অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহুল আলোচিত আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘিরে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য।
আজ ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার সকালের দিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে ‘নবান্ন অভিযান’ নামে বিশাল পদযাত্রা শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ।
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই আন্দোলনের ফলে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রসমাজের ডাকে হাজার হাজার মানুষ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিমুখে মিছিল শুরু করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। তবে বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাথর নিক্ষেপ করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে।
চলার পথে অনলাইন ডেস্ক:
পিরোজপুরের নাজিরপুরের সফিকুল ইসলাম ওরফে শফিউল্লাহ শেখ। ভাগ্য বদলাতে ১৩ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তি করেন। প্রথমে সাত লাখ টাকা দেন; পরবর্তীসময়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ইতালি যাওয়ার কথা বলে প্রথমে দুবাই, পরে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ার ‘গেম ঘর’ নামক টর্চাল সেলে নিয়ে শফিউল্লাহকে নির্যাতন করতো একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগ। একই সঙ্গে অপহৃত শফিউল্লাহকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজধানীর গুলিস্তানে নুরুজ্জামান রাজুর একটি মোবাইল ফোন মেরামতের দোকান ছিল। ইউরোপে একটি উন্নত জীবন শুরুর আশায় ২৯ বছর বয়সী এই তরুণ তার দোকান প্রায় ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। চলতি বছরের মার্চে দেশ ছেড়ে চলে যান স্বপ্নের দেশ ইতালি। মানবপাচারকারী চক্র তাকে প্রথমে দুবাই ও পরে লিবিয়ায় পাঠায়। কিন্তু রাজু লিবিয়ার বেনগাজিতে পৌঁছানোর পর তার যাত্রা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে তিনি গত আট মাস ‘গেম ঘরে’।
এভাবেই রাজুর বাবা আমিনুল ইসলাম তার ছেলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার করুণ বর্ণনা দেন। আমিনুল বলেন, ‘আমি প্রতি দু-তিনদিন পরপর আমার ছেলের কাছ থেকে ফোন পাই। গেম ঘরের লোকরা মুক্তিপণের জন্য রাজুকে নির্যাতন করছে। সে সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি করে কিন্তু আমি অসহায়।’
রাজুর বাবা আরও বলেন, ১০ লাখ টাকা চেয়ে ছেলের নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়েছে। যখন আমি বলেছিলাম আমার কাছে এতো টাকা নেই, তখন একজন বাংলাদেশি নিজেকে শরীফ বলে পরিচয় দিয়ে আমাকে ফোন করে ৭ লাখ টাকায় চুক্তি করা হয়েছে বলে জানান।
পরে সম্পত্তি বিক্রি করে ও ঋণ নিয়ে আমিনুল ইসলাম সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে রফাদফা করে শরীফের মাধ্যমে। এরপর নভেম্বর মাসে তিনি দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও একটি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। টাকা দেওয়ার পরেও আমিনুলের ছেলে রাজুর কপালে মুক্তি মেলেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার শরীফ হোসেন। এই মানবপাচার চক্রের মূলহোতা। তিনি থাকেন লিবিয়ার বেনগাজিতে। লিবিয়ায় অবস্থান করা বাংলাদেশি লোকজন তাকে সমীহ করেন। কারণ, তিনি সেখানে ‘মাফিয়া শরীফ’ নামে পরিচিত। এই শরীফ সেখানে বসে ‘গেম ঘর’র মালিক। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে শরীফের চক্র লোকজনকে লিবিয়া নিয়ে ‘গেম ঘর’ এ আটকে রেখে নির্যাতন চালায় এবং বাংলাদেশে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়। তবে সেই গেম ঘরের চাবি থাকে মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা তাজনাহার রিক্তা নামে এক নারীর কাছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) মানবপাচারের একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এই গেম ঘরের তথ্য পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে সেই ‘গেম ঘর’ এ নির্মম নির্যাতনের শিকার কয়েকশ বাংলাদেশি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মাদারীপুরে অবস্থানকারী রিক্তার হাতে শরীফ মাফিয়ার চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলেই গেম ঘর থেকে পাচার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি মেলে। লিবিয়ার গেম ঘর থেকে মুক্তি পাওয়ার সেই চাবি আগে থাকতো শরীফের স্ত্রী সুমি আক্তারের কাছে। এই সুমি গত নভেম্বরে লিবিয়ায় মাফিয়া স্বামীর রাজ্যে চলে গেছেন। এরপর সেই দায়িত্ব পান রিক্তা। সম্পর্কে সুমির ভাবি রিক্তা।
