঘ এটিকে দ্বিতীয়বারের মতো এলডিসি মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভের যোগ্য ঘোষণা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্যাকেজ এবং বিনামূল্যের গণ টিকাদানের মাধ্যমে সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করেছে।

তিনি বলেন, “আমাদের নিজস্ব সম্পদে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সমাপ্তি এবং গত বছর এর উদ্বোধন সম্ভবত আমাদের সহনশীলতা ও সাফল্য অর্জনের সেরা উদাহরণ।”

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যার জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি গত এক দশকে গড়ে ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারীর ঠিক আগে এটি ৮.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে ২০২২ সালে মাথাপিছু আয় ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে যা ২০০৬ সালে ছিল ৪১.৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, তার সরকার সামাজিক সুরক্ষার জন্য জাতীয় বাজেট বরাদ্দ ৪০ গুণ বাড়িয়েছে, যা জিডিপির ২.৫ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এক বছর আগে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিনা খরচে সকল গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, আমরা প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে বিনা খরচে বাড়ি দিয়েছি এবং আয়সংস্থানমূলক দক্ষতা ও সহায়তা দিয়েছি।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তার সরকার প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা এবং বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার আমাদের আঞ্চলিক দেশগুলোর তুলনায় বেশি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সরকার সম্প্রতি আমাদের জাতীয় জিডিপিতে নারীদের গৃহস্থালির কাজ প্রতিফলিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক সংযোগ, বিমান ও লজিস্টিক হাব হিসেবে গয়ে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, “আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক দশ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বের শতাধিক সেরা সবুজ কারখানার অর্ধেকেরও বেশি এখন বাংলাদেশে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার জন্য তার পরবর্তী রূপকল্প চালু করেছে যার লক্ষ্য ডিজিটালভাবে নাগরিকদের ক্ষমতায়িত করা; চেহারাহীন সরকারি সেবা প্রদান; একটি জ্ঞান-ভিত্তিক নগদ অর্থ লেনদেনহীন অর্থনীতি; এবং একটি অধিকার-ভিত্তিক ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ।