বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে আধুনিক ফ্ল্যাট : গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী এমপি

জাতীয়, 28 June 2024, 544 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর বস্তিবাসীদের জন্য উন্নত জীবন ও মানসম্মত আবাসনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ফ্ল্যাট। স্বল্প ভাড়ায় এসব ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ পাবেন তারা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

banner

আজ ২৮ জুন শুক্রবার মহাখালীর টিএন্ডটি কলোনির মাঠে কড়াইল বস্তিবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিতিদের সাথে মত বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সকল মানুষের মানসম্মত আবাসনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে বস্তিবাসীদের উন্নত জীবন ও মানসম্মত আবাসনের লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্মিলিত ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। স্বল্প ভাড়ায় এসব ফ্ল্যাটে তারা বসবাসের সুযোগ পাবেন।

রাজধানীর মিরপুরে ইতোমধ্যে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত ৫৩৩টি ভাড়া ভিত্তিক ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে।

সেখানকার বস্তিবাসীরা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে সেখানে বসবাস করছেন।
টঙ্গীর দত্তপাড়া এবং মহাখালীর কড়াইল বস্তিতেও একই ধরনের ফ্ল্যাট নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

মন্ত্রী বলেন, বস্তিতে বসবাসকারীরা যথাযথ ভাড়া পরিশোধ করে থাকেন। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা বাবদ তাদের যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়।

অথচ বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তারা পায় না। পর্যাপ্ত অর্থ খরচের পরও তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করে। এসব ফ্ল্যাট নির্মিত হলে স্বল্প ভাড়ায় তারা আধুনিক জীবন যাপনের সুযোগ পাবেন। অবস্থানরত কোনো বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ না করে তাদেরকে বিদ্যমান স্থানে পুনর্বাসিত করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

এসব ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

সবার সহযোগিতা পেলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
ঢাকা-১৭ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ঢাকা-১১ আসামের মাননীয় সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবিরুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সিদ্দিকুর রহমান সরকার, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং কড়াইল বস্তিতে বসবাসরত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

আখাউড়ায় স্ত্রীর অভিযোগে মাদকাসক্ত স্বামীর কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগে মাদকাসক্ত Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রির দায়ে…

চলারপথে রিপোর্ট : মাত্র সাড়ে ৭ টাকার ইনজেকশন প্রায় ৫০ Read more

এশিয়ান কাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক : মিয়ানমারকে হারিয়ে চমক দেখানোর পর বাংলাদেশ নারী Read more

কোটি টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ

চলারপথে রিপোর্ট : ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বীজ, সার ও গাছের চারা…

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে সরাইল Read more

ইখলাস মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান : ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর Read more

প্রাথমিক তদন্তেই ভুয়া মামলার আসামিরা রেহাই…

অনলাইন ডেস্ক : উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন Read more

গাজীপুরে শফিক, তারিক, পাপনের ১০ তলা…

জায়েদুল কবির ভাঙ্গি, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর : গাজীপুর সদরের চান্দনা Read more

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ…

অনলাইন ডেস্ক : বরগুনার পাথরঘাটায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা Read more

ইসরাইলি হামলায় একদিনে আরো ৮১ ফিলিস্তিনি…

অনলাইন ডেস্ক : গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৮১জন ফিলিস্তিনি Read more

কৃষি বীজ সংরক্ষণাগার ভেঙে দোকান নির্মাণের…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলি Read more

মিথ্যা মামলা করলে কী কী শাস্তি?

অনলাইন ডেস্ক : দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো মিথ্যা মামলা। Read more

নিয়ম না মেনে তেলাপোকা মারার বিষ ব্যবহারে দুই শিশুর মৃত্যু: ডিবি

জাতীয়, 8 June 2023, 1088 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তেলাপোকা মারার ওষুধের ‘বিষক্রিয়ায়’ দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় ৫ জুন মামলা হয়। মামলায় ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিনকে গ্রেফতার করে লালবাগ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

banner

ভাটারা থানা পুলিশের সহযোগিতায় দুই আসামির ভ্রাম্যমাণ অবস্থান শনাক্ত করে আজ ৮ জুন বৃহস্পতিবার সকালে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর-রশীদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে দুজনই তাদের নিজস্ব গাড়িতে টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। এ কারণে তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছিল না।

অর্থের লোভে কোম্পানির মালিক-কর্মচারীরা স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার উপদেশ না দিয়েই কর্মচারীদের দিয়ে কীটনাশক স্প্রে করে; যার ফলশ্রুতিতে দুটি শিশু মারা যায় এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের অন্যরা।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ ওই কীটনাশক বড় গার্মেন্টস, বীজ গুদাম, অনাবাসিক স্থান ছাড়া ঘর-গৃহস্থে ব্যবহার করা যায় না। ঘরবাড়িতে এগুলো ব্যবহার করলে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই বিষাক্ত উপাদান কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কিনা, এর অনুপাত সঠিক ছিল কিনা, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর তা যাচাই-বাছাই করা হবে।

ভিডিও কলে মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ফুটফুটে দুই শিশুর এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি সুষ্ঠু বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

পুলিশ জানায়, গত ২ জুন বসুন্ধরার আই ব্লকের একটি নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার বিষ স্প্রে করেন। এর দুদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে।

