চলারপথে রিপোর্ট :
‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ সত্যিই বাংলায় এসেছে সেই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। আর আজ বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি।
বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একই সঙ্গে গৌরব ও শোকের। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকেরা শোষণ এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে আগ্রাসন চালিয়েছিল, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধিকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালিরা। তারা ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে প্রতিটি বাঙালির মনে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুপণ লড়াই ও রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা।
প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দিবসটি উদযাপন করে গোটা জাতি। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতার রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি।
এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালি জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে উঠেছিল জেনারেল আইয়ুবের গদি। জনতার সাগরে সৃষ্টি হয়েছিল তাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত ছিল গ্রাম-শহর, জনপদ। শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের ‘নীলনকশা’।
কিন্তু ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় মুক্তির দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ছবি।
কিন্তু বাঙালির আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা।
সেই কালরাত্রি থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদ, পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।
অনলাইন ডেস্ক :
হজযাত্রীদের ভিসা করার সময় আগামী ১১ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ভিসা করার দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন আজ ৭ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের হজ ভিসা সম্পন্নকরণের দ্বিতীয় পর্বের মেয়াদ আজ ৭ মে শেষ হওয়ার পর সৌদি সরকার কর্তৃক আগামী ১১ মে পর্যন্ত ভিসার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বেসরকারি মাধ্যমে এ বছর ৮০ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রী ২৫৯টি এজেন্সি, লিড এজেন্সির মাধ্যমে পবিত্র হজ পালন করবেন। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ হজযাত্রীর ভিসা কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি।
এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে রাজকীয় সৌদি সরকারের নির্ধারিত সময় আগামী ১১ মে তারিখের মধ্যে এজেন্সির হজযাত্রীদের ভিসা কার্যক্রম সম্পন্নকরণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজযাত্রীর ভিসা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে হলে আমাদের কম শব্দযুক্ত দেশে থাকতে হবে। হর্ন বাজানোর আগে ভাবতে হবে, এটি জরুরি কিনা। সব ড্রাইভারকে হর্ন না বাজানোর জন্য সচেতন করতে হবে।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর পরিবেশ অধিদফতরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রশিক্ষকদের শব্দ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণে এ কথা বলেন তিনি। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, রেড লাইট থেকে গ্রিন লাইটে আসলেই সব গাড়ি হর্ন বাজানো শুরু করে। এটা উচিত নয়। বিশেষ করে, বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়ার সময় রিকশায় যে শব্দ হয়, তাতে অনেক সময় কানের সমস্যা হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম ধর্মে উচ্চস্বরে নয়, নিচু করে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনভাবে কথা বলতে হবে যেন মানুষের বিরক্তির কারণ না হয়। আমরা মনে করি যে যত জোরে কথা বলতে পারি, সে তত শক্তিশালী। কিন্তু আসলে যুক্তিপূর্ণ কথা বলাই আসল ক্ষমতা। আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিবর্তন আনলেই সমাজে ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের পরিচালক প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
গাজীপুরে থেকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে কৌশলে ৭ মাসের এক শিশুকে অপহরণের পর বগুড়া থেকে উদ্ধার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির চাচীকে বোনসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ ২৮ আগস্ট সোমবার জিএমপির উপ-কমিশনার আবু তোরাব মো: শামছুর রহমান তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো বগুড়া জেলার সদর থানার চকসূত্রাপুর এলাকার জাহাঙ্গীরের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা জান্নাত (২৩) ও জাকিয়ার ছোট বোন রাকিবা আভান আঁখি (২১)। এদের মধ্যে জাকিয়া ওই শিশুটির চাচা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সদর থানাধীন বাঙ্গালগাছ এলাকার মাসুদের স্ত্রী।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার আবু তোরাব মো: শামছুর রহমান জানান, রবিবার দুপুরের পর গাজীপুর শহরের বাঙ্গালগাছ এলাকার রাজমিস্ত্রির সহকারি রহিম উদ্দিন (৫০) ও তার স্ত্রী হাবিবা আক্তার তাদের ৭ মাস বয়সের শিশু সন্তান রিয়াদ হোসেন ওরফে রোহানকে নিয়ে বাসায় বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করছিলেন। এ সময় ঘরে আসেন রহিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই মাসুদের স্ত্রী জাকিয়া। কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায় সে। বেশকিছু সময়েও শিশুটিকে ফেরত না আনায় তার বাবা-মা জাকিয়ার কাছে যান। তারা জাকিয়াকে শিশু রিয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। এসময় সে রহিম উদ্দিনের বাড়িতে যাওয়া ও শিশু রিয়াদকে নেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকার করে। জাকিয়ার অস্বীকারের কারণে শিশুটির বাবা-মা কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এতে আশেপাশের লোকজন ভীড় জমান। পরে জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার (সদর জোন) ফাহিম আসজাদের নেতৃত্বে সদর থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এ সময় জাকিয়ার অসংলগ্ন কথাবার্তায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশু রিয়াদকে অপহরণের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে জাকিয়া। এ সময় সে জানায় তার বোন আঁখির মাধ্যমে শিশুটিকে বগুড়ায় পাচার করা হয়েছে।
পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সহকারী পুলিশ কমিশনার ফাহিম আসজাদের নেতৃত্বে একটি টিম রাতেই বগুড়ায় গিয়ে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে অপহরণের পর অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী জাকিয়া ও তার বোন আঁখিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা শিশু অপহরণকারী দলের সক্রিয় সদস্য বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সোমবার শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর বাড্ডা থানায় হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ ১৪ অক্টোবর সোমবার সকালে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে রিমান্ড শুনানিতে পুলিশ জানায়, ৫ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানার অন্তর্গত এলাকায় ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আলামিন গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনার সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সরাসরি জড়িত। তার নির্দেশনায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং বাকি আসামিদের তথ্য সংগ্রহে আসামিকে রিমান্ডেেনেওয়া দরকার।
আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী জানান, কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই আনিসুল হকের বিরুদ্ধে। এর আগেও কয়েকবার তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বারবার রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এছাড়া রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বাড্ডা, বনানী থানার প্রায় অর্ধ শতাধিক হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, জুনায়েদ আহমেদ পলক, দীপু মনি, ফারজানা রূপা, দিলিপ কুমার আগর ওয়ালা, সাবেক সাংসদ সাদেক খান, শাজাহান খান, ডিবির অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমান, মাজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত।
আজ সকালে পুলিশি পাহারায় এসব আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে হাজির করে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ।
চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪৩০। আজ সকালে সোনালি সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। নববর্ষ বিদায়ী বছরের গস্নানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায়
মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্রজাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ-কুটির হতে বিলাসবহুল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের মেগাসিটি-সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফলগুধারা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে উদযাপন করে উৎসবের আমেজে। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্র করার আর কুসংস্কার ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধা-বিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। নতুন পোশাক পরে সবাই মিলিত হন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের যে প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু করেছিল তা আজ বিশ্ব জুড়ে বর্ষবরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরে বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগরজীবনে এই দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান।
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজু উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে জাতি তার স্বকীয়তা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তি সঞ্চয় করে, সচেষ্ট হয় আত্মপরিচয় ও শিকড়ের সন্ধানে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যে আবদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করে স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৪২৯-এর আনন্দ বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। ১৪৩০ সনকে বরণ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে ঘরোয়া পরিবেশে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হলো বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানমালা আমাদের সেই ঐতিহাসিক চেতনাকে প্রোজ্জ্বল করে। স্বদেশ মানস রচনায় বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সর্বোপরি ইতিহাসের আলোকে রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনাকে পরিহার করে আধুনিক ও প্রাগ্রসর অভিধায় জাতিসত্তাকে যথাযথ প্রতিবাদ করার সম্মিলিত প্রতিশ্রম্নতি বাংলা নববর্ষকে দান করেছে অনবদ্য মাঙ্গলিক যাত্রাপথ।
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো বাংলা বর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। আর বাঙালিদের কাছে বাংলা নববর্ষ বরণ হলো একটি প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মঙ্গলশোভাযাত্রা। ইউনেস্কো বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরও সুদৃঢ় করুক, নববর্ষের উদার আলোয় ও মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই হোক নতুন বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ এর প্রত্যাশা।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার ও সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া। বাঙালির বর্ষবরণ ইলিশ ছাড়া হয় না। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওযার ব্যবস্থা থাকে। ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখের জনপ্রিয় খাদ্য। এই দিনের একটি পুরানো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকে নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ও কুস্তি। হাল আমলে ক্রিকেট ও ফুটবল যুক্ত হচ্ছে।
দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয় সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গস্নানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেন। এদিনে তারা হালখাতা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ ভোর থেকে শুরু হয়। ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।
হালখাতা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরানো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন লাল রংঙের হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে। ১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীযের্র সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।
আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরও একটি শোভাযাত্রা। তখন প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অশুভ মানুষের কথা ভেবে মুখোশ করা হয় শোভাযাত্রায়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার পহেলা বৈশাখকে জাতীয় পার্বণ হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছায়ানটের গানে গানে যে প্রতিবাদের ধারা সৃষ্টি করেছিল তা মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার পথে বড় শক্তি যুগিয়েছে। ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পরে যেমন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছায়ানট যেন মানবতার পক্ষে লড়াইয়ে তাদের প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করছে বারবার। আজ সেই আলোড়ন পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে।