সরাইল প্রেস ক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল

সরাইল, 30 March 2024, 407 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয়।

banner

২৯ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় সরাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আলী মাস্টারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ ড. মোঃ শাহজাহান আলম সাজু, সংরক্ষিত নারী আসনে সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলি আজাদ), বাংলাদেশ আইন সমিতি সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারি, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রফিক উদ্দিন ঠাকুর, সরাইল প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পীরজাদা আফজালুর রহমান, বাচসাসের সাবেক সভাপতি খন্দকার রফিকুজ্জমান, মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক শাহ মোঃ মোতাসিন বিল্লাহ, দৈনিক প্রভাত নির্বাহী সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট রাশেদ, এ্যাডভোকেট তানবীর হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মোঃ রকিবুল হাসান, সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ এমরানুল ইসলাম প্রমুখ।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ, সরাইল সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল, অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু, আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হক, নাসিরনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি সুজিত চক্রবর্তী, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজ আলী, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পরে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সরাইল বাজারের শাহী জামে মসজিদের ইমাম আমানউল্লাহ আমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সরাইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ তফসির।

Leave a Reply

আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা বিএনপি’র সম্মেলন

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি পদে প্রার্থী Read more

নাসিরনগর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

চলারপথে রিপোর্ট : ৭ ডিসেম্বর নাসিরনগর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ Read more

বরিশালে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত মাহফিল অনুষ্ঠিত

অনলাইন ডেস্ক : আজ ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে নগরীর বান্দ Read more

ভারতের সাথে প্রতিবেশীর মতো সম্পর্ক হবে…

অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই Read more

হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত

অনলাইন ডেস্ক : ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস। হবিগঞ্জে র‌্যালি Read more

মেহেরপুর মুক্ত দিবস পালিত

অনলাইন ডেস্ক : ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর মুক্ত দিবস। দিবসটি উদযাপন Read more

৪৪ লক্ষ টাকার ভারতীয় মালামাল আটক

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) এক বিশেষ অভিযানে Read more

মেহেরপুর মুক্ত দিবস আজ

অনলাইন ডেস্ক : ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর মুক্ত দিবস। এই দিনে Read more

হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ

অনলাইন ডেস্ক : ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল হবিগঞ্জ Read more

কলাপাড়া মুক্ত দিবস আজ

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ ডিসেম্বর কলাপাড়া মুক্ত দিবস। ১৭৭১ সালের Read more

আখাউড়া মুক্ত দিবস পালিত

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া মুক্ত দিবস। দিবসটি Read more

আজ আখাউড়া মুক্ত দিবস

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ ডিসেম্বর আখাউড়াবাসীর জন্য স্মরণীয় দিন। ১৭৭১ Read more

মুঘল আমলের অপরূপ স্থাপত্য শৈলীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সরাইলের আরিফাইল মসজিদ

সরাইল, 20 May 2023, 1098 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল প্রায় চারশত বছরের প্রাচীন আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ। এটি মুঘল আমলের অপরূপ স্থাপত্য শৈলীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো।

banner

এলাকায় জনশ্রæতি আছে ১৬৬২ সালে দরবেশ শাহ আরিফ সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অপরূপ স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য সমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি নির্মান করেন। তার নামানুসারেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আরিফাইল মসজিদ। এর গম্বুজ ও নান্দনিক কারুকার্য মুঘল আমলের উৎকর্ষতার পরিচয় বহন করে। বর্তমানে মসজিদটি পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে প্রতœতত্ত¡ বিভাগ। মসজিদের পাশেই রয়েছে জোড়া কবর যা আরিফাইল মাজার নামে পরচিত।

প্রাচীন এই মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে আখ্যায়িত করে বর্তমানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা তাদের মনোবাসনা পূরন করার জন্যে এই মসজিদে এসে নামাজ পড়েন।

সরাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই আরিফাইল গ্রামে। আরিফাইল গ্রামে রয়েছে বিশাল বড় এক দিঘী। সাগরদিঘী হিসেবে পরিচিত এই দিঘীটির দক্ষিন পাড়েই অবস্থিত প্রাচীন এই আরিফাইল মসজিদটি। আরিফাইল মসজিদের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট।

এর চার কোনায় চারটি বুরুজ ও মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলো মসজিদের ভেতরের অংশকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে। সেগুলোতে সাজানো হয়েছে পদ্মফুলের ছবিতে। এর দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। চুন, সুরকি ও ইটের গাঁথুনি। মসজিদটির মূল গেইট থেকে শুরু করে মসজিদের ভেতরের বিভিন্ন অংশে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক রেজুয়ানুর রহমান মসজিদটির সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ করেন। মসজিদটি সংরক্ষনের জন্য পূর্বের কাঠামো ঠিক রেখে মসজিদটিতে টাইলস এবং চুনকাম করা হয়েছে। মসজিদটিতে প্রবেশ ও বের হতে একাধিক পথ রয়েছে। প্রাচীন এই মসজিদটির সঠিক ইতিহাস স্থানীয়দের জানা না থাকলেও এলাকাবাসীর কাছে এটি গায়েবি মসজিদ হিসেবে পরিচিত। তাই সওয়াব লাভের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মুসল্লী এসে মসজিদটিতে নামাজ পরেন।

মোহাম্মদ আলী নামে স্থানীয় এক মুসল্লী বলেন, এই মসজিদটি কে সবাই গায়েবি মসজিদ হিসেবেই চিনে। এখানে মানুষ কিছু মানত করলে সেই মানত পূরণ হয়।

ইফতেফার হোসেন নামে স্থানীয় আরেক মুসল্লী বলেন, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে মসজিদের বিষয়ে শুনেছি। তারাও বলতে পারেননি এই মসজিদটি কে কবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে এটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই মসজিদে এসে নামাজ আদায় করেন। আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে আসেন মানত করতে। এখানে যদি কেউ মানত করেন সেই মানত আল্লাহতায়ালা পূরন করেন।

আমরা মসজিদের বাইরে যেন মানুষ নামাজ পড়তে পারেন সেজন্য খোলা জায়গাতে একটি ছাউনী করে দেয়ার জন্য দাবি জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল শুক্কুর বলেন, আমার বয়স এখন ৮৮। আমার দাদা বেঁচেছিলেন ১০৪ বছর। তিনিও মসজিদের সঠিক ইতিহাস বলতে পারে নি।

এদিকে মসজিদটির পাশেই জোড়া কবর রয়েছে। স্থানীয়দের ধারনা দরবেশ শাহ আরিফ এবং তার স্ত্রী এই জোড়া কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।জোড়া কবর বর্তমানে আরিফাইল মাজার নামে পরচিত। এ ব্যাপারে আরিফাইল মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মজিদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এই মসজিদে প্রতিদিন শত শত মানুষ নামাজ আদায় করেন। জুম্মারদিন এই মসজিদে মুসল্লীদের স্থান সংকুলান হয়না। মানুষ কষ্ট করে বাইরে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। তিনি মুসল্লীরা যাতে মসজিদের খোলা জায়গায় নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য খোলা জায়গাতে একটি ছাউনী করে দেয়ার জন্য দাবি জানান।

এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, মসজিদটি এখন প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের অধীনে। মসজিদটির পাশে জোড়া কবর রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ এসে এখানে মানত করেন। টাকা পয়সা দান করেন। প্রতিমাসে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা রেখে মসজিদটির উন্নয়ন কর্মকান্ড তরান্বিত করার আহবান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, আমি মসজিদটি দেখতে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে মাজারে টাকা তোলার বিষয়টি আমরা জানা ছিল না। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মাজারের আয়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সরাইলে ৬ জুয়ারি গ্রেফতার

সরাইল, 28 May 2023, 922 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে জুয়া খেলার সময় ৬ জুয়ারিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৩ টায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম কুট্টাপাড়ার শরীফ মিয়ার বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

banner

গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুট্টাপাড়া গ্রামের হেলাল মিয়া (২৭), একই এলাকার মোঃ সাচ্চু মিয়া (৩৯), আনিস মিয়া (২৫), আব্বাস মিয়া (২৯), শান্ত মিয়া (৩২) মোঃ শরিফ (২৯)।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ৩ টার পশ্চিম কুট্টাপাড়ার শরীফ মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলা অবস্থায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে জুয়া খেলার ৬ হাজার ১১০ টাকা ও বিভিন্ন জাতের তাস উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

সরাইল, 9 March 2023, 1122 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়াকান্দী এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় এক মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।

banner

৮ মার্চ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত আ. রহমান মিঠুন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকার আ. জলিল ব্যাপারীর ছেলে। এ ঘটনায় তার অপর ভাই মো. লিটন মিয়া আহত হয়েছেন।

সরাইল খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সন্ধ্যার দিকে উপজেলার শাহবাজপুর বড় ব্রিজের কাছে রাজাবাড়িয়াকান্দী এলাকায় একটি প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটর সাইকেলে থাকা দুই ভাই ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহত দু’জনতে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মিঠুন নামে একজনের মৃত্যু হয়। আরেকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মেঘনায় অবৈধ ড্রেজিংয়ে বালু উত্তোলন, প্রশাসন নীরব

সরাইল, 31 May 2023, 884 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে প্রায় এক মাস ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। কিন্তু নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

banner

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের কাজ।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন। এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তন হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের মেঘনা নদীর অংশ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম করে মাসখানেক ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা অংশ থেকেও নিয়মিত বালু তোলা হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ছে উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের ওপর।

জানা গেছে, এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ভৈরব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোশারফ হোসেন মিন্টু ও সেখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন মুসা। যদিও বালু উত্তোলনের জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের অনুমতি নেই। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝখানে ও কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিন বসানো। এর প্রতিটি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একেকটি বাল্কহেড। প্রতিটি বোটে ১২/১৩ জন লোকের পাহারা। বেলা ১২টার দিকে দেখা গেল মেন্দিপুর এলাকার মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দেদারচ্ছে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্ডহেডের মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তারা নড়েচড়ে বসে। ছবি তুললে তাদের অনেককেই ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের পিছু নিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। তারা তাদের স্পিডবোট দিয়ে সাংবাদিকদের স্পিডবোটকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরক্ষণেই প্রভাবশালী মহলটি সাময়িক সময়ের জন্য বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ করে দেয়।

সরাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। আমাদের গ্রাম নদী গ্রাস করে নিচ্ছে।

প্রবীণ বাসিন্দা নিজাম মিয়া বলেন, আমার তিন কানি জমি ছিল। এর মধ্যে দুই কানি জমির মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। আমি ছাড়াও অন্যান্য মানুষের ফসলি জমিও চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জীবনটা বাঁচব।

আজব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কাজী লিয়াকত মিয়া বলেন, নদীটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করতাম। ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।

নদীর পাড়েই দু’তলা ভবনের মালিক জুনায়েদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভেঙে চলছে। মূলত অবাধে বালু তোলার কারণে সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন জানে আমাদের ভবন পানিতে চলে যায়। প্রভাবশালী চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।

সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আবুল বাশার বলেন, ‘ভৈরবের মুসা মিয়ার (মোশারফ হোসেন) নেতৃত্বে অনুমতি ছাড়াই এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে। ’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টু মোবাইল ফোন বলেন, ‘বৈশাখ মাস পর্যন্ত আমি নদী ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করেছি। আমার সঙ্গে ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনও ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। এখন কে বা কারা বালু তুলছে জানি না। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ড্রেজারগুলো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বালু তোলে। আমার কাজের সময় ব্যবহার করা একই রকম ড্রেজার যদি তুলে থাকে তাহলে তো আমার কিছুর করার নেই। ’

এ বিষয়ে ভৈরবের আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুসার মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। মন্ত্রণালয় থেকেও এই বিষয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। শুনেছি কখনো তারা মেন্দিপুর আবার কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অংশে বালু তুলে। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও কাজ শেষ। বালু উত্তোলনকারীরা আসলে আমাদের কথা বলে সুবিধা নিতে চায়। যারা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা জয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমানের সঙ্গে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারিভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বর্তমানে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভাঙন রোধে সরাইল, পানিশ্বরসহ বিভিন্ন ভাঙনপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সম্ভাব্যতা প্রকল্পের কাজ চলছে। সম্ভাব্যতা প্রকল্পের সুপারিশের আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে ওই অঞ্চলগুলোতে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় দালালসহ আটক ৫

বিজয়নগর, সরাইল, 29 October 2024, 123 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় দালালসহ ৫ বাংলাদেশী নাগরিকে আটক করেছে সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) সদস্যরা।

banner

আজ ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে মাধবপুর দেবনগর এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহজাদপুর এলাকার মৃত গনেশ সরকারের ছেলে পরিমল সরকার (৫৫), একই এলাকার লক্ষ্মী সরকারের ছেলে তাপস সরকার (৩৫) ও শ্যামল সরকারের ছেলে স্বপন সরকার (৪৫), বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর এলাকার রায় কুমার মজুমদারের ছেলে দুর্জয় মজুমদার (১৯), মাধবপুর উপজেলা দেবনগর এলাকার মৃত আবু সামার ছেলে দালাল মোহাম্মদ আলী (৬০)।

২৫ বিজিবি জানায়, অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় ৫ বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করা হয়। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দালাল মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে তারা ভারতে চিকিৎসা ও কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।

আটককৃত মানব পাচারকারী দালালসহ ৫ বাংলাদেশী নাগরিকদের মাধবপুর থানায় মামলা দায়ের করে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে সে ব্যাপারে সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) অভিযান চলমান থাকবে।