বাসায় ঢুকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রবিবার ভোরে ৯ বছর বয়সি শাহিল মোবারত জায়ান এবং একই দিন রাত ১০টার দিকে ১৫ বছর বয়সি শায়েন মোবারত জাহিন মারা যায়।

রাষ্ট্রপতির ওপেন হার্ট সার্জারি বুধবার

জাতীয়, 17 October 2023, 918 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বুধবার সেখানে তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হবে। সার্জারির আগে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

banner

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, মঙ্গলবার সকালে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালে ভর্তি হন রাষ্ট্রপতি।

বুধবার সকালে কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডাক্তার কফিদিস থিওডোরোসের তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপ্রধানের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হবে। রাষ্ট্রপতি তার আশু আরোগ্য কামনায় দেশবাসীসহ সবার দোয়া চেয়েছেন।

এর আগে, সোমবার সিঙ্গাপুরে যান রাষ্ট্রপতি।
সূত্র : বাসস

জাপানের পথে প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 25 April 2023, 1469 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট টোকিওর উদ্দেশে রওনা দেয়।

banner

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী তিন দিন টোকিওতে থাকবেন। ২৮ এপ্রিল টোকিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবেন। পরে যুক্তরাজ্যে যাবেন। সফর শেষে আগামী ৯ মে সকালে তিনি দেশে ফিরবেন।

ঢাকা ছাড়ার আগে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

জাপন সফরকালে টোকিওর সঙ্গে আটটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করছে ঢাকা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রীর (বাংলাদেশ ও জাপান) উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, জাপান সফরকালে কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়, মেধা স্বত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই সফর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করবে।

জাপান সফরের কর্মসূচি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় (স্থানীয় সময়) টোকিও পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ এপ্রিল জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের পর তার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নৈশভোজের মাধ্যমে বৈঠকটি শেষ হবে।

২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিওতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এবং জেট্রোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন।

একই দিনে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ তুলে দেবেন।

সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী ও কমিউনিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। টোকিও সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও তিনি জাইকা, জেইটিআরও, জেইইআইসি, জেবিপিএফএল, জেবিসিসিইসি-এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকসহ আরও কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দেবেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সহধর্মিণী আকি আবে ও একজন জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সঙ্গেও দেখা করবেন।

এছাড়া, জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনএইচকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করবে।

জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।

এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ষষ্ঠ জাপান সফর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে জাপান সফর করেন।

যুক্তরাষ্ট্র সফর

ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছে আগামী ১ মে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে এক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের প্রতিফলন” শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করবেন। ওই অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও বক্তৃতা করবেন।

একই দিন শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে এক একান্ত বৈঠকে যোগ দেবেন। সেমিনারে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয় যাত্রা ও বিগত পাঁচ দশকে দেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। এছাড়া, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিল্পকর্ম তুলে ধরতে “বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব” শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।

এর আগে ২৯ এপ্রিল বিকেলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। আগামী ২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একান্ত বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুজান পি ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

একই দিনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়ালের আমন্ত্রণে মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী’ রাউন্ড টেবিলে মূল বক্তা হিসেবে যোগ দেবেন। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গের সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।

যুক্তরাজ্য সফর

৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কমনওয়েলথ দেশের রাজা ও রাণী হিসাবে তৃতীয় চার্লস এবং তার পত্নী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেকে যোগদানের জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন। প্রায় ১৩০ জন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান ব্রিটিশ রাজার আসন্ন রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, যা ৭০ বছর পর হতে চলেছে। সফরকালে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ মন্ত্রীও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

হজের জন্য নিবন্ধনের সময় ফের বাড়লো

জাতীয়, 6 April 2023, 1270 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে ডেস্ক :
কোটা পূরণ না হওয়ায় অষ্টমবারের মতো বাড়লো হজের নিবন্ধনের সময়। আজ ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

banner

সর্বশেষ বাড়ানো সময় অনুযায়ী, বুধবার হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় শেষ হয়। কিন্তু এখনও কোটা পূরণে প্রায় ৮ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি আছে। এমতাবস্থায় নতুন করে বাড়ানো হলো হজের জন্য নিবন্ধনের সময়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। নিবন্ধনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক উন্মুক্ত রয়েছে। উভয় ব্যবস্থাপনায় নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন করে হজে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী আজ

জাতীয়, 17 March 2024, 697 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

banner

আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।

সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন একটি শিশু।

সেদিনের সেই শিশুই আজ অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সেই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এ জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

খোকা থেকে জাতির পিতা : পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আসা শেখ মুজিবুর রহমান চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।

বাবা-মায়ের আদরের খোকা নামের ছোট্ট শেখ মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।

পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

একই বছরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন।

বিয়ে করেন শেখ ফজিলাতুননেছাকে (রেনু)। তারা দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী ছিলেন।

১৯৪৩ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।

যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেকেই। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান।

একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।

১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তার উত্থান হয়। ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে।

আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষিমন্ত্রী হন।

৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে তিনি মন্ত্রী হন।

মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।

এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।

১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।

১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।

জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবের ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দায়ের করা হয়।

বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়। টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’।

১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বা?ন জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন।

১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।

৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।

এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু কার্যত ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান।

একদিকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপরদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে যেত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। বাংলার মানুষ মেনে চলতেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনী শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন।

সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নতুন বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।