চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে ভূমি দখলে চলছে জালজালিয়াতির তেলেসমতি। ৩৫ বছর আগে পিতার বিক্রি করে যাওয়া বিভিন্ন দাগে ০.৫২০ একর জায়গা তথ্য গোপন করে নামজারি ও একটি সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে দেন হারু মিয়া গংরা। ওই সিন্ডিকেটের সদস্য মূল তথ্য গোপন করে নাম খারিজ করেন। ক্রেতার উত্তরাধিকারীদের আপত্তির শুনানী শেষে গত ১০.০৯.২৩ খ্রি. তারিখে ১০৩১/২৩-২৪ নম্বর নামজারি মোকদ্দমা মূলে সৃজিত ১০৭৩ নম্বর খতিয়ান বাতিল ও নামঞ্জুর করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা। ব্যর্থ হয়ে অভিযোগকারী হযরত আলী গংদের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা ও উচ্চ আদালতে রীট করে হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে।
হারু মিয়া উপজেলার গোগদ গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে। দলিল, দখল, কাগজপত্র ও এসি ল্যান্ড অফিস সূত্র জানায়, গোগদ গ্রামের হারু মিয়ার পিতা আরজু মিয়ার কাছ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ৩৩৮২ নম্বর ও ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে ২১৮৩ নম্বর সাফকাবলা দলিল মূলে বিভিন্ন দাগের মোট ০.৫২০ একর জায়গা ক্রয় করেন একই গ্রামের কালু মিয়া। ক্রেতা বিক্রেতা দু’জনই মারা গেছেন। জীবিত থাকাবস্থায় জায়গার নাম খারিজ করেননি কালু মিয়া। তাই বিএস রেকর্ডে আরজু মিয়ার নাম থেকে যায়। ভূমি দস্যু একটি চক্রের সহায়তায় সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আরজু মিয়ার ছেলে হারু মিয়াসহ ওয়ারিশগণ তথ্য গোপন করে ১৯৫৬/১৫-১৬ নম্বর মোকদ্দমা ওয়ারিশসূত্রে নামজারি করে ৮১৪ নম্বর খতিয়ান সৃজন করেন। ৮১৪ নম্বর খতিয়ানের মালিকগণ তড়িগড়ি করে গত ২০.১২.২০২২ খ্রিষ্টাব্দ তারিখের ১৯২১০ নম্বর দলিলমূলে নামজারি মোকাদ্দমা নম্বর ১০৩১/২৩-২৪ এর আবেদনকারীদের কাছে জায়গা হস্তান্তর করেন। বিএস রেকর্ডিয় মালিক কর্তৃক প্রায় ৩৫ বছর পূর্বে বিক্রয় পূর্বক স্বত্ব ত্যাগকৃত ভূমির ওয়ারিশ কর্তৃক পুনরায় নামজারি করার আইনগত কোন সুযোগ নেই। তাই কালা মিয়ার ছেলে হযরত আলীসহ অন্যান্য ওয়ারিশগণ গত ৩১ আগস্ট ২০২৩ খ্রি. তারিখে নামজরি মোকাদ্দমা ১০৩১/২৩-২৪ এর আবেদন নম্বর ৫২৯৭৩০ এর বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিল করে অত্র মোকাদ্দমাটি পুনরুজ্জীবিত করেন। উভয় পক্ষের অংশগ্রহণে দীর্ঘ শুনানী শেষে গত ৩০ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি. তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাছরিন সুলতানার আদালতে আদেশ হয়, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৫০ ধারার বিধানমতে প্রথম পক্ষের/ আপত্তিকারীর আপত্তি মঞ্জুর করা হলো এবং ফাতেমা বেগম গং এর নামীয় ১৯৫৬/১৫-১৬ নম্বর নামজারি ও জমাভাগ মামলামূলে সৃজিত ৮১৪ নম্বর খারিজ খতিয়ান বাতিল করে ওই খারিজ খতিয়ানের ভূমি পূর্বের মূল বি.এস খতিয়ান সমূহে সংযোগ করে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ প্রদান করা হলো। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) এ অফিসকে আগামী তিন দিনের মধ্যে রেকর্ড সংশোধন করার জন্য বলা হলো। এই আদেশের পর আলফাজ আলী ও হযরত আলী গংরা ৩৫ বছর আগে পিতা কালু মিয়ার ক্রয়কৃত জায়গার নামজারির আবেদন (নামজারি মোকদ্দমা নম্বর-৪০৭৮/২০২৩-২৪) করেন। শুনানীর জন্য তারিখ ধার্য হয়। নোটিশ জারি হয়। বাদীরা শুনানীর জন্য হাজির হন। বিবাদী অনুপস্থিত। কোন আপত্তি দাখিল হয়নি। বিধি মোতাবেক সকল পক্রিয়া সম্পন্ন ও ডিসিআর-এর মাধ্যমে সরকারী রাজস্ব জমা দেয়ার পর আলফাজ আলী গংদের নামে গত ১৬.১১.২০২৩ খ্রি. তারিখে ১০৯৭ নম্বর খতিয়ান সৃজন হয়। হযরত আলী বলেন, সাফকাবলা দলিলমূলে বাবার ক্রয়কৃত জায়গায় বাড়িঘর নির্মাণ করে ৩৫ বছর ধরে নির্বিঘ্নে বসবাস করছি। তথ্য গোপনের মাধ্যমে নামজারি করে মালিকানা দাবী করছেন হারু ফাতেমা গংরা। আপত্তি দেয়ার পর শুনানী শেষে তাদের সৃজিত খতিয়ান বাতিল হয়ে গেছে। আমাদের নামজারি আবেদন গৃহিত হয়েছে ও অনুমোদিত হয়ে ১০৯৭ খতিয়ান সৃজন হয়েছে। ফাঁকে ঘায়েল করতে আমাদের বিরুদ্ধে মারধর, নারী নির্যাতন ও ধানকাটার অভিযোগে একের পর এক মিথ্যা বানোয়াট মামলা করছেন। মামলা করার পর আর আদালতে যান না। তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ হচ্ছে। নারাজ দিচ্ছেন। খারিজ হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ সৈয়দ সারোয়ার নামের এক ব্যক্তি আদেশের প্রায় ২ মাস পর আর নামজারির প্রায় ৩১ দিন পর উচ্চ আদালতে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে একটি রীট পিটিশন করেছেন। গোপনে আমাদেরকে পক্ষ করে আবারও তথ্য গোপন করে গত ২৭.১২.২৩ খ্রি. তারিখে ওই জায়গার উপর ষ্ট্যাটে-টাসকো আদেশ এনেছেন। এ গুলো করছেন শুধু আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে হারু মিয়ার মুঠোফোনে ফোন দিলে বলেন, ঝামেলা এখনো শেষ হয়নি। আমি এখন ব্যস্ত আছি। কথা বলতে পারব না। পরে কথা বলব। সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা বলেন, দিন তারিখ ধার্য করেছি। তাদেরকে নোটিশ করেছি। হাজির হয়ে সময়ও প্রার্থনা করেছেন। সময়ও দিয়েছি। আদেশের এক মাস পর মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে রীট করেছেন। আমি ষ্টে-টাসকোর অর্ডার পেয়েছি। দেখেছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ ৮ নভেম্বর বুধবার দুপুরে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. রুহুল আমিন তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে শাহজাহান আলম ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে পান ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট।
তবে, আশুগঞ্জ উপজেলার বড়তল্লা, তালশহর পশ্চিম ও যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নূরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত করে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. রুহুল আমিনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে ৮ নভেম্বর বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীনসহ প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বক্তব্য শুনতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
তবে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. রুহুল আমিন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে এক কন্যা নবজাতকের লাশ পাওয়া গেছে ডোবায়।
২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যার প্র্বূ মূহুর্তে সরাইল সদরের ছোট দেওয়ান পাড়া আলিমুন্নেছা টাপয়ার সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের ডোবা থেকে ওই লাশটি প্রথমে উঠিয়ে এনেছে এক শিশু। পরে দেখতে পায় মৃত নবজাতকটি কন্যা। স্থানীয়দের প্রশ্ন হচ্ছে এটা কী খুন? নাকি পাপের ফসল।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানায়, রবিবার আছরের পর খেলতে এসে এক কিশোর দেখতে পায় ডোবায় সাদা কাপড়ে মুড়ানো কী যেন পড়ে আছে। কৌতূহল বশত কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টা করে। কিশোর সাদা কাপড়ের ভেতরে নবজাতককে দেখতে প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। পরে লোকজম আসলে কিশোর কাপড় সহ উপরে নিয়ে আসে। খালি গায়ে কন্যা নবজাতকটি মৃত। জন্মের পর মাথাও মুড়ানো হয়নি। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সদ্য জন্ম গ্রহন করা এই কন্যা শিশুটির তো কোন শত্রু নেই। ফেরেশতা সমতুল্য শিশুটিকে কেনই বা খুন করবে? এটা হয়ত কারো পাপের ফসল। যেকোন নারী পুরুষের পাপ ধামাচাপা দিতে নিস্পাপ এই শিশুটিকে দুনিয়াতে আসতে না আসতেই জীবন দিতে হয়েছে।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, আমি বিশেষ কাজে এলাকার বাহিরে আছি। তদন্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। ধান শুকানোর ‘খলা’ দখল নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৪ রাউন্ড গুলি ও তিন রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, পরমানন্দপুর গ্রামের সরকারি একটি জায়গায় অনেক দিন যাবৎ সাব্বির ও তার লোকজন দান শুকায়। বৃহস্পতিবার কাঞ্চন গ্রুপের লোকজন ওই জায়গার মাটি কেটে দখলে নিতে চায়। এরই জের ধরে দুই পক্ষের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় ঝগড়ার নেতৃত্ব দেন সানাউল্লাহ গোষ্ঠীর কাঞ্চন মিয়া এবং বুইল্লার দলের পক্ষে জিয়াউল আমিন। পরে সোনাউল্লাহর পক্ষে যোগ দেয় খাঁ বাড়ি, কৈবর্তবাড়ির লোকজন। আর বুইল্লার বাড়ির সাথে যোগ দেয় বুদ্ধির গোষ্ঠী, বড়বাড়ি ও উজিবাড়ির লোকজন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বিকেল সোয়া ৪টার দিকে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।