সিটিটিসি জানায়, বাংলাদেশ থেকে অবৈধপথে ইউরোপ নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ার গেম ঘরে আটকে রাখার চক্রগুলোর মধ্যে শরীফ হোসেন অন্যতম। তাকে বেনগাজিতে সবাই মাফিয়া হিসেবে চেনে। ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই চক্র ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের চক্রে নারী সদস্যও রয়েছে।
সিটিটিসির ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শরীফ ও রিক্তা চক্রের মোবাইল ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ব্যাংকে শতাধিক অ্যাকাউন্টের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে ৭০টি অ্যাকাউন্ট তারা যাচাই করে দেখেছেন।
এতে দেখা গেছে, ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে গত দুই বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজনকে লিবিয়ায় পাচার, সেখানে গেম ঘরে আটকে ও জিম্মি নাটক সাজিয়ে ভিকটিম পরিবারগুলো থেকে এই টাকা আদায় করে শরীফ চক্র।
সিটিটিসির আরেক কর্মকর্তা বলেন, লিবিয়ায় মাফিয়া শরীফের গেম ঘরে কয়েক মাস ধরে তিন শতাধিক বাংলাদেশি বন্দি অবস্থায় রয়েছে। তাদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি নেওয়ার কথা বলে সেখানে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। তবে অবৈধ অভিবাসী অনুপ্রবেশে দেশটির নৌ সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে কেউ যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় শরীফ জিম্মির নাটক সাজিয়ে বাংলাদেশে থাকা ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গেম ঘরে আটক থাকা লোকদের খাওয়ার খরচও তাদের স্বজনরা বাংলাদেশ থেকে পাঠান। মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খাওয়া খরচ হিসেবে শরীফের লোকদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে।
এডিসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত নভেম্বরে শরীফ দেশেই ছিলেন। তার বিষয়ে তথ্য পেয়ে তাকে গ্রেফতারে উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবে ৩০ নভেম্বর দুই স্ত্রী সুমি আক্তার ও হালিমা বেগমকে নিয়ে তিনি দেশ ছাড়েন। এরপরই রিক্তা শরীফের হয়ে দেশে সমন্বয়কের দায়িত্ব পান। তবে শরীফের পুরো পরিবার, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও এই পাচার চক্রে জড়িত। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে চক্রের কার্যক্রম নিয়ে বেশকিছু তথ্য মিলেছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, শরীফের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) শাখায় তারা চিঠি লিখবেন, যাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরানো যায়। তার গেম ঘরে থাকা বন্দিদের কীভাবে মুক্ত করা যায়, সে বিষয়েও পরামর্শ করা হবে।
দেশ থেকে যেভাবে যে রুটে পাচার ॥ সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, শরীফ চক্রের দালালরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে। দালালরা ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক লোকজনকে খুঁজে বের করে। এরপর তাদের কাছ থেকে প্রথম দফায় ৩ থেকে ৪ লাখ করে টাকা নেয়। প্রলোভন দেখানো হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে বৈধভাবে বড় জাহাজে করে ইতালি পাঠানো হবে। এরপর ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক লোকজনকে প্রথমে বৈধভাবে (ভ্রমণ ভিসায়) দুবাই, মিশর বা তুরস্ক পাঠানো হয়। এসব দেশেও শরীফের চক্রের লোকজন রয়েছে।
তারা বাংলাদেশ থেকে পাঠানো লোকজনকে রিসিভ করে নিজেদের কাছে রাখে। এরপর সুযোগ মতো লিবিয়ার বেনগাজিতে পাঠানো হয়। সেখানে শরীফ ও তার দুই স্ত্রীসহ তাদের মাফিয়া চক্রের লোকজন রিসিভ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। এরপর শুরু হয় গেম ঘরের খেলা।
সিটিটিসির কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, নভেম্বরে শরীফ দুই স্ত্রীকে নিয়ে লিবিয়ায় নিজের ডেরায় চলে গেলেও প্রথম স্ত্রী হালিমা বেগম সেখানে মারা যান। শরীফ তার পরিবারের কাছে দাবি করেছেন, হালিমা স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তবে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শরীফকে দেশে ফেরাতে পারলে এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
শরীফ চক্রের স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গেছেন, বর্তমানে লিবিয়ায় শরীফের গেম ঘরে রয়েছেন- এমন অন্তত ছয় ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন গেম ঘর থেকে লিবিয়া যাওয়ার পথে নৌকাডুবির পর আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার মাধ্যমে উদ্ধার হয়ে দেশে ফেরেন। তিনি বলেন, তারা স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে প্রথমে ৪ লাখ টাকায় লিবিয়া যান। সেখানে তাদের একটি বাসায় রাখা হলেও কয়েকদিন পর জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা বলে সমুদ্রের অদূরে একটি গুদামঘরের মতো বাসায় নেওয়া হয় তাকেসহ কয়েকজনকে। সেখানে তার মতো আরও কয়েকজনকে দেখতে পান। এটিই গেম ঘর নামে পরিচিত। এখান থেকেই সাগরে ছোট ছোট নৌকায় তুলে দেওয়া হয়, তাকেও একইভাবে তুলে দেওয়া হয়েছিল। যদিও তাকে বলা হয়েছিল, বড় জাহাজে ইতালি নেওয়া হবে। সেই কথা বলে তার পরিবারের কাছ থেকে আরও ৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়। তবে স্থানীয় দালাল চক্রটি তার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি নাম বলতে রাজি হননি।
শরীফের গেম ঘরে জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার হয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে ফেরা লোকজন পুলিশকে বলেছে, তাদের বাসা থেকে গেম ঘরে নেওয়ার সময়ে লিবিয়ার স্থানীয় পুলিশ বা দেশটির সন্ত্রাসী চক্র তুলে নিয়ে যায়। অনেককে গেম ঘর থেকেও তুলে নেওয়া হয়। এরপর শরীফ ও তার লোকজন দেশে থাকা দালালদের মাধ্যমে পরিবার ও স্বজনদের জানিয়ে দেন এবং তাদের মুক্ত করতে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা দাবি করেন।
মাদারীপুরের শিবচরের একজন বাসিন্দা রহিম শেখ গত জুলাইয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছতে পেরেছেন। তিনি ইমো অ্যাপসে সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে বলেন, তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে বড় জাহাজে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি ছয় মাস লিবিয়ায় থাকেন। এর মধ্যে মাফিয়াদের হাতে একবার জিম্মি হন। কিন্তু নিজের এলাকায় টাকা দেওয়ার পর মুক্ত হন। যদিও তার জিম্মি বা অপহরণ হওয়ার বিষয়টি পরিবারকে তিনি জানাতে পারেনি। যারা জিম্মি করে, অপহরণ করে তারাই ভুক্তভোগীদের পরিবারকে বলে, ভয় দেখিয়ে ও নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
লেনদেন ইতালিতে, হুন্ডি হয়ে আসে দেশে ॥ সিটিটিসির ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম এডিসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইতালিতেও মাফিয়া শরীফের একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা অবৈধভাবে ইউরোপে লোক পাঠিয়ে অন্তত ৫ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেলেও এর বাইরে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেন হয় ইতালিতে। পরে সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আসে দেশে। মূলহোতা শরীফের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) শাখায় চিঠি পাঠানো হবে। যাতে গেম ঘরে থাকা বাংলাদেশিদের উদ্ধার করা যায়।
বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি তরুণ-যুবকদের উদ্দেশ্যে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, উন্নত জীবন-যাপনের জন্য দালালরা ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক লোকজনকে টার্গেট করে। প্রলোভন দেখানো হয়, বৈধভাবে বড় জাহাজে ইতালি পাঠানো হবে। এরপর ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক লোকজনকে প্রথমে বৈধভাবে (ভ্রমণ ভিসায়) দুবাই, মিশর বা তুরস্ক পাঠানো হবে। এসব প্রলোভন থেকে নিজেকে ও পচিরিতদের সতর্ক করতে হবে। অন্যথায় মাসের পর মাস গেম ঘরে থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে থাকা পরিবারের কষ্টার্জিত সম্পদ বিনষ্ট হবে।
সূত্র : জাগো নিউজ ২৪.কম
অনলাইন ডেস্ক :
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেফতারের একদিন পর এবার দলটির মহাসচিব আসাদ উমরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ ১০ মে বুধবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে তাকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি)।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার একই স্থান থেকে নাটকীয়ভাবে ইমরান খানকে গ্রেফতার করে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। কাদির খান ট্রাস্ট মামলায় সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।
জিও নিউজ জানিয়েছে, ইসলামাবাদ পুলিশের (সিটিডি শাখা) কর্মকর্তারা আসাদ উমরকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বার রুমের বাইরে থেকে তুলে নিয়ে গেছে।
খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, এদিন পিটিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল (মহাসচিব) ও অন্যান্য নেতারা পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে অনুমতির জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলে। এ সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মো.মনির হোসেন ভুইয়া (৩৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টার দিকে দ্রুতগামী একটি গাড়ির চাপায় তিনি নিহত হন।
নিহত মনির হোসেন ভুইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবার বিনাউটি ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের ইমাম হোসেন ভুইয়ার ছেলে। মনিরের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
নিহত মনির হোসেনের বড় ভাই নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, জীবিকার তাগিদে প্রায় দশ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি দেন মনির হোসেন। কয়েক বছর ধরে রিয়াদ শহরের বলদিয়া কোম্পানিতে পরিছন্নকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। রবিবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে (বাংলাদেশ সময় বিকেলে ) রাস্তার পাশে পরিছন্নতার কাজ করছিলেন মনির। এ সময় পেছন দিক থেকে ছুটে আসা দ্রুতগামী একটি গাড়ি তাকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তার ভাই মনির হোসেন ভুইয়া। মনিরের মৃত্যুর খবর তার সাথে থাকা অপর এক বাংলাদেশি সহকর্মী দেশের বাড়িতে এবং একই শহরে অন্য এলাকায় কর্মরত তার অপর দুই ভাই শরিফুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম ভুূঁয়াকে জানান। তার দুই ভাই লাশটি সেখানকার হাসপাতাল মর্গে রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া আরো জানান, দেশের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ মনিরের স্ত্রী ও মনিরা আক্তার নামে ছয় বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
নিহত মনির হোসেনের পরিবার তার মরদেহ সরকারিভাবে দ্রুত দেশের আনার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
অনলাইন ডেস্ক :
দখলদার ইসরায়েলী বাহিনীর বোমা হামলা থেকে ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিনও রক্ষা পাইনি নিরিহ ফিলিস্তিনিরা। তাদের লাগাতার বোমা হামলায় ইতোমধ্যে প্রায় ২২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বন্দি করা হয়েছে হাজার হাজার যুবককে। আর আহত হয়ছেন অসংখ্য মানুষ। বাস্তহারা হয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
এদিকে নতুন বছরের শুরুতেই ইসরায়েলি বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। আজ ১ জানুয়ারি সোমবার সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল ও আল জাজিরা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন বছরের শুরুতে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলে ২০টিরও বেশি রকেট ছুড়েছে হামাস।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল আবিবের দিকে ২০টির বেশি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিহত করা হয়। এ সময় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সতর্কসংকেত (সাইরেন) বাজানো হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে হামাসের ছোড়া একটি রকেটের টুকরো ইসরায়েলের স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে পড়লেও, এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।
অপরদিকে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় ফিলিস্তিনের সাবেক ধর্মমন্ত্রী ইউসুফ সালামা (৬৮) নিহত হয়েছেন।
এএফপির বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর রবিবার ইউসুফ সালামার বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায় বলে জানায় ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা। এছাড়া হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিয়ষটি নিশ্চিত করেছে।
ওয়াফা বলছে, ইউসুফ সালামার বাড়ি গাজার মধ্যাঞ্চল আল-মাঘাজি শরণার্থী ক্যাম্পে। ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন ইউসুফ। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ধর্মমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া জেরুজালেমে অবস্থিত পবিত্র আল-আকসা মসজিদের ইমামও ছিলেন ইউসুফ সালামা। তবে, ফিলিস্তিনের সাবেক এই মন্ত্রীর বাড়িতে হামলার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
অনলাইন ডেস্ক :
রুপা, সুন্দরী, স্মার্ট, ভদ্র সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারীনি। তার স্বপ্ন ছিল বিমানবালা হবার, হয়েছেনও তাই। তিনি নিজেকে মানুষের সেবাই নিয়োজিত করেন। সুনামের সঙ্গে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে তার ওপর অনেক খারাপ মানুষের নজর পড়ে। যারা একজন ছিলো সে যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বসবাস করতো সেই ভবনের এক ঝাড়ুদার। যুবক বয়সের সে ঝাড়ুদারকে রূপা বিভিন্ন সময় নিজের কাজের জন্য ডাকতেন। কথামত কাজ করে দিতেন। আর এই সুযোগটা নিয়েছে সেই ঝাড়ুদার।
জানা যায়, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ভারতীয় বিমানবালাকে গলাকেটে হত্যা করে তার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে কাজ করা এক ঝাড়ুদার যুবক। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই তাকে আটক করা হয়েছিল এবং পরে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন তিনি।
আজ ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফ্রি প্রেস জার্নাল। এর আগে গত রোববার মুম্বাইয়ের শহরতলীর আন্ধেরিতে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাট থেকে রুপাল ওগ্রে নামের ওই বিমানবালার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, নিহত বিমানবালা রুপাল ওগ্রে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের বাসিন্দা এবং এয়ার ইন্ডিয়াতে চাকরি পাওয়ার পর চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি মুম্বাই চলে যান। সেখানে তার বোন ও তার প্রেমিকের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
সম্প্রতি তার বোন এবং প্রেমিক— দু’জনেই মুম্বাইয়ের বাইরে যান। আর এরপর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে এই ঘটনায় সন্দেভাজন হিসেবে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তির নাম বিক্রম অটওয়াল এবং তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঝাড়ুদার হিসাবে কাজ করতেন।
ফ্রি প্রেস জার্নাল বলছে, ২৪ বছর বয়সী এয়ার হোস্টেস রুপাল ওগ্রেকে গলা কেটে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৪০ বছর বয়সী এই অভিযুক্তকে মঙ্গলবার আন্ধেরির স্থানীয় আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় পেশায় ঝাড়ুদার বিক্রম স্বীকার করেন, তিনি রুপাল ওগ্রেকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভুক্তভোগীর বাধায় তিনি ব্যর্থ হন এবং একপর্যায়ে গলাকেটে হত্যা করেন।
শুনানি শেষে আদালত আসামিকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, অনেকবার ফোন করেও রুপালের কোনও সাড়া পাচ্ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধুদের খোঁজ নিতে বলেছিলেন তারা। বন্ধুরা এসে ফ্ল্যাটটি ভেতর থেকে তালাবন্ধ দেখতে পেয়ে খবর দেয় পুলিশে। পরে পুলিশ এসে গত রোববার রাত ১১টার দিকে ভেতরে প্রবেশ করলে ফ্ল্যাটের বাথরুমের কাছে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
এরপরই সন্দেভাজন হিসেবে বিক্রমকে আটক করে পুলিশ। অভিযুক্ত এই ব্যক্তি একটি পরিচ্ছন্নতা সংস্থার হয়ে কাজ করেন এবং গ্রেপ্তারের পরপরই তার অপরাধের কথা স্বীকার করেন। যদিও অপরাধ স্বীকার করার আগেই গ্রেপ্তার করার সময় তার কাপড়ে রক্তের দাগ খুঁজে পায় পুলিশ।
বেশ কয়েক ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদের পর বিক্রম অটওয়াল স্বীকার করে, হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে গত শুক্রবার রুপাল ওগ্রের সঙ্গে তার ‘ঝগড়া’ হয়েছিল। মূলত পরিচ্ছন্নতার কাজ সঠিকভাবে না করার জন্য তাকে ‘বকাঝকা’ করেছিলেন রুপাল। আর এটিই অভিযুক্তকে ক্ষুব্ধ করে।
ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার ঊদ্ধৃতি দিয়ে ফ্রি প্রেস জার্নাল জানিয়েছে, ‘বিমানবালা রুপাল ওগ্রেকে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ধারালো বস্তু নিয়ে ওই নারীর ফ্ল্যাটে যায় বিক্রম। ভিকটিমকে ধর্ষণের জন্য সে প্রথমে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়, কিন্তু ওই নারী নিজেকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করায় ব্যর্থ হয় সে। নিজেকে বাঁচাতে ওই নারী অভিযুক্তকে ধাক্কা দেয়, হাত দিয়ে আঘাত করে এবং লাথিও মারে। অভিযুক্তের সারা শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে, এতে সেখানে ধস্তাধস্তির প্রমাণ পাওয়া যায়।’
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘একপর্যায়ে ওই নারী ফ্ল্যাটের প্রধান দরজা দিয়ে বাইরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে অভিযুক্ত বিক্রম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ভুক্তভোগীকে গলাকেটে হত্যা করেন।’
অবশ্য পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, বিক্রমের মাথায় আঘাত রয়েছে। তাদের ধারণা, রুপালকে আক্রমণ করার পর তিনি হয়তো প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। আর তাতেই মাথায় আঘাত পেয়েছেন বিক্রম।